বলিউডে ডিভোর্সিদের জয়জয়কার

বিয়ের বাজারে অবিবাহিত পুরুষ-মেয়েকে পরস্পর পরস্পরকে চান। এটা পুরানো এবং বিস্বস্ত একটা বন্ধন। তবে হালে বলিউডে কুমারী মেয়েদের চায়িদার আসনে বিবাহিত পুরুষের একচ্ছত্র আধিপত্য চলছে। কিংবা দেখা গেছে স্ত্রী থাকার পরও বিবাহিতাদের প্রতি নায়িকাদের চরম আসক্তি।

মাসল হিরো দুই সন্তানের জনক ধার্মেন্দ্রকে বিয়ে করেন হেমা মালিনী। সংসার জীবনে আছেনও বেশ। তাদের রসায়নের মিলিত ফলে এই ঘরে এসেছে তিন মেয়ে।
হিন্দি চলচ্চিত্রের প্রভাবশালী অভিনেতা বিগ-বি দুই সন্তানের জনক। তাতে কি? সে সময় রেখার সঙ্গে অমিতাভের মন দেয়া-নেয়ার মুখরোচর সংবাদ সারা বলিউড ছাড়িয়ে কলকাতা হয়ে এই বাংলায়। যদিও ফিনিসিং টানতে বাধা হয়ে দাঁড়ান কলকাতার মেয়ে স্ত্রী জয়া ভাদুরী।

২২ বছর বয়সী লাস্যময়ী অভিনত্রী সায়রা বানু বিয়ে করেন ২২ বছরের বড় ট্র্যাজেডি হিরো দিলীপ কুমারকে। ২৪ বছরের সুখের সংসার চলছিল বেশ। ঝড় এলো ৮০ সালে। দীলিপ কুমার বিয়ে করলেন হায়দ্রাবাদী আসমা নামের এক মহিলাকে। পরে উদ্ধারকর্তা বরাবরের মতোই প্রথমা স্ত্রী সায়রা। মাঝখানে একটু বিরতি বাদে এই জুটি এখনো বেশ আছেন।

বলিউড কাঁপানো বাঙালি অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী আর হৃদয় ঢেউ জাগানো অভিনেত্রী শ্রীদেবীর প্রেম কাহিনী তো রীতিমতো বলিউডি প্রেমের ট্র্যাজিডি উদাহরণ।

প্রয়াত কিশোর কুমারের তৃতীয় স্ত্রী যোগিতা বালিকে মিঠুন চক্রবর্তী বিয়ে করেন ১৯৭৯ সালে। সে সম্পর্ক আবার তাদের প্রেমের পরিণয়। মিঠুন তখন দুই সন্তানের জনক। ফর্মের তুঙ্গে থাকা মিঠুন-শ্রীদেবীর সঙ্গে গড়ে ওঠে প্রেম। যতদূর জানা যায়, ১৯৮৬ সালে তাদের গোপনে বিয়েও হয়েছিল কিন্তু প্রথম স্ত্রী যোগিতাকে ডিভোর্স না দেয়ায় শ্রীদেবী-মিঠুন সংসার টেকেনি। তবে এতোকিছুর পরও মিঠুন এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “পরজন্ম বলতে যদি কিছু থাকে, তবে সেখানে শ্রীদেবীকেই আমি চাইবো।” এ থেকেই বোঝা যায় তাদের মধ্যকার প্রেম কতটুকু গভীরে প্রোথিত।

পরবর্তীতে সেই শ্রীদেবী অনেকটা ক্ষোভ থেকে ১৯৯৬ সালে বিয়ে করেন নায়ক অনিল কাপুরের বড় ভাই ডিভোর্সি প্রযোজক বনি কাপুরকে। বনি তখন দুই সন্তানের জনক।

ঘটনা এখানেই শেষ নয়, প্রয়াত কিশোর কুমার ডিভোর্সি হলে তাকে মধুমালা বিয়ে করেন। যদিও পারিবারিকভাবে মেনে না নেয়ায় সে বিয়ে সুখের হয়নি। পরে ১৯৭৬ সালে যোগিতা বালি কিশোর কুমারকে বিয়ে করেন। তিনি তাকে ডির্ভোস দেন ১৯৭৮ সালে।

