সীমান্ত খুলে দেওয়ার আহবান জাতিসংঘের সরকার রাজি নয়
মিয়ানমারের রোহিঙ্গা আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য সীমান্ত শিথিল করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছে জাতিসংঘ। বাংলাদেশে সংস্থাটির শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনারের (ইউএনএইচসিআর) প্রতিনিধি ক্রেইগ স্যান্ডার্স গতকাল বিবিসির কাছে ওই আহ্বানের কথা জানান।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দাঙ্গা ও জরুরি অবস্থা-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ রোধে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি, কোস্টগার্ড ও প্রশাসন সদাসতর্ক রয়েছে। এরই মধ্যে ইউএনএইচসিআর এ আহ্বান জানাল। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি গতকাল বিকেলে ইউএনএইচসিআরের পক্ষ থেকে এ ধরনের কোনো আহ্বান জানানোর খবর নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, মিয়ানমার থেকে আর কাউকে অনুপ্রবেশ করতে দেবে না বাংলাদেশ। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকুও অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্ক অবস্থানের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছেন।
বাংলাদেশে ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধি ক্রেইগ স্যান্ডার্স গতকাল মঙ্গলবার সকালে বিবিসিকে বলেন, 'অল্পসংখ্যক শরণার্থীই সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকতে পারছে। আমরা বুঝতে পারছি, সীমান্তে উভয় দেশের বাহিনীই নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে নিরাপত্তা জোরদার করেছে। কিন্তু আমরা এও দেখছি, মানুষ সীমান্ত পার হচ্ছে- যদিও তা খুব বেশি নয়।'
বিবিসি জানায়, বাংলাদেশ যেন শরণার্থীদের আশ্রয় দেয় ইউএনএইচসিআর সে আহ্বান জানিয়েছে। স্যান্ডার্স বলেন, 'আমরা বাংলাদেশ সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছি, তারা যেন যতটা সম্ভব সীমান্ত শিথিল রাখে, আশ্রয়প্রার্থীদের প্রবেশ করতে দেয়। বিশেষ করে সহিংসতা থেকে রক্ষা পেতে পালিয়ে আসতে গিয়ে যাঁরা আহত হয়েছেন তাঁদের জন্য।'
গতকাল দুপুর পর্যন্ত ঢাকায় কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, ইউএনএইচসিআর গণমাধ্যম মারফত সরকারের কাছে আবেদন জানিয়ে থাকতে পারে। আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো আবেদনের কথা তাদের জানা নেই। বিকেল পৌনে ৪টায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি সাংবাদিকদের বলেন, ইউএনএইচসিআরের কাছ থেকে এ ধরনের কোনো আহ্বান সরকারের কাছে জানানো হয়নি। তিনি বলেন, মিয়ানমার থেকে নতুন করে অনুপ্রবেশ বাংলাদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট নয়। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা আপাতত সরকারের নেই।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'বর্তমানে বাংলাদেশে অনেক শরণার্থী আছে। অবৈধভাবেও অনেকে প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশের জনসংখ্যার ঘনত্ব এমনিতেই বেশি। মিয়ানমার থেকে অনুপ্রবেশের ফলে সমাজ, পরিবেশ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর প্রভাব পড়ে।'
তিনি বলেন, 'বাংলাদেশে মিয়ানমারের যেসব শরণার্থী আছে, তাদের ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে আলোচনা হচ্ছে।'
রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার ঘটনায় বাংলাদেশের উদ্বেগের কারণ আছে কি না জানতে চাইলে দীপু মনি বলেন, 'উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।' পরক্ষণেই তিনি বলেন, 'তবে মিয়ানমার আমাদের প্রতিবেশী দেশ। সেখানে কোনো উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হলে তা আমাদের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।'
