এখনই প্রয়োজন ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের by সৈয়দ মাহবুবুর রশিদ
দেশের দুটো স্টক এঙ্চেঞ্জ বেসরকারি। এর পরিচালনা, ব্যবস্থাপনা সবকিছু স্টক এঙ্চেঞ্জ বোর্ডের হাতে। সামগ্রিকভাবে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণ বা তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এঙ্চেঞ্জ কমিশনের (এসইসি)। ১৯৯৬ সালের শেয়ার কেলেঙ্কারির পর সবার ধারণা হয়েছিল, ডিএসই বা সিএসই প্রফেশনালি পরিচালিত হবে। তা হলো না।
এখনো স্টক এঙ্চেঞ্জ প্রেসিডেন্টের পকেট প্রতিষ্ঠান। আজ যদি প্রকৃত পেশার একজন মুখ্য নির্বাহী থাকতেন, তাঁকে জবাবদিহি করতে হতো। এমনকি কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হতো। একজন সদস্য অলিখিত মুখ্য নির্বাহী থাকার ফলে বারবার অশুভ চক্র স্টক এঙ্চেঞ্জের কিছু সদস্যের সঙ্গে চক্রান্ত করে নানা কারচুপি করছে। এরই চূড়ান্ত পরিণতি এই ধস। এই চক্র সরকারকে বিভ্রান্ত করে ভিত্তিহীন একটা জোয়ার সৃষ্টি করে সাধারণ বিনিয়োগকারীকে টেনে আনে, তারপর তাদের টাকা শেয়ার কেনানোর মাধ্যমে লুটে নিয়ে যায়। সরকারের ভুল হলো, এই ফাঁদে পা দেওয়া। নইলে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ডে সরকারকে কাঠগড়ায় উঠতে হবে কেন?
ফুল ফুটুক আর না ফুটুক আজ বসন্ত। মহাজোট সরকারের অবস্থা হয়েছে তাই। শেয়ারবাজার চাঙ্গা হলে দেশের অর্থনীতির কতটুকু লাভ, তা না বুঝে কেউ কেউ এর কৃতিত্ব দাবি করে বসলেন। কথায় বলে ন্যাড়া বেলতলায় একবার যায়। কিন্তু আওয়ামী লীগের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে তারা বারবার যেতে প্রস্তুত। মাথা বোধ হয় একটু বেশি শক্ত। যাহোক, এমন তো পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে। প্রথমত এসইসিকে সবক দিতে হবে। তাদের শিখাতে হবে কী তাদের কাজ। ডিএসইর সেবা করা কিংবা তাদের জন্য শেয়ার জোগাড় করা এসইসির কাজ নয়। এখন যাঁরা এসইসিতে আছেন, তাঁদের রেখে এই শিক্ষা দেওয়া হবে, না নতুন মুখ আমদানি করা হবে সেটা সরকার ঠিক করবে।
ডিএসই প্রফেশনালি এবং করপোরেট সুশাসনের নীতি মেনে চলবে না। সেখানে কিছু সুপার সদস্য আছেন, তাঁদের নির্দেশমতো বোর্ডের প্রেসিডেন্ট চলবেন। আগেই বলেছি যে প্রফেশনালি চললে আজ সিইওকে জেলে যেতে হতো। কেন আগে বোম্বে স্টক এঙ্চেঞ্জের এ রকম মানসিকতা ছিল? বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তখন অর্থমন্ত্রী ছিলেন (১৯৯১-৯৬)। তিনি ন্যাশনাল স্টক এঙ্চেঞ্জ প্রতিষ্ঠা করে বোম্বে দালাল স্ট্রিটের দালালদের সোজা পথে হাঁটতে বাধ্য করেছেন। আমাদের এখানে এ রকম কিছু করা ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই।
বেশ আগে ড. মনমোহন সিংহ একটি কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে ভারতের রাজনীতিকদের ভেতর অর্থনৈতিক নিরক্ষরতার হার অত্যন্ত বেশি। সম্প্রতি বাংলাদেশে শেয়ারবাজার লুটপাট হওয়ার যে পরিসংখ্যান দেওয়া হচ্ছে, তাতে ড. মনমোহন সিংহের কথাটা মনে পড়ছে। মওদুদ সর্বশেষ এই দলে যোগ দিয়েছেন যাঁরা বলেছেন যে ৮৫ হজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। এসব কথার ভিত্তি কী তা জানালে ভালো হতো। যদি মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন হয়, তবে তার পরিমাণ ৬০ হাজার কোটি টাকা। আর মার্কেট ক্যাপ তো প্রতিদিন জোয়ার-ভাটার মতো ওঠা-নামা করে। মাসেক পাঁচে মার্কেট ক্যাপের ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। আর মওদুদ এবং এম কে আনোয়ার সাহেবদের আর কোনো তথ্য জানা থাকে, তা দিয়ে তাঁরা এসব বের করেছেন, তাহলে আমরা আমজনতা খুবই উপকৃত হব। তাঁরা দুজনই অতীতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদ অলংকৃত করেছেন এবং এখনো সংসদ সদস্য। এতএব এ বিরাট অঙ্কের কারচুপির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তাঁদের এগিয়ে আসা উচিত। আমরা নিশ্চয়তা দিচ্ছি যে আপনারা পথ দেখিয়ে দিন অথবা উৎস বলুন, আমরা মিডিয়াতে তুলে ধরব এবং কোর্টে মামলা দাখিল করব।
শেয়ারবাজারের ঘটনা কাজে লাগাতে চাচ্ছে। তাঁদের অনেক নেতা না বুঝেও কথা বলছেন। বিএনপির সিনিয়র নেতা বলেছেন, ৮৫ হাজার কোটি টাকা উধাও হয়ে গেছে। এ সম্পর্কে কিছু বলার আগেই মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন কী তা একটু বুঝিয়ে বলি। একটি নির্দিষ্ট দিনে সমুদয় শেয়ারের বাজার মূল্যের সমষ্টিকে সে দিনের মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন বলা হয়। যেমন কম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা ১০০টি। একটি নির্দিষ্ট দিনে প্রতিটি শেয়ারের বাজার মূল্য ছিল ২০০ টাকা। মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন ২০ হাজার টাকা। এর পরদিন ওই কম্পানির পাঁচটি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। প্রতিটি ২৫০ টাকায়। তাহলে ওই কম্পানির বাজার মূলধন হবে ২৫ হাজার টাকা। প্রকৃতপক্ষে শেয়ারের মূল্যের গতি-প্রকৃতি বোঝানোর জন্য মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশনের হিসাব করা হয়। তা ছাড়া পুঁজিবাদের একটা অন্যতম টার্গেট হলো চমক দেওয়ার জন্য কিছু করা। নইলে মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশনের কেনো অন্তর্নিহিত মূল্য নেই (ওহঃৎরহংরপ াধষঁব)। নইলে যখন মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন দেশের জিডিপির পরিমাণকে ছাড়িয়ে যায়, তখন কি কোনো অর্থনীতিক এখান থেকে থাবা দিয়ে কিছু সংগ্রহ করতে পারেন। বিশ্বের মুদ্রা বাজারের মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশনও অনেক। মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ তাঁর বইতে লিখেছেন যে মুদ্রা বাজারের মার্কেট ক্যাপিটাইজেশনের পরিমাণ গোটা বিশ্বের সম্পদ এবং পরিষেবার ২০ গুণ। কোন কাজে এসেছে এই মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশনের হিসাব। মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলের প্রথম সূচি হলো বিশ্বের দারিদ্র্য অর্ধেকে নামিয়ে আনা। এর জন্য অব্যাহতভাবে অনুরোধ জানানো যাচ্ছে উন্নত বিশ্বকে কিছু ভিক্ষে দেওয়ার জন্য। তাহলে কোথায় গেল মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন। এটি একটি অবাস্তব, কাল্পনিক এবং প্রতারণামূলক হিসাব। একটি দৈনিকে এই খবর ছাপা হলো যে শেয়ারবাজার থেকে ৮৫ হাজার টাকা উধাও। এরপর বিএনপির এক জনসভায় এম কে আনোয়ারের দ্বিরুক্তি করলেন। তিনি একজন সিনিয়র সিভিল সার্ভিস সদস্য এবং রাজনীতিক। কথাটা বুঝে বললেন কি না জানি না। তবে অনেক সময় তিনি