বন্যপ্রাণী আক্রান্তদের ক্ষতিপূরণ-টেকসই সমাধান চাই
বন্যপ্রাণীর আক্রমণে নিহত বা আহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে বন বিভাগ_ রোববারের সমকালে প্রকাশিত এই খবরকে আমরা নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্রের দায়িত্বশীলতায় এক ধাপ অগ্রগতি বিবেচনা করতে চাই। সাধারণত বাঘ কিংবা হাতির আক্রমণে বন ও পাহাড় সংলগ্ন এলাকার কর্মজীবী মানুষ হতাহতের খবর সমকালের লোকালয় পাতায় অনেকবারই প্রকাশ হয়েছে।
সম্পাদকীয়তে আমরা ওইসব পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণের যৌক্তিকতাও ব্যাখ্যা করেছি। কর্তৃপক্ষ তা আমলে নিয়েছে দেখে আমরা আশান্বিত। আমরা জানি, ২০১০ সালের ডিসেম্বরে এই লক্ষ্যে একটি আইনও প্রণীত হয়েছে। এর আওতায় সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জে হতাহতরা ক্ষতিপূরণ পেল। চলতি মাসের মাঝামাঝি পরিবেশ ও বনমন্ত্রী এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। আমরা মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে স্বাগত জানাই। একই সঙ্গে আমরা মনে করিয়ে দিতে চাই যে, বন্যপ্রাণী ও মানুষের মধ্যে সংঘাতের পরিস্থিতি যাতে সৃষ্টি না হয়, সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়াও জরুরি। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের হিসাবে দেখা যাচ্ছে, ২০০০-১১ সালের মধ্যে বাঘের আক্রমণে ২৫৬ এবং ২০০৩-১১ সালে বন্যহাতির আক্রমণে ১৬২ জন নাগরিক নিহত হয়েছে। বিপুল সংখ্যার এই প্রাণহানি নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। কিন্তু একই সঙ্গে পিটুনিতে নিহত বাঘ ও হাতির সংখ্যাও বিবেচনা করতে হবে। উলি্লখিত সময়ে ২৭টি বাঘ ও ৪২টি হাতিও প্রাণ হারিয়েছে। মনে রাখা জরুরি, বন ও পাহাড়ে পর্যাপ্ত খাদ্যের অভাবেই বন্যপ্রাণী লোকালয়ে হানা দেয়। সুন্দরবনে চোরাই হরিণ শিকার বাঘের খাদ্যে টান পড়ার অন্যতম কারণ। চোরাই কাঠের কারবারও বাঘের স্বাভাবিক আবাস বিনষ্ট করছে। বেআইনি এসব কর্ম বন্ধ করা না গেলে বাঘের আক্রমণ সামনের দিনগুলোতে বাড়তেই থাকবে। একই কথা বলা চলে পাহাড়ি অঞ্চলে হাতির আক্রমণের ক্ষেত্রে। ওইসব এলাকায় যেভাবে বন উজাড়ীকরণ চলছে; প্রতিবেশে যেসব আগন্তুক বৃক্ষ ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, তা হাতির খাদ্য ও বাসস্থানের জন্য কতটা উপযোগী খতিয়ে দেখা জরুরি। বন ও পাহাড়ি অঞ্চলের লোকালয়ের আগ্রাসনও কিন্তু বন্যপ্রাণী ও মানুষের মধ্যে সংঘাতময় পরিবেশ সৃষ্টি করছে। বন্যপ্রাণী আদতেই লোকালয়ে হানা দেয়, না তাদের সাবেক বাসস্থানে খাদ্যের খোঁজে আসে নতুন করে চিন্তা-ভাবনা করা দরকার। আমরা আশা করি, কর্তৃপক্ষ বন উজাড়ীকরণ, পাহাড় কাটা, প্রতিবেশ বৈরী বনায়ন এবং লোকালয়ের নির্বিচার সম্প্রসারণ নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগী হবে। ক্ষতিপূরণ প্রদানের উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়; কিন্তু মূল কারণের দিকে নজর না দিলে এটা টেকসই সমাধান হতে পারে না।
No comments