নানান রঙের মিলন by আলতাফ শাহনেওয়াজ
বাতাসে আগেই গুঞ্জন ছিল। মুঠোফোনে তাঁর সঙ্গে যখন কথা হলো, তিনি জানালেন, ‘শিল্পকলায় যাচ্ছি। আজ আমার দল দেশ নাটকের নতুন প্রযোজনা অরক্ষিতার শো আছে।’ তাঁর সঙ্গে কথা হওয়ার পর থেকে গুঞ্জন যেন নতুন করে ভিত্তি পেল। মুঠোফোনেই ঠিক হলো পরের দিন সকালে তাঁর বাসায় সামনাসামনি বাকি কথা হবে।
যথারীতি পরের দিন বশিরউদ্দিন রোডে তাঁর বাসায় উপস্থিত হয়ে বাতাস থেকে নামিয়ে আনলাম গুঞ্জনটি, ‘শোনা যাচ্ছে, আপনি আবার মঞ্চে ফিরছেন?’ এবার আয়েশি ভঙ্গিতে খানিকটা নড়েচড়ে বসলেন অভিনেতা আনিসুর রহমান। আনিসুর রহমান মিলন নামেই সবার কাছে পরিচিত তিনি। পরনে শর্টসের ওপর স্ট্রাইপের টি-শার্ট। শরীরের সব অভিব্যক্তিতেই কেমন যেন ছুটির মেজাজ। সেই আমেজেই বললেন, ‘আমি তো মঞ্চের মানুষ। মাঝখানে নানা ব্যস্ততার কারণে মঞ্চে নিয়মিত সময় দিতে পারিনি। ২০০৮ সালে বীরসা কাব্যতে শেষবার মঞ্চে উঠেছিলাম। তারপর দীর্ঘ বিরতি। এ বছরই নতুন করে মঞ্চে কাজ শুরু করব।’ কথাগুলো বলতে বলতে আরেকটু আয়েশিভাবে আসন করে বসলেন মিলন। হঠাৎই শুটিং বাতিল হয়েছে। ফলে এই আচমকা ছুটি বেশ ভালোভাবেই উপভোগ করছেন বোঝা গেল। কথাতেও ফুটে উঠল সেই রেশ, ‘সারা দিন শুটিং, অ্যাকশন, কাট...কখনো কখনো ক্লান্ত হয়ে পড়ি। তাই হঠাৎ ছুটিটি যখন মিলে গেল, কাউকে কিচ্ছু জানাইনি। বাসায় দিনভর ঘুমিয়েছি।’
তিনি যতই ক্লান্তি আমার ক্ষমা করো প্রভু বলুন না কেন, শুটিং স্পটের মনিটর ও ক্যামেরাকে ভুলে যেতে পারেন না কিছুতেই—দায়িত্ববোধ বলে কথা। বললেন, ‘কাল থেকেই আবার সকাল-বিকেল পুরোদমে কাজে নেমে পড়তে হবে। এর মাঝে চয়নিকা চৌধুরীর সমুদ্রসহ অনেক নাটকের কাজ শেষ করেছি। সামনে ঈদের অনেক কাজ আছে।’ মিলন এবার নাটকগুলোর নাম মনে করতে চাইলেন। একসময় সলজ্জ হাসি দিয়ে বললেন, ‘আমার না নাটকের নাম মনে থাকে না, কেন যেন গুলিয়ে যায়। দাঁড়ান, মনে করার চেষ্টা করি—জুলফিকার চঞ্চলের হাতেমতাই, সকাল আহমেদের নসিহত, রাজিবুল ইসলাম রাজিবের একটা নাটক—এ রকম বেশ কয়েকটিতে কাজ করছি। এ ছাড়া শিগগির তুহিন অবন্ত, মারুফ মিঠু, আশিকুর রহমান আশিক, অর্ক মোস্তফার নাটকে কাজ করব।’ হঠাৎ কী যেন মনে পড়েছে, মুখাবয়বজুড়ে এমন অভিব্যক্তি তাঁর, ‘অর্ক মোস্তফার নাটকের নামটা মনে করতে চাইছিলাম, মনে পড়েছে—রোমিও, ওথেলো অথবা হ্যামলেট।’
নাটকের নামটি শেক্সপিয়ারের চরিত্রের নামগুলোকে মিলিয়ে তৈরি করা। ফলে না চাইলেও আড্ডার মধ্যে আবার উঁকি মারে মঞ্চের আলো-আঁধার।
টেলিভিশনে অভিনয়ের ক্ষেত্রে মঞ্চের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা আপনাকে কীভাবে সাহায্য করে?