দেরিতে বোঝেন। ডিসিরা যে তাঁদের জেলার বাইরে ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে না, এটা বুঝতে তাঁকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান হাইকোর্টের নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছিল। এম কে আনোয়ার ষাটের দশকে ঢাকার ডিসি ছিলেন। তখন আইয়ুব শাসন। তার আগে ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধ হয়ে গেছে। পাকিস্তানে প্রতিরক্ষা আইন চালু। চাঁদপুরের জনসভায় তথাকথিত দেশদ্রোহী বক্তৃতা দেওয়ার জন্য ঢাকায় তিনি মিজানুর রহমান চৌধুরীকে ডিফেন্স অব পাকিস্তান রুলসে গ্রেপ্তার করালেন। এই মিজান চৌধুরী সে সময় আওয়ামী লীগের প্রথমসারির নেতা ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। পরে জেনারেল এরশাদের আমলে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। মিজান চৌধুরীর গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র কর ঢাকা হাইকোর্টে রিট মামলা হয়। বিচারপতিরা তাঁদের রায়ে জানালেন যে ডিসিরা নিজ নিজ জেলার বাইরে তাঁদের ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন না। অতএব, এই গ্রেপ্তার অবৈধ। ব্যাপারটা এম কে আনোয়ারের স্বাভাবিকভাবেই বোঝা উচিত ছিল।
মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশনের ব্যাপারে অবশ্য আমাদের অর্থমন্ত্রী এ এম এ মুহিতের মন্তব্যটি দুঃখজনক। কেননা এটি বিভ্রান্তি ছড়াতে সাহায্য করেছে। শেয়ারে সূচক যখন বাড়তে শুরু করল, সেই সঙ্গে মার্কেট ক্যাপিটাইলাইজেশন, কেননা মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশনকে ভিত্তি করে তো সূচক নির্ণয় করা হয়। তখন তিনি বললেন যে জিডিপির ৩৪ শতাংশ এখন শেয়ারবাজারে। পরে তো আরো বেড়েছিল মার্কেট ক্যাপিটাইলাইজেশন। সরকার কি উপকৃত হয়েছে? যাঁদের শেয়ারবাজার সম্পর্কে নূ্যনতম জ্ঞান আছে তাঁরা জানেন যে প্রতিদিন মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশনের শত শত কোটি টাকা শেয়ার ট্রেডিং হলে হাওয়াতে ভেসে আসে এবং ভেসে যায়। কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের লোক একে অর্থনীতির ব্যারোমিটার কিংবা পাথেয় হিসেবে ব্যবহার হতে পারে না।
লেখক : সাবেক ইপিএস ও শেয়ারবাজার বিশ্লেষক
ফুল ফুটুক আর না ফুটুক আজ বসন্ত। মহাজোট সরকারের অবস্থা হয়েছে তাই। শেয়ারবাজার চাঙ্গা হলে দেশের অর্থনীতির কতটুকু লাভ, তা না বুঝে কেউ কেউ এর কৃতিত্ব দাবি করে বসলেন। কথায় বলে ন্যাড়া বেলতলায় একবার যায়। কিন্তু আওয়ামী লীগের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে তারা বারবার যেতে প্রস্তুত। মাথা বোধ হয় একটু বেশি শক্ত। যাহোক, এমন তো পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে। প্রথমত এসইসিকে সবক দিতে হবে। তাদের শিখাতে হবে কী তাদের কাজ। ডিএসইর সেবা করা কিংবা তাদের জন্য শেয়ার জোগাড় করা এসইসির কাজ নয়। এখন যাঁরা এসইসিতে আছেন, তাঁদের রেখে এই শিক্ষা দেওয়া হবে, না নতুন মুখ আমদানি করা হবে সেটা সরকার ঠিক করবে।
