উন্নয়ন-চরাঞ্চলে চাই নতুন কর্মসংস্থান by জাহিদ রহমান
দ্বীপচরে যে আবহমান সংস্কৃতি চলমান সেখান থেকে অতিদরিদ্রদের বের করে আনতে হলে চরের অতিদরিদ্র যুবশক্তিকে সবার আগে কাজে লাগাতে হবে। যুবশক্তির জন্য সবার আগে প্রয়োজন কর্মসৃজন করা। এটি দু'ভাবে হতে পারে।
যুবশক্তিকে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে গড়ে তুলে আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক দুই ধারাতেই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ৫০টিরও অধিক চরে এক পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, চরের অতিদরিদ্র পরিবারগুলোর তরুণদের বড় সমস্যাই হলো কর্মসংস্থানের তীব্র অভাব অর্থাৎ কোথাও কাজ করার সুযোগ না পাওয়া
দেশের চরাঞ্চল বিশেষ করে দ্বীপচরে বসবাসরত মানুষের একটি বড় সমস্যা হলো কর্মহীনতা। চরের একটি বড় জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে যারা অতিদরিদ্র বলে চিহ্নিত ইচ্ছা থাকলেও তারা অধিকতর আয়-রোজগারের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারেন না। স্বভাবতই অতিদরিদ্র মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি এখানে একেবারেই ধীরগতিসম্পন্ন বা শল্গথ।
চরে বসবাসরত অতিদরিদ্র মানুষের আয়-রোজগারের বড় উৎস হলো কৃষিকর্ম এবং মৎস্য আহরণ। এর বাইরে প্রচুরসংখ্যক শ্রমজীবী মানুষ রয়েছে, যারা চর এলাকা এবং বাইরে শ্রম বিক্রি করে। এসব পুরুষ শ্রমিক মাটি কাটা, জমি চাষ, ফসল বোনা-কাটার কাজ করে থাকে। মৌসুমি শ্রমিকরা ফসল বোনা ও তোলার সময় বিভিন্ন জেলা, বিশেষ করে যেখানে প্রচুর ধান উৎপাদন হয় সেসব এলাকাতে চলে যায়। এর বাইরে কিছু শ্রমজীবী মানুষ রয়েছে যারা শ্রম বিক্রি করার জন্য মূলত আশপাশের শহর এলাকাতে চলে আসে। এসব শ্রমজীবী মানুষ রিকশা চালানো, ইটভাটা, কন্সট্রাকশন ওয়ার্ক প্রভৃতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। চরভেদে অনেক জায়গায় আবার অতিদরিদ্র মানুষদের বড় একটি অংশ উপার্জন করতে বিভিন্ন গ্রামগঞ্জে গিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ফেরি করে। এ কাজের সঙ্গে যুক্তরা বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে বাড়ি থেকে চলে যায়। একনাগাড়ে বিভিন্ন শহরে মাল-সামানা ফেরি করে দু'তিন মাস অন্তে বাড়ি ফিরে আসে।
অন্যদিকে চরের নারীদের আয়ের সুযোগ আরও সীমিত। চর এলাকা বা তৎসংলগ্ন জায়গায় ক্ষুদ্র বা বড় কলকারখানা, ফার্ম না থাকার কারণে অভাবী নারীরা মূলত মাটি কাটা বা এ জাতীয় কাজের সঙ্গেই বেশি যুক্ত থাকে। বিভিন্ন সময়ে সরকার এবং বিভিন্ন সংস্থার পক্ষে এ ধরনের প্রকল্প সৃজন করা হয়। অতিদরিদ্র নারী প্রধান পরিবারের নারীরা কেউ কেউ স্বউদ্যোগে কৃষিকাজ করলেও সেটা সীমিত আকারেই দৃশ্যমান। তবে নারীরা বাড়িকেন্দ্রিক উপার্জনটাকেই বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। ফলে বেশিরভাগ নারীই বাড়িতে বিভিন্ন ধরনের গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি লালনপালন, শাকসবজি চাষ করে থাকে, যা তাদের পরিবারে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা প্রদানে এক ধরনের ভূমিকা রাখে।
এ কথা সর্বাংশে সত্য, দ্বীপচরের মানুষের দারিদ্র্যাবস্থার মূল কারণই হলো সীমিত আয় বা চাহিদামাফিক আয়ের সুনির্দিষ্ট কোনো উৎস না থাকা। কিন্তু এ বিষয়ে এ যাবৎকাল সরকারের পক্ষ থেকেও তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। সরকারের পক্ষ থেকে বেশিরভাগ সময়ই দেখা গেছে দুর্যোগ বা দুরবস্থাকালে এককালীন সাহায্য বা খয়রাতি দিতে। কিন্তু এ ধরনের সাহায্য বা খয়রাতি সাময়িক সমস্যা সমাধান করলেও দীর্ঘমেয়াদি দারিদ্র্য বিমোচনে কোনো ভূমিকা রাখেনি। এ সংস্কৃতি এখনও বিরাজমান। তবে দ্বীপচরের মানুষের দারিদ্র্যাবস্থা থেকে বের করে একটি স্থায়ী অর্থনৈতিক ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে হলে কিছু বেসরকারি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
