ব দ লে যা ও ব দ লে দা ও মি ছি ল ব দ লে যা ও ব দ লে-স্বাধীনতা আর অধীনতার দোলাচলে ইভ টিজিং by ফারহানা হোসাইন

‘বদলে যাও বদলে দাও মিছিল’ ব্লগে দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা ও নির্বাচিত চারটি ইস্যু নিয়ে অব্যাহত আলোচনা হচ্ছে। আজ ইভ টিজিংমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার একটি বিশ্লেষণাত্মক অভিমতসহ আরও দুজন লেখকের নির্বাচিত মন্তব্য ছাপা হলো।


এখনো গণমাধ্যমে, বইপুস্তক, গবেষণা প্রতিবেদনে লেখা হয়, আমাদের দেশের নারীরা পরাধীন। এর সত্য-মিথ্যার দ্বন্দ্বে আমি যেতে চাই না। উভয় দিকেই যুক্তি, পাল্টা যুক্তি আসবে। দেশের বিজ্ঞজনের সামনে আমি সবিনয়ে বলতে চাই, আমি নিজে একজন নারী হয়ে কখনো ভাবতে চাই না নারীরা পরাধীন। আমি জানি আমি স্বাধীন। প্রথমত আমি মানুষ, আমার মানবিক গুণাবলি আছে, আছে মননশীলতা, নতুনকে গ্রহণ করার সাহস, আছে জ্ঞানপিপাসা, সচেতনতা, বিবেক, বুদ্ধি, মানুষের প্রতি সহমর্মিতা, মানুষ হয়ে মানুষকে ভালোবাসার ক্ষমতা। আমাকে আলাদাভাবে স্বাধীন করার কী আছে?
নারী হিসেবে চিহ্নিত করার আগে যদি আমি মানুষ হিসেবে চিহ্নিত হই, তাহলে তো বিভেদের কোনো প্রশ্ন অবান্তর। আমি একজন সচেতন মানুষ, সুনাগরিক হিসেবে নিজের পরিচয় চাই। আমরা যাঁরা নারী বলে চিহ্নিত এই দেশে, তাঁরা তুলনামূলকভাবে একটু বেশি ‘অনিরাপদ’ এই দেশে, আর কিছু ক্ষেত্রে ‘অগ্রহণযোগ্য’। আমরা যখন রাস্তায় বের হই, ইভ টিজিং নামক এক সমস্যার শিকার প্রায়ই হই। রাস্তায় হাঁটতে পাশের লোকের নোংরা মন্তব্য, বাসে উঠতে গেলে অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শ, অপ্রয়োজনীয় ধাক্কা-গুঁতা—এসব সমস্যা নারী হিসেবে আমাদের জন্য বিশেষ প্রাপ্তি!
পাঠক বলতে পারেন, যখন আমি ভাবছি সবাই স্বাধীন, তখন কেন আমরা নারীরা তখনই প্রতিবাদ করি না। আমি কিন্তু অনেক জায়গায় প্রতিবাদের চিত্রটাও দেখেছি। সেটা আরও বেশি ঝামেলাপূর্ণ ও অবমাননাকর। কারণ, আমাদের দেশে আশপাশের মানুষগুলোর মধ্যে অনেকেই মানসিকভাবে পরাধীন। আমার সামনেই রাস্তায় একটি মেয়ে টিজিং নিয়ে প্রতিবাদ করেছিল। ফলে চারদিকে অনেক মানুষ জমা হয়ে গেল, কিছু মানুষরূপী অমানুষ জিজ্ঞেস করছিল, ‘আপা, আসলে ঘটনাটা কী হইসে? কী নোংরা কথা কইসে এই বেয়াদ্দপ বেটা? একটু খুইলা কন দেখি?’ আরেকজন বলছিল, ‘মাইয়াদের এত্ত রাগ করতে নাই। ধৈর্য না ধরলে যখন বাচ্ছা হইব তখন কী হইব।’ আমরা কিছু নারী মানুষও কিন্তু কম যাই না। এক ভদ্র (!) মহিলা বলছিলেন, ‘খামোখা নিজের ইজ্জতটা খুয়াইল, এইসব কথা না বইলা চুপ কইরা থাকলে ইজ্জত কম যায়।’ পাঠক, এখন আপনারাই বলুন, নিজ উদ্যোগে মননশীলতা, সচেতনতা দিয়ে হয়তো নিজের বিবেককে স্বাধীন করা যায়। কিন্তু কিছু মানুষ যাদের বিবেক পরাধীন, তাদের মধ্যে নিরাপদ থাকা খুব কঠিন। আর আমাদের আশপাশে বিবেকের দাসপ্রথায় বিশ্বাসী মানুষের অভাব কই!
আমি ‘অগ্রহণযোগ্য’ শব্দটাও ব্যবহার করেছি। অগ্রহণযোগ্য এই অর্থে, আমাদের মুক্তবুদ্ধি বা জীবনের পথ চলাতে আমাদের শক্ত প্রয়াস বাঁকা চোখের চাহনি কাড়ে সবচেয়ে সহজে। আমি বলব ‘মানুষ নারীদের’ জন্য বাসে চলার পরিবেশ নেই।