ডিএসই প্রফেশনালি এবং করপোরেট সুশাসনের নীতি মেনে চলবে না। সেখানে কিছু সুপার সদস্য আছেন, তাঁদের নির্দেশমতো বোর্ডের প্রেসিডেন্ট চলবেন। আগেই বলেছি যে প্রফেশনালি চললে আজ সিইওকে জেলে যেতে হতো। কেন আগে বোম্বে স্টক এঙ্চেঞ্জের এ রকম মানসিকতা ছিল? বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তখন অর্থমন্ত্রী ছিলেন (১৯৯১-৯৬)। তিনি ন্যাশনাল স্টক এঙ্চেঞ্জ প্রতিষ্ঠা করে বোম্বে দালাল স্ট্রিটের দালালদের সোজা পথে হাঁটতে বাধ্য করেছেন। আমাদের এখানে এ রকম কিছু করা ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই।
বেশ আগে ড. মনমোহন সিংহ একটি কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে ভারতের রাজনীতিকদের ভেতর অর্থনৈতিক নিরক্ষরতার হার অত্যন্ত বেশি। সম্প্রতি বাংলাদেশে শেয়ারবাজার লুটপাট হওয়ার যে পরিসংখ্যান দেওয়া হচ্ছে, তাতে ড. মনমোহন সিংহের কথাটা মনে পড়ছে। মওদুদ সর্বশেষ এই দলে যোগ দিয়েছেন যাঁরা বলেছেন যে ৮৫ হজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। এসব কথার ভিত্তি কী তা জানালে ভালো হতো। যদি মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন হয়, তবে তার পরিমাণ ৬০ হাজার কোটি টাকা। আর মার্কেট ক্যাপ তো প্রতিদিন জোয়ার-ভাটার মতো ওঠা-নামা করে। মাসেক পাঁচে মার্কেট ক্যাপের ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। আর মওদুদ এবং এম কে আনোয়ার সাহেবদের আর কোনো তথ্য জানা থাকে, তা দিয়ে তাঁরা এসব বের করেছেন, তাহলে আমরা আমজনতা খুবই উপকৃত হব। তাঁরা দুজনই অতীতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদ অলংকৃত করেছেন এবং এখনো সংসদ সদস্য। এতএব এ বিরাট অঙ্কের কারচুপির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তাঁদের এগিয়ে আসা উচিত। আমরা নিশ্চয়তা দিচ্ছি যে আপনারা পথ দেখিয়ে দিন অথবা উৎস বলুন, আমরা মিডিয়াতে তুলে ধরব এবং কোর্টে মামলা দাখিল করব।
শেয়ারবাজারের ঘটনা কাজে লাগাতে চাচ্ছে। তাঁদের অনেক নেতা না বুঝেও কথা বলছেন। বিএনপির সিনিয়র নেতা বলেছেন, ৮৫ হাজার কোটি টাকা উধাও হয়ে গেছে। এ সম্পর্কে কিছু বলার আগেই মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন কী তা একটু বুঝিয়ে বলি। একটি নির্দিষ্ট দিনে সমুদয় শেয়ারের বাজার মূল্যের সমষ্টিকে সে দিনের মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন বলা হয়। যেমন কম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা ১০০টি। একটি নির্দিষ্ট দিনে প্রতিটি শেয়ারের বাজার মূল্য ছিল ২০০ টাকা। মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন ২০ হাজার টাকা। এর পরদিন ওই কম্পানির পাঁচটি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। প্রতিটি ২৫০ টাকায়। তাহলে ওই কম্পানির বাজার মূলধন হবে ২৫ হাজার টাকা। প্রকৃতপক্ষে শেয়ারের মূল্যের গতি-প্রকৃতি বোঝানোর জন্য মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশনের হিসাব করা হয়। তা ছাড়া পুঁজিবাদের একটা অন্যতম টার্গেট হলো চমক দেওয়ার জন্য কিছু করা। নইলে মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশনের কেনো অন্তর্নিহিত মূল্য নেই (ওহঃৎরহংরপ াধষঁব)। নইলে যখন মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন দেশের জিডিপির পরিমাণকে ছাড়িয়ে যায়, তখন কি কোনো অর্থনীতিক এখান থেকে থাবা দিয়ে কিছু সংগ্রহ করতে পারেন। বিশ্বের মুদ্রা বাজারের মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশনও