সাক্ষী শাহরিয়ার কবিরের জেরা চলছে, সাকার সাক্ষীর জেরা ২ তারিখ- যুদ্ধাপরাধী বিচার

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে ১০ম সাক্ষীর জেরা আগামী ২ সেপ্টেম্বর রবিবার ধার্য করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে সাক্ষী
শাহরিয়ার কবির ও মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে সাক্ষী মোশারফ হোসেন তালুকদারের জেরা অব্যাহত রয়েছে।
বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মোঃ নিজামুল হক নাসিমের নেতৃত্বে দুই সদস্যের ট্রাইব্যুনাল আসামিপক্ষের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে ১০ম সাক্ষীর জেরার দিন ধার্য করে। এর আগে মঙ্গলবার প্রসিকিউশন পক্ষের ১০ম এবং ১১তম সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহণ করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক কাজী নুরুল আফছার ও মুক্তিযোদ্ধা এসএম মাহবুবুল আলম বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে ঐদিন তাদের জবানবন্দী পেশ করেন। বৃহস্পতিবার সকালে সদ্য নিয়োগ পাওয়া বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেনকে নিয়ে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক এজলাসে বসেন। ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রমের শুরুতেই চেয়ারম্যান নিজামুল হক নতুন বিচাপতির প্রতি শুভকামনা জানান। বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন। এ সময় ট্রাইব্যুনালে তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করবেন বলে জানান।
পরে আসামিপক্ষের আইনজীবী আহসানুল হক হেনা সাক্ষীদের জেরা করতে সময় আবেদন করেন। তখন ট্রাইব্যুনাল তাদের সময় আবেদন মঞ্জুর করে জেরার জন্য রবিবার দিন ধার্য করে। এর আগে সকালে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে কাশিমপুর কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। উল্লেখ্য, গত ৪ এপ্রিল সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের সুনির্দিষ্ট ২৩টি ঘটনায় ৭২টি অভিযোগে অভিযোগ গঠন করা হয়। গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর আটকের পর তাকে এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১০ সালের ১৯ ডিসেম্বর গ্রেফতার দেখায় যুদ্ধাপরাধ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-
সাজেদা, মতিয়া
আসামি পক্ষের আইনজীবী আওয়ামী লীগের দু’ নেত্রীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ এনেছে। ইতোমধ্যে ট্রাইব্যুনাল এ বিষয়ে আদেশও দিয়েছে। জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী আইনজীবীর মাধ্যমে ১০ সেপ্টেম্বর জবাব দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদনের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হবে ৫ সেপ্টেম্বর।
শাহরিয়ার কবির
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে প্রথম সাক্ষী একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নির্বাহী সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের জেরা শুরু করেছে আসামি পক্ষের আইনজীবী। বৃহস্পতিবার ট্রাইব্যুনাল-২-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে দুই সদস্যের ট্রাইব্যুনালে এ জেরা শুরু হয়। পরে তাঁর জেরা অসমাপ্ত অবস্থায় এ মামলার কার্যক্রম আগামী ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মুলতবি করে ট্রাইব্যুনাল। আসামি পক্ষের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম সাক্ষী শাহরিয়ার কবিরকে যে জেরা করেন তা নিম্নে দেযা হলোÑ
জেরা
প্রশ্ন : অনার্সে আপনার সাবসিডিয়ারি সাবজেক্ট কি ছিল?
উত্তর : মনোবিজ্ঞান ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান।
প্রশ্ন : এ সাবজেক্টগুলো কি আপনি শেষ করেছেন?
উত্তর : জি, শেষ হয়েছে।
প্রশ্ন : পরবর্তীতে আর পড়ালেখা করেননি?
উত্তর : প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখা করিনি। তবে অন্যান্য পড়ালেখা করেছি।
প্রশ্ন : আপনাদের পৈত্রিক নিবাস কোথায় ছিল?
উত্তর : ফেনী জেলায়।
প্রশ্ন : ফেনী থেকে ঢাকায় কবে এসেছেন?
উত্তর : ফেনী থেকে আমার বাবা প্রথম কলকাতায় যান। তারপর সেখান থেকে ঢাকার ইসলামপুরে আসেন।
প্রশ্ন : এখন আপনাদের বাসা কোথায়?
উত্তর : এখন বাসা মহাখালীতে।
প্রশ্ন : আপনি প্রাইমারী কোথায় পড়েছেন ?
উত্তর : ঢাকার সেন্ট গ্রেগরিজ স্কুলে।
প্রশ্ন : ১৯৭০ সালে মহাখালী কোন্ থানার অধীনে ছিল?