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, এ বিষয়ে বাংলাদেশে মিয়ানমারের দূতাবাস-প্রধানের সঙ্গে পররাষ্ট্রসচিব ও সংশ্লিষ্ট অনুবিভাগের মহাপরিচালক আলোচনা করেছেন। মিয়ানমারে বাংলাদেশের দূতাবাসও সে দেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে।
এদিকে গতকাল দুপুরে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু মন্ত্রণালয়ে এক সভা শেষে সাংবাদিকদের বলেন, 'মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তরক্ষা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী সতর্ক রয়েছে। কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে, তাদের চিকিৎসাসহ অন্যান্য সহযোগিতা করা হচ্ছে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।'
গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে ইউএনএইচসিআরের আবেদনের ব্যাপারে কোনো তথ্য জানা যায়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কূটনীতিক গতকাল দুপুরে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ইউএনএইচসিআরের সঙ্গে সহযোগিতার ব্যাপারে টেলিফোনে আমাদের কথা হয়েছে। কিন্তু সীমান্ত খুলে দেওয়া বা শিথিল করে দেওয়ার মতো ব্যাপারে আলোচনা হয়নি।'
ইউএনএইচসিআর কী ধরনের সহযোগিতা চেয়েছে, জানতে চাইলে ওই কূটনীতিক বলেন, 'মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে জাতিসংঘের কর্মীদের বের হওয়ার পথ করে দেওয়ার ব্যাপারে সংস্থাটি সহযোগিতা চেয়েছে।' তিনি বলেন, 'সীমান্ত শিথিল করার আহ্বান বিষয়ে যে খবর গণমাধ্যমে এসেছে, তা বাস্তবসম্মত নয়। সীমান্ত শিথিল করার অর্থ হলো পরোক্ষভাবে অনুপ্রবেশে আগ্রহীদের এ দেশে স্বাগত জানানো। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বরাবরই বেশ কঠিন। কাউকে জোর করে পাঠানো যায় না।'
ওই কূটনীতিক বলেন, 'অন্য কোনো দেশে যখন কিছু ঘটে, তখন তা ওই দেশের ব্যাপার। আমাদের তাতে কিছু বলার নেই। কিন্তু যখন সীমান্তের ওপারে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে, আর তার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে; তখন আমরা বলেছি, আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।'
ওই কূটনীতিক আরো বলেন, 'মিয়ানমার থেকে যারা এ দেশে আসতে চায়, তাদের মানবিক সংকট সম্পর্কে আমরা অবগত। কিন্তু এ ব্যাপারে আমাদের অভিজ্ঞতা ভালো নয়। একবার সীমান্ত খুলে দিলে বা শিথিল করলে যারা আসবে ভবিষ্যতে আমরা তাদের কোনোভাবেই ফেরত পাঠাতে পারব না। কেননা, প্রত্যাবাসন সব সময় স্বেচ্ছায় হতে হয়। ওরা কখনো ফেরত যেতে চায় না।'
মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি
গতকাল বেলা ১২টার পর ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রতিবেশী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সাম্প্রতিক ঘটনা বাংলাদেশ সরকারের পর্যবেক্ষণে রয়েছে। সেখানে চলমান সংঘাতে জানমালের ক্ষয়ক্ষতিতে সরকার দুঃখিত। বাংলাদেশ ওই সংঘাত নিরসনে মিয়ানমারের নেওয়া উদ্যোগের প্রশংসা করে। রাখাইন রাজ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগে বাংলাদেশ মিয়ানমারের সরকার ও জনগণের পাশে আছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, রাখাইন রাজ্যে সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কারণে যাতে সীমান্ত দিয়ে আসা-যাওয়া বেড়ে না যায়, তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার নিবিড় যোগাযোগ রাখছে। সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বাড়াতে ও সতর্ক থাকতে স্থানীয় প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরো জানায়, বাংলাদেশ বিশ্বাস করে, মিয়ানমার ওই অঞ্চলে সম্ভাব্য স্বল্পতম সময়ের মধ্যে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে এবং সম্ভাব্য সেরা উপায়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে সক্ষম।
