সি উদয় ভাস্কর-উত্তপ্ত মিসর
মিসরে হোসনি মুবারকবিরোধী উত্তাল অবস্থার দ্বিতীয় সপ্তাহ চলছে এখন। গোটা নীল বিধৌত এলাকায় তার প্রভাব পড়েছে খুবই কঠোরভাবে। মুবারকপন্থী আর মুবারকবিরোধীদের সংঘাতে ৩০০ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে এই সময়। আহতের সংখ্যাও প্রচুর।
হোসনি মুবারকের বশংবদ পুলিশ বাহিনীর শোষণের যাঁতাকলে এবং দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত মিসরে দুরবস্থা তৈরি হয়েছে মূলত যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন পেয়ে। মুবারক যদি ক্ষমতা ছেড়ে দেন তাহলে সেখানে কি মুসলিম ব্রাদারহুড ক্ষমতায় ভাগ বসানোর মতো কোনো সুযোগ পাচ্ছে?
মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ে বিশেষজ্ঞ নোয়াম চমস্কি গত ৩ ফেব্রুয়ারি অত্যন্ত সতর্কতামূলক একটি মন্তব্য করেছেন মিসর বিষয়ে। বিশেষজ্ঞদের প্রায় সবাই একমত, এই ঘটনার পেছনে মৌলবাদী ইসলামী গ্রুপগুলোর হাত কতটা আছে। যারা গণতন্ত্রের জন্য মারাত্মক বলে সচরাচর চিহ্নিত। সৌদী আরব ও যুক্তরাষ্ট্রের নীতিগত অবস্থান বিশ্লেষণ করলে ইসলামী মৌলবাদীদের উত্থানের বিষয়টিকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। অন্তত নোয়াম চমস্কির মন্তব্য থেকে এমন সত্যই বেরিয়ে আসে।
হোসনি মুবারকের পদত্যাগ করার জন্য আন্দোলনকারীরা শুক্রবারকে ঘোষণা প্রদান করে। তারপর কি হতে যাচ্ছে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। হ্যাঁ বলতে অসুবিধা নেই, আমেরিকাবিরোধী ক্ষোভ আরব ও ইসলামী দুনিয়ায় দিন দিন শুধু বাড়ছেই। আরব এলাকা থেকে শুরু করে পাকিস্তান অবদি বিশাল এলাকায় যৌক্তিক কারণেই এই বিরোধিতা বিস্তৃত হচ্ছে।
ঠাণ্ডা লড়াইয়ের সময় যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রশক্তি বাছাইয়ের সময় তারা কিছু বিষয়কে সামনে আনত। আর তা হচ্ছে সেখানে সমাজতান্ত্রিক মতবাদ প্রবেশ করেছে কি না। কিংবা সমাজতান্ত্রিক চেতনাকে তারা কিভাবে মূল্যায়ন করে। আর সেই বিষয়টিকে দেখার জন্য তারা সামনে আনত মানবাধিকার, ব্যক্তির স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রকে। সেই সুযোগটি কিন্তু কঠিনভাবে স্বৈরতান্ত্রিক মানসিকতা পোষণকারী কোনো শাসকও গ্রহণ করে নিতে পেরেছে। আর তা সম্ভব হয়েছে সবসময়ই গণতন্ত্রের নাম করে। যুক্তরাষ্ট্র নির্লজ্জভাবে তথাকথিত গণতান্ত্রিক সেসব শোষককেও সমর্থন জুগিয়ে চলেছে। ইরান দিয়েই শুরু করা যায়। মোহাম্মেদ মোসাদ্দেক নির্বাচিত হয়েছিলেন গণতান্ত্রিকভাবে। কিন্তু তাঁর বিদায় হলো যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনসহ। তারপর এলেন শাহ। ইসলামী দুনিয়ায় এভাবে একনায়কতন্ত্র এবং স্বৈরতন্ত্রের গোড়াপত্তন হয়। অত্যন্ত দুঃখজনক হচ্ছে, তারপর রক্তবর্ণ হতে থাকে শান্তির ধর্ম ইসলাম প্রধান দেশগুলোতে। এর সঙ্গে যুক্ত হয় পাকিস্তানও। সেখানেও গণতন্ত্র ছিনতাই হয়ে যায় ইসলামী মৌলবাদীদের হাতে। এখানে ২০০৭ সালে মোশাররফবিরোধী আন্দোলনের কথা বলা যেতে পারে। সেখানে গণতান্ত্রিক মতবাদে বিশ্বাসী আইনজীবীদের নেতৃত্বে পরিচালিত আন্দোলন ২০০৮ সালে পারভেজ মোশাররফকে ক্ষমতাচ্যুত করার মাধ্যমে সমাপ্ত হয়। কিন্তু স্বল্পসময়ের মধ্যে মসজিদভিত্তিক ইসলামী মৌলবাদীরা ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে বসে যায়। পাকিস্তানের রাজপথ থেকে রাষ্ট্রযন্ত্র, সবখানে তাদের দেখা যায় ওই সময়। পরিণতির কথা বিবেচনা করলে দেখা যাবে যে তাদের সর্বশেষ ঘটনাটি হচ্ছে পাঞ্জাবের গভর্নর সালমান তাসিরকে খুন করার মধ্যে। সালমান তাসির চেয়েছিলেন সংখ্যালঘুদের রক্ষা করতে। আর ব্লাসফেমি আইনের বিষয়টিকে তিনি সহজভাবে মেনে নিতে পারেননি।
