হরতাল কেন? by আকাশ চৌধুরী
২০০৬ সালের কথা। আমি তখন নেত্রকোনা থেকে ঢাকায় যাব। কিন্তু কোনোভাবেই তা সম্ভব হচ্ছিল না। চারদিকে অস্থিরতা। প্রতিদিন খুন হচ্ছে সাধারণ মানুষ। তারপরও যেতে হবে_ এই ভেবে প্রস্তুতি নিলাম। কিন্তু যাব কী করে! গোটা দেশেই চলছে একের পর এক হরতাল।
এ হরতালের মধ্যেই রিকশাযোগে নেত্রকোনা থেকে ময়মনসিংহে পেঁৗছাই। আমরা যেদিন ময়মনসিংহে পেঁৗছলাম, সেদিন সন্ধ্যায় হরতাল শেষ হয়। সেদিনই ঢাকা যেতে হবে। সুতরাং একটি হোটেলে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে চলে যাই বাসস্ট্যান্ডে। চোখে না দেখলে বোঝার উপায় নেই, কত সংখ্যক মানুষ সেখানে দাঁড়িয়ে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিল। প্রতিটি গাড়ির বিপরীতে আনুমানিক তিন থেকে চারশ' মানুষ অপেক্ষায়। কিন্তু কেউ আসন পাচ্ছিলেন না। আমরা ঘণ্টাব্যাপী অপেক্ষায় থেকেও বাস কাউন্টারের লাইনে দাঁড়াতে পারিনি। এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল হরতালের কারণে।
তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ (বর্তমানে ক্ষমতাসীন) প্রধান নির্বাচন কমিশনার এমএ আজিজের পদত্যাগ দাবিতে একের পর এক হরতাল আহ্বান করে। শুরু করে আন্দোলন। কিন্তু তাদের দাবি কোনোভাবেই মেনে নিচ্ছিল না বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার। প্রায় হরতালেই জীবন দিতে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। সরকারও বিরোধী দল দমনে পুলিশি নির্যাতন চালায়। এটা বাংলাদেশে যেন একটি 'ট্র্যাডিশন' হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে সরকার মানে না দাবি, বিরোধী দলের থামে না আন্দোলন। পরিস্থিতি চলে যায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে। আওয়ামী লীগ যখন আন্দোলন করে তখন বিএনপি বলেছিল, 'তারা হরতাল পছন্দ করে না এবং কোনোদিন হরতাল করবে না।' সরকারে থাকলে এমন অনেক কথাই বলা যায়। যেমন বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও এখন হরতাল পরিহার করে বিরোধী দল বিএনপিকে সংসদে গিয়ে কথা বলার আহ্বান জানাচ্ছে। কিন্তু তাতে কর্ণপাত করেনি বিএনপি। তারা ধ্বংসাত্মক রাজনীতি শুরু করেছে। জ্বালাও-পোড়াওসহ অসহনীয় অবস্থা সৃষ্টি করেছে দেশের মধ্যে। তারা কথা না রেখে সরকারের বিরুদ্ধে একের পর এক হরতালের ডাক দিচ্ছে। তবে হ্যাঁ, এ জন্য আওয়ামী লীগকেও বাহবা দেওয়া যায় না। কারণ আজ তারাও হয়তো বলবে, ক্ষমতায় না থাকলে তারা হরতাল দেবে না। দেশের জনগণ এখন অনেক সচেতন। লোকভোলানো এসব কথা তারা আর বিশ্বাস করে না। কারণ, এমন অসংখ্যবার ক্ষমতায় থেকে রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের সঙ্গে মিথ্যা কথা বলে ধোঁকা দিয়েছে। এটা ঠিক যে, গণতান্ত্রিক দেশে যে কোনো দলই হরতালের ডাক দিতে পারে। কিন্তু দেখতে হবে, দেশের মানুষের তার প্রতি কতুটুকু সমর্থন রয়েছে; হরতাল দেওয়াটা কতটুকু জরুরি এবং যুক্তিযুক্ত। কেননা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস।