সীমান্ত শিথিলের আহ্বান নিয়ে প্রশ্ন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দাঙ্গা ও জরুরি অবস্থা জারির পর কয়েক দিনের মধ্যেই বাংলাদেশের সীমান্ত শিথিল করতে ইউএনএইচসিআরের আহ্বানের প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, ইউএনএইচসিআর মূলত দুটি বিষয়ে কাজ করে। একটি হলো সুরক্ষা দেওয়া, অন্যটি প্রত্যাবাসন। সুরক্ষা দেওয়ার ব্যাপারেই তাদের যত আগ্রহ। কারণ, এর সঙ্গে তাদের রুটি-রুজি ও চাকরির ভবিষ্যৎ জড়িত। প্রত্যাবাসনে তাদের আগ্রহ ও সাফল্য উভয়ই কম। তা ছাড়া অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে বাংলাদেশের ওপর যত চাপ, তার সামান্যও নেই মিয়ানমারের ওপর। সীমান্ত পাড়ি দিয়ে এ দেশে অনুপ্রবেশকারীদের ইউএনএইচসিআর 'শরণার্থী' অভিহিত করতে চায়। কিন্তু নতুন করে কাউকে শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাংলাদেশ রাজি নয়। কারণ, এতে অনুপ্রবেশের হার বাড়বে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, সীমান্ত শিথিল করার মতো পরিস্থিতি এখনো আসেনি। সাম্প্রতিক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশকে চাপে রাখতে ইউএনএইচসিআরের কৌশল এটি।
ড. দেলোয়ার হোসেন বলেন, 'সীমান্তের ওপারে এবারের যে সংকট তা হঠাৎ করেই। এমন নয় যে তা অনেক দিন ধরে হচ্ছিল। আর সে কারণে পরিস্থিতি সামাল দিতে সীমানা খুলে দিতে হবে বা শিথিল করতে হবে। তাই ওই আহ্বানকে আমি খুব একটা বাস্তবসম্মত মনে করি না।'
অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন আরো বলেন, রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশের নিজস্ব বাস্তবতার দিকটিও দেখতে হবে। মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গারা ইতিমধ্যে এ দেশের জন্য বিশাল এক বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওই বোঝা সামাল দিতেই বাংলাদেশকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এর ওপর যদি সাম্প্রতিক দাঙ্গাকে ঘিরে সীমান্ত শিথিল করা হয়, তাহলে তা এ দেশের জন্য নিরাপত্তা হুমকিসহ সামাজিক বিপর্যয় ডেকে আনবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. এম শাহীদুজ্জামান বলেন, এ সংকট হঠাৎ, অপ্রত্যাশিতভাবে দেখা দিয়েছে। মাঝখানে সম্পর্কের প্রক্রিয়াটির উন্নতি হয়েছিল। বাংলাদেশ অত্যন্ত আশাবাদী ছিল যে মিয়ানমার হয়তো এখানকার রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে।
ড. এম শাহীদুজ্জামান আরো বলেন, 'হঠাৎ করে একটি ঘটনার সৃষ্টি হয়েছে। শোনা গেছে, একজন আরাকানি বৌদ্ধ মহিলাকে হত্যা করা হয়েছে। তারপর পাল্টা ঘটনা ঘটে। এখন যে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে, এর মাধ্যমে দেশটির বাহিনী কি সত্যি সত্যিই একটি শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টির প্রয়াস নেবে, নাকি অন্য কোনো উপায় বেছে নেবে- সেটাই হচ্ছে আমাদের চিন্তার বিষয়। তবে বাংলাদেশ সরকারকে এখন যথেষ্ট সতর্ক থাকা উচিত। কেননা, এটা মহামারি আকার ধারণ করতে পারে। যদি বাংলাদেশ প্রস্তুতি না নেয়, কূটনৈতিক উদ্যোগ না নেয়, তাহলে বিপদ হতে পারে।'
