বীর মুক্তিযোদ্ধা-তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না
৪৩৯ স্বাধীনতার চার দশক উপলক্ষে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ধারাবাহিক এই আয়োজন। শহীদ আবদুস সালাম, বীর প্রতীক বীর যোদ্ধা আবদুস সালাম পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নবীন সৈনিক ছিলেন। চট্টগ্রাম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টার (ইবিআরসি) থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ১৯৭০ সালের শেষে যোগ দেন অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে।
কয়েক মাস পর শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। তখন তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে।
প্রতিরোধ যুদ্ধকালে আবদুস সালাম প্রথমে যুদ্ধ করেন চট্টগ্রাম জেলার কালুরঘাটে। এই যুদ্ধ সংঘটিত হয় ১১ এপ্রিল। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণে কালুরঘাটের পতন হলে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটে অবস্থান নেন পটিয়ায়। এরপর সবাই বান্দরবান হয়ে রাঙামাটি যান। পরে মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান নেন মহালছড়িতে।
এই মুক্তিযোদ্ধা দলের নেতৃত্বে ছিলেন মেজর মীর শওকত আলী (বীর উত্তম, পরে লেফটেন্যান্ট জেনারেল)। তিনি মহালছড়িতে হেড কোয়ার্টার স্থাপন করে মুক্তিযোদ্ধাদের চারটি দলে বিভক্ত করেন। প্রথম দল অবস্থান নেয় ঘাগড়াতে। দ্বিতীয় দল বুড়িঘাটে, তৃতীয় দল রাঙামাটি বরকলের মধ্যবর্তী স্থানে এবং চতুর্থ দল কতুবছড়ি এলাকায়।
আবদুস সালাম ছিলেন চতুর্থ দলে। এই দলের দলনেতা ছিলেন সুবেদার মুত্তালিব। ১৮ এপ্রিল তাঁরা কুতুবছড়িতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে অ্যামবুশ করেন। এই অ্যামবুশে তাঁদের হাতে বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা হতাহত হয়।
২৭ এপ্রিল মহালছড়ির পতন হলে মীর শওকত আলীর নেতৃত্বাধীন বেশির ভাগ মুক্তিযোদ্ধা সমবেত হন রামগড়ে। এ সময় আবদুস সালামের দল হেঁয়াকোতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। রামগড় রক্ষায় হেঁয়াকো ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান।
২৯ এপ্রিল পাকিস্তান সেনাবাহিনী হেঁয়াকোতে মুক্তিবাহিনীর ওপর আক্রমণ করে। মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি আক্রমণ প্রতিরোধ করতে থাকেন। যুদ্ধ অব্যাহত থাকে। ৩০ এপ্রিল পাকিস্তানি সেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানে বেপরোয়া আক্রমণ চালায়। সকাল ১০টা পর্যন্ত তুমুল লড়াই চলে। মুক্তিযোদ্ধারা প্রাণপণ লড়াই করেও ব্যর্থ হন। সে দিন বিকেলেই হেঁয়াকোর নিয়ন্ত্রণ পাকিস্তানিদের হাতে চলে যায়।
এরপর আবদুস সালামসহ মুক্তিযোদ্ধারা ভারতে চলে যান। সেখানে পুনর্গঠিত হওয়ার পর জুলাই মাস থেকে তাঁরা যুদ্ধ করেন ৫ নম্বর সেক্টরে। এই সেক্টরে যোগ দেওয়ার কিছুদিন পর আবদুস সালাম এক যুদ্ধে শহীদ হন। কোন যুদ্ধে বা কত তারিখে শহীদ হয়েছেন সে সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়নি।
মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্বের জন্য শহীদ আবদুস সালামকে মরণোত্তর বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ নম্বর ১৬৭।
শহীদ আবদুস সালাম অবিবাহিত ছিলেন। পৈতৃক বাড়ি নাটোর জেলার লালপুর উপজেলার (ডাক দয়ারামপুর) ধুপাইল গ্রামে। তাঁর বাবার নাম খন্দকার আবুল কাশেম। মা ফাতেমা বেগম।
শহীদ আবদুস সালামের ছবি পাওয়া যায়নি।