এই গেল সত্তর থেকে নব্বই দশকের ডিভোর্সিদের রসায়ন। এবার আমরা নব্বই দশকের শেষ থেকে এখন পর্যন্ত যারা ডিভোর্সিদের গলায় মালা পড়িয়েছেন অথবা পড়াবেন তাদের কথায় আসি।

এ তালিকা নেহাত কম নয়। প্রয়াত অভিনেতা ও পার্লামেন্টারিয়ান সুনীল দত্ত আর পঞ্চাশ দশকের ঝড় তোলা নার্গিস রসায়নের প্রজন্ম সঞ্জয় দত্ত দুই স্ত্রী তালাকপ্রাপ্ত হয়েছেন। দ্বিতীয় স্ত্রী থাকতেই প্রেম জমে ওঠে মান্যতার সঙ্গে। অবশেষে ২০০৮ সালে পারিবারিক সম্মতিতেই মান্যতাকে মুম্বাইয়ের বান্দ্রায় ওঠান। সখ করে তাকে তিন কোটি টাকার একটি গাড়িও উপহার দেন।

মি. পারফেকসনিস্টখ্যাত আমির খানই বা ইনপারফেক্ট থাকবেন কেন। তিনিও স্ত্রীকে ডিভোর্স দেন ২০০২ সালে। এরপর প্রেম জমে ওঠে পরিচালক কিরন রাওয়ের সঙ্গে। মন নেয়া-দেয়া নিয়ে ২০০৫ সালে কিরন রাও বিয়ে করেন তিন সন্তানের জনক আমির খানকে। অতএব আমিরের ষোলকলা পূর্ণ হলো।

মাঠে গুঞ্জন ছিল অজয় দেবাগান-কঙ্কনা রনৌত সম্পর্ক নিয়ে। শেষ পর্যন্ত ভালো স্ত্রীর টাইটেল পাওয়া অভিনেত্রী কাজল কোনো রকমে তা সামাল দেন।

শহীদ কাপুর-কারিনা সম্পর্ক প্রায় সাড়ে চার বছর বাতাসের বুকে ভেসে বেড়িয়েছে। এর মধ্যে ছোটে নবাব অভিনেত্রী অমৃত সিংয়ের স্বামী সাইফ আলী খান প্রেমের তরবারি হাতে এসে দাঁড়ালে তাতে সঁপে দেন কারিনা কাপুর।

সাইফ-অমৃতা দাম্পত্য জুটির এক সময়কার দীর্ঘ সংগ্রামের প্রেমের সম্পর্র্কে চির ধরে। ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় দু’জনার। তাদের ঘরে রয়েছে ২০ বছরের নায়িকা উপযুক্ত এক কন্যা। তারপরও কারিনা দেহের উত্তাপ নিয়ে শানিয়ে যাচ্ছেন নবাব সাইফ আলীকে। অক্টোবরে এই জুটির বিয়ে। এ যাত্রায় কুমার শহীদ পরাস্ত হলেন সাঈফ আলী খানের কাছে। হায় প্রেম, জয় প্রেম।

অবশ্য এক্ষেত্রে কারিনা বড় বোন হার্টথ্রব কারিশমা কাপুরের যোগ্য উত্তরসূরি। কারিশমা-অভিষেক বচ্চন প্রেম অতপর পরিনয় হতে হতেও অজানা ঘটনায় ফসকে যাওয়ার ক্ষোভে বিয়ে করেন দিল্লির ব্যবসায়ী সঞ্জয় কাপুরকে। কারিশমাকে বিয়ের আগে অবশ্য সঞ্জয় নন্দিতা মাহাথানিকে বিয়ে করেছিল। পরে তালাক নিয়ে কারিশমার গলায় মালা পড়ান।