অধ্যাপক শাহীদুজ্জামান বলেন, 'বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। আমরা আশা করেছিলাম, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিয়ানমার সফর করবেন। তবে আশার বিষয় হলো বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি ও মিয়ানমারের নাসাকা বাহিনীর প্রধান খুব শিগগিরই একটি কনফারেন্স করছেন।'
মিয়ানমার থেকে আগতদের জন্য সীমান্ত শিথিল করতে ইউএনএইচসিআর ও আন্তর্জাতিক মহলের চাপ বাংলাদেশ কিভাবে মোকাবিলা করবে- এ প্রশ্নের উত্তরে অধ্যাপক শাহীদুজ্জামান বলেন, 'আমি একটি অপ্রিয় সত্য কথা বলতে বাধ্য হচ্ছি। ইউএনএইচসিআরের কার্যক্রম বাংলাদেশের স্বার্থের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। বাংলাদেশের সরকার এটা বুঝতে পারছে যে তারা অস্থিতিশীল একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করে রাখে। ইউএনএইচসিআর এখন পর্যন্ত এমন কোনো চাপ সৃষ্টি করেনি, এমন কোনো কার্যক্রম নেয়নি, যাতে করে শরণার্থী হিসেবে এ দেশে অবস্থানকারীরা ফেরত যায়। কিন্তু যখনই একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, তখনই বাংলাদেশে শরণার্থী ঢোকানোর ব্যাপারে ইউএনএইচসিআর খুব আগ্রহী হয়ে ওঠে।'
মিয়ানমার থেকে অনুপ্রবেশকারীদের মানবিক দিক সম্পর্কে জানতে চাইলে অধ্যাপক শাহীদুজ্জামান বলেন, 'বলা যায়, সেটি একটি আপেক্ষিক বিষয়। মানবিক সংকট সৃষ্টি হওয়ার পরিণতি এখানে কিছু ঘটছে। কাগজে দেখলাম, রোহিঙ্গারা খুব দ্রুত মূল জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মিশে যায় এবং এটা আমাদের জন্য আরো বেশি সামাজিক সংকট সৃষ্টি করছে। ইউএনএইচসিআরের উচিত হবে, মিয়ানমারে বর্তমানে যে পরিবর্তন এসেছে, নতুন চিন্তাধারা এসেছে, তার সুযোগ নেওয়া এবং যতদূর সম্ভব অনুপ্রবেশ বন্ধ রাখা। এখানে আমার মনে হয়, অনিবার্যভাবেই বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ইউএনএইচসিআরের একটি দৃষ্টিভঙ্গিজনিত সমস্যা দেখা দেবে। '
বাংলাদেশ সরকার এ সংকট কিভাবে মোকাবিলা করতে পারে জানতে চাইলে অধ্যাপক শাহীদুজ্জামান বলেন, 'প্রথমত কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় আলোচনা করা উচিত। বিজিবি-নাসাকা মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠকে নিশ্চয় বিষয়টি উঠবে। মিয়ানমারের নাসাকা বাহিনীকে অত্যন্ত ধৈর্য সহকারে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে, যাতে কোনোভাবেই তারা দেশত্যাগ না করে।'
বাংলাদেশে ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধি ক্রেইগ স্যান্ডার্স গতকাল মঙ্গলবার সকালে বিবিসিকে বলেন, 'অল্পসংখ্যক শরণার্থীই সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকতে পারছে। আমরা বুঝতে পারছি, সীমান্তে উভয় দেশের বাহিনীই নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে নিরাপত্তা জোরদার করেছে। কিন্তু আমরা এও দেখছি, মানুষ সীমান্ত পার হচ্ছে- যদিও তা খুব বেশি নয়।'
বিবিসি জানায়, বাংলাদেশ যেন শরণার্থীদের আশ্রয় দেয় ইউএনএইচসিআর সে আহ্বান জানিয়েছে। স্যান্ডার্স বলেন, 'আমরা বাংলাদেশ সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছি, তারা যেন যতটা সম্ভব সীমান্ত শিথিল রাখে, আশ্রয়প্রার্থীদের প্রবেশ করতে দেয়। বিশেষ করে সহিংসতা থেকে রক্ষা পেতে পালিয়ে আসতে গিয়ে যাঁরা আহত হয়েছেন তাঁদের জন্য।'