শহীদ আবদুস সালামের বীরত্ব সম্পর্কে কারও তথ্য জানা থাকলে তা প্রথম আলোর ‘তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না’ বিভাগে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে।
সূত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস, সেক্টর ১ এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ দলিলপত্র, নবম খণ্ড।
গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
trrashed@gmail.com
প্রতিরোধ যুদ্ধকালে আবদুস সালাম প্রথমে যুদ্ধ করেন চট্টগ্রাম জেলার কালুরঘাটে। এই যুদ্ধ সংঘটিত হয় ১১ এপ্রিল। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণে কালুরঘাটের পতন হলে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটে অবস্থান নেন পটিয়ায়। এরপর সবাই বান্দরবান হয়ে রাঙামাটি যান। পরে মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান নেন মহালছড়িতে।
এই মুক্তিযোদ্ধা দলের নেতৃত্বে ছিলেন মেজর মীর শওকত আলী (বীর উত্তম, পরে লেফটেন্যান্ট জেনারেল)। তিনি মহালছড়িতে হেড কোয়ার্টার স্থাপন করে মুক্তিযোদ্ধাদের চারটি দলে বিভক্ত করেন। প্রথম দল অবস্থান নেয় ঘাগড়াতে। দ্বিতীয় দল বুড়িঘাটে, তৃতীয় দল রাঙামাটি বরকলের মধ্যবর্তী স্থানে এবং চতুর্থ দল কতুবছড়ি এলাকায়।
আবদুস সালাম ছিলেন চতুর্থ দলে। এই দলের দলনেতা ছিলেন সুবেদার মুত্তালিব। ১৮ এপ্রিল তাঁরা কুতুবছড়িতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে অ্যামবুশ করেন। এই অ্যামবুশে তাঁদের হাতে বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা হতাহত হয়।
২৭ এপ্রিল মহালছড়ির পতন হলে মীর শওকত আলীর নেতৃত্বাধীন বেশির ভাগ মুক্তিযোদ্ধা সমবেত হন রামগড়ে। এ সময় আবদুস সালামের দল হেঁয়াকোতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। রামগড় রক্ষায় হেঁয়াকো ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান।
২৯ এপ্রিল পাকিস্তান সেনাবাহিনী হেঁয়াকোতে মুক্তিবাহিনীর ওপর আক্রমণ করে। মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি আক্রমণ প্রতিরোধ করতে থাকেন। যুদ্ধ অব্যাহত থাকে। ৩০ এপ্রিল পাকিস্তানি সেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানে বেপরোয়া আক্রমণ চালায়। সকাল ১০টা পর্যন্ত তুমুল লড়াই চলে। মুক্তিযোদ্ধারা প্রাণপণ লড়াই করেও ব্যর্থ হন। সে দিন বিকেলেই হেঁয়াকোর নিয়ন্ত্রণ পাকিস্তানিদের হাতে চলে যায়।
এরপর আবদুস সালামসহ মুক্তিযোদ্ধারা ভারতে চলে যান। সেখানে পুনর্গঠিত হওয়ার পর জুলাই মাস থেকে তাঁরা যুদ্ধ করেন ৫ নম্বর সেক্টরে। এই সেক্টরে যোগ দেওয়ার কিছুদিন পর আবদুস সালাম এক যুদ্ধে শহীদ হন। কোন যুদ্ধে বা কত তারিখে শহীদ হয়েছেন সে সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়নি।
মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্বের জন্য শহীদ আবদুস সালামকে মরণোত্তর বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ নম্বর ১৬৭।
শহীদ আবদুস সালাম অবিবাহিত ছিলেন। পৈতৃক বাড়ি নাটোর জেলার লালপুর উপজেলার (ডাক দয়ারামপুর) ধুপাইল গ্রামে। তাঁর বাবার নাম খন্দকার আবুল কাশেম। মা ফাতেমা বেগম।
শহীদ আবদুস সালামের ছবি পাওয়া যায়নি।
শহীদ আবদুস সালামের বীরত্ব সম্পর্কে কারও তথ্য জানা থাকলে তা প্রথম আলোর ‘তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না’ বিভাগে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে।
সূত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস, সেক্টর ১ এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ দলিলপত্র, নবম খণ্ড।
গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
trrashed@gmail.com
No comments