বায়ুদূষণ ও বজ্রপাত by অলোক কুমার মিস্ত্রী

দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ায় বজ্রপাত এবং এর দরুন প্রাণহানি, ক্ষয়ক্ষতি দিন দিন বেড়েই চলেছে। এর শিকার আমাদের বাংলাদেশও। কিন্তু এ নিয়ে আমাদের জনসাধারণের মধ্যে কোনো সচেতনতা কাজ করছে না। সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সরকারি প্রতিষ্ঠান আবহাওয়ার পূর্বাভাস ছাড়া কিছুই দিতে পারছে না।


প্রতি বছরের মতো এবারও আমাদের দেশে বজ্রপাতের কারণে একদিনে ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই বজ্রপাতের কারণ জানা বা এর প্রতিকার বিষয়ে কোনো ডাটা বা গবেষণা হচ্ছে না আমাদের দেশে। আশার কথা হলো, বাংলাদেশে এর ওপর গবেষণা না হলেও ইউরোপ, আমেরিকা তথা পাশ্চাত্য দেশগুলোতে গবেষণা চলছে এবং গবেষণালব্ধ প্রতিবেদন প্রতিনিয়ত তাদের বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত হচ্ছে। এরূপ একদল গবেষণাকর্মীর গবেষণা রিপোর্টে দেখা গেছে, বায়ুদূষণ তথা পরিবেশ দূষণের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে বজ্রপাতের। বৃষ্টির সময় বজ্রপাতে আমাদের দেশে প্রচুর লোক মারা যায়। বজ্রপাতের কারণে সৃষ্ট আগুনে ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, বৃক্ষরাজি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। ২০০৪ সালের ২২ জুন প্রকাশিত ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক নিউজের এক প্রতিবেদনে বজ্রপাতকে আবহাওয়া সম্পর্কিত দ্বিতীয় বৃহত্তম ঘাতক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু বলাবাহুল্য, আমাদের দেশের পূর্বাভাস কেন্দ্রগুলো বজ্রপাতকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে দেখতে নারাজ। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ব্যুরোর দৃষ্টিতে বজ্রপাত কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়। দুর্যোগের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মাত্র।
গবেষকরা লক্ষ্য করেছেন, বজ্রপাতে একদিকে যেমন বায়ুদূষণের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনি বায়ুদূষণের ফলে বেড়েছে পরিবেশে বজ্রপাতের হার ও এর তীব্রতা। মার্কিন বিজ্ঞানী এনএস টমসন ও তার সঙ্গীরা বেলুন উড়িয়ে বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তর থেকে ডাটা সংগ্রহ করেছেন । ঘন ঘন বৃষ্টিতেও মেক্সিকো সিটির বায়ুদূষণ কেন কমছে না তা পরীক্ষা করে টমসন বলেছেন, বৃষ্টির পানি বায়ুমণ্ডলের দূষিত পদার্থকে ধুয়ে নিচ্ছে ঠিকই, প্রতিরূপ বাজ বা বজ্রপাতের দরুন বাতাসে দূষণের মাত্রা বহুগুণ বেড়ে যেতে দেখা যাচ্ছে। ন্যাশনাল সেন্টার ফর অ্যাটমস্ফেরিক রিসার্সের এনসিওআর বিজ্ঞানী ডেভিড এডওয়ার্ডস ও তার সঙ্গীরা কানাডা এবং ইউরোপের কয়েকটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করে দেখেছেন, বায়ুমণ্ডলের কাছাকাছি যেখানে গ্যাসের পরিমাণ বেশি, সেখানেই বজ্রপাত বেশি হয়। বায়ুমণ্ডল ও বজ্রপাতের এই দুষ্টচক্রটি ভাঙা যায় কিনা, নাসার বিজ্ঞানী দল বর্তমানে তা খতিয়ে দেখছে।
aloke2010@gmail.com
 

No comments

Powered by Blogger.