পাকিস্তানের আটটি জাতীয় ভাষার স্বীকৃতি ও রাজনৈতিক বাস্তবতা by নেহাল আদেল
আমরা যখন মহান ভাষা আন্দোলনের প্রায় ষাটতম বার্ষিকী পালন করছি, তখন বিচ্ছিন্ন পাকিস্তান আটটি জাতীয় ভাষার স্বীকৃতি দিয়েছে। বহুজাতিক রাষ্ট্র পাকিস্তানে এ বাস্তবতার স্বীকৃতি মহাদেশে বহুমাত্রিক ঐক্য প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করবে।
ভারত বাংলা ভাষাসহ ২৮টি ভাষাকে জাতীয় ভাষা বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। তার মধ্যে উর্দু, পাঞ্জাবি এবং সিন্ধিও রয়েছে। ঢাকার মর্নিং নিউজের সাবেক সহসম্পাদক আখতার পায়ামী আমাকে ১৯৯৭ সালে বলেছিলেন, পাকিস্তানে ৩৫ লাখ বাঙালি ছিল। এ সংখ্যা এখন ৪০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে বলে অনেকে মনে করেন। যদিও দ্বিতীয় এবং তৃতীয় প্রজন্মে ভাষা চর্চার অভাবে বাংলার ব্যবহার কমে এসেছে। জনগোষ্ঠীর দিক দিয়ে বাংলার ব্যবহার বেলুচি বা কাশ্মীরির চেয়ে বেশি। বেলুচি ও কাশ্মীরি পাকিস্তানের জাতীয় ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পেলেও বাংলা পায়নি। পাকিস্তানে বাংলাদেশি বলতে বিহারিদেরও বোঝায়। তৃতীয় প্রজন্মের বাংলাদেশ থেকে আগত বিহারিরা বেশ শুদ্ধ বাংলা বলে ও লেখে। আমরা মনে করি, গণতান্ত্রিক পাকিস্তানে বাংলাদেশ থেকে আগত জনগোষ্ঠীর অধিকারকে স্বীকৃতি দিতে হবে।
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর প্রতিষ্ঠিত নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগ প্রচণ্ড ঝড়ঝঞ্ঝা ও সামরিক শাসন উপেক্ষা করে তদানীন্তন পশ্চিম পাকিস্তান অর্থাৎ আজকের পাকিস্তানে এখনো টিকে আছে। পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ আলী পাকিস্তানের ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক শক্তিকে মোশাররফের একনায়কত্বের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করতে এক বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এ মোর্চায় মোহাজিরদের প্রতিষ্ঠান মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট ছিল। এ জোটই এখন পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতায়। তারা খাইবার পাখতুনওয়া নামকরণ করেছে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশকে। এটা দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ ও ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির দাবি ছিল। এ দাবিটি আজ সর্বতোভাবে মেনে নেওয়া হয়েছে। বাংলা একটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা। বাংলাভাষিরা শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারত, পাকিস্তান, কাতার, মালয়েশিয়া, ব্রুনাই, ব্রিটেন, কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অস্ট্রেলিয়ায়ও রয়েছে।
ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত সেদিনের বর্ধমান হাউস আজকের বাংলা একাডেমী আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর ভাষায় বিশ্ব বাঙালির তীর্থকেন্দ্র। প্রতিবছর বইমেলায় এখানে ভিড় করে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বাঙালিরা।
আমি ভারতের বাঙালিদের প্রায়ই দেখি, দেখি লন্ডনের, অস্ট্রেলিয়ার এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরও। কিন্তু পাকিস্তানি বাঙালি দেখিনি। নিতান্ত দুঃখজনক হলেও পাকিস্তানি বাঙালিরা সাধারণত কায়িক শ্রম করে গৃহভৃত্য, আরব সাগরের জেলে। সিন্ধু ও বেলুচিস্তানের মরুভূমিকে কলা ও আনারস চাষ করে উর্বর করেছে, ধান চাষ করছে। পাট চাষ করছে কি না জানি না। শুনেছি, পাকিস্তান বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর ওরা পাট ও চা চাষের প্রয়াস নিয়েছিল। একজন পাকিস্তানি বাঙালিকে পেয়েছিলাম বইমেলায়। সে এসেছিল সিন্ধু প্রদেশ থেকে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষানবিসি করতে। সে তার বান্ধবী একটি সিন্ধি হিন্দু মেয়েকে নিয়ে এসেছিল।
তারা সুন্দর সিন্ধি বলছিল পরস্পরের সঙ্গে। তার বাবা চাষি গুড্ডু বাঁধ এলাকায় যে বাঙালি চাষিদের পুনর্বাসন করা হয়েছিল তাদের একজন।
