তথ্যপ্রযুক্তি-ইইএফের নীতিমালায় পরিবর্তন জরুরি by সুফি ফারুক ইবনে আবুবকর
বাংলাদেশ ব্যাংকের ইকুইটি এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ফান্ড বা ইইএফ শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের শিল্পায়নে সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রগুলোতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের পুঁজি সরবরাহের মাধ্যমে শিল্প বিকাশে সাহায্য করার জন্য। সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র ও সম্ভাবনাময় উদ্যোক্তাদের সমন্বয়ের মাধ্যমে শিল্পায়নই এই সহায়তার অন্যতম লক্ষ্য।
মহান এই সহায়তা-কার্যক্রম আরও অনেক কার্যক্রমের মতোই চরম দুর্নীতির কারণে বন্ধ হয়ে যেতে বাধ্য হয়। সৌভাগ্যের বিষয়, ওই সহায়তা-তহবিল আবার চালু হয়েছে এবং দুর্নীতি রুখতে নীতিমালায় ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। সহায়তার আওতা ও পরিমাণের পরিমার্জনের মাধ্যমে শুধু ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উপযোগী করা হয়েছে। তবে এই মহান উদ্দেশ্যের বাস্তবায়নে বর্তমান নীতিমালার কিছু ধারায় কর্তৃপক্ষের বাস্তবসম্মত দৃষ্টি আবশ্যক।
‘ইইএফ (আইসিটি) তহবিল ব্যবহারের নীতিমালা’-এর নিম্নোক্ত ধারাগুলোর অন্যতম: (৩.২) ইইএফের জন্য আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানকে দেশের আইসিটি শিল্পে ন্যূনতম তিন বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে (আবেদন করার তারিখ থেকে পূর্ববর্তী তিন বছর)। (৩.৪) ইইএফের আওতায় তহবিল পাওয়ার জন্য আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানকে ‘কোম্পানি আইন ১৯৯৪’-এর আওতায় নিবন্ধিত একটি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি হতে হবে। (৩.৫) আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানকে রপ্তানিকারক হিসেবে নিবন্ধিত হতে হবে অর্থাৎ ইআরসি নিতে হবে। নিবন্ধিত একটি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি হতে হবে।
বাস্তবতা হলো, যেসব নবীন পেশাজীবীকে আমরা এই সহায়তার আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা করছি, তাঁরা উঠতি তথ্যপ্রযুক্তি পেশাজীবী জনশক্তি। দেশি প্রযুক্তি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশির ভাগ কোনো একটি বড় ব্যবসায়ী গ্রুপের বিনিয়োগ, যাদের এ ধরনের সহায়তার প্রয়োজন নেই বললেই হয়। আর বাকি নবীন পেশাজীবীদের বেশির ভাগ বর্তমানে বাসাবাড়িতে ছোট অফিস স্থাপন করে ৩ থেকে ১২ জন প্রোগ্রামার নিয়ে কাজ করছেন। তাঁরা অনলাইনের বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ডাকের (বিডিংয়ের) মাধ্যমে কাজ সংগ্রহ করেন। কাজ শেষ করে বিভিন্ন পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে বিল সংগ্রহ করে ওয়েস্টার্ন মানি ইউনিয়নের মতো কোনো একটি কোম্পানির মাধ্যমে দেশে টাকা নিয়ে আসে। যেহেতু খুব বড় প্রকল্পের কাজ না হলে বিদেশি কোম্পানিগুলো কাগজপত্র বা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট দেখতে চায় না, তাই এসব উদ্যোক্তার ৯৩ শতাংশের বেশির ট্রেড লাইসেন্সসহ অন্য কাগজপত্র তৈরি করার প্রয়োজন দেখা দেয়নি। একই কারণে তাদের কোনো কোম্পানি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই। তাই রপ্তানিকারক হিসেবে নিবন্ধিত হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই। ব্যালান্স শিট, ট্যাক্স রিটার্ন, কোম্পানি রিটার্ন ধরনের কাগজপত্রের বাস্তবতা তথৈবচ। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তারা কাজ পাচ্ছে এবং কঠিন মান নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়ে অর্থ উপার্জন করছে। দেশের প্রচলিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় তারা যত অদক্ষই হোক না কেন, তথ্যপ্রযুক্তির জ্ঞান বা দক্ষতায় তারা আন্তর্জাতিক মানের।