এটা সত্য মিসরকে পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনা করা যায় না। কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে মুয়াজ্জিনের যে আহ্বান, তা কিন্তু মোটেও দুর্বল নয়। প্রশ্ন আসে মুবারকের পর কে আসছেন মিসরে? এখানে কিন্তু ধর্মীয় একটা গন্ধ ঠিকই অনুভব করা যায়। আর সেসব ক্ষেত্রে যদি বিদেশি কিংবা অন্য কাউকে দোষারোপ করা হয়, সেটা হবে দুঃখজনক।
লেখক : দিল্লির বিশিষ্ট সংবাদ বিশ্লেষক
রয়টার থেকে ভাষান্তর : মোস্তফা হোসেইন
মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ে বিশেষজ্ঞ নোয়াম চমস্কি গত ৩ ফেব্রুয়ারি অত্যন্ত সতর্কতামূলক একটি মন্তব্য করেছেন মিসর বিষয়ে। বিশেষজ্ঞদের প্রায় সবাই একমত, এই ঘটনার পেছনে মৌলবাদী ইসলামী গ্রুপগুলোর হাত কতটা আছে। যারা গণতন্ত্রের জন্য মারাত্মক বলে সচরাচর চিহ্নিত। সৌদী আরব ও যুক্তরাষ্ট্রের নীতিগত অবস্থান বিশ্লেষণ করলে ইসলামী মৌলবাদীদের উত্থানের বিষয়টিকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। অন্তত নোয়াম চমস্কির মন্তব্য থেকে এমন সত্যই বেরিয়ে আসে।
হোসনি মুবারকের পদত্যাগ করার জন্য আন্দোলনকারীরা শুক্রবারকে ঘোষণা প্রদান করে। তারপর কি হতে যাচ্ছে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। হ্যাঁ বলতে অসুবিধা নেই, আমেরিকাবিরোধী ক্ষোভ আরব ও ইসলামী দুনিয়ায় দিন দিন শুধু বাড়ছেই। আরব এলাকা থেকে শুরু করে পাকিস্তান অবদি বিশাল এলাকায় যৌক্তিক কারণেই এই বিরোধিতা বিস্তৃত হচ্ছে।
ঠাণ্ডা লড়াইয়ের সময় যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রশক্তি বাছাইয়ের সময় তারা কিছু বিষয়কে সামনে আনত। আর তা হচ্ছে সেখানে সমাজতান্ত্রিক মতবাদ প্রবেশ করেছে কি না। কিংবা সমাজতান্ত্রিক চেতনাকে তারা কিভাবে মূল্যায়ন করে। আর সেই বিষয়টিকে দেখার জন্য তারা সামনে আনত মানবাধিকার, ব্যক্তির স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রকে। সেই সুযোগটি কিন্তু কঠিনভাবে স্বৈরতান্ত্রিক মানসিকতা পোষণকারী কোনো শাসকও গ্রহণ করে নিতে পেরেছে। আর তা সম্ভব হয়েছে সবসময়ই গণতন্ত্রের নাম করে। যুক্তরাষ্ট্র নির্লজ্জভাবে তথাকথিত গণতান্ত্রিক সেসব শোষককেও সমর্থন জুগিয়ে চলেছে। ইরান দিয়েই শুরু করা যায়। মোহাম্মেদ মোসাদ্দেক নির্বাচিত হয়েছিলেন গণতান্ত্রিকভাবে। কিন্তু তাঁর বিদায় হলো যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনসহ। তারপর এলেন শাহ। ইসলামী দুনিয়ায় এভাবে একনায়কতন্ত্র এবং স্বৈরতন্ত্রের গোড়াপত্তন হয়। অত্যন্ত দুঃখজনক হচ্ছে, তারপর রক্তবর্ণ হতে থাকে শান্তির ধর্ম ইসলাম প্রধান দেশগুলোতে। এর সঙ্গে যুক্ত হয় পাকিস্তানও। সেখানেও গণতন্ত্র ছিনতাই হয়ে যায় ইসলামী মৌলবাদীদের হাতে। এখানে ২০০৭ সালে মোশাররফবিরোধী আন্দোলনের কথা বলা যেতে পারে। সেখানে গণতান্ত্রিক মতবাদে বিশ্বাসী আইনজীবীদের নেতৃত্বে পরিচালিত আন্দোলন ২০০৮ সালে পারভেজ মোশাররফকে ক্ষমতাচ্যুত করার মাধ্যমে সমাপ্ত হয়। কিন্তু স্বল্পসময়ের মধ্যে মসজিদভিত্তিক ইসলামী মৌলবাদীরা ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে বসে যায়। পাকিস্তানের রাজপথ থেকে রাষ্ট্রযন্ত্র, সবখানে তাদের দেখা যায় ওই সময়। পরিণতির কথা বিবেচনা করলে দেখা যাবে যে তাদের সর্বশেষ ঘটনাটি হচ্ছে পাঞ্জাবের গভর্নর সালমান তাসিরকে খুন করার মধ্যে। সালমান তাসির চেয়েছিলেন সংখ্যালঘুদের রক্ষা করতে। আর ব্লাসফেমি আইনের বিষয়টিকে তিনি সহজভাবে মেনে নিতে পারেননি।
এটা সত্য মিসরকে পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনা করা যায় না। কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে মুয়াজ্জিনের যে আহ্বান, তা কিন্তু মোটেও দুর্বল নয়। প্রশ্ন আসে মুবারকের পর কে আসছেন মিসরে? এখানে কিন্তু ধর্মীয় একটা গন্ধ ঠিকই অনুভব করা যায়। আর সেসব ক্ষেত্রে যদি বিদেশি কিংবা অন্য কাউকে দোষারোপ করা হয়, সেটা হবে দুঃখজনক।
লেখক : দিল্লির বিশিষ্ট সংবাদ বিশ্লেষক
রয়টার থেকে ভাষান্তর : মোস্তফা হোসেইন
No comments