আমি মনে করি, বাংলাদেশের উচিত পাকিস্তানি বাঙালিদের দিকে নজর দেওয়া। ওদের বার্ষিক কিছু বৃত্তি দেওয়া ও করাচিতে একটি সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট স্থাপন করা খুব ব্যয়সাপেক্ষ হবে না। তাদের বাংলা ভাষা শেখারও একটা সুযোগ থাকা উচিত, যাতে পরবর্তী প্রজন্মও বাংলা বলতে পারে। আমরা একাত্তরে পাকিস্তানি শাসন থেকে রেহাই পেয়েছিলাম। কিন্তু সমরতন্ত্র থেকে রেহাই পাইনি।
সমরতন্ত্রের ভূত পাকিস্তান ও বাংলাদেশ উভয়ের ঘাড়েই চেপে বসে। পাকিস্তান ও বাংলাদেশ উভয়ই সমরতন্ত্র থেকে মুক্ত হয়ে গণতন্ত্রে উত্তরণ করেছে। আমরাও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীগুলোর অধিকারকে স্বীকৃতি দিচ্ছি। পার্বত্য শান্তিচুক্তি তার প্রমাণ।
লেখক : সুইডেন প্রবাসী নৃতাত্তি্বক
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর প্রতিষ্ঠিত নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগ প্রচণ্ড ঝড়ঝঞ্ঝা ও সামরিক শাসন উপেক্ষা করে তদানীন্তন পশ্চিম পাকিস্তান অর্থাৎ আজকের পাকিস্তানে এখনো টিকে আছে। পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ আলী পাকিস্তানের ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক শক্তিকে মোশাররফের একনায়কত্বের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করতে এক বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এ মোর্চায় মোহাজিরদের প্রতিষ্ঠান মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট ছিল। এ জোটই এখন পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতায়। তারা খাইবার পাখতুনওয়া নামকরণ করেছে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশকে। এটা দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ ও ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির দাবি ছিল। এ দাবিটি আজ সর্বতোভাবে মেনে নেওয়া হয়েছে। বাংলা একটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা। বাংলাভাষিরা শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারত, পাকিস্তান, কাতার, মালয়েশিয়া, ব্রুনাই, ব্রিটেন, কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অস্ট্রেলিয়ায়ও রয়েছে।
ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত সেদিনের বর্ধমান হাউস আজকের বাংলা একাডেমী আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর ভাষায় বিশ্ব বাঙালির তীর্থকেন্দ্র। প্রতিবছর বইমেলায় এখানে ভিড় করে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বাঙালিরা।
আমি ভারতের বাঙালিদের প্রায়ই দেখি, দেখি লন্ডনের, অস্ট্রেলিয়ার এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরও। কিন্তু পাকিস্তানি বাঙালি দেখিনি। নিতান্ত দুঃখজনক হলেও পাকিস্তানি বাঙালিরা সাধারণত কায়িক শ্রম করে গৃহভৃত্য, আরব সাগরের জেলে। সিন্ধু ও বেলুচিস্তানের মরুভূমিকে কলা ও আনারস চাষ করে উর্বর করেছে, ধান চাষ করছে। পাট চাষ করছে কি না জানি না। শুনেছি, পাকিস্তান বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর ওরা পাট ও চা চাষের প্রয়াস নিয়েছিল। একজন পাকিস্তানি বাঙালিকে পেয়েছিলাম বইমেলায়। সে এসেছিল সিন্ধু প্রদেশ থেকে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষানবিসি করতে। সে তার বান্ধবী একটি সিন্ধি হিন্দু মেয়েকে নিয়ে এসেছিল।
তারা সুন্দর সিন্ধি বলছিল পরস্পরের সঙ্গে। তার বাবা চাষি গুড্ডু বাঁধ এলাকায় যে বাঙালি চাষিদের পুনর্বাসন করা হয়েছিল তাদের একজন।
আমি মনে করি, বাংলাদেশের উচিত পাকিস্তানি বাঙালিদের দিকে নজর দেওয়া। ওদের বার্ষিক কিছু বৃত্তি দেওয়া ও করাচিতে একটি সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট স্থাপন করা খুব ব্যয়সাপেক্ষ হবে না। তাদের বাংলা ভাষা শেখারও একটা সুযোগ থাকা উচিত, যাতে পরবর্তী প্রজন্মও বাংলা বলতে পারে। আমরা একাত্তরে পাকিস্তানি শাসন থেকে রেহাই পেয়েছিলাম। কিন্তু সমরতন্ত্র থেকে রেহাই পাইনি।
সমরতন্ত্রের ভূত পাকিস্তান ও বাংলাদেশ উভয়ের ঘাড়েই চেপে বসে। পাকিস্তান ও বাংলাদেশ উভয়ই সমরতন্ত্র থেকে মুক্ত হয়ে গণতন্ত্রে উত্তরণ করেছে। আমরাও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীগুলোর অধিকারকে স্বীকৃতি দিচ্ছি। পার্বত্য শান্তিচুক্তি তার প্রমাণ।
লেখক : সুইডেন প্রবাসী নৃতাত্তি্বক
No comments