বর্তমান নীতিমালায় একজন নতুন উদ্যোক্তাকে ইইএফের সহযোগিতা নিতে গেলে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে একটি লিমিটেড কোম্পানি নিবন্ধন করতে হবে। এরপর বাণিজ্যিক অফিস খরচ, টিন নম্বর, ইআরসি, তিন বছরের ব্যালান্স শিট, ট্যাক্স রিটার্ন, কোম্পানি রিটার্ন প্রভৃতি মিলিয়ে আসবে ন্যূনতম সাত লাখ টাকা। প্রকল্প প্রস্তাব, প্রকল্প ছক তৈরি, মূল্যায়ন খরচ, যাতায়াত মিলিয়ে লাগবে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা। প্রায় ১২ লাখ টাকার অধিক খরচ করার পর তিনি নিশ্চিত হতে পারবেন না যে তাঁর প্রকল্প অনুমোদিত হবে কি না। তার চেয়ে বড় কথা, তিন বছর পর এই প্রকল্প থাকবে কি না, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। যে উদ্যোক্তা এত টাকা এ রকম অনিশ্চিত বিনিয়োগ করতে পারে, তার ইইএফের মতো রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা কতটুকু প্রয়োজন, তা বিবেচ্য।
নীতিমালার কিছু অংশ দেখে মনে হয়েছে, তথ্যপ্রযুক্তি পেশাজীবী নয়, বরং যেসব ব্যবসায়ী অর্থনৈতিক ও ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনা ভালো বোঝেন এবং বিশেষ করে আগে থেকে এ ধরনের সুবিধা নেওয়ার জন্য তৈরি ছিলেন, তাঁদের জন্যই এ সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এসব বিষয় বিবেচনায় নবীন পেশাজীবী উদ্যোক্তাদের এ সহায়তা পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
আমরা অবশ্যই বলছি না, তথ্যপ্রযুক্তি পেশাজীবী উদ্যোক্তাদের দেশের প্রচলিত অর্থনৈতিক নিয়মকানুন-বিষয়ক উদাসীনতাকে প্রশ্রয় দিন। এ ক্ষেত্রে আমরা মনে করি, সহজ শর্তে উদ্যোক্তাদের কাজ শুরু করানোই সবচেয়ে জরুরি। এরপর ক্রমান্বয়ে তাঁদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে নিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে পরিপক্ব করা সম্ভব হবে। সুযোগ দেওয়া হলে তথ্যপ্রযুক্তি দক্ষতার পাশাপাশি তাঁরা দক্ষ অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপক ও সফল উদ্যোক্তা হতে পারবেন। তাই আমরা যদি সত্যিকার অর্থে আমাদের তথ্যপ্রযুক্তির সম্ভাবনাময় ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের পুঁজি সরবরাহের মাধ্যমে সাহায্য করতে চাই, তবে নীতিমালার ওপর উল্লিখিত ধারাগুলোর নিম্নরূপ সংশোধন একান্ত প্রয়োজন: (৩.২) সম্পূর্ণ নতুন প্রতিষ্ঠান ইইএফের জন্য আবেদন করতে পারবে। তবে উদ্যোক্তার তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক অভিজ্ঞতার প্রমাণ দিতে হবে এবং ইলেকট্রনিকস প্রমাণ গ্রহণযোগ্য হবে। (৩.৪) প্রস্তাবিত, প্রোপাইটরি বা পার্টনারশিপ (রেজিস্টার্ড বা আনরেজিস্টার্ড) কোম্পানি ইইএফের জন্য আবেদন করতে পারবে, তবে সহায়তা নিশ্চিত হওয়ার পর, তহবিল গ্রহণের আগে আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানকে ‘কোম্পানি আইন ১৯৯৪’-এর আওতায় নিবন্ধিত একটি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি হতে হবে। (৩.৫) ইইএফের সহযোগিতা পাওয়ার পর আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানকে রপ্তানিকারক হিসেবে নিবন্ধিত হতে হবে অর্থাৎ ইআরসি গ্রহণ করতে হবে।
উদ্যোক্তাদের তৈরি সফটওয়্যার, অ্যাপলেট ও অন্যান্য কাজের মূল্যায়নের মাধ্যমে প্রকল্প আওতাভুক্ত করার জন্য একটি স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। ইইএফ কর্তৃপক্ষের মূল্যায়নের বেঞ্চমার্কগুলো স্বচ্ছতার সঙ্গে উদ্যোক্তাদের কাছে প্রকাশ করতে হবে। প্রকল্প পরিকল্পনা তৈরির জন্য আইসিবির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ফরমগুলোর সঙ্গে সংযুক্তির জন্য আর্থিক বিশ্লেষণের ছকের টেমপ্লেট সংযুক্ত করতে হবে, যেখানে সাধারণ অঙ্কগুলো বসালেই বাদবাকি নিজে থেকে পূর্ণ হয়ে যাবে। প্রকল্প পরিকল্পনা তৈরির জন্য নতুন উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। প্রকল্প মূল্যায়নের যদি প্রকল্প পাস হওয়ার যোগ্যতা পায়, তবেই মূল্যায়ন খরচ উদ্যোক্তার কাছ থেকে নেওয়া যেতে পারে। উল্লিখিত বিষয়গুলো কর্তৃপক্ষ সঠিক তহবিল ব্যবস্থাপনার স্বার্থে বিনিয়োগ হিসেবে করতে পারে, যা প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় তাদের মূলধনের অংশ হিসেবে দেখতে উদ্যোক্তাদের আপত্তি থাকবে না বলেই আমার ধারণা। তবে ঝুঁকি কমানোর জন্য সম্পূর্ণ নতুন উদ্যোক্তা ও অভিজ্ঞ উদ্যোক্তাদের সহায়তার আওতা ও পরিমাণের কমবেশিসহ তদারকির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।