উত্তর : গুলশান থানার অধীনে।
প্রশ্ন : আপনার কর্মজীবন শুরু হয় সাংবাদিকতা দিয়ে?
উত্তর : জি।
প্রশ্ন : কোন্ পত্রিকায় কাজ শুরু করেন?
উত্তর : ১৯৭২ সালে এপ্রিল মাসে দৈনিক বাংলা পত্রিকায় সহকারী সম্পাদক হিসেবে।
প্রশ্ন : ওই পত্রিকার সম্পাদক কে ছিলেন?
উত্তর : তোয়াব খান।
প্রশ্ন : পত্রিকাটি সরকারী ট্রাস্টের নিয়ন্ত্রণে প্রচারিত সংবাদপত্র ছিল।
উত্তর : জি।
প্রশ্ন : ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান কে ছিল?
উত্তর : পদাধিকার বলে তথ্য সচিব।
প্রশ্ন : সম্পাদকীয়ম-লীর সভাপতি কে ছিলেন?
উত্তর : কবি হাসান হাফিজুর রহমান।
প্রশ্ন : আপনি আর কোথায় কোথায় কাজ করেছেন?
উত্তর : অন্যান্য পত্রিকায় গল্প, উপন্যাস লিখেছি তবে রিপোর্ট লিখিনি।
প্রশ্ন : সাপ্তাহিক বিচিত্রা কি দৈনিক বাংলার প্রকাশনা ছিল?
উত্তর : সাপ্তাহিক বিচিত্রা পত্রিকা দৈনিক বাংলার একটি সহযোগী প্রকাশনা ছিল।
প্রশ্ন : আপনি ওই পত্রিকায় কি দায়িত্বে ছিলেন?
উত্তর : নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করি ১৯৯২ সালে চাকরিচ্যুত হওয়ার আগ পর্যন্ত।
প্রশ্ন : আপনি যে মামলায় সাক্ষী দিতে এসেছেন সে মামলার অভিযোগকারী আপনি নন।
উত্তর : জি না, আমি সাক্ষী।
প্রশ্ন : এ মামলার অভিযোগকারী কে?
উত্তর : সরকার, সঠিক অর্থে রাষ্ট্র এবং চীফ প্রসিকিউটর।
প্রশ্ন : রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগের দায়িত্বে আছে আওয়ামী লীগ?
উত্তর : আওয়ামী লীগ নয়, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট।
প্রশ্ন : মহাজোটের মধ্যে একটা দলের নাম ইসলামী ঐক্যজোট, যার চেয়ারম্যান মিসবাহুর রহমান চৌধুরী।
উত্তর : জি।
প্রশ্ন : শরিক দল ইসলামী ঐক্যজোটের উদ্দেশ্য হচ্ছে ইসলামী মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করা।
উত্তর : জি।
প্রশ্ন : মিসবাহুর রহমান একাত্তর সালে ইসলামী ছাত্রসংঘের সদস্য ছিলেন।
উত্তর : তাদের গঠনতন্ত্র তো আমি পড়িনি। আর এটা আমার জানার কথা না।
প্রশ্ন : মিসবাহুর রহমান ইসলামী ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গবর্নরের সদস্য?
উত্তর : আমার জানা নাই।
প্রশ্ন : মিসবাহুর রহমানের সাথে আপনার কবে পরিচয় হয়।
উত্তর : ২০০৭ সালে প্রথম সাক্ষাত হয় আমার নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘যুদ্ধাপরাধ-৭১’ নির্মাণের সময়।
প্রশ্ন : ওই প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে যারা জানে তাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহের জন্য কোন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিলেন?
উত্তর : প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয়ার কোন প্রয়োজন হয় না। পৃথিবীর কেউ কি কোন দিন বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল তার প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণে?
প্রশ্ন : প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের জন্য আপনি আপনার পছন্দসই লোকদের সাক্ষাতকার নিয়েছেন।
উত্তর : আমার অপছন্দের লোক রাজাকারদেরও সাক্ষাতকার নিয়েছি।
প্রশ্ন : মিসবাহুর রহমান ছাত্রসংঘের সদস্য ছিলেনÑ এ তথ্য আপনি প্রথম কার কাছে পেয়েছেন?
উত্তর : তার কাছেই পেয়েছি।
প্রশ্ন : আপনার নির্মিত প্রামাণ্যচিত্রে যে সব ব্যক্তির সাক্ষাতকার নিয়েছেন একাত্তর সালে তাদের অবস্থান কি ছিল সে সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েছেন?
উত্তর : তা আমি অনুসন্ধান করিনি।
প্রশ্ন : মিছবাহুর রহমানের একাত্তরের অবস্থান সম্পর্কে অনুসন্ধান করেছেন?