পাঠক, আমার এক সহকর্মী একনিষ্ঠ ধর্মপ্রাণ মুসলিম। বাসে অথবা ট্রেনে বোরকা পরেই চলাফেরা করেন। তাঁর চোখ দুটো বাদে আর কিছুই দেখা যায় না। এর পরও তো রক্ষা হয় না তাঁর পোশাকের শালীনতা! একদিন বাসের সিটে পাশে বসে থাকা লোকটি বারবার তাঁর পায়ের সঙ্গে পা লাগিয়ে দিচ্ছিলেন। প্রথমে দুবার তিনি ব্যক্তিটিকে ব্যাপারটি ভদ্র ভাষায় বললেন। কিন্তু লোকটা পা একটুও না সরিয়ে একইভাবে ছড়িয়ে রাখলেন। তৃতীয়বারও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটায় তিনি অনুরোধ করলেন লোকটাকে পা-টা একটু সরিয়ে বসতে। লোকটি তাঁর জায়গায় অনড়। চতুর্থবার আমার সহকর্মী নিজেই সিট থেকে উঠে দাঁড়ালেন আর লোকটিকে উদ্দেশ করে বললেন, ‘আপনার বাসায় সোফা নেই বুঝতে পারছি। আপনি বরং দুটো সিট নিয়ে পা ছড়িয়ে আরাম করে বসুন।’ এই বলে আমার সহকর্মী সারা রাস্তা দাঁড়িয়ে গেলেন। শালীনতা বজায় রাখা সত্ত্বেও তাঁর দীর্ঘ পথ বাসে দাঁড়িয়ে যেতে হলো।
পাঠক হয়তো ভাববেন, মেয়েদের জন্য সংরক্ষিত আট-নয়টি সিট তো বরাদ্দ আছে। আমি বলব ভুল। যদি সত্যি পরিবেশটা অনুকূল হতো, আমাদের জন্য তাহলে আলাদা সংরক্ষিত সিটের প্রয়োজন কোথায়? শুধু তা-ই না, নারীর গাড়ি চালানো, স্কুটি চালানো এক ধরনের চক্ষুশূল। কিন্তু এই অগ্রহণযোগ্যতা অবাঞ্ছনীয়। আমরা বাসে চলতে অশালীন ব্যবহার বা ইচ্ছাকৃত যত্রতত্র স্পর্শ করাটা যৌন হয়রানি হলেও উপায়হীন হয়ে মুখ বুজে মেনে নিচ্ছি। কিন্তু কোনো নারী নিজে যুদ্ধ করে গাড়ি বা স্কুটি চালাচ্ছে এই অবাঞ্ছিত লজ্জাকর পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য, সেটা অবশ্যই অগ্রহণযোগ্য। তার জন্য যে কারণ দর্শানোর প্রয়োজন হোক না কেন, আমরা সদাসর্বদা প্রস্তুত। তখন ধর্ম, সমাজ, সংস্কৃতি সবই বিবেচ্য। কিন্তু যৌন হয়রানির এসব ক্ষেত্রে সবাই বাকপ্রতিবন্ধী। এই বাকপ্রতিবন্ধীরা জানে যে ধর্ম, সংস্কৃতি সব দিক বিবেচনা করে এই যুদ্ধ নারীদের জন্য প্রযোজ্য। পর্দা রক্ষা করে কি গাড়ি বা স্কুটি চালানো অসম্ভব? দৃষ্টিকটু? যদি উত্তর হ্যাঁ হয়, তবে আমার প্রশ্ন, যৌন হয়রানি কেন দৃষ্টিকটু নয়?
আমাদের পাশের বাসায়ই একটা মেয়ে ছিল। সে ওই বাড়িতে কাজে সাহায্য করত। ১৪ বছর বয়সে তার মা জোর করে তাকে বিয়ে দিয়ে দিল। কারণ, মেয়েটির গলার স্বর অত্যন্ত চিকন। এটাই তার অগ্রহণযোগ্যতা। আমাদের প্রতিষ্ঠানেই উচ্চপর্যায়ে চাকরিরত এক আঙ্কেলকে জানি। তাঁর ছোট্ট দুটি ফুলের মতো মেয়েকে তিনি সব সময়ই নিজের দায় বলেন। এই যে এত সম্মানিত শিক্ষিত লোকটি তাঁর সম্পদকে দায় বলছেন, এই অগ্রহণযোগ্যতার কী নাম দেব আমি?
আমরা পরাধীন নয়, স্বাধীন ও জন্মসূত্রেই মানুষ। আমরা শুধু অনিরাপদ আর অগ্রহণযোগ্য। তার কারণ, শুধু আমাদের পরাধীন বিবেক, দাসপ্রথায় নিয়োজিত আমাদের চিন্তাভাবনা। তাই তো মুক্তির পথ সুদূরপরাহত হয়েই থাকে।
ফারহানা হোসাইন, বদলে যাও বদলে দাও মিছিল ব্লগের নিয়মিত লেখক।
Farhana_hn_blog@yahoo.com
যোগ দিন ফেসবুক পেজে : www.facebook.com/bjbdmichil