এক লাইনের প্রশ্নটি মাত্র ছোড়া হলো। মুহূর্তেই সেটি লুফে নিলেন মিলন। বললেন, ‘সত্যি বলতে কী, মঞ্চই আমাকে তৈরি করেছে। এই যে অর্ক মোস্তফার যে নাটকটির কথা বলা হলো—এর মধ্যে শেক্সপিয়ারের রোমিও, ওথেলো ও হ্যামলেট-এর প্রসঙ্গ আছে। ওই চরিত্রদের ভালোভাবে জানা না থাকলে এ নাটকে অভিনয় করা সম্ভব নয়। মঞ্চে কাজ করার সুযোগে আমি ওই চরিত্রগুলোর আদ্যোপান্ত জানি। এ ছাড়া মঞ্চে কাজ করতে গিয়েই স্তানিস্লাভস্কি, মোয়ারহোল্ড, ব্রেখ্ট—এঁদের অভিনয়পদ্ধতি হাতে-কলমে শিখেছি। টেলিভিশনের অভিনয়ে এগুলোও কাজে লাগে বৈকি।’
কথা বলতে বলতে আনিসুর রহমান মিলনের সামনে যেন বা এখন তৈরি হয়েছে অদৃশ্য এক ভুবন। সেই ভুবন থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসছে ষষ্ঠ শ্রেণীপড়ুয়া এক কিশোর। কলাবাগানের আর্তনাদ থিয়েটারের ছোট্ট মঞ্চ ডিঙিয়ে সে একদিন পা রাখল শিল্পকলার নাট্যশালায়, তারপর টেলিভিশনের চারকোনা ফ্রেমে। এরপর দেখি, এখন তিনি আমাদের সামনে বসে কথার ফুলকিতে আসর মাত করছেন।
আনিসুর রহমান মিলনের আয়েশি মেজাজ তখনো বহাল। জানতে চাইলাম, দর্শক তো আপনাকে গ্রামীণ চরিত্রেই বেশি পছন্দ করেন।
এক পলকেই আয়েশ ভেঙে জেগে উঠলেন তিনি, ‘আমি কখনোই একই ধরনের চরিত্রে বন্দী থাকতে চাইনি। তাই দর্শক যখন আমাকে গ্রামীণ পটভূমির চরিত্রে পছন্দ করতে শুরু করলেন, তখনই আমি ওই রকম চরিত্রে অভিনয় করা কমিয়ে দিলাম। অভিনেতা হিসেবে সব সময়ই আমি নিজেকে ভাঙতে চাই, ভেঙে ভেঙে আবার গড়তে চাই।’
ভাঙা স্বর নয়, তাঁর কণ্ঠে এখন দৃঢ়তা। সেই দৃঢ় কণ্ঠের ভেতর কান পাতলে শোনা যাবে ‘আত্মবিশ্বাস’ শব্দটি আনিসুর রহমান মিলনের মধ্যে আঁকা হচ্ছে নানান রঙে।
তিনি যতই ক্লান্তি আমার ক্ষমা করো প্রভু বলুন না কেন, শুটিং স্পটের মনিটর ও ক্যামেরাকে ভুলে যেতে পারেন না কিছুতেই—দায়িত্ববোধ বলে কথা। বললেন, ‘কাল থেকেই আবার সকাল-বিকেল পুরোদমে কাজে নেমে পড়তে হবে। এর মাঝে চয়নিকা চৌধুরীর সমুদ্রসহ অনেক নাটকের কাজ শেষ করেছি। সামনে ঈদের অনেক কাজ আছে।’ মিলন এবার নাটকগুলোর নাম মনে করতে চাইলেন। একসময় সলজ্জ হাসি দিয়ে বললেন, ‘আমার না নাটকের নাম মনে থাকে না, কেন যেন গুলিয়ে যায়। দাঁড়ান, মনে করার চেষ্টা করি—জুলফিকার চঞ্চলের হাতেমতাই, সকাল আহমেদের নসিহত, রাজিবুল ইসলাম রাজিবের একটা নাটক—এ রকম বেশ কয়েকটিতে কাজ করছি। এ ছাড়া শিগগির তুহিন অবন্ত, মারুফ মিঠু, আশিকুর রহমান আশিক, অর্ক মোস্তফার নাটকে কাজ করব।’ হঠাৎ কী যেন মনে পড়েছে, মুখাবয়বজুড়ে এমন অভিব্যক্তি তাঁর, ‘অর্ক মোস্তফার নাটকের নামটা মনে করতে চাইছিলাম, মনে পড়েছে—রোমিও, ওথেলো অথবা হ্যামলেট।’
নাটকের নামটি শেক্সপিয়ারের চরিত্রের নামগুলোকে মিলিয়ে তৈরি করা। ফলে না চাইলেও আড্ডার মধ্যে আবার উঁকি মারে মঞ্চের আলো-আঁধার।
টেলিভিশনে অভিনয়ের ক্ষেত্রে মঞ্চের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা আপনাকে কীভাবে সাহায্য করে?
