চলছে কারুমেলা
লাল, নীল, হলুদ সুতার এফোঁড়-ওফোঁড় করে তিনি একমনে বুনে চলছিলেন একেকটি হাতপাখা। নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা সুচিত্রা সূত্রধরের কথাই বলছি। পাশে বসে থাকা ছোট নাতি খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছিল তাঁর এ কারুকর্ম। ছোটবেলায় এভাবে দাদির কাছে দেখতে দেখতেই একদিন কাজটা শেখা হয়েছিল সুচিত্রা সূত্রধরের।
১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী গ্যালারিতে জমে ওঠে কারুমেলা ১৪১৭। শুধু হাতপাখা নয়, শখের হাঁড়ি, পটচিত্র, হোগলা, শোলাশিল্প, চর্মশিল্প, অলংকারশিল্প, শতরঞ্জি, মৃৎশিল্প আর কাঠের কারুকার্য শোভা পাচ্ছে মেলায়। সুচশিল্পের পশরা সাজাতে সারা দেশ থেকে ছুটে এসেছেন কারুশিল্পীরা। বান্দরবানের মধ্যপাড়া থেকে কারুশিল্পী আবদুল আউয়াল মোল্লাও বসে বসে কাজ করে যাচ্ছেন আদিবাসী পুতুল, হাতি, ঘোড়া, মাছ ও পাখি নিয়ে। কুষ্টিয়ার শাহাবউদ্দীন বাজাচ্ছেন নিজের বানানো একতারা। সুবল তঞ্চংগা বুনে যাচ্ছেন তঞ্চংগা। রংপুরের বিউটি ও সোহরাব এসেছেন রঙিন সব শতরঞ্জি নিয়ে। রাজশাহীর শখের হাঁড়িও বাদ পড়েনি। মুখোশ, বনমালী, সরস্বতীর ছবি নিয়ে পটশিল্পীরাও হাজির হয়েছেন। মৃত্যুঞ্জয় পালের চাকায় তৈরি হচ্ছে একের পর এক মাটির হাঁড়ি। রঘুনাথের অচিন পাখিও কেড়েছে দর্শনার্থীদের নজর। এ ছাড়া আছে বাঁশের বাঁশি, চামড়ার জুতা, সুতার কাজ, রুপার গয়না, পটশিল্প, কাসা-পিতলের কাজ আর শীতলপাটি। ৪৩টি কারুশিল্প-মাধ্যমে ৪২ জন শিল্পী অংশ নেন এ মেলায়। বাংলাদেশ জাতীয় কারুশিল্প পরিষদ ও বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এ কারুমেলায় চারজন শ্রেষ্ঠ কারুশিল্পীকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। এ মেলার উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, বাংলাদেশ জাতীয় কারুশিল্প পরিষদের সভাপতি শাহিদ হোসেন ও বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের। শুধু এক দিনের জন্য নয়, কারুশিল্পীদের পশরা সাজানো এ কারুমেলা চলবে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। ঘুরে আসতে পারেন আপনিও।
No comments