চরাচর-প্রাচীন বিক্রমপুরের ৩ স্মরণীয় ব্যক্তি by আজিজুর রহমান
যুগে যুগে বহু ক্ষণজন্মা মহাপুরুষের আবির্ভাব হয়েছে বিক্রমপুরের মাটিতে। তাঁদের জ্ঞান ও কর্মময় জীবন শুধু বিক্রমপুরকেই নয়, সমগ্র বাঙালি জাতিকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করে গেছে। প্রাচীনকালের এই মহাপুরুষদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন রাজা শ্রীচন্দ্র, অতীশ দীপঙ্কর ও ধর্মপাদ।
পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব বাংলা অর্থাৎ তৎকালীন বঙ্গরাজ্যের সবচেয়ে শক্তিশালী স্বাধীন রাজবংশ ছিল চন্দ্রবংশ (৯০০-১০৪৫ খ্রি.)। এ বংশের রাজারাই বিক্রমপুরে সর্বপ্রথম রাজধানী গড়ে তোলেন। চন্দ্রবংশের দ্বিতীয় রাজা শ্রীচন্দ্র (৯৩০-৯৭৫ খ্রি.) প্রথম বিক্রমপুরে রাজধানী প্রতিষ্ঠা করে রাজ্য পরিচালনা করেন। তিনি খুব শক্তিধর রাজা ছিলেন বলে জানা যায়। শ্রীচন্দ্র তাঁর রাজ্য উত্তর-পূর্বে কামরুপ এবং উত্তরে গৌড় পর্যন্ত বিস্তৃত করেছিলেন। তাঁর উপাধি ছিল পরমেশ্বর পরম ভট্টারক, মহারাজাধিরাজ। চন্দ্রবংশের রাজারা প্রায় ১৫০ বছর রাজত্ব করেন। এ বংশের রাজারা সবাই ছিলেন বৌদ্ধ। পরবর্তী রাজবংশের রাজারাও বিক্রমপুরকে রাজধানী করে রাজ্য পরিচালনা করেন।
প্রাচীন বিক্রমপুরের আরেকজন মহান ব্যক্তিত্ব ছিলেন শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্কর। চন্দ্রবংশের রাজা কল্যাণচন্দ্রের রাজত্বকালে (৯৭৫-১০০০ খ্রি.) সর্বকালের শ্রেষ্ঠ এই বাঙালি মনীষী ৯৮০ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গের রাজধানী বিক্রমপুরের বজ্রযোগিনী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বিক্রমপুরের এই আলোকিত সন্তান অজ্ঞানতা ও অন্ধকারের জগতে উদিত হয়েছিলেন জ্ঞানের সূর্যমশাল নিয়ে। তাঁর প্রতিভা ও মনীষার উজ্জ্বল জ্যোতিতে প্লাবিত হয়েছিল সমগ্র এশিয়া, সমগ্র বৌদ্ধজগৎ। বিক্রমপুরে ক্ষণজন্মা এই মহাপুরুষ জ্ঞানের ভুবনে তাঁর অসামান্য অবদানের মাধ্যমে বাঙালি জাতিকেও বিশ্বের দরবারে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করে গেছেন। 'এশিয়ার চোখ' হিসেবে বিশ্বখ্যাত দীপঙ্কর শুধু একজন বৌদ্ধ ভিক্ষুই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একাধারে একজন কবি, দার্শনিক, শব্দবিজ্ঞানী, সংগীতজ্ঞ, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, পরিকল্পনাবিদ ও সমাজ সংস্কারক। তিনি দুই শতাধিক মৌলিক গ্রন্থ রচনা, অনুবাদ ও সম্পাদনা করেন। এই বিস্ময়কর প্রতিভার জন্য তিনি তিব্বতি উপাধি 'অতীশ' অর্থাৎ 'মহান' বা 'শ্রেষ্ঠ' লাভ করেন।
