দিল্লির চিঠি-কাশ্মীরিদের অনুভূতিকে আমলে নিন by দীপাঞ্জন রায় চৌধুরী
কাশ্মীর উপত্যকায় বিক্ষোভের ১০০ দিনে গত শনিবার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ছিল ৯৬। দুই দিন পর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদাম্বরমের নেতৃত্বে সর্বদলীয় প্রতিনিধিদল যখন কাশ্মীরে পৌঁছায়, ততক্ষণে মৃতের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে গেছে।
তিন মাস ধরে কাশ্মীরে যা ঘটে চলেছে, তা মনমোহন সিং সরকারের জন্য ভারত ও ভারতের বাইরে সবচেয়ে বড়
তিন মাস ধরে কাশ্মীরে যা ঘটে চলেছে, তা মনমোহন সিং সরকারের জন্য ভারত ও ভারতের বাইরে সবচেয়ে বড়
চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের চলতি বছরের অধিবেশন বসবে আগামী সপ্তাহে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস এম কোরেশীর সাম্প্রতিক বিবৃতিগুলোয় পাকিস্তানের তরফ থেকে এটিকে আন্তর্জাতিক বিষয় হিসেবে তুলে ধরার হুমকির ইঙ্গিত পাওয়া যায়। কাশ্মীরে ভারতকে সংযম প্রদর্শন করতে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অবসান ঘটানোর জন্য আহ্বান জানিয়েছেন কোরেশী।
অন্যদিকে ভারত তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার জন্য পাকিস্তানকে সতর্ক করে দিয়েছে। এক বিবৃতিতে ভারত বলেছে, ‘জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণের কল্যাণ ও হিতের জন্য পাকিস্তান যদি এত আন্তরিক হয়, তাহলে পাকিস্তানের মাটি থেকে উদ্ভূত সব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড তাদেরই বন্ধ করতে হবে।’
কিন্তু পাকিস্তানের ভূমিকার প্রশ্নকে পাশ কাটিয়েও বলা যায়, জম্মু ও কাশ্মীরে ওমর আবদুল্লাহর রাজ্য সরকারের ভয়ানক অপশাসন আজকের এই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। বিক্ষোভরত কাশ্মীরিদের আবেগ-অনুভূতি ও স্বায়ত্তশাসনের বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে মনোযোগ দেওয়া দরকার। এটা করা হলে বর্তমান সংকট নিরসন হতে পারে। সমস্যার অভ্যন্তরীণ মাত্রা বিবেচিত হওয়ার পর বহিস্থ মাত্রার ওপর মনোযোগ দিতে হবে। বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষকদের মতে, কাশ্মীরের প্রতিশ্রুত স্বায়ত্তশাসন দেওয়ার ক্ষেত্রে বিলম্বের পরিপ্রেক্ষিতে দিল্লি ও কাশ্মীরের মধ্যে বিরাট আস্থার সংকট রয়েছে।
ভারত সরকারের উচিত এখনই আলোচনা শুরুর পরিবেশ তৈরি করা। কেননা, এবারের বিক্ষোভকারীরা রাজনীতিক নন, তাঁরা তরুণ নারী ও পুরুষ। ১৯৮৯ সালে বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ার পর বহু বছরের মধ্যে এবারের সংকট সবচেয়ে ভয়াবহ। এবারের বিক্ষোভের বৈশিষ্ট্য হলো, এটা অপশাসন ও অবিচারের বিরুদ্ধে জনগণের রোষ থেকে উদ্ভূত।
রমজান মাসজুড়েই এই সংকট চলছিল। আর সরকার কাশ্মীরের জন্য ঈদ প্যাকেজ ঘোষণার প্রস্তুতি নিয়েও হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে। এতে কাশ্মীরের জনগণের মধ্যে বিচ্ছিন্নতার বোধ আরও জোরদার হয় এবং নতুন করে সহিংসতার বিস্তার ঘটে। কাশ্মীরের রাজপথ থেকে অত্যন্ত স্পষ্টভাবে উৎসারিত হতে থাকে গুরুতর এই বার্তা: বিরাজমান পরিস্থিতি গ্রহণযোগ্য নয়।
