মেধাবী মুখ-জাকির ও হাসানের দ্বৈরথ by নিধি চাক্মা

শুরু থেকেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। এক সেমিস্টারে একজন ফার্স্ট হলে অন্য সেমিস্টারে অপরজনকে ফার্স্ট হতেই হবে। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা। মনের মধ্যে সব সময় ভয় কখন না জানি অন্যজন ফার্স্ট হয়ে যায়। তবে শেষ পর্যন্ত কারও মন ভাঙেনি। কাউকে কষ্ট পেতে হয়নি।


বলছিলাম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের যুগ্মভাবে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হওয়া হাসান ইমাম এবং জাকির হোসেনের কথা। তাঁদের উভয়ের সিজিপিএ ৩.৯০।
নরসিংদীর ছেলে হাসান ইমাম। পরিবারে রাজু নামে পরিচিত। হাসানের বাবা বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা, আর মা গৃহিণী। চার ভাই-বোনের মধ্যে তিনিই সবার বড়। পাঠ্যবই পড়ার পাশাপাশি অবসর সময়ে আড্ডা দিতে, ছবি দেখতে পছন্দ করেন। উপন্যাসের প্রতি তাঁর দারুণ ঝোঁক। হুমায়ূন আহমেদ এবং শরৎচন্দ্রের অন্ধ ভক্ত তিনি। পছন্দের বইয়ের তালিকার শীর্ষে ‘হিমু সিরিজ’। তাঁর মতে, হিমু সিরিজের যেকোনো বই পড়লেই বোঝা যাবে বইটির তাৎপর্য কী! শহরের যান্ত্রিকতা ছেড়ে হলুদ পাঞ্জাবি পরে হিমু হয়ে যেতে ইচ্ছে করে তাঁর! গলা ছেড়ে গান করেন। বন্ধুরা তাঁর গানের গলার প্রশংসা করেন। খেলাধুলাতেও সমান পারদর্শী। একই সঙ্গে যুক্ত আছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতর্ক এবং আবৃত্তির সংঘে। ইতিমধ্যে আবৃত্তি সংঘ থেকে আবৃত্তির ওপর একটি কোর্স নিয়েছেন। প্রথমত স্বপ্ন ছিল কোনো প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিতে কাজ করা। কিন্তু বর্তমানে শিক্ষক হিসেবে নিজেকে উৎসর্গ করতে পারাটাই জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া বলে তিনি মনে করেন। এর পাশাপাশি হাসান অবশ্যই মার্কেটিং নিয়ে গবেষণা করতে চান।
জাকির হোসেনের বাড়ি হবিগঞ্জে। বাবা রিয়াদে কর্মরত। তাই সার্বক্ষণিক সঙ্গী মা। মা-ই সবকিছুর অনুপ্রেরক হিসেবে কাজ করেছেন। দিকনিদের্শনা দিয়ে, সাহস দিয়ে সহযোগিতা করেছেন নিজের সাধ্যমতো। তথ্য ও ঘটনানির্ভর ছবি দেখতে তাঁর ভীষণ ভালো লাগে। সম্প্রতি গেরিলা ছবিটি তাঁর মনকে ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছে। বই পড়তে ভালো লাগে। কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর কাছে অন্য রকম এক ব্যক্তিত্ব। আড্ডা, ক্রিকেট খেলা সবকিছুই ভালো লাগে। একটু ব্যতিক্রমধর্মী বলতে হবে জাকির হোসেনকে—সৃজনশীলও বটে। ভবিষ্যতে বিভাগের শিক্ষক হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন এবং দেশের ফেলে দেওয়া কাঁচামালগুলো কীভাবে ভোক্তাদের জন্য ভোগ্যপণ্যে পরিণত করা যায় সেই ব্যাপারে কাজ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সম্মান চূড়ান্ত পরীক্ষার এই ফলাফল তাঁদের কাছে ভবিষ্যতেও ভালো করার অনুপ্রেরণা দেয়। তাঁদের মতে, নিয়মিত ক্লাস লেকচার, দিনের পড়া দিনে শেষ করলে সহজেই ভালো ফলাফলের আশা করা যায়। মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী হিসেবে তাঁরা অত্যন্ত গর্বিত এবং জগন্নাথের মার্কেটিং বিভাগকে তাঁরা অত্যন্ত আধুনিক বিভাগ বলে মনে করেন। বিভাগের প্রত্যেক শিক্ষকের কাছে তাঁরা ঋণী তাঁদের এই ভালো ফলাফলের জন্য। ভবিষ্যতে দেশের মানুষের স্বার্থে কাজ করে তাঁরা এগিয়ে যেতে চান বহুদূর, তাঁদের স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যপথে।

No comments

Powered by Blogger.