উত্তর : না, তিনি যেটুকু বলেছেন তাই।
প্রশ্ন : আপনার প্রামাণ্যচিত্রে জামায়াত নেতা মুজাহিদের বক্তব্য আপনার সংগ্রহ করা না।
উত্তর : না, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন টেলিভিশনের ফুটেজ থেকে নেয়া হয়েছে।
প্রশ্ন : আপনি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের সময় মুজাহিদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছেন?
উত্তর : আমি ‘সাপ্তাহিক বিচিত্রা’য় থাকা অবস্থা থেকে আজ পর্যন্ত জামায়াতের কোন নেতা আমাকে সাক্ষাতকার দিতে রাজি হয়নি।
প্রশ্ন : ২০০৬, ’০৭, ’০৮ সালে আপনি মুজাহিদকে কোন টেলিফোন করেছেন কিনা?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : কোন পত্র প্রেরণ করেছিলেন?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : আপনি আসামির কাঠগড়ায় বসা মুজাহিদ সাহেবকে শনাক্ত করেছেন, ডকে তো একজনই ব্যক্তি ছিলেন।
উত্তর : হ্যাঁ, মুজাহিদ সাহেবকে তো সাবাই চেনে?
প্রশ্ন: মিসবাহুর রহমান চৌধুরীর যে দলের প্রধান, সে দলটি তো নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নিবন্ধিত নয়।
উত্তর : আমার জানা নেই।
প্রশ্ন : জামায়াতে ইসলামী নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নিবন্ধিত একটি দল।
উত্তর : জি।
প্রশ্ন : মিসবাহুর রহমান সাপুড়েদের নিয়ে তসলিমা নাসরিনের বিরুদ্ধে মিছিল করেছিল, আপনি জানেন?
উত্তর : আমার মনে পড়ে না।
প্রশ্ন : গত শতকে ’৯০-এর দশকে ইসলামী ফাউন্ডেশন কর্তৃক আয়োজিত রাষ্ট্রপতির অনুষ্ঠানে গোলযোগ সৃষ্টির কারণে মিসবাহুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
উত্তর : তা আমার জানা নাই।
প্রশ্ন : ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কতজন তদন্ত কর্মকর্তা আপনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন।
উত্তর : ৩/৪ জন এসেছেন। তার মধ্যে মনোয়ারা বেগম বেশি এসেছিলেন।
প্রশ্ন: সাঈদীর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হেলালউদ্দিনের কাছে আপনি জবানবন্দী দিয়েছিলেন।
উত্তর : আমার মনে নেই।
প্রশ্ন : আরেক তদন্ত কর্মকর্তা মতিউর সাহেব কি আপনার জবাবনবন্দী নিয়েছেন।
উত্তর: তদন্ত কর্মকর্তা মনোয়ারা বেগম ও তদন্ত সংস্থার প্রধান হান্নান সাহেব ছাড়া আমি বাকিদের নাম জানি না।
প্রশ্ন : কার নালিশের উপর ভিত্তি করে মামলার তদন্ত কাজ শুরু হয়েছিল।
উত্তর : আমি বলতে পারব না।
প্রশ্ন: ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে প্রেস সেন্সরশিপ সরকার নেয়ার আগ পর্যন্ত মতামত প্রকাশ বা লেখালেখিতে কোন প্রকার বাধা ছিল কি?
