অবৈধ ভিওআইপি-সরকারি সংস্থার লুটপাট বন্ধ করা হোক

২০১২-১৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা এডিপি ধরা হয়েছে ৫৫ হাজার কোটি টাকা এবং বাজেটে আয়-ব্যয়ের ঘাটতি দেখানো হয়েছে ৫২ হাজার কোটি টাকা। ফলে সরকারকে বিপুল অর্থ ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হবে। তার পরও অর্থের অভাবে উন্নয়ন কতটুকু হবে তা নিয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।


যে দেশে সরকারের আয়-ব্যয়ের চিত্র বা অর্থনীতির অবস্থা এতটাই করুণ, সে দেশেই সরকারি সংস্থাগুলো বছরের পর বছর দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকা ক্ষতি করে চলেছে। গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত একটি খবরে দেখা যায়, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কম্পানি লিমিটেড বা বিটিসিএল কেবল অবৈধ ভিওআইপির মাধ্যমে বছরে সরকারের কয়েক হাজার কোটি টাকার ক্ষতি করছে। এ রকম আরো অনেক সরকারি কম্পানিই প্রভাবশালীদের সহায়তায় রাষ্ট্রের সম্পদ লুটেপুটে খাচ্ছে। অথচ সরকার এসব ক্ষতির বোঝা ক্রমাগত জনগণের কাঁধে চাপিয়ে জনজীবনকে রীতিমতো দুঃসহ করে তুলেছে।
প্রকাশিত খবরে বিটিসিএলেরই একজন প্রকৌশলী যে উপমাটি দিয়েছেন, তা বিশ্লেষণ করলেই লুটপাট সম্পর্কে কিছুটা আঁচ পাওয়া সম্ভব। তিনি বলেছেন, 'দেশে ভিওআইপির অবৈধ কারবারের সূচনা হয় বিটিটিবি বা আজকের বিটিসিএলের মাধ্যমে। এক যুগ আগে এর শুরুটা ছিল আঙুলে সুচ ফুটিয়ে রক্ত নেওয়ার মতো। পরে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে হাতের রগ থেকে রক্ত নেওয়ার অবস্থা ঘটে। আর এখন সরাসরি হৃৎপিণ্ড থেকে রক্ত নেওয়া হচ্ছে।' গত সেপ্টেম্বরে যেখানে বৈধ পথে বিদেশ থেকে দৈনিক সাড়ে চার কোটি মিনিট কল আসত সেখানে এখন আসে দৈনিক সাড়ে তিন কোটি মিনিট। অর্থাৎ দৈনিক এক কোটিরও বেশি কল চলে গেছে অবৈধ পথে। এতে বিটিসিএলের হিসাব মতেই, প্রতিদিনের ক্ষতির পরিমাণ দেড় কোটি টাকারও বেশি। ধারণা করা হয়, কেবল বৈদেশিক কল থেকেই প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বিটিসিএলের একটি অসাধু চক্র। নিয়ন্ত্রক সংস্থা যাতে বিটিসিএলের রেকর্ড থেকে অবৈধ কল শনাক্ত করতে না পারে সে জন্য কল ডিটেইল রেকর্ডস (সিডিআর) নষ্ট করে ফেলা হয়। বৈদেশিক ইনকামিং কলের জন্য যেসব বিদেশি ক্যারিয়ার বিটিসিএলের সঙ্গে কাজ করছিল সেসব ক্যারিয়ারের অনেকেই কয়েক শ কোটি টাকা বাকি রেখে লাপাত্তা হয়ে গেছে। তাদের সঙ্গে করা চুক্তিতে ব্যাংক গ্যারান্টিসহ অনেক ভুয়া তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। ফলে বকেয়া অর্থ পাওয়ার সম্ভাবনাও প্রায় নেই বললেই চলে। বিটিসিএলের এই অসাধু চক্রটি এতটাই ক্ষমতাশালী যে এর আগে তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে শাস্তিমূলক বদলির শিকার হয়েছিলেন প্রতিষ্ঠানের খোদ ব্যবস্থাপনা পরিচালকই। আমাদের বোধগম্য নয়, রাষ্ট্রের জন্য সর্বনাশা এই হাতি রাষ্ট্র কেন লালন করে যাচ্ছে? আমরা ভেবে পাই না, অর্থ সংকটের কারণে সরকার যেখানে ভর্তুকি প্রত্যাহার করছে, দফায় দফায় জ্বালানি তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানিসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়িয়ে চলেছে, সেখানে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে সরকার কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন? দুর্নীতি কমানো এবং স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করে ক্ষমতায় আসা মহাজোট সরকারের কাছ থেকে এটা প্রত্যাশিত নয়। দেশের মানুষ অন্ধ নয়, তারা সবই দেখছে।

No comments

Powered by Blogger.