দ্বীপচরে যে আবহমান সংস্কৃতি চলমান সেখান থেকে অতিদরিদ্রদের বের করে আনতে হলে চরের অতিদরিদ্র যুবশক্তিকে সবার আগে কাজে লাগাতে হবে। যুবশক্তির জন্য সবার আগে প্রয়োজন কর্মসৃজন করা। এটি দু'ভাবে হতে পারে। যুবশক্তিকে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে গড়ে তুলে আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক দুই ধারাতেই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ৫০টিরও অধিক চরে এক পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, চরের অতিদরিদ্র পরিবারগুলোর তরুণদের বড় সমস্যাই হলো কর্মসংস্থানের তীব্র অভাব অর্থাৎ কোথাও কাজ করার সুযোগ না পাওয়া। বাংলাদেশে যে বিশাল বেকার যুবগোষ্ঠী রয়েছে তার একটি বৃহৎ অংশই চরাঞ্চলে বসবাস করে। এক হিসাবে চরে বসবাসরত কর্মক্ষম যুবকের সংখ্যা প্রায় ২০ থেকে ২৫ লাখ। কিন্তু বৃহৎ এই যুব জনগোষ্ঠীকে যেমন সঠিক কর্মে নিয়োগ করা হচ্ছে না, একই সঙ্গে তাদের দক্ষ বা প্রশিক্ষিত করে গড়েও তোলা হচ্ছে না।
এসব তরুণের জন্য অবশ্যই কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নিতে হবে। তাদের কোনোভাবেই অবহেলা করলে চলবে না। চরাঞ্চলের বেকার তরুণ-তরুণীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে একটি বড় উদ্যোগ হতে পারে অভিবাসন। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে থেকে জানা গেছে, সামনে জনশক্তির বাজার আরও সম্প্রসারিত হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ থেকে ব্যাপক শ্রমিক নেওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের উচিত চরের দারিদ্র্য বিমোচনে স্থায়ী সমাধান হিসেবে চরের শ্রমশক্তিকে স্বল্প খরচে বিদেশে কাজ করার সুযোগ তৈরি করে দেওয়া।
দেশের প্রান্তজন এবং দারিদ্র্যের পকেট বলে পরিচিত চর, উপকূল, হাওর-বাঁওড়, পাহাড় প্রভৃতি অঞ্চলের তরুণরাও যাতে দক্ষ বা প্রশিক্ষিত হয়ে বিদেশে যেতে পারে সে উদ্যোগ গ্রহণ করা। একই সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে চর এলাকায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কলকারখানা, বিভিন্ন ধরনের ফার্মও গড়ে তুলতে হবে, যাতে করে বেকার যুবক এবং অভাবী নারীদের ব্যাপক কর্মসংস্থান হয়।
জাহিদ রহমান : গবেষক
zahidrahman67@gmail.com
দেশের চরাঞ্চল বিশেষ করে দ্বীপচরে বসবাসরত মানুষের একটি বড় সমস্যা হলো কর্মহীনতা। চরের একটি বড় জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে যারা অতিদরিদ্র বলে চিহ্নিত ইচ্ছা থাকলেও তারা অধিকতর আয়-রোজগারের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারেন না। স্বভাবতই অতিদরিদ্র মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি এখানে একেবারেই ধীরগতিসম্পন্ন বা শল্গথ।
চরে বসবাসরত অতিদরিদ্র মানুষের আয়-রোজগারের বড় উৎস হলো কৃষিকর্ম এবং মৎস্য আহরণ। এর বাইরে প্রচুরসংখ্যক শ্রমজীবী মানুষ রয়েছে, যারা চর এলাকা এবং বাইরে শ্রম বিক্রি করে। এসব পুরুষ শ্রমিক মাটি কাটা, জমি চাষ, ফসল বোনা-কাটার কাজ করে থাকে। মৌসুমি শ্রমিকরা ফসল বোনা ও তোলার সময় বিভিন্ন জেলা, বিশেষ করে যেখানে প্রচুর ধান উৎপাদন হয় সেসব এলাকাতে চলে যায়। এর বাইরে কিছু শ্রমজীবী মানুষ রয়েছে যারা শ্রম বিক্রি করার জন্য মূলত আশপাশের শহর এলাকাতে চলে আসে। এসব শ্রমজীবী মানুষ রিকশা চালানো, ইটভাটা, কন্সট্রাকশন ওয়ার্ক প্রভৃতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। চরভেদে অনেক জায়গায় আবার অতিদরিদ্র মানুষদের বড় একটি অংশ উপার্জন করতে বিভিন্ন গ্রামগঞ্জে গিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ফেরি করে। এ কাজের সঙ্গে যুক্তরা বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে বাড়ি থেকে চলে যায়। একনাগাড়ে বিভিন্ন শহরে মাল-সামানা ফেরি করে দু'তিন মাস অন্তে বাড়ি ফিরে আসে।
