বিদ্যমান সমস্যা সমাধান করে ট্রেনগুলো চালু করুন-লোকবলের অভাবে উত্তরাঞ্চলে ট্রেন বন্ধ

৫৬ হাজার বর্গমাইলের এই দেশে ১৫ কোটির অধিক মানুষের বাস। ২ জুন জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এই বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে তিনি বোঝা মনে করেন না; আমাদের যুবসমাজকে শিক্ষিত করে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে চান তিনি।


অথচ পরিহাসের ব্যাপার হলো, কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান যখনই জনগণকে কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে ব্যর্থ হয়, তখনই আমরা শুনি লোকবল-সংকটের কথা। প্রতিষ্ঠানের পরিকল্পনার ত্রুটি, অব্যবস্থা ও অভ্যন্তরীণ নৈরাজ্যকে আড়াল করার এক মোক্ষম যুক্তি হয়ে ওঠে এই লোকবলের ঘাটতি।
গত বৃহস্পতিবারের প্রথম আলোর এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চালকসহ লোকবলের অভাবে রংপুর স্টেশন দিয়ে উত্তরাঞ্চলে চলাচলকারী ১০টি ট্রেন গত এক মাসে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কিছু ইঞ্জিনের সমস্যা আছে, সেটা মেরামত করলে ঠিক হয়, কিন্তু এত বিপুল জনসংখ্যার এই দেশে লোকবলের সমস্যা কাটিয়ে ওঠা যায় না! অপেক্ষাকৃত নিরাপদ, আরামদায়ক, সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব হিসেবে যাত্রী ও মালামাল পরিবহনে সারা দুনিয়ায় বর্তমানে রেলপথ অত্যন্ত জনপ্রিয়। দেশে দেশে এই যোগাযোগব্যবস্থার সম্প্রসারণের চিন্তা পরিলক্ষিত হচ্ছে। কিন্তু এই দেশের চিত্রটি উল্টো। সরকারি ভ্রান্ত নীতি, দুর্নীতি, অবহেলা আর অদক্ষতার বলি হয়ে চলেছে রেলওয়ে।
উত্তরাঞ্চলের মানুষ চলাচল ও মালামাল পরিবহনের জন্য ট্রেনের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। ট্রেনগুলো বন্ধ করার ফলে উত্তরাঞ্চলের মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। হাজার হাজার মানুষের অসুবিধার কথা বিবেচনা না করে এভাবে ট্রেন বন্ধ করে দেওয়া এসব মানুষের প্রতি রেল কর্তৃপক্ষের অবহেলার নজির। এর দায় সরকারের ওপর পড়ে। সম্প্রতি রংপুরকে বিভাগ ঘোষণা করা হলে উত্তরাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার উন্নতির যে আশা জেগেছিল তা উবে যেতে বেশি সময় লাগবে না, যদি ট্রেন বন্ধ করে এভাবে জনগণের ঝামেলা বাড়ানো হতে থাকে।
দেশের উন্নয়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রেলওয়ে খাতে দীর্ঘদিন কোনো বিনিয়োগ হয়নি। এ খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ, সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন অত্যাবশ্যক। উত্তরাঞ্চলের মানুষের অসুবিধা বিবেচনা করে জরুরি ভিত্তিতে বিদ্যমান সমস্যা সমাধান করে ট্রেনগুলো চালু করা হোক।

No comments

Powered by Blogger.