অনেক। মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ তাঁর বইতে লিখেছেন যে মুদ্রা বাজারের মার্কেট ক্যাপিটাইজেশনের পরিমাণ গোটা বিশ্বের সম্পদ এবং পরিষেবার ২০ গুণ। কোন কাজে এসেছে এই মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশনের হিসাব। মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলের প্রথম সূচি হলো বিশ্বের দারিদ্র্য অর্ধেকে নামিয়ে আনা। এর জন্য অব্যাহতভাবে অনুরোধ জানানো যাচ্ছে উন্নত বিশ্বকে কিছু ভিক্ষে দেওয়ার জন্য। তাহলে কোথায় গেল মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন। এটি একটি অবাস্তব, কাল্পনিক এবং প্রতারণামূলক হিসাব। একটি দৈনিকে এই খবর ছাপা হলো যে শেয়ারবাজার থেকে ৮৫ হাজার টাকা উধাও। এরপর বিএনপির এক জনসভায় এম কে আনোয়ারের দ্বিরুক্তি করলেন। তিনি একজন সিনিয়র সিভিল সার্ভিস সদস্য এবং রাজনীতিক। কথাটা বুঝে বললেন কি না জানি না। তবে অনেক সময় তিনি দেরিতে বোঝেন। ডিসিরা যে তাঁদের জেলার বাইরে ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে না, এটা বুঝতে তাঁকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান হাইকোর্টের নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছিল। এম কে আনোয়ার ষাটের দশকে ঢাকার ডিসি ছিলেন। তখন আইয়ুব শাসন। তার আগে ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধ হয়ে গেছে। পাকিস্তানে প্রতিরক্ষা আইন চালু। চাঁদপুরের জনসভায় তথাকথিত দেশদ্রোহী বক্তৃতা দেওয়ার জন্য ঢাকায় তিনি মিজানুর রহমান চৌধুরীকে ডিফেন্স অব পাকিস্তান রুলসে গ্রেপ্তার করালেন। এই মিজান চৌধুরী সে সময় আওয়ামী লীগের প্রথমসারির নেতা ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। পরে জেনারেল এরশাদের আমলে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। মিজান চৌধুরীর গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র কর ঢাকা হাইকোর্টে রিট মামলা হয়। বিচারপতিরা তাঁদের রায়ে জানালেন যে ডিসিরা নিজ নিজ জেলার বাইরে তাঁদের ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন না। অতএব, এই গ্রেপ্তার অবৈধ। ব্যাপারটা এম কে আনোয়ারের স্বাভাবিকভাবেই বোঝা উচিত ছিল।
মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশনের ব্যাপারে অবশ্য আমাদের অর্থমন্ত্রী এ এম এ মুহিতের মন্তব্যটি দুঃখজনক। কেননা এটি বিভ্রান্তি ছড়াতে সাহায্য করেছে। শেয়ারে সূচক যখন বাড়তে শুরু করল, সেই সঙ্গে মার্কেট ক্যাপিটাইলাইজেশন, কেননা মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশনকে ভিত্তি করে তো সূচক নির্ণয় করা হয়। তখন তিনি বললেন যে জিডিপির ৩৪ শতাংশ এখন শেয়ারবাজারে। পরে তো আরো বেড়েছিল মার্কেট ক্যাপিটাইলাইজেশন। সরকার কি উপকৃত হয়েছে? যাঁদের শেয়ারবাজার সম্পর্কে নূ্যনতম জ্ঞান আছে তাঁরা জানেন যে প্রতিদিন মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশনের শত শত কোটি টাকা শেয়ার ট্রেডিং হলে হাওয়াতে ভেসে আসে এবং ভেসে যায়। কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের লোক একে অর্থনীতির ব্যারোমিটার কিংবা পাথেয় হিসেবে ব্যবহার হতে পারে না।
লেখক : সাবেক ইপিএস ও শেয়ারবাজার বিশ্লেষক
No comments