১০৬ জনের মৃত্যু-চট্টগ্রাম বান্দরবান কক্সবাজারে পাহাড়ধস

চারদিকে শুধু লাশ আর লাশ। বাতাসে স্বজনহারাদের বুক চাপড়ানো আর্তনাদ। অতিবর্ষণ, পাহাড়ধস, নদ-নদী উপচে পড়া পানি, পাহাড়ি ঢল আর বজ্রাঘাতে চট্টগ্রাম, বান্দরবান ও কক্সবাজারের বহু এলাকা পরিণত হয়েছে মৃত্যুপুরীতে। এখন পর্যন্ত এই তিন জেলায় ১০৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।


নিখোঁজ রয়েছে অনেকে। আহত শতাধিক। আশ্রয়হীন হয়েছে কয়েক হাজার মানুষ। গত মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে গতকাল বুধবার রাত পর্যন্ত চট্টগ্রামে ২৮, কক্সবাজারে ৩৮ ও বান্দরবানে ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. এম আসলাম আলম দুর্গত তিন জেলার ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ দিতে গিয়ে গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, 'বুধবার দুপুর ২টা পর্যন্ত আমরা ৯১ জনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। দুর্যোগকালীন স্বেচ্ছাসেবক, ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনীর কর্মীরা উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।' বর্ষণজনিত দুর্যোগে চট্টগ্রাম বিভাগে মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
সচিব আরো বলেন, নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে সরকারিভাবে ২০ হাজার টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বর্তমানে পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। আর বৃষ্টি না হলে সমস্যা হবে না।
চট্টগ্রামে ২৮ লাশ উদ্ধার : চট্টগ্রাম অফিস থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, চট্টগ্রামে পাহাড়-দেয়ালধস ও বজ্রাঘাতে নিহত ২৮ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। মাটির নিচে চাপা পড়ে থাকা লাশ উদ্ধারে অভিযান চালাচ্ছিল ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এবং সেনাবাহিনীর যৌথ উদ্ধারকারী দল। গতকাল রাত ১০টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান চলছিল। পাহাড় ও দেয়ালধসে নিহতদের পরিবার এবং আহতদের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রামে তিন দশকের মধ্যে গত মঙ্গলবার সর্বোচ্চ (৪৬৩ মিলিমিটার) বৃষ্টিপাতে মহানগর ও আশপাশের সাতটি স্থানে পাহাড় ও দেয়ালধসের ঘটনা ঘটেছে। এতে গত রাত পর্যন্ত ২৮ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে এবং নিখোঁজ আরো চার-পাঁচজনকে উদ্ধারের জন্য অভিযান চলছিল। সবচেয়ে বড় আকারের ধস হওয়া খুলশী থানাধীন আকবর শাহ হাউজিং সোসাইটির ইয়াছিন কলোনি থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। প্রথম দিকে শাহানু নামের এক কিশোরী ও দেড় বছরের শিশু ঊর্মিকে উদ্ধারের পর রাত আড়াইটায় কাজল (২২) নামের অন্য এক নারীকে উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনীর যৌথ দল। তবে এই এলাকায় আরো ছয় থেকে সাতজনের লাশ রয়েছে বলে স্থানীয় লোকজনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ধারকারী দল গতকাল দিনভর মাটি সরানোর পর বিকেলে আশামণি ও সজীব নামে দুই শিশুর লাশ উদ্ধার করে।