প্রাচীন বিক্রমপুরের আরো একজন বিখ্যাত মনীষী হচ্ছেন কবি-দার্শনিক ধর্মপাদ। যে কয়েকজন মহাপণ্ডিত বাংলা সাহিত্যের উন্মেষ ঘটিয়েছেন, ধর্মপাদ হচ্ছেন তাঁদের একজন। বাংলা সাহিত্যের প্রকৃত বিকাশ ঘটেছিল মধ্যযুগে। প্রাচীনকালেও পাল, চন্দ্র ও সেন রাজারা ভাষা-সাহিত্য, শিল্প-সংস্কৃতির যথেষ্ট পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। তাঁদের শাসনামলে বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন হিসেবে খ্যাত 'চর্যাপদ' রচনা করেন বৌদ্ধ ধর্মগুরুরা। বাঙালির দলিল হিসেবে সর্বজন স্বীকৃত 'চর্যাপদ' গ্রন্থে যে ২৫ জন কবি-দার্শনিকের কবিতা বা সাধনাজ্ঞান প্রকাশিত হয়েছে তাঁদের মধ্যে কয়েকজন আছেন বিক্রমপুরের সন্তান। তাঁদের অন্যতম একজন হলেন ধর্মপাদ।
আজিজুর রহমান
প্রাচীন বিক্রমপুরের আরেকজন মহান ব্যক্তিত্ব ছিলেন শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্কর। চন্দ্রবংশের রাজা কল্যাণচন্দ্রের রাজত্বকালে (৯৭৫-১০০০ খ্রি.) সর্বকালের শ্রেষ্ঠ এই বাঙালি মনীষী ৯৮০ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গের রাজধানী বিক্রমপুরের বজ্রযোগিনী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বিক্রমপুরের এই আলোকিত সন্তান অজ্ঞানতা ও অন্ধকারের জগতে উদিত হয়েছিলেন জ্ঞানের সূর্যমশাল নিয়ে। তাঁর প্রতিভা ও মনীষার উজ্জ্বল জ্যোতিতে প্লাবিত হয়েছিল সমগ্র এশিয়া, সমগ্র বৌদ্ধজগৎ। বিক্রমপুরে ক্ষণজন্মা এই মহাপুরুষ জ্ঞানের ভুবনে তাঁর অসামান্য অবদানের মাধ্যমে বাঙালি জাতিকেও বিশ্বের দরবারে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করে গেছেন। 'এশিয়ার চোখ' হিসেবে বিশ্বখ্যাত দীপঙ্কর শুধু একজন বৌদ্ধ ভিক্ষুই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একাধারে একজন কবি, দার্শনিক, শব্দবিজ্ঞানী, সংগীতজ্ঞ, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, পরিকল্পনাবিদ ও সমাজ সংস্কারক। তিনি দুই শতাধিক মৌলিক গ্রন্থ রচনা, অনুবাদ ও সম্পাদনা করেন। এই বিস্ময়কর প্রতিভার জন্য তিনি তিব্বতি উপাধি 'অতীশ' অর্থাৎ 'মহান' বা 'শ্রেষ্ঠ' লাভ করেন।
প্রাচীন বিক্রমপুরের আরো একজন বিখ্যাত মনীষী হচ্ছেন কবি-দার্শনিক ধর্মপাদ। যে কয়েকজন মহাপণ্ডিত বাংলা সাহিত্যের উন্মেষ ঘটিয়েছেন, ধর্মপাদ হচ্ছেন তাঁদের একজন। বাংলা সাহিত্যের প্রকৃত বিকাশ ঘটেছিল মধ্যযুগে। প্রাচীনকালেও পাল, চন্দ্র ও সেন রাজারা ভাষা-সাহিত্য, শিল্প-সংস্কৃতির যথেষ্ট পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। তাঁদের শাসনামলে বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন হিসেবে খ্যাত 'চর্যাপদ' রচনা করেন বৌদ্ধ ধর্মগুরুরা। বাঙালির দলিল হিসেবে সর্বজন স্বীকৃত 'চর্যাপদ' গ্রন্থে যে ২৫ জন কবি-দার্শনিকের কবিতা বা সাধনাজ্ঞান প্রকাশিত হয়েছে তাঁদের মধ্যে কয়েকজন আছেন বিক্রমপুরের সন্তান। তাঁদের অন্যতম একজন হলেন ধর্মপাদ।
আজিজুর রহমান
No comments