রোহিঙ্গাদের জন্য সীমান্ত খুলে দিতে ফেরে আহবান যুক্তরাষ্ট্রের

মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আসার সুযোগ দিতে আবারও সীমানা খুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড গত মঙ্গলবার নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, জাতিসংঘের বিশেষ দূত মিয়ানমার সফরের পর বাংলাদেশে আসবেন।


তিনি আরো বলেন, 'আবারও বলছি, আমরা সীমান্ত খোলা দেখতে চাই।' মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য পরিস্থিতি যখন স্বাভাবিক হচ্ছে, তখন এ ধরনের আহ্বানের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কূটনৈতিক সূত্রগুলো।
রোহিঙ্গাদের প্রতি আচরণের ব্যাপারে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কথা হয়েছে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড বলেন, 'হ্যাঁ, দুই সরকারের সঙ্গেই আমাদের যোগাযোগ আছে। আপনারা জানেন, শরণার্থীদের প্রতি যথার্থ আচরণের জন্য আমরা সীমান্ত খুলে দিতে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।' তিনি বলেন, 'জাতিসংঘের বিশেষ দূত বর্তমানে রোহিঙ্গা রাজ্যে (রাখাইন রাজ্যে) অবস্থান করে বার্মা (মিয়ানমার) সরকার ও রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের চেষ্টা করছেন। আমরা একে সমর্থন ও উৎসাহিত করছি। আমি বুঝতে পারছি, জাতিসংঘের দূত বাংলাদেশেও যাবেন।'
রোহিঙ্গা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের দিক থেকে কোনো অগ্রগতি দেখছে কি না জানতে চাইলে ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড বলেন, 'আমি মনে করি, বাংলাদেশ বার্মার সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনা করছে। এটি ভালো। তবে আবারও বলছি, আমরা সীমান্ত খোলা দেখতে চাই।'
যুক্তরাষ্ট্রের এ বক্তব্যের ব্যাপারে গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকায় কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, বন্ধুপ্রতিম দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র তার প্রত্যাশা জানিয়েছে। বাংলাদেশ তার যৌক্তিকতা বিবেচনা করবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কূটনীতিক কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা আগেও বলেছি, নতুন করে শরণার্থী নেওয়া বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব নয়। বাংলাদেশে প্রায় ২৯ হাজার শরণার্থী এবং আরো প্রায় পাঁচ লাখ মিয়ানমারের নাগরিক আছে। এদের চাপেই বাংলাদেশ হিমশিম খাচ্ছে। তা ছাড়া মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য পরিস্থিতি এখন যেহেতু ক্রমেই স্বাভাবিক হচ্ছে, তখন যুক্তরাষ্ট্রের উচিত রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারকেই চাপ দেওয়া।' তিনি বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের উচিত রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করা। রোহিঙ্গারা যাতে অনুকূল পরিবেশে তাদের দেশে থাকতে পারে, সেটাও মানবাধিকার সংস্থা ও দাতা দেশগুলোর দেখা উচিত।'
ওই কূটনীতিক বলেন, 'সীমান্তে আসা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ খাদ্য, চিকিৎসা ও জরুরি মানবিক সহায়তা দিচ্ছে। অথচ স্বার্থান্বেষী মহল তাদের ওপর গুলি চালানো হয়েছে বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে। বাংলাদেশ মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয়ভাবে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনের চেষ্টা চালাচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত রোহিঙ্গা সংকট প্রকৃত অর্থে নিরসনের উদ্যোগ নেওয়া বা বাংলাদেশকে তার মতো প্রচেষ্টা চালাতে দেওয়া। মিয়ানমারের নাগরিকদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ার মধ্য দিয়ে এ সমস্যার সমাধান হতে পারে না।'

No comments

Powered by Blogger.