জনমত জরিপের ফলাফল
বদলে যাও বদলে দাও মিছিলের ওয়েবসাইটে নতুন তিনটি জনমত শুরু হয়েছে চলতি সপ্তাহে। আপনিও অংশ নিন জরিপে।

ট্রাফিক আইন অমান্যকারীদের সাজা দিতে প্রতিদিন মোবাইল কোর্ট বসা উচিত বলে মনে করেন?

 হ্যাঁ ৮৮%  না ৮%
 মন্তব্য নেই ৪%
২৭ জুন, ২০১২ পর্যন্ত
আপনি কি মনে করেন, নৌ-দুর্ঘটনা কমাতে চলতি বাজেটেই নৌ-পুলিশ বাহিনী গঠন করা জরুরি?
 হ্যাঁ ৭১%  না ২১%
 মন্তব্য নেই ৮%
২৭ জুন, ২০১২ পর্যন্ত
শিশুদের জন্য একটি বিশেষায়িত টিভি চ্যানেল অনুমোদন দেওয়া জরুরি বলে মনে করেন কি?
 হ্যাঁ ৮৫%  না ৯%
 মন্তব্য নেই ৬%
২৭ জুন, ২০১২ পর্যন্ত
www.bodlejaobodledao.com

No comments

Powered by Blogger.