মুখার্জি কন্যা রানি। তিনি কী করছেন? পাঠক সে খবরও রাখেন নিশ্চয়। জানেনতো আদিত্য চোপড়ার সঙ্গে অনেকদিন ধরেই চলছে হৃদয় দেয়া নেয়া। শোনা যায় রানির কারণেই আগের সংসার আদিত্যের সঙ্গে পায়েল খান্নার ছাড়াছাড়ি হয়। আরো শোনা যাচ্ছে রানিকে বরণ করতে আদিত্য পরিবারকেও রাজি করিয়েছেন।

এর আগে রানি নায়ক গোবিন্দকে হাসকি গলায় ‘আই লাভ ইউ’ শব্দে শুনিয়ে গেঁথে ফেলেছিলেন প্রায়। সে যাত্রায় গোবিন্দপত্নীর কোনো কালের পুণ্যের ফলে রক্ষা হয় সংসার।

হাল সেশনের হট ক্রেস বিদ্যা বালান ঘোষণা দিয়েই ইউটিভি মোশন পিকচার্সের সিইও সিদ্ধার্থ রায় কাপুরের সঙ্গে ডেটিং করে যাচ্ছেন। সিদ্ধার্থ এর আগেও বিয়ে করেছেন এবং ডিভোর্সও হয়েছে। এখন প্রেম চলছে বিদ্যার সঙ্গে। বিদ্যাও যেনো এ নিয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত। আশা করা যায় বিয়েটা হয়ে যাবে, যদি না কোনো ডিভোর্সি পুরুষ বিদ্যার আঁচলের ছায়া মাড়ান।

ক’দিন হয় স্লিম কন্যাখ্যাত শিল্পা শেঠি মা হলেন। এক্ষেত্রে স্বামী ব্যবসায়ী রাজ‍কুন্দ্রা। দু’জনার প্রেমের সম্পর্ক বেশ জমেছিল। অতপর বিয়ে। তবে রাজকুন্দ্রার এর আগেও বিয়ে হয়েছিল। সাবেক স্ত্রী কবিতা বরাবরই সংসার ভাঙার পেছনে শিল্পাকেই দায়ী করেন।

শিল্পার ক’দিন্ আগেই মা হন খোলাখুলি অভিনয় করে খ্যাতি অর্জনকারী লারা দত্ত। স্বামী বিখ্যাত টেনিস খেলোয়াড় মহেশ। যিনি এর আগে বিয়ে করেন মডেল শিবিতা জয়শংকরকে। পরে শিবিতাকে ডিভোর্স দিয়ে বিয়ে করেন লারা দত্তকে।

গ্যাঙ অব ওয়াসিপুরখ্যাত পরিচালক অনুরাগ কশ্যপকে বিয়ে করেন, হাল সেশনের নতুন মুখ কালকি কোচিন। অনুরাগ এর আগে আরতিকে বিয়ে করেন। সে ঘরে তাদের আলিয়া নামের এক কন্যাও রয়েছে।


তবে বাজার এখনও গরম বলিউড কিং শাহরুখ-প্রিয়াঙ্কা রসায়নে। যদিও এক্ষেত্রে স্ত্রী গৌরি অসম্ভব মেধার পরিচয় দিয়ে ডিফেন্স খেলে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে শেষ বলা মুশকিল।

উপসংহার হচ্ছে বিবাহিত পুরুষদের প্রতি কুমারি নায়িকাদের হৃদয়ের অসমটানে কপাল পুড়েছে অনেক সাজানো সংসারে। এই ক্ষত হয়তো আরো দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হবে। তবে বলতেই হয় নবাগত নায়িকাদের কাছে অসম্ভব যৌন আবেদন রাখা সালমানের ভাগ্য খুব বেশি সুবিধের নয়। দীর্ঘ বিশ্লেষণে মনে হচ্ছে সালমান যদি কষ্ট করে একটি বিয়ে করেন তবে হয়তো বলিউডি ইতিহাসের ধারায় ঐশ্বরিয়া ভবিষ্যতে সালমানের বধূ হবে। দেখা যাক এরপর কার পালা। কেবা গড়ে আর কেবা ভাঙে সুখের নীড়। সূত্র: ওয়েবসাইট।

No comments

Powered by Blogger.