অন্যদিকে চরের নারীদের আয়ের সুযোগ আরও সীমিত। চর এলাকা বা তৎসংলগ্ন জায়গায় ক্ষুদ্র বা বড় কলকারখানা, ফার্ম না থাকার কারণে অভাবী নারীরা মূলত মাটি কাটা বা এ জাতীয় কাজের সঙ্গেই বেশি যুক্ত থাকে। বিভিন্ন সময়ে সরকার এবং বিভিন্ন সংস্থার পক্ষে এ ধরনের প্রকল্প সৃজন করা হয়। অতিদরিদ্র নারী প্রধান পরিবারের নারীরা কেউ কেউ স্বউদ্যোগে কৃষিকাজ করলেও সেটা সীমিত আকারেই দৃশ্যমান। তবে নারীরা বাড়িকেন্দ্রিক উপার্জনটাকেই বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। ফলে বেশিরভাগ নারীই বাড়িতে বিভিন্ন ধরনের গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি লালনপালন, শাকসবজি চাষ করে থাকে, যা তাদের পরিবারে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা প্রদানে এক ধরনের ভূমিকা রাখে।
এ কথা সর্বাংশে সত্য, দ্বীপচরের মানুষের দারিদ্র্যাবস্থার মূল কারণই হলো সীমিত আয় বা চাহিদামাফিক আয়ের সুনির্দিষ্ট কোনো উৎস না থাকা। কিন্তু এ বিষয়ে এ যাবৎকাল সরকারের পক্ষ থেকেও তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। সরকারের পক্ষ থেকে বেশিরভাগ সময়ই দেখা গেছে দুর্যোগ বা দুরবস্থাকালে এককালীন সাহায্য বা খয়রাতি দিতে। কিন্তু এ ধরনের সাহায্য বা খয়রাতি সাময়িক সমস্যা সমাধান করলেও দীর্ঘমেয়াদি দারিদ্র্য বিমোচনে কোনো ভূমিকা রাখেনি। এ সংস্কৃতি এখনও বিরাজমান। তবে দ্বীপচরের মানুষের দারিদ্র্যাবস্থা থেকে বের করে একটি স্থায়ী অর্থনৈতিক ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে হলে কিছু বেসরকারি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
দ্বীপচরে যে আবহমান সংস্কৃতি চলমান সেখান থেকে অতিদরিদ্রদের বের করে আনতে হলে চরের অতিদরিদ্র যুবশক্তিকে সবার আগে কাজে লাগাতে হবে। যুবশক্তির জন্য সবার আগে প্রয়োজন কর্মসৃজন করা। এটি দু'ভাবে হতে পারে। যুবশক্তিকে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে গড়ে তুলে আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক দুই ধারাতেই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ৫০টিরও অধিক চরে এক পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, চরের অতিদরিদ্র পরিবারগুলোর তরুণদের বড় সমস্যাই হলো কর্মসংস্থানের তীব্র অভাব অর্থাৎ কোথাও কাজ করার সুযোগ না পাওয়া। বাংলাদেশে যে বিশাল বেকার যুবগোষ্ঠী রয়েছে তার একটি বৃহৎ অংশই চরাঞ্চলে বসবাস করে। এক হিসাবে চরে বসবাসরত কর্মক্ষম যুবকের সংখ্যা প্রায় ২০ থেকে ২৫ লাখ। কিন্তু বৃহৎ এই যুব জনগোষ্ঠীকে যেমন সঠিক কর্মে নিয়োগ করা হচ্ছে না, একই সঙ্গে তাদের দক্ষ বা প্রশিক্ষিত করে গড়েও তোলা হচ্ছে না।
এসব তরুণের জন্য অবশ্যই কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নিতে হবে। তাদের কোনোভাবেই অবহেলা করলে চলবে না। চরাঞ্চলের বেকার তরুণ-তরুণীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে একটি বড় উদ্যোগ হতে পারে অভিবাসন। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে থেকে জানা গেছে, সামনে জনশক্তির বাজার আরও সম্প্রসারিত হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ থেকে ব্যাপক শ্রমিক নেওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের উচিত চরের দারিদ্র্য বিমোচনে স্থায়ী সমাধান হিসেবে চরের শ্রমশক্তিকে স্বল্প খরচে বিদেশে কাজ করার সুযোগ তৈরি করে দেওয়া।
দেশের প্রান্তজন এবং দারিদ্র্যের পকেট বলে পরিচিত চর, উপকূল, হাওর-বাঁওড়, পাহাড় প্রভৃতি অঞ্চলের তরুণরাও যাতে দক্ষ বা প্রশিক্ষিত হয়ে বিদেশে যেতে পারে সে উদ্যোগ গ্রহণ করা। একই সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে চর এলাকায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কলকারখানা, বিভিন্ন ধরনের ফার্মও গড়ে তুলতে হবে, যাতে করে বেকার যুবক এবং অভাবী নারীদের ব্যাপক কর্মসংস্থান হয়।
জাহিদ রহমান : গবেষক
zahidrahman67@gmail.com
No comments