বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস-নিরাপদে বেড়ে উঠুক প্রতিটি শিশু by আবদুল্লা আল মামুন
আজ বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস। প্রতিবছরের মতো এবারও প্রায় ২২ কোটি শ্রমজীবী খুদে মুখে হাসি ফোটানোর প্রত্যয়ে সারা বিশ্ব্বে এ দিনটি পালিত হচ্ছে। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এ দিনটি এ বছর বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। কারণ, এ বছর বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো প্রণীত হয়েছে জাতীয় শিশুশ্রম নিরসননীতি।
এই জাতীয় নীতি বাংলাদেশের প্রায় ৫০ লাখেরও বেশি শ্রমজীবী শিশু, বিশেষত ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত প্রায় ১২ লাখ শিশুর জীবনে পরিবর্তন আনবে বলে সবার প্রত্যাশা। কিন্তু এ প্রত্যাশাকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে শুধু একটি জাতীয় নীতিই যথেষ্ট নয়, বরং এটির কার্যকর ও পরিকল্পিত ধারাবাহিকতায় বাস্তবায়ন খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর তার সঙ্গে উঠে আসে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের সমন্বয় এবং নিয়মতান্ত্রিক পদক্ষেপের বিষয়টিও। আমরা যদি এক নজরে জাতীয় শিশুশ্রম নিরসননীতির গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাই, এই নীতি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঝুঁকিপূর্ণ ও নিকৃষ্ট ধরনের শিশুশ্রম নিরোধ করতে প্রত্যয়ী এবং পাশাপাশি কৌশলগত কাঠামো তৈরি করে ক্রমান্বয়ে সব ধরনের শিশুশ্রম বন্ধ করবে, যা অনেকটা সময়সাপেক্ষ এবং আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় কষ্টসাধ্যও।
বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে গত ২০ বছরে শিশুশ্রম নিরসনে অনেক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে বা হচ্ছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এই উদ্যোগগুলোর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পারস্পরিক সমন্বয় প্রায় অনুপস্থিত। বাংলাদেশে সরকারি উদ্যোগে এখনো পর্যন্ত চিহ্নিত হয়নি ঝুঁকিপূর্ণ ও নিকৃষ্ট ধরনের শিশুশ্রম কোনগুলো। বিভিন্ন প্রকল্প ও বেসরকারি সংগঠনের উদ্যোগে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমের খাতভিত্তিক কিছু তালিকা প্রণয়ন করা হলেও তা পূর্ণাঙ্গ ও প্রশ্নাতীত নয়। এসব তালিকায় খাত ভিত্তিতে যেভাবে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম চিহ্নিত করা হয়েছে, তা সব সময় পুরোপুরি সত্য নয়। কারণ, কোনো একটি খাতের সব কাজ ঝুঁকিপূর্ণ নয়, সেখানেও নানা ধরনের হালকা ও ঝুঁকিমুক্ত কাজ থাকতে পারে। কাজেই সরকারের তরফ থেকে শিশুশ্রম নিরসননীতির আলোকে এ ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করতে হবে সবার আগে।
সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে এখনো পর্যন্ত শিশুশ্রম নিরসন ও তাদের পুনর্বাসনে কোনো পূর্ণাঙ্গ মডেল তৈরি হয়নি, যার ফলে বাংলাদেশে অধিকাংশ উদ্যোগগুলোই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার আলোকে বিক্ষিপ্তভাবে পরিচালিত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত শিশুশ্রম নিরসনে বাংলাদেশের বড় সফলতার উদাহরণ পাওয়া যায় পোশাকশিল্প খাতে। অন্য কোনো ক্ষেত্রে এ রকম সাফল্য দেখা যায় না। ২০০৭ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক জাতিসংঘে প্রেরিত শিশু অধিকারবিষয়ক প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শিশু অধিকার কমিটি প্রণীত সমাপনী অভিমতে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বেসরকারি উদ্যোগে যে CLEAN (Child Labour Elimination And Action Network) মডেলটি কাজ করছে, তা সমপ্রসারণের সুপারিশ করা হয়েছে। কাজেই সরকারি নীতিনির্ধারক ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে ভাবতে হবে কী উপায়ে বাংলাদেশে ঝুঁকিপূর্ণ ও নিকৃষ্ট ধরনের শ্রম নির্মূল করা হবে, সেটি কি এলাকাভিত্তিক নাকি খাতভিত্তিক?
ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিকভাবে ২০১৬ সালের মধ্যে বিশ্ব থেকে সব ধরনের নিকৃষ্ট শিশুশ্রম বন্ধ করার লক্ষ্যমাত্রা ঘোষিত হয়েছে। বাংলাদেশেকে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে এখনই একটি পাঁচ বছর মেয়াদি শিশুশ্রম নিরসনবিষয়ক কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে হবে, যার আলোকে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সব কার্যক্রমকে সমন্ব্বয় করা হবে।
জাতীয় শিশুশ্রম নিরসননীতি বাস্তবে ফলপ্রসূ করে ২০১৬ সালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ও নিকৃষ্ট ধরনের শিশুশ্রম নির্মূল করতে হলে অনতি বিলম্বে আমাদের বেশ কিছু কাজ করা প্রয়োজন। ২০০৩ সালের পর বাংলাদেশের শিশুশ্রমবিষয়ক পূর্ণাঙ্গ কোনো জরিপ আর হয়নি। এ জন্য জাতীয়ভাবে একটি শিশুশ্রম জরিপ করতে হবে। জরিপে শিশুশ্রমের নানা ক্ষেত্র এবং সেখানে কর্মরত শিশুদের সংখ্যার পাশাপাশি কাজের ধরনও চিহ্নিত করতে হবে। জাতীয় শিশুশ্রম নিরসননীতির আলোকে ঝুঁকিপূর্ণ ও নিকৃষ্ট ধরনের শিশুশ্রমকে সংজ্ঞায়িত করে কোন খাতে, কোন কাজ কতটা ঝুঁকিপূর্ণ তার একটি অগ্রাধিকারভিত্তিক তালিকা তৈরি করতে হবে।
শিশুশ্রম নিরসনে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, উন্নয়ন সংগঠন ও সুশীল সমাজের দায়িত্ব ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে একটি সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে হবে, যার আওতায় প্রতিটি সংস্থা বা সংগঠন নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দায়িত্বপ্রাপ্ত হবে ও জবাবদিহি করবে। নীতিতে যে ‘শিশুশ্রম ইউনিট’-এর কথা বলা হয়েছে, সেটি অনতি বিলম্বে স্থাপন করে সব মন্ত্রণালয় ও উন্নয়ন সংগঠনে শিশুশ্রমবিষয়ক ফোকাল পয়েন্ট তৈরি করতে হবে এবং ক্রমান্বয়ে এই ইউনিটকে শিশুশ্রম নিরসনবিষয়ক সব কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। শিশুশ্রম ইউনিটের আওতায় শিশুশ্রমবিষয়ক একটি জাতীয় তথ্যভান্ডার (ডেটাবেইস) করতে হবে, যা নিয়মিতভাবে উপরোল্লিখিত ফোকাল পয়েন্টগুলোর পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে হালনাগাদ করা হবে।
সব সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার কার্যক্রমকে মাঠ পর্যায়ে থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে সন্নিবেশিত করতে কর্মকৌশল ও প্রয়োজনীয় জনবল নিশ্চিত করতে হবে। সে ক্ষেত্রে মাঠ প্রশাসনে এ বিষয়ক কার্যক্রম কীভাবে সমন্বয় করা যায় তা বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে।
গবেষণা ও অংশগ্রহণমূলক আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য হয় এ রকম একটি কার্যকর ‘শিশুশ্রম নিরসন মডেল’ প্রণয়ন করে তা সর্বত্র বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। যাতে করে যেকোনো উন্নয়ন প্রকল্প বিচ্ছিন্নভাবে নিজের খেয়াল-খুশিমতো বাস্তবায়িত হতে না পারে এবং সবার সমান জবাবদিহি নিশ্চিত করা যায়। শুধু ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত শিশুদের পুনর্বাসনই শিশুশ্রম নিরসনে যথেষ্ট নয়। বরং যেসব কারণে শিশুরা শ্রমবাজারে শামিল হচ্ছে, সেগুলো চিহ্নিত করে আগে থেকেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। আর সেটি শুধু মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, শ্রম মন্ত্রণালয় বা সমাজসেবা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব হিসেবে বিবেচনায় নিলে হবে না বরং সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়কেই নিজ নিজ কর্মপরিধির আওতায় শিশুশ্রম প্রতিরোধমূলক এই উদ্যোগে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। বেসরকারি সংস্থাগুলোকেও এ বিষয়ে সরকারের সহযোগী হিসেবে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
