নার্স সংকট-স্বাস্থ্যসেবায় প্রতিবন্ধকতা দূর হোক
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্থিরীকৃত মান অনুযায়ী স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য একজন চিকিৎসকের বিপরীতে তিনজন নার্স থাকার কথা। কিন্তু চিকিৎসক ও নার্সের সংখ্যা প্রায় সমান। বেসরকারি খাত মিলিয়ে চিকিৎসাসেবায় নার্সের সংখ্যা বিবেচনা করতে গেলে আরও হতাশার চিত্রই ফুটে ওঠে।
গত শুক্রবার সমকালের প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত এ সম্পর্কিত একটি রিপোর্টে নার্সদের সংখ্যা স্বল্পতার কথা উল্লেখ করে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবায় বিঘ্ন সৃষ্টির নৈরাশ্যজনক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। কেন এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে? বস্তুত নির্দিষ্ট সময়ে প্রয়োজনীয়সংখ্যক নার্স নিয়োগদানের ক্ষেত্রে যথাযথ নীতিমালা না থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে নার্স প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয়সংখ্যক মানসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান না থাকাও ডিপ্লোমা নার্স অপ্রতুল হওয়ার জন্য দায়ী। অন্যদিকে, সরকারি হাসপাতালগুলোয় এখনও দুই হাজারেরও বেশি শূন্যপদে নতুন নিয়োগ জরুরি ভিত্তিতে না দেওয়ার কারণেও সমস্যা বেড়েছে। অথচ বর্তমানে ১২ হাজারের বেশি নার্স হয় বেকার বসে আছেন, না হয় নামমাত্র বেতনে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে খণ্ডকালীন বা অস্থায়ী ভিত্তিতে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। এর সঙ্গে হাল আমলে যুক্ত হয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক পদে নিয়মবহির্ভূতভাবে ক্যাডার সার্ভিসের কর্মকর্তা নিয়োগদানের বিষয়টি। অথচ ১৯৯৭ সালের সেবা পরিদফতরের নিয়োগবিধি অনুযায়ী সেবা সম্পর্কিত নির্দিষ্ট মেয়াদের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিকেই পরিচালক পদে নিয়োগ দেওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বিভাগ নিয়োগবিধি লঙ্ঘন করে মূলত জনগণের স্বাস্থ্যসেবাকেই আরও ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। আমরা দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোয় নার্স ঘাটতি অবিলম্বে দূর করে রোগীদের প্রাপ্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার আহ্বান জানাই। জরুরি ভিত্তিতে শূন্যপদগুলো পূরণের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে এ উদ্যোগের সূচনা হতে পারে। তবে দেশ ও বিদেশের চাহিদা মেটানোর জন্য মানসম্পন্ন নার্সিং ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এ জন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে হবে। বেসরকারি উদ্যোগ আকর্ষণের জন্য প্রয়োজনে সরকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারে। একই সঙ্গে সেবা পরিদফতরের ঘাড় থেকে প্রশাসনিক ভূত ঝেড়ে ফেলতে হবে।
No comments