বান্দরবান ট্র্যাজেডি-কয়েক ঘণ্টায় লামা মৃত্যুপুরী by মনু ইসলাম

২০০৯ সালে বান্দরবানের লামা উপজেলার আজিজনগর মুসলিমপাড়ায় পাহাড়ধসে ১১ জনের মর্মান্তিক মৃত্যুর পর এর চেয়েও বড় ট্র্যাজেডি ঘটল এবার। অকালে মৃত্যু হলো ৩৬ জনের। গতকাল বুধবার মাটিতে চাপা পড়া অবস্থা থেকে একের পর এক লাশ তুলে আনার সময় হৃদয়বিদারক পরিবেশ সৃষ্টি হয়।


নিহতদের আত্মীয়স্বজনের আহাজারিতে পুরো এলাকা শোকে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। প্রাণহানির পাশাপাশি এখানে-ওখানে পাহাড়ধস এবং বানের পানিতে ভেসে যায় অসংখ্য ঘরবাড়ি। মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে লামা উপজেলা যেন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।
লামা উপজেলার আবুল খায়ের তাঁর স্ত্রী মরিয়ম বেগম, ১০ বছর বয়সী ছেলে নুরুল আবছার, পাঁচ বছরের মেয়ে মণি আক্তার ও ভাই পেটানসহ পরিবারের চারজনকে হারিয়ে এখন পাগলপ্রায়। রূপসীপাড়ায় মাটি চাপা পড়ে নিহত নূর আহমদ, তাঁর স্ত্রী ও শিশুপুত্রের লাশ দেখে প্রতিবেশীরা নিথর হয়ে আছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দক্ষিণ বাইশারিতেও চলছে মাতম। রুহুল আমিনের পরিবারের কোনো সদস্যই আর বেঁচে নেই। ফাইতং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য রাখাল দে জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে বৃষ্টিপাত শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই পাশের বিশাল পাহাড় ধসে পড়ে জনপদের ওপর। রাতে অনেক চেষ্টা করেও মাটি চাপা পড়া অবস্থা থেকে কাউকে উদ্ধার করা যায়নি। গতকাল সকালে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় মাটি সরিয়ে লাশ উদ্ধার করা হয়।
নিহতদের মধ্যে ফাইতং এলাকার পোক খাইয়া ঝিরির নুরুল ইসলামের পরিবারের ৯ জন, মগনামায় পাঁচজন এবং রাইন্যার ঝিরি এলাকায় চারজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ২২ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁরা হচ্ছেন নুরুল ইসলাম (৪০), তাঁর স্ত্রী রাশেদা বেগম (৩০), চার শিশুকন্যা সাহিমা (১১), রেহানা (১০), তাহসিনা (৮), এ্যানি (৪) ও ছয় বছরের শিশুপুত্র আবু হানিফ এবং বাড়িতে থাকা দুই অতিথি বশির আহমদ ও নাজিম উদ্দিন। মগনামায় নিহতরা হচ্ছেন আশরাফুজ্জামান (৪০), তাঁর স্ত্রী ফাতেমা বেগম (৩০), শিশুপুত্র কাওছার (১১) ও আনছার এবং তিন বছরের শিশুকন্যা রোজিনা। রাইন্যার ঝিরির আবদুস সালামের স্ত্রী নাছিমা বেগম ও মেয়ে সাহনাজের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
এ ছাড়া নাইক্ষ্যংছড়ির দক্ষিণ বাইশারি এলাকায় আবদুল হকের পরিবারের সাতজনসহ মোট আটজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁরা হলেন আবদুল হক (৬০), রুহুল আমিন (৪৩), তাঁর মা হামিদা বেগম (৭০), স্ত্রী রোকেয়া বেগম (৩০), মেয়ে পারভীন আক্তার (৫), ছেলে সফিউল ইসলাম (৭) ও মোরশেদুল ইসলাম (৩) এবং বাগান ঘোনা এলাকার মোহাম্মদ কালু (৬০)।

No comments

Powered by Blogger.