দুর্গত মানুষের সহযোগিতায় এগিয়ে আসুন-ভারী বর্ষণ, পাহাড়ধস, বন্যা

টানা কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে চট্টগ্রাম বিভাগজুড়ে এক মর্মান্তিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে: এ পর্যন্ত ৮৫ জনের মৃত্যুর খবর এসেছে। তা ছাড়া চট্টগ্রাম নগরের জলমগ্নতা, সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দর বন্ধ হয়ে যাওয়া, সারা দেশের সঙ্গে রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া এবং পানিবন্দী নগরবাসীর দুর্ভোগের খবর খুবই উদ্বেগজনক।


কক্সবাজার জেলার কিছু গ্রাম, বান্দরবানের লামা উপজেলা সদরসহ অনেক এলাকার পানিবন্দী মানুষ খাদ্য ও পানীয় জলের সংকটের মুখে। এ রকম পরিস্থিতিতে পেটের পীড়াজাতীয় অসুখ ছড়িয়ে পড়লে আরও বড় মানবিক বিপর্যয় ঘটতে পারে।
৮৫ জনের প্রাণহানি এক বিরাট ট্র্যাজেডি। প্রাকৃতিক দুর্যোগই এই ট্র্যাজেডির কারণ বটে, কিন্তু মানুষের অদূরদর্শী কর্মকাণ্ডও এর জন্য কম দায়ী নয়। নিহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই পাহাড়ধসের শিকার। প্রায় প্রতিবছরই বৃষ্টির মৌসুমে পাহাড়ধসে অনেক মানুষের মৃত্যু ঘটে; কিন্তু পাহাড় কাটা বন্ধ করার কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয় না। শুধু তা-ই নয়, পাহাড় কেটে পাহাড়ের পাদদেশেই ঘরবাড়ি বানিয়ে বসবাস করাও যে অত্যন্ত বিপজ্জনক, সে কথাও সংবাদমাধ্যমে প্রচুর লেখা হয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। কিন্তু এসব বন্ধ হয়নি। পাহাড়ধসে যখন ডজন ডজন মানুষ মারা যায়, তখন কর্তৃপক্ষ সাময়িক তৎপরতা দেখালেও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে।
এই অতি আলোচিত কথাগুলো আবারও বলতে হচ্ছে। কারণ, একই ট্র্যাজেডির পুনরাবৃত্তি শুরু হয়েছে। বর্ষা মৌসুম শুরু হয়েছে মাত্র, সামনের দিনগুলোতে টানা কয়েক দিন ভারী বর্ষণ হলেই আবারও পাহাড়ধসে কত মানুষের প্রাণ যে অকালে ঝরে যাবে, তা ভেবে শঙ্কিত হতে হয়। তাই এ মুহূর্তে প্রয়োজন বৃষ্টি হলে যেসব পাহাড়ে ধস নামতে পারে, সেগুলোর কাছাকাছি বসবাসরত মানুষকে অন্যত্র সরে যেতে বলা, সম্ভব হলে নিরাপদ স্থানে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। আর ভবিষ্যতে এ রকম ট্র্যাজেডির পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে পাহাড় কাটা ও কাটা পাহাড়ের কাছাকাছি বসতভিটা নির্মাণ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে হবে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ শুধু পাহাড়ধসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই; চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবানের লামা উপজেলার অসংখ্য মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। সিলেট বিভাগ ও উত্তরবঙ্গের অনেক এলাকায় বন্যার পানিতে শত শত গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বিশেষভাবে, দরিদ্র অঞ্চল কুড়িগ্রামে উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও ভারী বর্ষণের কারণে ১৬টি নদ-নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে, ডুবে গেছে অনেক দ্বীপচর ও গ্রাম। পানিবন্দী এলাকাগুলোতে খাদ্য ও পানীয় জলের সংকট দেখা দিয়েছে। কারণ, পানীয় জলের উৎস নলকূপগুলো তলিয়ে ও বিকল হয়ে গেছে। ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগব্যাধির খবর এখনো আসেনি, কিন্তু এ আশঙ্কা প্রকট। এসবের বিপরীতে দুর্গত মানুষকে সহযোগিতার প্রস্তুতি নিতান্তই কম। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষসহ সরকারি-বেসরকারি সব পর্যায় থেকে এখন ত্রাণ-তৎপরতা শুরু করা অত্যন্ত জরুরি।

No comments

Powered by Blogger.