শীর্ষ অপরাধীদের রক্ষার পথ পরিহার করুন-খুনের মামলা প্রত্যাহার

রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহারের অভিযোগ ছিল গোড়া থেকেই। এখন দেখা যাচ্ছে, এই সুযোগে বিদেশে পলাতক ও ধরিয়ে দিতে পুরস্কারঘোষিত শীর্ষস্থানীয় সন্ত্রাসীদেরও রেহাই দেওয়া হয়েছে। প্রথম আলোর গতকালের প্রধান শিরোনাম ছিল ‘খুনের মামলা প্রত্যাহার, শীর্ষ সন্ত্রাসীর অব্যাহতি’।


২০০৫ সালে মিরপুরে সংঘটিত ব্যবসায়ী আফতাবউদ্দিন হত্যা মামলার আসামি ছিল শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতসহ ১৯ জন। এক নম্বর আসামি ওসমান গনির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের জন্য সরকারের গঠিত কমিটি চাঞ্চল্যকর এই মামলাটি প্রত্যাহারের সুপারিশ করে এবং আইনি প্রক্রিয়ায় সেটি যথারীতি প্রত্যাহারও করা হয়েছে। যেকোনো মামলায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কারও নাম আসামির তালিকায় থাকলে অবশ্যই সেটি বাদ দেওয়ার সুপারিশ করতে পারে কমিটি; তাই বলে তারা একটি হত্যার ঘটনাকে অস্বীকার করতে পারে না।
কমিটি কি মনে করেছে, ব্যবসায়ী আফতাব খুন হননি? যদি তিনি খুন হয়ে থাকেন, তাহলে খুনিদের বিচার হতে হবে। অন্যান্যের মধ্যে শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতও এই মামলার আসামি। এখন মামলা প্রত্যাহারের অর্থ হলো একজন চিহ্নিত ও পলাতক খুনের আসামিকে নির্দোষ হিসেবে প্রমাণ করা। এ ব্যাপারে কমিটির সভাপতি আইন প্রতিমন্ত্রী যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেছেন, ‘শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম বাদ দেওয়া হলে ভুলবশত হয়েছে।’ আবার বলেছেন, ‘জেলা কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী মামলাটি প্রত্যাহার করা হয়েছে।’
স্থানীয় সাংসদ কামাল মজুমদার মামলার এক নম্বর আসামি ওসমান গনিকে আওয়ামী লীগের কর্মী বলে মামলাটি প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছেন। তিনি ওসমানকে আওয়ামী লীগের কর্মী বলে দাবি করলেও স্থানীয় নেতা এ কে এম দেলোয়ার তা অস্বীকার করেছেন। আমরা কার কথা বিশ্বাস করব? সাংসদ যদি মনে করেন, তাঁর দলের কর্মীকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আসামি করা হয়েছে, তাহলে তিনি তাঁর নাম বাদ দেওয়ার সুপারিশ করতে পারতেন। কিন্তু তা না বলে তিনি মামলাটিই নাই করে দিয়েছেন। এটি কেবল অনৈতিক নয়, বেআইনিও। বাদীর অভিযোগ, এই মামলা প্রত্যাহারে মোটা অঙ্কের আর্থিক লেনদেন হয়েছে। অভিযোগটি হালকা করে দেখা উচিত নয়। শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতসহ মামলার দুই আসামি দেশে না থাকলেও তাদের পক্ষে কারা আবেদন করেছেন, কেন করেছেন, তাও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
মামলা প্রত্যাহারের বিষয়টি গতকাল আইন ও বিচারসংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির বৈঠকেও আলোচিত হয়েছে এবং মন্ত্রণালয়ের কাছে মামলার কাগজপত্র চেয়ে পাঠানো হয়েছে। সংসদীয় কমিটির ত্বরিত সিদ্ধান্তকে আমরা সাধুবাদ জানাই। তবে কাগজপত্র চেয়ে পাঠানো কিংবা পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে যাতে কালক্ষেপণ না হয়, সে ব্যাপারেও তাদের সতর্ক থাকা প্রয়োজন।
এভাবে দুর্ধর্ষ অপরাধীদের মামলা থেকে অব্যাহতি দিলে কিংবা মামলা প্রত্যাহার করে নিলে দেশে কীভাবে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে? সরকার উচ্চপর্যায়ের কমিটি করেছে রাজনৈতিক কারণে কেউ হয়রানির শিকার হয়ে থাকলে তার প্রতিকারের জন্য, অপরাধীদের রেহাই দিতে নয়। আইন প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী, এ ক্ষেত্রে যদি কোনো ভুল হয়ে থাকে, তা সংশোধনের দায়িত্বও সরকারের। আশা করি, অবিলম্বে প্রত্যাহার আদেশ বাতিল এবং মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।

No comments

Powered by Blogger.