সুফি ফারুক ইবনে আবুবকর: পরিচালক, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি উন্নয়নকেন্দ্র।
‘ইইএফ (আইসিটি) তহবিল ব্যবহারের নীতিমালা’-এর নিম্নোক্ত ধারাগুলোর অন্যতম: (৩.২) ইইএফের জন্য আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানকে দেশের আইসিটি শিল্পে ন্যূনতম তিন বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে (আবেদন করার তারিখ থেকে পূর্ববর্তী তিন বছর)। (৩.৪) ইইএফের আওতায় তহবিল পাওয়ার জন্য আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানকে ‘কোম্পানি আইন ১৯৯৪’-এর আওতায় নিবন্ধিত একটি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি হতে হবে। (৩.৫) আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানকে রপ্তানিকারক হিসেবে নিবন্ধিত হতে হবে অর্থাৎ ইআরসি নিতে হবে। নিবন্ধিত একটি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি হতে হবে।
বাস্তবতা হলো, যেসব নবীন পেশাজীবীকে আমরা এই সহায়তার আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা করছি, তাঁরা উঠতি তথ্যপ্রযুক্তি পেশাজীবী জনশক্তি। দেশি প্রযুক্তি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশির ভাগ কোনো একটি বড় ব্যবসায়ী গ্রুপের বিনিয়োগ, যাদের এ ধরনের সহায়তার প্রয়োজন নেই বললেই হয়। আর বাকি নবীন পেশাজীবীদের বেশির ভাগ বর্তমানে বাসাবাড়িতে ছোট অফিস স্থাপন করে ৩ থেকে ১২ জন প্রোগ্রামার নিয়ে কাজ করছেন। তাঁরা অনলাইনের বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ডাকের (বিডিংয়ের) মাধ্যমে কাজ সংগ্রহ করেন। কাজ শেষ করে বিভিন্ন পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে বিল সংগ্রহ করে ওয়েস্টার্ন মানি ইউনিয়নের মতো কোনো একটি কোম্পানির মাধ্যমে দেশে টাকা নিয়ে আসে। যেহেতু খুব বড় প্রকল্পের কাজ না হলে বিদেশি কোম্পানিগুলো কাগজপত্র বা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট দেখতে চায় না, তাই এসব উদ্যোক্তার ৯৩ শতাংশের বেশির ট্রেড লাইসেন্সসহ অন্য কাগজপত্র তৈরি করার প্রয়োজন দেখা দেয়নি। একই কারণে তাদের কোনো কোম্পানি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই। তাই রপ্তানিকারক হিসেবে নিবন্ধিত হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই। ব্যালান্স শিট, ট্যাক্স রিটার্ন, কোম্পানি রিটার্ন ধরনের কাগজপত্রের বাস্তবতা তথৈবচ। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তারা কাজ পাচ্ছে এবং কঠিন মান নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়ে অর্থ উপার্জন করছে। দেশের প্রচলিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় তারা যত অদক্ষই হোক না কেন, তথ্যপ্রযুক্তির জ্ঞান বা দক্ষতায় তারা আন্তর্জাতিক মানের।
বর্তমান নীতিমালায় একজন নতুন উদ্যোক্তাকে ইইএফের সহযোগিতা নিতে গেলে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে একটি লিমিটেড কোম্পানি নিবন্ধন করতে হবে। এরপর বাণিজ্যিক অফিস খরচ, টিন নম্বর, ইআরসি, তিন বছরের ব্যালান্স শিট, ট্যাক্স রিটার্ন, কোম্পানি রিটার্ন প্রভৃতি মিলিয়ে আসবে ন্যূনতম সাত লাখ টাকা। প্রকল্প প্রস্তাব, প্রকল্প ছক তৈরি, মূল্যায়ন খরচ, যাতায়াত মিলিয়ে লাগবে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা। প্রায় ১২ লাখ টাকার অধিক খরচ করার পর তিনি নিশ্চিত হতে পারবেন না যে তাঁর প্রকল্প অনুমোদিত হবে কি না। তার চেয়ে বড় কথা, তিন বছর পর এই প্রকল্প থাকবে কি না, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। যে উদ্যোক্তা এত টাকা এ রকম অনিশ্চিত বিনিয়োগ করতে পারে, তার ইইএফের মতো রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা কতটুকু প্রয়োজন, তা বিবেচ্য।