তাই বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস ২০১০ হোক বাংলাদেশে শিশুশ্রম নিরসনে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে সামাজিক আন্দোলনের শুভ সূচনার দিন। আজ থেকেই শুরু হোক শিশুশ্রমমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে সবার সম্মিলিত যাত্রা। আর এই যাত্রার প্রথম লক্ষ্যই হোক ২০১৬ সালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ও নিকৃষ্ট ধরনের শিশুশ্রম নির্মূল। সবার সম্মিলিত উদ্যোগে নিরাপদে বেড়ে উঠবে প্রতিটি শিশু, প্রতিটি শৈশব ভরে উঠবে আনন্দ-উচ্ছ্বাসের ঘনঘটায়—এটাই সবার প্রত্যাশা।
আবদুল্লা আল মামুন: কর্মসূচি ব্যবস্থাপক, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন।
বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে গত ২০ বছরে শিশুশ্রম নিরসনে অনেক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে বা হচ্ছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এই উদ্যোগগুলোর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পারস্পরিক সমন্বয় প্রায় অনুপস্থিত। বাংলাদেশে সরকারি উদ্যোগে এখনো পর্যন্ত চিহ্নিত হয়নি ঝুঁকিপূর্ণ ও নিকৃষ্ট ধরনের শিশুশ্রম কোনগুলো। বিভিন্ন প্রকল্প ও বেসরকারি সংগঠনের উদ্যোগে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমের খাতভিত্তিক কিছু তালিকা প্রণয়ন করা হলেও তা পূর্ণাঙ্গ ও প্রশ্নাতীত নয়। এসব তালিকায় খাত ভিত্তিতে যেভাবে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম চিহ্নিত করা হয়েছে, তা সব সময় পুরোপুরি সত্য নয়। কারণ, কোনো একটি খাতের সব কাজ ঝুঁকিপূর্ণ নয়, সেখানেও নানা ধরনের হালকা ও ঝুঁকিমুক্ত কাজ থাকতে পারে। কাজেই সরকারের তরফ থেকে শিশুশ্রম নিরসননীতির আলোকে এ ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করতে হবে সবার আগে।
সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে এখনো পর্যন্ত শিশুশ্রম নিরসন ও তাদের পুনর্বাসনে কোনো পূর্ণাঙ্গ মডেল তৈরি হয়নি, যার ফলে বাংলাদেশে অধিকাংশ উদ্যোগগুলোই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার আলোকে বিক্ষিপ্তভাবে পরিচালিত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত শিশুশ্রম নিরসনে বাংলাদেশের বড় সফলতার উদাহরণ পাওয়া যায় পোশাকশিল্প খাতে। অন্য কোনো ক্ষেত্রে এ রকম সাফল্য দেখা যায় না। ২০০৭ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক জাতিসংঘে প্রেরিত শিশু অধিকারবিষয়ক প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শিশু অধিকার কমিটি প্রণীত সমাপনী অভিমতে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বেসরকারি উদ্যোগে যে CLEAN (Child Labour Elimination And Action Network) মডেলটি কাজ করছে, তা সমপ্রসারণের সুপারিশ করা হয়েছে। কাজেই সরকারি নীতিনির্ধারক ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে ভাবতে হবে কী উপায়ে বাংলাদেশে ঝুঁকিপূর্ণ ও নিকৃষ্ট ধরনের শ্রম নির্মূল করা হবে, সেটি কি এলাকাভিত্তিক নাকি খাতভিত্তিক?
ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিকভাবে ২০১৬ সালের মধ্যে বিশ্ব থেকে সব ধরনের নিকৃষ্ট শিশুশ্রম বন্ধ করার লক্ষ্যমাত্রা ঘোষিত হয়েছে। বাংলাদেশেকে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে এখনই একটি পাঁচ বছর মেয়াদি শিশুশ্রম নিরসনবিষয়ক কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে হবে, যার আলোকে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সব কার্যক্রমকে সমন্ব্বয় করা হবে।
জাতীয় শিশুশ্রম নিরসননীতি বাস্তবে ফলপ্রসূ করে ২০১৬ সালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ও নিকৃষ্ট ধরনের শিশুশ্রম নির্মূল করতে হলে অনতি বিলম্বে আমাদের বেশ কিছু কাজ করা প্রয়োজন। ২০০৩ সালের পর বাংলাদেশের শিশুশ্রমবিষয়ক পূর্ণাঙ্গ কোনো জরিপ আর হয়নি। এ জন্য জাতীয়ভাবে একটি শিশুশ্রম জরিপ করতে হবে। জরিপে শিশুশ্রমের নানা ক্ষেত্র এবং সেখানে কর্মরত শিশুদের সংখ্যার পাশাপাশি কাজের ধরনও চিহ্নিত করতে হবে। জাতীয় শিশুশ্রম নিরসননীতির আলোকে ঝুঁকিপূর্ণ ও নিকৃষ্ট ধরনের শিশুশ্রমকে সংজ্ঞায়িত করে কোন খাতে, কোন কাজ কতটা ঝুঁকিপূর্ণ তার একটি অগ্রাধিকারভিত্তিক তালিকা তৈরি করতে হবে।
শিশুশ্রম নিরসনে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, উন্নয়ন সংগঠন ও সুশীল সমাজের দায়িত্ব ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে একটি সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে হবে, যার আওতায় প্রতিটি সংস্থা বা সংগঠন নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দায়িত্বপ্রাপ্ত হবে ও জবাবদিহি করবে। নীতিতে যে ‘শিশুশ্রম ইউনিট’-এর কথা বলা হয়েছে, সেটি অনতি বিলম্বে স্থাপন করে সব মন্ত্রণালয় ও উন্নয়ন সংগঠনে শিশুশ্রমবিষয়ক ফোকাল পয়েন্ট তৈরি করতে হবে এবং ক্রমান্বয়ে এই ইউনিটকে শিশুশ্রম নিরসনবিষয়ক সব কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। শিশুশ্রম ইউনিটের আওতায় শিশুশ্রমবিষয়ক একটি জাতীয় তথ্যভান্ডার (ডেটাবেইস) করতে হবে, যা নিয়মিতভাবে উপরোল্লিখিত ফোকাল পয়েন্টগুলোর পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে হালনাগাদ করা হবে।
সব সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার কার্যক্রমকে মাঠ পর্যায়ে থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে সন্নিবেশিত করতে কর্মকৌশল ও প্রয়োজনীয় জনবল নিশ্চিত করতে হবে। সে ক্ষেত্রে মাঠ প্রশাসনে এ বিষয়ক কার্যক্রম কীভাবে সমন্বয় করা যায় তা বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে।
গবেষণা ও অংশগ্রহণমূলক আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য হয় এ রকম একটি কার্যকর ‘শিশুশ্রম নিরসন মডেল’ প্রণয়ন করে তা সর্বত্র বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। যাতে করে যেকোনো উন্নয়ন প্রকল্প বিচ্ছিন্নভাবে নিজের খেয়াল-খুশিমতো বাস্তবায়িত হতে না পারে এবং সবার সমান জবাবদিহি নিশ্চিত করা যায়। শুধু ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত শিশুদের পুনর্বাসনই শিশুশ্রম নিরসনে যথেষ্ট নয়। বরং যেসব কারণে শিশুরা শ্রমবাজারে শামিল হচ্ছে, সেগুলো চিহ্নিত করে আগে থেকেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। আর সেটি শুধু মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, শ্রম মন্ত্রণালয় বা সমাজসেবা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব হিসেবে বিবেচনায় নিলে হবে না বরং সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়কেই নিজ নিজ কর্মপরিধির আওতায় শিশুশ্রম প্রতিরোধমূলক এই উদ্যোগে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। বেসরকারি সংস্থাগুলোকেও এ বিষয়ে সরকারের সহযোগী হিসেবে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
তাই বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস ২০১০ হোক বাংলাদেশে শিশুশ্রম নিরসনে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে সামাজিক আন্দোলনের শুভ সূচনার দিন। আজ থেকেই শুরু হোক শিশুশ্রমমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে সবার সম্মিলিত যাত্রা। আর এই যাত্রার প্রথম লক্ষ্যই হোক ২০১৬ সালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ও নিকৃষ্ট ধরনের শিশুশ্রম নির্মূল। সবার সম্মিলিত উদ্যোগে নিরাপদে বেড়ে উঠবে প্রতিটি শিশু, প্রতিটি শৈশব ভরে উঠবে আনন্দ-উচ্ছ্বাসের ঘনঘটায়—এটাই সবার প্রত্যাশা।
আবদুল্লা আল মামুন: কর্মসূচি ব্যবস্থাপক, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন।
No comments