গতকাল দুপুর পর্যন্ত ঢাকায় কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, ইউএনএইচসিআর গণমাধ্যম মারফত সরকারের কাছে আবেদন জানিয়ে থাকতে পারে। আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো আবেদনের কথা তাদের জানা নেই। বিকেল পৌনে ৪টায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি সাংবাদিকদের বলেন, ইউএনএইচসিআরের কাছ থেকে এ ধরনের কোনো আহ্বান সরকারের কাছে জানানো হয়নি। তিনি বলেন, মিয়ানমার থেকে নতুন করে অনুপ্রবেশ বাংলাদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট নয়। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা আপাতত সরকারের নেই।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'বর্তমানে বাংলাদেশে অনেক শরণার্থী আছে। অবৈধভাবেও অনেকে প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশের জনসংখ্যার ঘনত্ব এমনিতেই বেশি। মিয়ানমার থেকে অনুপ্রবেশের ফলে সমাজ, পরিবেশ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর প্রভাব পড়ে।'
তিনি বলেন, 'বাংলাদেশে মিয়ানমারের যেসব শরণার্থী আছে, তাদের ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে আলোচনা হচ্ছে।'
রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার ঘটনায় বাংলাদেশের উদ্বেগের কারণ আছে কি না জানতে চাইলে দীপু মনি বলেন, 'উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।' পরক্ষণেই তিনি বলেন, 'তবে মিয়ানমার আমাদের প্রতিবেশী দেশ। সেখানে কোনো উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হলে তা আমাদের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।'
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, এ বিষয়ে বাংলাদেশে মিয়ানমারের দূতাবাস-প্রধানের সঙ্গে পররাষ্ট্রসচিব ও সংশ্লিষ্ট অনুবিভাগের মহাপরিচালক আলোচনা করেছেন। মিয়ানমারে বাংলাদেশের দূতাবাসও সে দেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে।
এদিকে গতকাল দুপুরে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু মন্ত্রণালয়ে এক সভা শেষে সাংবাদিকদের বলেন, 'মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তরক্ষা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী সতর্ক রয়েছে। কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে, তাদের চিকিৎসাসহ অন্যান্য সহযোগিতা করা হচ্ছে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।'
গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে ইউএনএইচসিআরের আবেদনের ব্যাপারে কোনো তথ্য জানা যায়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কূটনীতিক গতকাল দুপুরে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ইউএনএইচসিআরের সঙ্গে সহযোগিতার ব্যাপারে টেলিফোনে আমাদের কথা হয়েছে। কিন্তু সীমান্ত খুলে দেওয়া বা শিথিল করে দেওয়ার মতো ব্যাপারে আলোচনা হয়নি।'
ইউএনএইচসিআর কী ধরনের সহযোগিতা চেয়েছে, জানতে চাইলে ওই কূটনীতিক বলেন, 'মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে জাতিসংঘের কর্মীদের বের হওয়ার পথ করে দেওয়ার ব্যাপারে সংস্থাটি সহযোগিতা চেয়েছে।' তিনি বলেন, 'সীমান্ত শিথিল করার আহ্বান বিষয়ে যে খবর গণমাধ্যমে এসেছে, তা বাস্তবসম্মত নয়। সীমান্ত শিথিল করার অর্থ হলো পরোক্ষভাবে অনুপ্রবেশে আগ্রহীদের এ দেশে স্বাগত জানানো। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বরাবরই বেশ কঠিন। কাউকে জোর করে পাঠানো যায় না।'
ওই কূটনীতিক বলেন, 'অন্য কোনো দেশে যখন কিছু ঘটে, তখন তা ওই দেশের ব্যাপার। আমাদের তাতে কিছু বলার নেই। কিন্তু যখন সীমান্তের ওপারে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে, আর তার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে; তখন আমরা বলেছি, আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।'