এদিকে আকবর শাহ হাউজিং সোসাইটি ছাড়াও গতকাল সকালে স্থানীয় লোকজনের সংবাদের ভিত্তিতে খুলশী থানাধীন জালালাবাদ হাউজিং সোসাইটি থেকে আরো দুই কিলোমিটার উত্তরে আঁধারমানিক এলাকায় পাহাড়ধসে চাপা পড়া দুটি ঘর থেকে চারজনের লাশ ও একজনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া গভীর রাতে বায়েজীদ থানাধীন চন্দ্রনগর এলাকায় পাহাড়ধসে মারা যাওয়া দুই বোনকে এবং ফিরোজ শাহ ১ নম্বর ঝিল এলাকা থেকে আজাদ (২৩) নামের এক যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়। সীতাকুণ্ডের জঙ্গল ছলিমপুর এলাকায় পাহাড়ধসে পিতা-পুত্রের মৃত্যু হয়েছে। বাঁশখালীর জঙ্গল শিলকূপে পাহাড়ধসে তিনজন ও কালীপুরে একজন, গণ্ডমারায় বজ্রাঘাতে একজন মারা গেছে এবং পুকুরিয়া চা-বাগানে একজন পানিতে ভেসে গেছে।
এদিকে পাহাড় ও দেয়ালধসে নিহতদের প্রতি পরিবারের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার এবং আহতদের প্রত্যেককে পাঁচ হাজার টাকা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এহসানে এলাহী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারকে ২০ হাজার ও আহতদের পাঁচ হাজার করে টাকা দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মধ্যে ১৮৪ মেট্রিক টন চালও বিতরণ করা হবে।'
চট্টগ্রামের আমবাগান ফ্লোরাপাস রোডে গত মঙ্গলবার রাতে দেয়ালচাপায় মারা যায় আবুল হোসেন (৮), হাটহাজারীর চিকনদণ্ডী এলাকায় দেয়ালধসে বিবি কাউছার এ্যানি (১৬), বিশ্বব্যাংক কলোনির হারবাতলী হাতিমারা এলাকায় পাহাড়ধসে আবদুল খালেক (৬০), রাবেয়া বেগম (৪৫), রমজান আলী (২৮), দেড় বছর বয়সী শিশু মাসুম, কুলসুম (৮), বায়েজীদ থানাধীন চন্দ্রনগর মটকাগোনা এলাকায় পাহাড়ধসে দুই বোন কুলসুম (৭) ও ফাতেমা আক্তার (৮), ফিরোজ শাহ ১ নম্বর ঝিল এলাকায় পাহাড়ধসে মোহাম্মদ আজাদ (২৩), আকবর শাহ হাউজিং সোসাইটির ইয়াছিন কলোনিতে শাহানু (১৬), দেড় বছর বয়সী ঊর্মি, কাজল (২৩), আশামণি (২) ও সজীব (৫), সাবিনা (২৭), জালালাবাদ হাউজিং সোসাইটির উত্তরের আঁধারমানিক এলাকায় পাহাড়ধসে জানু বেগম (৩৫), রাবেয়া বেগম (১৫), সুবর্ণা বেগম (১৮), তাসমিন (৬) এবং সীতাকুণ্ডের শামছুল আলম (৪০) ও তাঁর ছেলে ইয়াছিন ফরহাদ (৬), বাঁশখালীর শহিদুল ইসলাম (১২), খোরশেদা বেগম (১০), ফাতেমা বেগম (৮), নুরুস ছফা (৪০), নেজামুল ইসলাম (৪০) ও নূরজাহান বেগম (৪২) মারা গেছেন।
এদিকে দুর্যোগ মোকাবিলায় সিভিল সার্জন কার্যালয় ও চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল (চমেক) কর্তৃপক্ষ আলাদাভাবে প্রস্তুতি নিয়েছে। গতকাল জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে ১৪ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করার পর সিভিল সার্জন ডা. আবু তৈয়ব বলেন, বিভিন্ন উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় হাঁটু ও কোমর পানি থাকায় এখনো সেসব এলাকায় বিশুদ্ধ পানি, খাবার ও কলেরা স্যালাইন পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। তবে পানি কমে যাওয়ার পর ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাবসহ বিভিন্ন রোগব্যাধি মোকাবিলার জন্য তাঁরা প্রস্তুতি নিয়েছেন। তিনি জানান, সিভিল সার্জন কার্যালয়ে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। এ ছাড়া ১৪ উপজেলা ও জেলা সদর, আরবান এলাকা এবং ইউনিয়নে ২৮৩টি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। এখন খাবার ও কলেরা স্যালাইন থাকলেও গতকাল বিভাগীয় পরিচালকের (স্বাস্থ্য) কাছে আরো দুই লাখ খাওয়ার স্যালাইনের প্যাকেট এবং ১০ হাজার ব্যাগ কলেরা স্যালাইনের চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে কর্মস্থলে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. ফসিউর রহমান গতকাল বিকেলে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'গত দুই দিনের টানা বর্ষণ শুরু হলে তখন থেকেই হাসপাতালে জরুরি, ক্যাজুয়াল্টি, অর্থোপেডিক, নিউরো সার্জারিসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সার্বক্ষণিক হাসপাতালে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।'
