নতুন অনুসন্ধান ও উত্তোলনে গাফিলতিই দায়ী-গ্যাস-বিদ্যুতের অব্যাহত সংকট

বাংলাদেশে গ্যাস-বিদ্যুৎ-জ্বালানি সংকটের সমাধান যেন বাঁদরের তৈলাক্ত লাঠি বেয়ে ওঠার গল্পের মতোই পরিহাসময়। কুমিল্লার বাঙ্গুরা গ্যাসক্ষেত্রে কারিগরি ত্রুটির জন্য গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হওয়ায় ঢাকায় গত সোমবারে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি হয়। এ রকম ঘটনা হামেশাই ঘটছে এবং সৃষ্টি হচ্ছে গণভোগান্তি।


এ দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা থেকে দেশকে বের করে আনতে তাই ব্যাপকভিত্তিক নিষ্ঠাবান উদ্যোগ প্রয়োজন।
দেশে বর্তমান বিদ্যুৎ উত্পাদনের ৮৫ শতাংশই হয় গ্যাস দিয়ে। অথচ অব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনাহীনতার জন্য গ্যাসের উত্পাদন কেবলই কমছে। ১৯৯৮ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান হয়নি। এর আগে বহুজাতিক কোম্পানি ইউনোকল গ্যাস রপ্তানির সুযোগ না থাকায় নয়টি বছর বিবিয়ানায় উত্তোলন করেনি। অন্যান্য গ্যাসক্ষেত্রের অবস্থাও একই রকম। পেট্রোবাংলার কর্তৃত্বাধীন ১২টি গ্যাসকূপ এখন বন্ধ। বিদেশি কোম্পানিকে দেওয়া গ্যাসক্ষেত্রের অনেকগুলোতেই এখনো অনুসন্ধান ও উত্তোলন করা হয়নি। অথচ সরকার উদাসীন। একই সঙ্গে তিতাস ও হবিগঞ্জের মতো সমৃদ্ধ গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকেও উত্তোলন বাড়ানো দরকার। প্রয়োজন গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের দায়িত্বে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলা এবং এর অধীন বাপেক্সকে জন ও অর্থবলে শক্তিশালী করা।
অভিজ্ঞতাই প্রমাণ, জাতীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি না করে গ্যাস সম্পদের ব্যবস্থাপনা বিদেশি কোম্পানির হাতে ছেড়ে রাখা অদূরদর্শিতা। বছরের পর বছর পরিকল্পিতভাবে বাপেক্সকে নিষ্ক্রিয় রাখা হয়েছিল। অথচ জাতীয় এ প্রতিষ্ঠানই দেশের গুরুত্বপূর্ণ গ্যাসক্ষেত্রগুলো আবিষ্কার করে। বাপেক্স যেখানে প্রতি তিনটি কূপ খনন করে একটিতে গ্যাস পেয়েছে এবং তাদের দ্বারা কোনো দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেনি। সাফল্যের এ অনুপাত নিঃসন্দেহে বাংলাদেশে কর্মরত যেকোনো বিদেশি কোম্পানির থেকে এগিয়ে। অথচ পেট্রোবাংলা ও বাপেক্সের জন্য পর্যাপ্ত তহবিল বরাদ্দ হচ্ছে না এবং এর কোনো বিকল্প নেই। সিলেটসহ সমৃদ্ধ গ্যাসক্ষেত্রগুলোর নিজস্ব বাজেট থেকেও পেট্রোবাংলা সমৃদ্ধ হতে পারে। উত্পাদন খরচের চেয়ে কম দামে গ্যাস বিক্রি বন্ধ করলেও বাপেক্স স্বাবলম্বী হবে। বন্ধ কূপ চালুসহ নতুন অনুসন্ধানে নামতে হবে এখনই। এ ক্ষেত্রে জাতীয় ও বহুজাতিক কোম্পানির মধ্যে ভারসাম্য ও সমন্বয় প্রয়োজন।
শেভরন ও নাইকোর কাছ থেকে মাগুরছড়া বা টেংরাটিলার ক্ষতিপূরণ, যা বর্তমানে জ্বালানি খাতে বার্ষিক বরাদ্দের পাঁচ গুণ, তা পাওয়া গেলে জ্বালানি খাতের তহবিল ঘাটতি মেটানো যেত। বর্তমান সরকার জরুরি ভিত্তিতে অন্তত ২০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের উত্পাদন বাড়াতে ‘ফাস্ট ট্রাক কর্মসূচি’ নিয়েছিল। এর অধীনে প্রথমে আটটি কূপ খনন, একটি পুরোনো কূপে সংস্কার এবং নতুন অনুসন্ধানের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত দরপত্র-প্রক্রিয়াই শুরু করা হয়নি। কেন?
সুতরাং গ্যাসের ঘাটতি এবং বিদ্যুতের সংকটের মূল কারণ হচ্ছে এ খাত নিয়ে দীর্ঘদিনের গাফিলতি ও দুর্নীতি। ফলে বর্তমান সরকার এ ক্ষেত্রে বাড়তি উদ্যোগ ও সক্রিয়তা না দেখাতে পারলে পরিস্থিতির সহসা উন্নতি সম্ভব নয়। আশা করি, সরকার সময়ের প্রয়োজনে সাড়া দেবে।

No comments

Powered by Blogger.