রাজনৈতিক কর্মসূচির দায়-দুর্ভোগের শিকার সাধারণ মানুষ

রাজধানীতে একটি সমাবেশের ডাক দিয়েছিল বিএনপিসহ বিরোধীদলীয় জোট। একেবারেই একটি রুটিন রাজনৈতিক কর্মসূচি। অথচ এর মাসুল গুনতে হলো সাধারণ মানুষকে। সোমবারের ঢাকা অনেকটাই ছিল সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন। মহানগরীতে বসবাসকারী নাগরিকদেরও ঘর থেকে বেরিয়েই বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়েছে।


কারণ গণপরিবহন ছিল খুবই সীমিত। যেন হরতাল পরিস্থিতি বিরাজ করছিল রাজধানীজুড়ে। দূরপাল্লার গাড়ি এবং নৌযানও খুব একটা চলাচল করেনি। অন্যদিকে রাস্তা বন্ধ করে সমাবেশ করায় অনেকটাই অচল হয়ে পড়ে নগরজীবন।
বিরোধী দল শুধু নয়, যেকোনো রাজনৈতিক দলেরই কর্মসূচি পালনের অধিকার আছে। তবে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের আগে নাগরিক অধিকারের বিষয়টি বিশেষভাবে বিবেচনা করে দেখা সব রাজনৈতিক দলেরই কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো সেই বিবেচনা কতটা করে থাকে, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট এবারের সমাবেশে ১৫ লাখ লোক জড়ো করার ঘোষণা দিয়েছিল। আজকের দিনে, যখন প্রযুক্তির কল্যাণে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে তাৎক্ষণিক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব, তখন রাজধানীর একটি সমাবেশে ১৫ লাখ লোক সমাগমের চিন্তা কতটা বাস্তবসম্মত, সেটা বিবেচনা করে দেখা দরকার। সমাবেশস্থলে লোক সমাগম করে দলীয় শক্তির মহড়া প্রদর্শনের দিন কি এখন আছে? বিশেষ করে বিরোধী দল যেখানে সমাবেশ করেছে, সেখানে ১৫ লাখ লোকের স্থান সংকুলান হওয়া কি আদৌ সম্ভব? বিরোধী দল সমাবেশ করার আগে বিষয়টি ভেবে দেখলে ভালো হয়।
অন্যদিকে বিরোধী দলের সমাবেশে সরকার বাধা দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রাজধানী ঢাকার দিকে কোনো বাস বা লঞ্চ না আসা, দূরপাল্লার যানবাহন ছাড়া নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অলিখিত নিষেধাজ্ঞা সাধারণ মানুষের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সোমবার দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ছেড়ে আসা দূরপাল্লার বাস ঢাকা শহরে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়- এমন অভিযোগ বিরোধী দলের। কেবল বিরোধী দলের বড় কর্মসূচির সময়ই নাশকতার আশঙ্কায় থাকে পুলিশ। রাজধানীর পাশাপাশি বাইরের জেলাগুলোতেও বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়। বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মসূচি সামনে রেখে পুলিশের গ্রেপ্তার-বাণিজ্যের ঘটনা এর আগেও ঘটেছে।
সরকারি দল সব সময়ই বিরোধী দলকে রাজনৈতিক কর্মসূচি থেকে দূরে রাখতে চায়। অন্যদিকে বিরোধী দল বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে সরকারকে চাপে রাখতে চায়। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, সরকার ও বিরোধী দলের এই চাপাচাপির শিকার হতে হয় সাধারণ মানুষকে। যেমনটি ঘটেছে গত সোমবার। একদিকে রাস্তা বন্ধ করে বিরোধী দল যে সমাবেশ করেছে, তার চাপ সইতে হয়েছে রাজধানীবাসীকে। সোমবারের সমাবেশের চাপ কিন্তু গতকালও রাজধানীবাসীকে সহ্য করতে হয়। গতকাল অসহনীয় যানজটের শিকার হয়েছে নগরবাসী। দুই দলের এই অসহিষ্ণু রাজনীতির আর কত শিকার হবে সাধারণ মানুষ!
আমরা আগেই বলেছি, সভা-সমাবেশ যেকোনো রাজনৈতিক দলেরই গণতান্ত্রিক অধিকার। বাধা দিতে যাওয়াটা অগণতান্ত্রিক। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচিতে বাধা সৃষ্টির একটা প্রবণতা আমাদের দেশের রাজনীতিতে লক্ষ করা যায়। আবার এই গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকার প্রয়োগ করতে গিয়ে সাধারণ মানুষের নাগরিক অধিকার যাতে ক্ষুণ্ন না হয়, সেদিকেও রাজনৈতিক দলগুলোকে লক্ষ রাখতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলো যখন দেশের মানুষের স্বার্থেই কর্মসূচি পালন করে থাকে, তখন সাধারণ মানুষের অধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। ভবিষ্যতে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি যাতে নাগরিক বিড়ম্বনার কারণ না হয়, সেদিকে সবাইকে সতর্ক দৃষ্টি দিতে হবে। রাজনৈতিক কর্মসূচির দায় যেন সাধারণ মানুষকে বহন করতে না হয়, মানুষ যাতে দুর্ভোগের শিকার না হয়, সেদিকে সবার দৃষ্টি থাকা উচিত।

No comments

Powered by Blogger.