নীতিমালার কিছু অংশ দেখে মনে হয়েছে, তথ্যপ্রযুক্তি পেশাজীবী নয়, বরং যেসব ব্যবসায়ী অর্থনৈতিক ও ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনা ভালো বোঝেন এবং বিশেষ করে আগে থেকে এ ধরনের সুবিধা নেওয়ার জন্য তৈরি ছিলেন, তাঁদের জন্যই এ সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এসব বিষয় বিবেচনায় নবীন পেশাজীবী উদ্যোক্তাদের এ সহায়তা পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
আমরা অবশ্যই বলছি না, তথ্যপ্রযুক্তি পেশাজীবী উদ্যোক্তাদের দেশের প্রচলিত অর্থনৈতিক নিয়মকানুন-বিষয়ক উদাসীনতাকে প্রশ্রয় দিন। এ ক্ষেত্রে আমরা মনে করি, সহজ শর্তে উদ্যোক্তাদের কাজ শুরু করানোই সবচেয়ে জরুরি। এরপর ক্রমান্বয়ে তাঁদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে নিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে পরিপক্ব করা সম্ভব হবে। সুযোগ দেওয়া হলে তথ্যপ্রযুক্তি দক্ষতার পাশাপাশি তাঁরা দক্ষ অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপক ও সফল উদ্যোক্তা হতে পারবেন। তাই আমরা যদি সত্যিকার অর্থে আমাদের তথ্যপ্রযুক্তির সম্ভাবনাময় ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের পুঁজি সরবরাহের মাধ্যমে সাহায্য করতে চাই, তবে নীতিমালার ওপর উল্লিখিত ধারাগুলোর নিম্নরূপ সংশোধন একান্ত প্রয়োজন: (৩.২) সম্পূর্ণ নতুন প্রতিষ্ঠান ইইএফের জন্য আবেদন করতে পারবে। তবে উদ্যোক্তার তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক অভিজ্ঞতার প্রমাণ দিতে হবে এবং ইলেকট্রনিকস প্রমাণ গ্রহণযোগ্য হবে। (৩.৪) প্রস্তাবিত, প্রোপাইটরি বা পার্টনারশিপ (রেজিস্টার্ড বা আনরেজিস্টার্ড) কোম্পানি ইইএফের জন্য আবেদন করতে পারবে, তবে সহায়তা নিশ্চিত হওয়ার পর, তহবিল গ্রহণের আগে আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানকে ‘কোম্পানি আইন ১৯৯৪’-এর আওতায় নিবন্ধিত একটি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি হতে হবে। (৩.৫) ইইএফের সহযোগিতা পাওয়ার পর আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানকে রপ্তানিকারক হিসেবে নিবন্ধিত হতে হবে অর্থাৎ ইআরসি গ্রহণ করতে হবে।
উদ্যোক্তাদের তৈরি সফটওয়্যার, অ্যাপলেট ও অন্যান্য কাজের মূল্যায়নের মাধ্যমে প্রকল্প আওতাভুক্ত করার জন্য একটি স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। ইইএফ কর্তৃপক্ষের মূল্যায়নের বেঞ্চমার্কগুলো স্বচ্ছতার সঙ্গে উদ্যোক্তাদের কাছে প্রকাশ করতে হবে। প্রকল্প পরিকল্পনা তৈরির জন্য আইসিবির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ফরমগুলোর সঙ্গে সংযুক্তির জন্য আর্থিক বিশ্লেষণের ছকের টেমপ্লেট সংযুক্ত করতে হবে, যেখানে সাধারণ অঙ্কগুলো বসালেই বাদবাকি নিজে থেকে পূর্ণ হয়ে যাবে। প্রকল্প পরিকল্পনা তৈরির জন্য নতুন উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। প্রকল্প মূল্যায়নের যদি প্রকল্প পাস হওয়ার যোগ্যতা পায়, তবেই মূল্যায়ন খরচ উদ্যোক্তার কাছ থেকে নেওয়া যেতে পারে। উল্লিখিত বিষয়গুলো কর্তৃপক্ষ সঠিক তহবিল ব্যবস্থাপনার স্বার্থে বিনিয়োগ হিসেবে করতে পারে, যা প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় তাদের মূলধনের অংশ হিসেবে দেখতে উদ্যোক্তাদের আপত্তি থাকবে না বলেই আমার ধারণা। তবে ঝুঁকি কমানোর জন্য সম্পূর্ণ নতুন উদ্যোক্তা ও অভিজ্ঞ উদ্যোক্তাদের সহায়তার আওতা ও পরিমাণের কমবেশিসহ তদারকির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।
সুফি ফারুক ইবনে আবুবকর: পরিচালক, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি উন্নয়নকেন্দ্র।
No comments