নিরাপত্তা বাহিনীগুলো শ্রীনগরের রাজপথে বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীদের ওপর গুলি চালিয়েছে, বিক্ষোভকারীদের হত্যা করেছে। এটা করা তাদের একেবারেই উচিত হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের ওপর অনিবার্যভাবেই ক্লান্তি ও বিষণ্নতা ভর করে। তাঁরা ভাবতে থাকেন, আর কত দিন এমন কাজ চালিয়ে যেতে হবে। আর এখন সবাই তো মেনে নিচ্ছে যে কাশ্মীর কোনো আইনশৃঙ্খলা-সম্পর্কিত সমস্যা নয়, সমস্যাটি রাজনৈতিক। ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল ভি কে সিং কিছুদিন আগে সঠিকভাবেই বলেছেন, সেনাবাহিনী কাশ্মীরে তার কাজ সম্পন্ন করেছে, এখন যা করার করতে হবে রাজনীতিকদের। কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদাম্বরম, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ও কংগ্রেসের কার্যনির্বাহী কমিটি—সবাই তখন থেকে মেনে নিয়েছে যে কাশ্মীর একটি রাজনৈতিক ইস্যু।
বিক্ষোভ-হত্যা-বিক্ষোভ এই চক্রের অবসান সরকারকেই ঘটাতে হবে। আর তা করতে হবে কাশ্মীরের জনগণকে সম্পৃক্ত করার নীতি গ্রহণ করে। আর হত্যা রুখতে প্রাণঘাতী প্রযুক্তির ব্যবহার বন্ধ করে জনতাকে নিয়ন্ত্রণের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
একজন গ্রহণযোগ্য মধ্যস্থতাকারী বিশেষভাবে নিয়োগ দিয়ে তাঁর মাধ্যমে নিঃশর্ত সংলাপ শুরু করতে হবে এবং যেসব হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, সেগুলোর ব্যাপারে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে সময়মতো সুবিচার প্রাপ্তির। উভয় পক্ষের সংযম প্রদর্শন নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখতে পারে—এমন সুশীল সমাজের সম্পৃক্ততাও কাম্য।
সহিংসতার ফলে কাশ্মীরের সাধারণ মানুষের জীবন আক্রান্ত হয়েছে, স্কুল-কলেজ বন্ধ হয়ে গেছে, বড় ধরনের ব্যবসায়িক ক্ষতি হচ্ছে, ব্যাংক ও গণপরিবহন আছে নাজুক অবস্থায়। সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুযায়ী, গত তিন মাসে কাশ্মীর উপত্যকায় ব্যবসায়ীরা ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।
ক্ষমতাসীন কংগ্রেস ও ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতারা শুধু গণমাধ্যমের কাছে বিবৃতিই দিয়েছেন। তাঁদের কোনো নেতাই সাহস দেখাতে পারেননি ২০০৮ সালে যাঁদের ভোটে ক্ষমতায় এসেছিলেন তাঁদের সঙ্গে মিশতে। সময় এসেছে শ্রীনগর থেকে রাজ্য সরকারের বেরিয়ে এসে জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার এবং সুশাসন ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় যেসব সমস্যা আছে, সেসব বিষয়ে তাদের মনোযোগ দেওয়ার।
দীপাঞ্জন রায় চৌধুরী: প্রথম আলোর দিল্লি প্রতিনিধি।
অন্যদিকে ভারত তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার জন্য পাকিস্তানকে সতর্ক করে দিয়েছে। এক বিবৃতিতে ভারত বলেছে, ‘জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণের কল্যাণ ও হিতের জন্য পাকিস্তান যদি এত আন্তরিক হয়, তাহলে পাকিস্তানের মাটি থেকে উদ্ভূত সব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড তাদেরই বন্ধ করতে হবে।’
কিন্তু পাকিস্তানের ভূমিকার প্রশ্নকে পাশ কাটিয়েও বলা যায়, জম্মু ও কাশ্মীরে ওমর আবদুল্লাহর রাজ্য সরকারের ভয়ানক অপশাসন আজকের এই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। বিক্ষোভরত কাশ্মীরিদের আবেগ-অনুভূতি ও স্বায়ত্তশাসনের বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে মনোযোগ দেওয়া দরকার। এটা করা হলে বর্তমান সংকট নিরসন হতে পারে। সমস্যার অভ্যন্তরীণ মাত্রা বিবেচিত হওয়ার পর বহিস্থ মাত্রার ওপর মনোযোগ দিতে হবে। বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষকদের মতে, কাশ্মীরের প্রতিশ্রুত স্বায়ত্তশাসন দেওয়ার ক্ষেত্রে বিলম্বের পরিপ্রেক্ষিতে দিল্লি ও কাশ্মীরের মধ্যে বিরাট আস্থার সংকট রয়েছে।