এক লাইনের প্রশ্নটি মাত্র ছোড়া হলো। মুহূর্তেই সেটি লুফে নিলেন মিলন। বললেন, ‘সত্যি বলতে কী, মঞ্চই আমাকে তৈরি করেছে। এই যে অর্ক মোস্তফার যে নাটকটির কথা বলা হলো—এর মধ্যে শেক্সপিয়ারের রোমিও, ওথেলো ও হ্যামলেট-এর প্রসঙ্গ আছে। ওই চরিত্রদের ভালোভাবে জানা না থাকলে এ নাটকে অভিনয় করা সম্ভব নয়। মঞ্চে কাজ করার সুযোগে আমি ওই চরিত্রগুলোর আদ্যোপান্ত জানি। এ ছাড়া মঞ্চে কাজ করতে গিয়েই স্তানিস্লাভস্কি, মোয়ারহোল্ড, ব্রেখ্ট—এঁদের অভিনয়পদ্ধতি হাতে-কলমে শিখেছি। টেলিভিশনের অভিনয়ে এগুলোও কাজে লাগে বৈকি।’
কথা বলতে বলতে আনিসুর রহমান মিলনের সামনে যেন বা এখন তৈরি হয়েছে অদৃশ্য এক ভুবন। সেই ভুবন থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসছে ষষ্ঠ শ্রেণীপড়ুয়া এক কিশোর। কলাবাগানের আর্তনাদ থিয়েটারের ছোট্ট মঞ্চ ডিঙিয়ে সে একদিন পা রাখল শিল্পকলার নাট্যশালায়, তারপর টেলিভিশনের চারকোনা ফ্রেমে। এরপর দেখি, এখন তিনি আমাদের সামনে বসে কথার ফুলকিতে আসর মাত করছেন।
আনিসুর রহমান মিলনের আয়েশি মেজাজ তখনো বহাল। জানতে চাইলাম, দর্শক তো আপনাকে গ্রামীণ চরিত্রেই বেশি পছন্দ করেন।
এক পলকেই আয়েশ ভেঙে জেগে উঠলেন তিনি, ‘আমি কখনোই একই ধরনের চরিত্রে বন্দী থাকতে চাইনি। তাই দর্শক যখন আমাকে গ্রামীণ পটভূমির চরিত্রে পছন্দ করতে শুরু করলেন, তখনই আমি ওই রকম চরিত্রে অভিনয় করা কমিয়ে দিলাম। অভিনেতা হিসেবে সব সময়ই আমি নিজেকে ভাঙতে চাই, ভেঙে ভেঙে আবার গড়তে চাই।’
ভাঙা স্বর নয়, তাঁর কণ্ঠে এখন দৃঢ়তা। সেই দৃঢ় কণ্ঠের ভেতর কান পাতলে শোনা যাবে ‘আত্মবিশ্বাস’ শব্দটি আনিসুর রহমান মিলনের মধ্যে আঁকা হচ্ছে নানান রঙে।
No comments