ওই কূটনীতিক আরো বলেন, 'মিয়ানমার থেকে যারা এ দেশে আসতে চায়, তাদের মানবিক সংকট সম্পর্কে আমরা অবগত। কিন্তু এ ব্যাপারে আমাদের অভিজ্ঞতা ভালো নয়। একবার সীমান্ত খুলে দিলে বা শিথিল করলে যারা আসবে ভবিষ্যতে আমরা তাদের কোনোভাবেই ফেরত পাঠাতে পারব না। কেননা, প্রত্যাবাসন সব সময় স্বেচ্ছায় হতে হয়। ওরা কখনো ফেরত যেতে চায় না।'
মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি
গতকাল বেলা ১২টার পর ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রতিবেশী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সাম্প্রতিক ঘটনা বাংলাদেশ সরকারের পর্যবেক্ষণে রয়েছে। সেখানে চলমান সংঘাতে জানমালের ক্ষয়ক্ষতিতে সরকার দুঃখিত। বাংলাদেশ ওই সংঘাত নিরসনে মিয়ানমারের নেওয়া উদ্যোগের প্রশংসা করে। রাখাইন রাজ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগে বাংলাদেশ মিয়ানমারের সরকার ও জনগণের পাশে আছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, রাখাইন রাজ্যে সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কারণে যাতে সীমান্ত দিয়ে আসা-যাওয়া বেড়ে না যায়, তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার নিবিড় যোগাযোগ রাখছে। সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বাড়াতে ও সতর্ক থাকতে স্থানীয় প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরো জানায়, বাংলাদেশ বিশ্বাস করে, মিয়ানমার ওই অঞ্চলে সম্ভাব্য স্বল্পতম সময়ের মধ্যে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে এবং সম্ভাব্য সেরা উপায়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে সক্ষম।
সীমান্ত শিথিলের আহ্বান নিয়ে প্রশ্ন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দাঙ্গা ও জরুরি অবস্থা জারির পর কয়েক দিনের মধ্যেই বাংলাদেশের সীমান্ত শিথিল করতে ইউএনএইচসিআরের আহ্বানের প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, ইউএনএইচসিআর মূলত দুটি বিষয়ে কাজ করে। একটি হলো সুরক্ষা দেওয়া, অন্যটি প্রত্যাবাসন। সুরক্ষা দেওয়ার ব্যাপারেই তাদের যত আগ্রহ। কারণ, এর সঙ্গে তাদের রুটি-রুজি ও চাকরির ভবিষ্যৎ জড়িত। প্রত্যাবাসনে তাদের আগ্রহ ও সাফল্য উভয়ই কম। তা ছাড়া অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে বাংলাদেশের ওপর যত চাপ, তার সামান্যও নেই মিয়ানমারের ওপর। সীমান্ত পাড়ি দিয়ে এ দেশে অনুপ্রবেশকারীদের ইউএনএইচসিআর 'শরণার্থী' অভিহিত করতে চায়। কিন্তু নতুন করে কাউকে শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাংলাদেশ রাজি নয়। কারণ, এতে অনুপ্রবেশের হার বাড়বে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, সীমান্ত শিথিল করার মতো পরিস্থিতি এখনো আসেনি। সাম্প্রতিক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশকে চাপে রাখতে ইউএনএইচসিআরের কৌশল এটি।
ড. দেলোয়ার হোসেন বলেন, 'সীমান্তের ওপারে এবারের যে সংকট তা হঠাৎ করেই। এমন নয় যে তা অনেক দিন ধরে হচ্ছিল। আর সে কারণে পরিস্থিতি সামাল দিতে সীমানা খুলে দিতে হবে বা শিথিল করতে হবে। তাই ওই আহ্বানকে আমি খুব একটা বাস্তবসম্মত মনে করি না।'
অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন আরো বলেন, রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশের নিজস্ব বাস্তবতার দিকটিও দেখতে হবে। মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গারা ইতিমধ্যে এ দেশের জন্য বিশাল এক বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওই বোঝা সামাল দিতেই বাংলাদেশকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এর ওপর যদি সাম্প্রতিক দাঙ্গাকে ঘিরে সীমান্ত শিথিল করা হয়, তাহলে তা এ দেশের জন্য নিরাপত্তা হুমকিসহ সামাজিক বিপর্যয় ডেকে আনবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. এম শাহীদুজ্জামান বলেন, এ সংকট হঠাৎ, অপ্রত্যাশিতভাবে দেখা দিয়েছে। মাঝখানে সম্পর্কের প্রক্রিয়াটির উন্নতি হয়েছিল। বাংলাদেশ অত্যন্ত আশাবাদী ছিল যে মিয়ানমার হয়তো এখানকার রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে।
