দশ ট্রাক অস্ত্র আটক মামলা-‘প্রতিবেদন না দেখেই স্বাক্ষর করতে বলেন ওমর ফারুক’

১০ ট্রাক অস্ত্র আটকের ঘটনায় গঠিত সরকারি কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন না দেখেই কমিটির সদস্যসচিব শামসুল ইসলামকে এতে স্বাক্ষর করতে বলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রসচিব ও কমিটির আহ্বায়ক ওমর ফারুক। গতকাল বুধবার চট্টগ্রামের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক এস এম মজিবুর রহমানের আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে এ কথা বলেন


পুলিশের বিশেষ শাখার তৎকালীন উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) ও সরকারি তদন্ত কমিটির সদস্যসচিব মো. শামসুল ইসলাম। গতকাল বেলা পৌনে একটা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত সাক্ষ্য দেন শামসুল ইসলাম। এরপর একজন আসামির আইনজীবী তাঁকে কিছুক্ষণ জেরা করেন। জেরা অসমাপ্ত রেখে দিনের কার্যক্রম শেষ হয়। আদালত আগামী ৩ জুলাই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন।
আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে শামসুল ইসলাম বলেন, ‘২০০৪ সালের ৮ এপ্রিল আমরা (তদন্ত কমিটির পাঁচ সদস্য) চট্টগ্রাম থেকে যার যার কর্মস্থলে চলে যাই। এরপর রিপোর্ট লেখা বা পর্যালোচনা করার জন্য সদস্যসচিব হিসেবে আমাকে জানানো হয়নি। একদিন কমিটির আহ্বায়ক ওমর ফারুক ডাকেন সই দেওয়ার জন্য। আমি প্রতিবেদন দেখতে চাইলে ওমর ফারুক তা দেখতে দেননি। বিভিন্ন স্থানে যে জবানবন্দি রেকর্ড করি, তাও দেখতে দেওয়া হয়নি।’ এরপর সাক্ষ্যে শামসুল ইসলাম বলেন, ‘আমি প্রতিবেদনের কপি (অনুলিপি) দেখতে চাইলে ওমর ফারুক বলেন, “দেখানো যাবে না।” প্রতিবেদন না দেখেই স্বাক্ষর করতে বলেন তিনি। আমি প্রতিবেদন না দেখেই স্বাক্ষর করি।’ সাক্ষ্যে শামসুল ইসলাম আরও বলেন, ‘এরপর আমাকে এসবি (বিশেষ শাখা) থেকে সিআইডিতে (অপরাধ তদন্ত বিভাগ) বদলি করা হয়। ওখানে যোগদান করে জানতে পারি, চাঞ্চল্যকর এ মামলায় এর মধ্যে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়ে গেছে।’
প্রসঙ্গত, ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল দিবাগত রাতে সিইউএফএলের জেটিঘাটে ১০ ট্রাক অস্ত্র আটক করে পুলিশ। ওই ঘটনায় পাঁচ সদস্যের সরকারি তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রসচিব ওমর ফারুক। কমিটির সদস্যসচিব ছিলেন শামসুল ইসলাম। গত ২৪ মে আদালতে সাক্ষ্য দেন ওমর ফারুক। এরপর গত মঙ্গলবার আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আদালতে ওমর ফারুককে জেরা করেন। সাক্ষ্যের শুরুতে শামসুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনার রাতে নগর বিশেষ শাখার অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার বেলালুর রহমানের কাছে প্রথম অস্ত্র নামানোর খবর পাই। পরে বন্দর অঞ্চলের উপকমিশনার (ডিসি) আবদুল্লাহ হেল বাকী টেলিফোন করে জানান, অস্ত্র নামছে।’
পরে ভোর সোয়া পাঁচটার দিকে টেলিফোনে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অস্ত্র নামার বিষয়ে অবহিত করেন জানিয়ে সাক্ষ্যে শামসুল ইসলাম বলেন, ‘উনি শুনে আমাকে চট্টগ্রাম যেতে বলেন। আমি বিমানের দ্বিতীয় ফ্লাইটে চট্টগ্রামে চলে আসি।’ তিনি বলেন, চট্টগ্রামে পৌঁছানোর পর দামপাড়া পুলিশ লাইনে তিনি আটককৃত অস্ত্র পরিদর্শন করেন এবং সেখানে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি) কমিশনারের কার্যালয়ে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে সভায় অংশ নেন। তিনি বলেন, ‘তদন্ত দ্রুত ও সঠিকভাবে এগিয়ে নিতে উনি (তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী) মূলত স্থানীয় পুলিশকে নির্দেশ দেন। তারপর সভা শেষ হয়ে যায়।’ সভা শেষে সেই সময়ের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর কমিটি গঠনের বিষয়ে তাঁকে অবহিত করেন জানিয়ে সাক্ষ্যে শামসুল ইসলাম বলেন, ‘উনি বলেন, স্বরাষ্ট্রসচিবের নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হচ্ছে। আপনিও কমিটিতে থাকবেন। তিনি আমাকে চট্টগ্রামে থাকতে ও তদন্তে সহায়তা করতে বলেন।’
গতকাল দুপুরে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরুর আগে সাবেক শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১০ জন আসামিকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে আদালতে হাজির করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.