বান্দরবানে শুধু লাশ আর লাশ : বান্দরবান থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, গতকাল দুপুরের দিকে লামা উপজেলার রূপসীপাড়া সামাঝিরি থেকে একই পরিবারের তিনজনের এবং বিকেলে ফাইতং ইউনিয়নের উ ক্য মণি কার্বারিপাড়া থেকে একজন ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুনধুম ইউনিয়নের রেজু এলাকা থেকে তিনজনের লাশ উদ্ধারের পর প্রবল বর্ষণজনিত পাহাড়ধসে বান্দরবানে উদ্ধার করা মোট লাশের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪০।
এদিকে বৃষ্টি থেমে যাওয়ায় গতকাল লামার সব কয়টি এলাকায় পানি কমতে শুরু করেছে। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্ধার করা লাশ দ্রুত দাফনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। মাটিচাপা পড়ে আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ আশপাশের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক কে এম তারিকুল ইসলাম জানান, বর্ষা মৌসুম শুরুর আগে থেকেই পাহাড়ের ঢালে অবস্থিত বিপজ্জনক বসতি ছেড়ে বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসন, পৌরসভা এবং তথ্য অফিস থেকে মাইকিং করে সতর্ক করা হয়। তবে দুর্গম এলাকার ক্ষতিগ্রস্তরা বলেছে, তারা এ রকম কোনো ঘোষণা শোনেনি।
লামা উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইসমাঈল জানান, জেলা প্রশাসকের নির্দেশে উদ্ধার করা লাশ সরকারিভাবে দ্রুত দাফনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এদিকে বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় লামা পৌর এলাকা এবং সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চলগুলো থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। গতকাল ভোরে লামা প্রধান বাজার সাত ফুট পানির নিচে ছিল। দুপুর ১২টা নাগাদ দুই ফুট পানি কমেছে। তবে মাতামুহুরী নদীতে এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। পাহাড়ি ঢলে প্রায় তিন ফুট পানির নিচে ডুবে আছে লামা উপজেলা কমপ্লেক্স, বাসস্ট্যান্ড, থানা ভবন এবং সরকারি স্টাফ কোয়ার্টার।
তবে বান্দরবান জেলা সদর ও পৌর এলাকার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে পানি নামতে শুরু করায় আশ্রয়কেন্দ্র থেকে লোকজন বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে।
কক্সবাজারে ঝরে গেল ৩৮ প্রাণ
কক্সবাজার থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, টানা ভারি বর্ষণে কক্সবাজারে গত দুই দিনে প্রাণহানির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৮। এর মধ্যে শুধু পাহাড়ধসে মারা গেছে ২৪ জন। এ ছাড়া বজ্রাঘাতে পাঁচজন, দেয়ালচাপা পড়ে তিনজন, পানিতে ডুবে ছয়জনসহ ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জয়নুল বারী গতকাল প্রাণহানির এ সংখ্যা নিশ্চিত করেছেন। মৃতের সংখ্যা উপজেলাওয়ারি উখিয়ায় ১০ জন, চকরিয়ায় ১০ জন, রামুতে সাতজন, মহেশখালীতে পাঁচজন, পেকুয়ায় তিনজন, কক্সবাজার সদরে দুজন ও কুতুবদিয়ায় একজন।