ভারত সরকারের উচিত এখনই আলোচনা শুরুর পরিবেশ তৈরি করা। কেননা, এবারের বিক্ষোভকারীরা রাজনীতিক নন, তাঁরা তরুণ নারী ও পুরুষ। ১৯৮৯ সালে বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ার পর বহু বছরের মধ্যে এবারের সংকট সবচেয়ে ভয়াবহ। এবারের বিক্ষোভের বৈশিষ্ট্য হলো, এটা অপশাসন ও অবিচারের বিরুদ্ধে জনগণের রোষ থেকে উদ্ভূত।
রমজান মাসজুড়েই এই সংকট চলছিল। আর সরকার কাশ্মীরের জন্য ঈদ প্যাকেজ ঘোষণার প্রস্তুতি নিয়েও হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে। এতে কাশ্মীরের জনগণের মধ্যে বিচ্ছিন্নতার বোধ আরও জোরদার হয় এবং নতুন করে সহিংসতার বিস্তার ঘটে। কাশ্মীরের রাজপথ থেকে অত্যন্ত স্পষ্টভাবে উৎসারিত হতে থাকে গুরুতর এই বার্তা: বিরাজমান পরিস্থিতি গ্রহণযোগ্য নয়।
নিরাপত্তা বাহিনীগুলো শ্রীনগরের রাজপথে বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীদের ওপর গুলি চালিয়েছে, বিক্ষোভকারীদের হত্যা করেছে। এটা করা তাদের একেবারেই উচিত হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের ওপর অনিবার্যভাবেই ক্লান্তি ও বিষণ্নতা ভর করে। তাঁরা ভাবতে থাকেন, আর কত দিন এমন কাজ চালিয়ে যেতে হবে। আর এখন সবাই তো মেনে নিচ্ছে যে কাশ্মীর কোনো আইনশৃঙ্খলা-সম্পর্কিত সমস্যা নয়, সমস্যাটি রাজনৈতিক। ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল ভি কে সিং কিছুদিন আগে সঠিকভাবেই বলেছেন, সেনাবাহিনী কাশ্মীরে তার কাজ সম্পন্ন করেছে, এখন যা করার করতে হবে রাজনীতিকদের। কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদাম্বরম, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ও কংগ্রেসের কার্যনির্বাহী কমিটি—সবাই তখন থেকে মেনে নিয়েছে যে কাশ্মীর একটি রাজনৈতিক ইস্যু।
বিক্ষোভ-হত্যা-বিক্ষোভ এই চক্রের অবসান সরকারকেই ঘটাতে হবে। আর তা করতে হবে কাশ্মীরের জনগণকে সম্পৃক্ত করার নীতি গ্রহণ করে। আর হত্যা রুখতে প্রাণঘাতী প্রযুক্তির ব্যবহার বন্ধ করে জনতাকে নিয়ন্ত্রণের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
একজন গ্রহণযোগ্য মধ্যস্থতাকারী বিশেষভাবে নিয়োগ দিয়ে তাঁর মাধ্যমে নিঃশর্ত সংলাপ শুরু করতে হবে এবং যেসব হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, সেগুলোর ব্যাপারে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে সময়মতো সুবিচার প্রাপ্তির। উভয় পক্ষের সংযম প্রদর্শন নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখতে পারে—এমন সুশীল সমাজের সম্পৃক্ততাও কাম্য।
সহিংসতার ফলে কাশ্মীরের সাধারণ মানুষের জীবন আক্রান্ত হয়েছে, স্কুল-কলেজ বন্ধ হয়ে গেছে, বড় ধরনের ব্যবসায়িক ক্ষতি হচ্ছে, ব্যাংক ও গণপরিবহন আছে নাজুক অবস্থায়। সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুযায়ী, গত তিন মাসে কাশ্মীর উপত্যকায় ব্যবসায়ীরা ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।
ক্ষমতাসীন কংগ্রেস ও ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতারা শুধু গণমাধ্যমের কাছে বিবৃতিই দিয়েছেন। তাঁদের কোনো নেতাই সাহস দেখাতে পারেননি ২০০৮ সালে যাঁদের ভোটে ক্ষমতায় এসেছিলেন তাঁদের সঙ্গে মিশতে। সময় এসেছে শ্রীনগর থেকে রাজ্য সরকারের বেরিয়ে এসে জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার এবং সুশাসন ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় যেসব সমস্যা আছে, সেসব বিষয়ে তাদের মনোযোগ দেওয়ার।
দীপাঞ্জন রায় চৌধুরী: প্রথম আলোর দিল্লি প্রতিনিধি।
No comments