উত্তর : সাপ্তাহিক বিচিত্রায় অন্তত ছিল না।
প্রশ্ন : ২১/১০/২০১১ তারিখে জবানবন্দী দেওয়ার বিষয়টি কি আপনার মনে আছে।
উত্তর : আমার মনে পড়ছে না।
এরপর আইনজীবী সাক্ষী শাহরিয়ার কবীরের দেয়া জবানবন্ধী নিয়ে কন্ট্রাকডিকশন প্রশ্ন করেন।
প্রশ্ন : ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের কথা বলতে গেলে আমাদের শুরু করতে হবে ১৯৪৭ সাল থেকে এ কথাটি আপনি তদন্ত কর্মকর্তার কাছে বলেননি।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন: তদন্ত কর্মকর্তার কাছে মুনতাসীর মামুনের বইয়ের বিষয়টি আপনি বলেননি।
উত্তর : সত্য, কারণে সে সময় মুনতাসীর মামুনের বইটি প্রকাশিত হয়নি।
এর পর আসামি পক্ষের আইনজীবী মাওলানা মওদুদীর ছেলে ফারুক মওদুদীর সঙ্গে কথা বলার বিষয়ে শাহরিয়ার কবির যে কথা জবানবন্দীতে বলেছেন সে বিষয়টি তদন্ত কর্মকর্তার কাছে বলেছেন কি না জানতে চাইলে শাহরিয়ার কবির বলেন, আমি ফারুক মওদুদী সম্পর্কে কোন কথা তদন্ত সংস্থার কাছে বলিনি। কারণ তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলার সময় আমার ফারুক মওদুদীর সঙ্গে কথা হয়।
উল্লেখ্য, গত ২৬ আগস্ট শাহরিয়ার কবির জামায়াত নেতা মুজাহিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের প্রথম সাক্ষী হিসেবে তার জবানবন্দী পেশ করেন। বৃহস্পতিবার তাঁর জবানবন্দী অসমাপ্ত রেখে ২ সেপ্টেম্বর রবিবার পর্যন্ত মুলতবি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।
মোশারফ হোসেন
তালুকদার
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে পঞ্চম সাক্ষী মোশারফ হোসেন তালুকদারের জেরা অব্যাহত রয়েছে। আসামি পক্ষের আইনজীবী কফিল উদ্দিন চৌধুরী সাক্ষীকে জেরা করেন। পরবর্তী জেরার দিন নিধারণ করা হয়েছে ৩ সেপ্টেম্বর। বুধবার সাক্ষী তাঁর জবানবন্দীতে বলেন, ‘১৯৭১ সালে আমার বড় ভাই শহীদ গোলাম মোস্তফা তালুকদারের ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার শেষের দিকে শেরপুর আলবদর বাহিনীপ্রধান কামারুজ্জামানের নেতৃত্বে ধরে নিয়ে গিয়ে নৃসংসভাবে হত্যা করা হয়েছে।’ ‘আমার ভাই গোলাম মোস্তফা তালুকদারকে শেরপুরের মৃগী নদীর শেরী ব্রিজের ওপর নিয়ে গিয়ে প্রথমে বেয়নেট দিয়ে আঘাত করে পরে বেয়নেট দিয়ে ডান পায়ের হাঁটুর নিচের মাংসপেশী কেটে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়।’ এর পর তাকে জেরা করা হয়। বৃহস্পতিবারও অসমাপ্ত জেরা করা হয়েছে।
জেরার কিছু অংশ নিম্নে দেয়া হলোÑ
প্রশ্ন : আপনার ভাই ১৯৭১ সালে যখন এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন, তখন তিনি কি গ্রাম থেকে পরীক্ষা দিয়েছেন, না শহর থেকে?
উত্তর : শেরপুর শহরে থেকে।
প্রশ্ন : আপনাদের বাসায় থেকে দিয়েছেন না অন্য বাসায় থেকে?
উত্তর : অন্য বাসায়।
প্রশ্ন : সেটা কার বাসা?
উত্তর : আতর আলী সাহেবের বাসা।
প্রশ্ন : আতর আলী সাহেব আপনার কি হন?
উত্তর : আমার গ্রামসম্পর্কের ফুপা।
প্রশ্ন : আপনার ফুপুর নাম কি আবেদা?
উত্তর : জি।
প্রশ্ন : আপনার সেই ফুপুকি বেঁচে আছেন।
উত্তর : হ্যাঁ।
প্রশ্ন : তার কি পাঁচ ছেলে তিন মেয়ে?
উত্তর : আমার জানা নেই।
প্রশ্ন : আপনার ফুপুর বাসা থেকে কলেজ মোড় কত দূরে?
উত্তর : আনুমানিক দুই থেকে আড়াই কিলোমিটার।
প্রশ্ন : আপনাদের শেরপুর শহরের বাসাটির বিপরীত দিকেই তো থানা?
উত্তর : সত্য।
প্রশ্ন : থানার পাশে শেরপুর ডাকবাংলো?
উত্তর : সত্য।
প্রশ্ন : আপনাদের বাসার আশপাশে কোন সিনেমা হল ছিল?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : আপনাদের বাসাটি যে এলাকায় ছিল সেখানে ২০ থেকে ২৫টি দোকান ছিল?
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : আপনাদের ওই বাসার উত্তর পাশে লাগানো বাসাটি কার ছিল।
উত্তর : উত্তর পাশে কোন বাসা ছিল না, মাঠ ছিল।
প্রশ্ন : তার পরে কার বাসা ছিল?
উত্তর : আমার মনে নেই।
প্রশ্ন : আপনার বাসার দক্ষিণে কার বাড়ি ছিল?
উত্তর : নুরুল হক সাহেবের খালি জায়গা, পরে তার বাসা।
প্রশ্ন : পূর্বে কার বাড়ি ছিল?
উত্তর : সুকুমারদের বাড়ি।

No comments

Powered by Blogger.