জেলার বিভিন্ন স্থানে ঢলের পানিতে ভেসে গিয়ে এখনো নিখোঁজ রয়েছে ১৮ জন। বিভিন্ন ঘটনায় আহত হয়েছে অন্তত অর্ধশত লোক। কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঈদগাঁও নামক স্থানে একটি সেতু ধসে গিয়ে সারা দেশের সঙ্গে কক্সবাজারের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এ কারণে সৈকত শহর কক্সবাজারে আটকা পড়েছে বহুসংখ্যক পর্যটক। জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, সেখানে বেইলি ব্রিজ বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের সঙ্গে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের সদস্যরা এ কাজে সহযোগিতা করবেন।
কক্সবাজারের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা রামু উপজেলার কাউয়ারখোপ, গর্জনিয়া, কচ্ছপিয়া, ঈদগড়, জোয়ারিয়ানালা, রাজারকুল, ফতেখাঁরকুল ও দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়ন। এসব এলাকার বাড়িঘর সম্পূর্ণ ডুবে গেছে পাহাড়ি ঢলের পানিতে। ব্যাপক পাহাড়ধসের ঘটনাও ঘটেছে এখানে। রামুতে পাহাড়ধস ও ঘরের মাটির দেয়ালচাপা পড়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সাতজনে। কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের পূর্ব পাহাড়িয়া পাড়ায় পাহাড়ধসে একই পরিবারের চারজনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার রাতে বসতবাড়ির মাটির দেয়ালচাপা পড়ে নজির আহমদ (৩৭), তাঁর স্ত্রী মনোয়ারা বেগম (২৯), মেয়ে রাজিয়া (৪) ও রাবিয়া (১) মারা যায়। এতে আহত হয় আরো দুজন। এ ছাড়া পাহাড়ি ঢলে ভেসে গিয়ে মারা গেছেন পশ্চিম কাউয়ারখোপ এলাকার কবির আহমদ (৫০)। রামুর তেচ্ছিপুলে ঘরে পানি ঢুকে মারা গেছেন খোরশেদা বেগম (৪২) নামের এক গৃহবধূ। অন্যদিকে কচ্ছপিয়া গ্রামে পাহাড়ধসে একই পরিবারের মা-মেয়েসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আমিন কোম্পানী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
পাহাড়ধসের পাশাপাশি বজ্রাঘাতে মঙ্গলবার ও গতকাল কক্সবাজার সদরের খুরুশকুলের কাউয়ারপাড়ার মনজুরুল আলম ও পেকুয়ার বারবাকিয়া ইউনিয়নের ফাঁসিয়াখালী সবজীবনপাড়ার মুবিনুল ইসলাম (১৮), চকরিয়া বদরখালী ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের খাল খাছাপাড়া গ্রামের আলী আকবর খলিফা (২৮), মহেশখালীর হোয়ানক বানিয়াপাড়ার খোরশেদ আলম (৩৫) এবং অজ্ঞাতপরিচয় অন্য একজনের প্রাণহানি ঘটেছে।
অন্যদিকে রামুর গর্জনিয়া জাংছড়ি এলাকায় বাঁকখালী নদীর স্রোতের তোড়ে তিনটি খেয়া নৌকা ডুবে ১৫ জন ও পাহাড়ি ঢলে পার্শ্ববর্তী কচ্ছপিয়া গ্রামের আরো তিনজন এবং ঈদগাঁও নদীতে ভেসে গেছেন মিজানুর রহমান (২৮) নামের একজন। তাঁরা এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
এদিকে বিভিন্ন উপজেলার সঙ্গে কক্সবাজারের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ভেঙে গেছে অসংখ্য কাঁচা বাড়ি ও বিভিন্ন স্থাপনা। জেলার আট উপজেলার বিভিন্ন স্থানে এখন পর্যন্ত দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর দিন কাটাচ্ছে। বিভিন্ন এলাকার পানিবন্দি মানুষকে স্পিডবোট ও নৌকা নিয়ে উদ্ধার করছে তাদের আত্মীয়স্বজন, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন। দুর্গতদের সেবায় আট উপজেলায় ৪১টি এবং ৭২ ইউনিয়নে একটি করে মোট ১১৩টি মেডিক্যাল টিম কাজ করছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. কাজল কান্তি বড়ুয়া।

No comments

Powered by Blogger.