ড. এম শাহীদুজ্জামান আরো বলেন, 'হঠাৎ করে একটি ঘটনার সৃষ্টি হয়েছে। শোনা গেছে, একজন আরাকানি বৌদ্ধ মহিলাকে হত্যা করা হয়েছে। তারপর পাল্টা ঘটনা ঘটে। এখন যে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে, এর মাধ্যমে দেশটির বাহিনী কি সত্যি সত্যিই একটি শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টির প্রয়াস নেবে, নাকি অন্য কোনো উপায় বেছে নেবে- সেটাই হচ্ছে আমাদের চিন্তার বিষয়। তবে বাংলাদেশ সরকারকে এখন যথেষ্ট সতর্ক থাকা উচিত। কেননা, এটা মহামারি আকার ধারণ করতে পারে। যদি বাংলাদেশ প্রস্তুতি না নেয়, কূটনৈতিক উদ্যোগ না নেয়, তাহলে বিপদ হতে পারে।'
অধ্যাপক শাহীদুজ্জামান বলেন, 'বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। আমরা আশা করেছিলাম, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিয়ানমার সফর করবেন। তবে আশার বিষয় হলো বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি ও মিয়ানমারের নাসাকা বাহিনীর প্রধান খুব শিগগিরই একটি কনফারেন্স করছেন।'
মিয়ানমার থেকে আগতদের জন্য সীমান্ত শিথিল করতে ইউএনএইচসিআর ও আন্তর্জাতিক মহলের চাপ বাংলাদেশ কিভাবে মোকাবিলা করবে- এ প্রশ্নের উত্তরে অধ্যাপক শাহীদুজ্জামান বলেন, 'আমি একটি অপ্রিয় সত্য কথা বলতে বাধ্য হচ্ছি। ইউএনএইচসিআরের কার্যক্রম বাংলাদেশের স্বার্থের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। বাংলাদেশের সরকার এটা বুঝতে পারছে যে তারা অস্থিতিশীল একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করে রাখে। ইউএনএইচসিআর এখন পর্যন্ত এমন কোনো চাপ সৃষ্টি করেনি, এমন কোনো কার্যক্রম নেয়নি, যাতে করে শরণার্থী হিসেবে এ দেশে অবস্থানকারীরা ফেরত যায়। কিন্তু যখনই একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, তখনই বাংলাদেশে শরণার্থী ঢোকানোর ব্যাপারে ইউএনএইচসিআর খুব আগ্রহী হয়ে ওঠে।'
মিয়ানমার থেকে অনুপ্রবেশকারীদের মানবিক দিক সম্পর্কে জানতে চাইলে অধ্যাপক শাহীদুজ্জামান বলেন, 'বলা যায়, সেটি একটি আপেক্ষিক বিষয়। মানবিক সংকট সৃষ্টি হওয়ার পরিণতি এখানে কিছু ঘটছে। কাগজে দেখলাম, রোহিঙ্গারা খুব দ্রুত মূল জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মিশে যায় এবং এটা আমাদের জন্য আরো বেশি সামাজিক সংকট সৃষ্টি করছে। ইউএনএইচসিআরের উচিত হবে, মিয়ানমারে বর্তমানে যে পরিবর্তন এসেছে, নতুন চিন্তাধারা এসেছে, তার সুযোগ নেওয়া এবং যতদূর সম্ভব অনুপ্রবেশ বন্ধ রাখা। এখানে আমার মনে হয়, অনিবার্যভাবেই বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ইউএনএইচসিআরের একটি দৃষ্টিভঙ্গিজনিত সমস্যা দেখা দেবে। '
বাংলাদেশ সরকার এ সংকট কিভাবে মোকাবিলা করতে পারে জানতে চাইলে অধ্যাপক শাহীদুজ্জামান বলেন, 'প্রথমত কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় আলোচনা করা উচিত। বিজিবি-নাসাকা মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠকে নিশ্চয় বিষয়টি উঠবে। মিয়ানমারের নাসাকা বাহিনীকে অত্যন্ত ধৈর্য সহকারে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে, যাতে কোনোভাবেই তারা দেশত্যাগ না করে।'
No comments