এখন প্রশ্ন ওঠে, বিএনপি কেন বর্তমানে হরতালের রাজনীতি শুরু করেছে? তার সঙ্গে নতুন করে তাল দিচ্ছে জামায়াতে ইসলামীও। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলে সরকারের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে ১২ জুন থেকে টানা ৩৬ ঘণ্টা দেশে হরতাল দিয়েছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। মহাজোট সরকারের আমলে এই প্রথম লাগাতার ৩৬ ঘণ্টার হরতাল। বর্তমান সরকার আমলে এটি ষষ্ঠ হরতাল। এর আগে বিএনপি পাঁচ দিন সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করে। একতরফাভাবে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল, সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস মুছে ফেলা এবং মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে সুসম্পর্কের ধারা বিলুপ্তির অপচেষ্টা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বর্গতি, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির তীব্র সংকট নিরসনে আওয়ামী লীগ সরকারের সীমাহীন ব্যর্থতা এবং শেয়ারবাজার ধ্বংস করে ৩৩ লাখ বিনিয়োগকারীর সম্পদ লুণ্ঠনের প্রতিবাদে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট এ হরতালের ডাক দেয়।
দেশের জনগণ এখন খুবই সচেতন। বিএনপির জনপ্রিয়তা নেই_ তা আমি বলতে চাই না। তবে একজন নাগরিক হিসেবে হরতাল কাম্য নয়। এসব অপ্রয়োজনীয় হরতাল ডেকে বিএনপি বরং জনগণের কাছে তাদের সুনাম ক্ষুণ্ন করছে। দেশের মানুষকে নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো যেভাবে পক্ষে-বিপক্ষে খেলা শুরু করেছে, এতে লাভবান হচ্ছে মুষ্টিমেয় লোক। সাধারণ মানুষ এখনও তাদের ভাগ্যের উন্নতি ঘটাতে পারেনি। বিরোধী দল ক'দিন পরপর যেভাবে গঠনমূলক আন্দোলন না করে ইস্যুবিহীন হরতাল শুরু করেছে, এতে ভবিষ্যৎ আরও খারাপ হতে পারে। তাদের উচিত সংসদে যাওয়া এবং সেখানে সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করা। মহাজোট তার নিজস্ব একটি ম্যান্ডেট নিয়ে পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় এসেছে। তাদের কাছে জনগণের অনেক প্রত্যাশা। হরতালে দেশে কত কোটি টাকা দিনে ক্ষতি হয় তা বিরোধী দলের বিশেষজ্ঞদের অজানা নয়। তারাই ক্ষমতায় থাকাকালে এমন অসংখ্য কথা বলে জনগণের রায় আদায়ের চেষ্টা করেছে। কিন্তু পায়নি। বর্তমানে তারা যেভাবে লাগাতার হরতালসহ আরও কঠিন কর্মসূচির হুমকি দিচ্ছে; এতে সামনে আরও একটি সেনাবাহিনী বা তৎসংশ্লিষ্ট তত্ত্বাবধায়ক নামধারী সরকার ক্ষমতায় আসার পাঁয়তারা করতে পারে। সুতরাং এসব ইস্যুবিহীন হরতাল বাদ দিয়ে বিএনপিকে সুস্থ ধারার রাজনীতিতে ফিরে আসা উচিত। কেননা, হরতালে কেমন দুর্ভোগ বা কষ্ট পোহাতে হয় তা আমি আগেই ব্যক্তিগত একটি অভিজ্ঞতার মাধ্যমে উল্লেখ করেছি। মানুষ এখন হরতালের মতো ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড সমর্থন করে না।
হ জিন্দাবাজার, সিলেট
তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ (বর্তমানে ক্ষমতাসীন) প্রধান নির্বাচন কমিশনার এমএ আজিজের পদত্যাগ দাবিতে একের পর এক হরতাল আহ্বান করে। শুরু করে আন্দোলন। কিন্তু তাদের দাবি কোনোভাবেই মেনে নিচ্ছিল না বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার। প্রায় হরতালেই জীবন দিতে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। সরকারও বিরোধী দল দমনে পুলিশি নির্যাতন চালায়। এটা বাংলাদেশে যেন একটি 'ট্র্যাডিশন' হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে সরকার মানে না দাবি, বিরোধী দলের থামে না আন্দোলন। পরিস্থিতি চলে যায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে। আওয়ামী লীগ যখন আন্দোলন করে তখন বিএনপি বলেছিল, 'তারা হরতাল পছন্দ করে না এবং কোনোদিন হরতাল করবে না।' সরকারে থাকলে এমন অনেক কথাই বলা যায়। যেমন বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও এখন হরতাল পরিহার করে বিরোধী দল বিএনপিকে সংসদে গিয়ে কথা বলার আহ্বান জানাচ্ছে। কিন্তু তাতে কর্ণপাত করেনি বিএনপি। তারা ধ্বংসাত্মক রাজনীতি শুরু করেছে। জ্বালাও-পোড়াওসহ অসহনীয় অবস্থা সৃষ্টি করেছে দেশের মধ্যে। তারা কথা না রেখে সরকারের বিরুদ্ধে একের পর এক হরতালের ডাক দিচ্ছে। তবে হ্যাঁ, এ জন্য আওয়ামী লীগকেও বাহবা দেওয়া যায় না। কারণ আজ তারাও হয়তো বলবে, ক্ষমতায় না থাকলে তারা হরতাল দেবে না। দেশের জনগণ এখন অনেক সচেতন। লোকভোলানো এসব কথা তারা আর বিশ্বাস করে না। কারণ, এমন অসংখ্যবার ক্ষমতায় থেকে রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের সঙ্গে মিথ্যা কথা বলে ধোঁকা দিয়েছে। এটা ঠিক যে, গণতান্ত্রিক দেশে যে কোনো দলই হরতালের ডাক দিতে পারে। কিন্তু দেখতে হবে, দেশের মানুষের তার প্রতি কতুটুকু সমর্থন রয়েছে; হরতাল দেওয়াটা কতটুকু জরুরি এবং যুক্তিযুক্ত। কেননা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস।
এখন প্রশ্ন ওঠে, বিএনপি কেন বর্তমানে হরতালের রাজনীতি শুরু করেছে? তার সঙ্গে নতুন করে তাল দিচ্ছে জামায়াতে ইসলামীও। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলে সরকারের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে ১২ জুন থেকে টানা ৩৬ ঘণ্টা দেশে হরতাল দিয়েছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। মহাজোট সরকারের আমলে এই প্রথম লাগাতার ৩৬ ঘণ্টার হরতাল। বর্তমান সরকার আমলে এটি ষষ্ঠ হরতাল। এর আগে বিএনপি পাঁচ দিন সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করে। একতরফাভাবে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল, সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস মুছে ফেলা এবং মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে সুসম্পর্কের ধারা বিলুপ্তির অপচেষ্টা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বর্গতি, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির তীব্র সংকট নিরসনে আওয়ামী লীগ সরকারের সীমাহীন ব্যর্থতা এবং শেয়ারবাজার ধ্বংস করে ৩৩ লাখ বিনিয়োগকারীর সম্পদ লুণ্ঠনের প্রতিবাদে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট এ হরতালের ডাক দেয়।
দেশের জনগণ এখন খুবই সচেতন। বিএনপির জনপ্রিয়তা নেই_ তা আমি বলতে চাই না। তবে একজন নাগরিক হিসেবে হরতাল কাম্য নয়। এসব অপ্রয়োজনীয় হরতাল ডেকে বিএনপি বরং জনগণের কাছে তাদের সুনাম ক্ষুণ্ন করছে। দেশের মানুষকে নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো যেভাবে পক্ষে-বিপক্ষে খেলা শুরু করেছে, এতে লাভবান হচ্ছে মুষ্টিমেয় লোক। সাধারণ মানুষ এখনও তাদের ভাগ্যের উন্নতি ঘটাতে পারেনি। বিরোধী দল ক'দিন পরপর যেভাবে গঠনমূলক আন্দোলন না করে ইস্যুবিহীন হরতাল শুরু করেছে, এতে ভবিষ্যৎ আরও খারাপ হতে পারে। তাদের উচিত সংসদে যাওয়া এবং সেখানে সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করা। মহাজোট তার নিজস্ব একটি ম্যান্ডেট নিয়ে পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় এসেছে। তাদের কাছে জনগণের অনেক প্রত্যাশা। হরতালে দেশে কত কোটি টাকা দিনে ক্ষতি হয় তা বিরোধী দলের বিশেষজ্ঞদের অজানা নয়। তারাই ক্ষমতায় থাকাকালে এমন অসংখ্য কথা বলে জনগণের রায় আদায়ের চেষ্টা করেছে। কিন্তু পায়নি। বর্তমানে তারা যেভাবে লাগাতার হরতালসহ আরও কঠিন কর্মসূচির হুমকি দিচ্ছে; এতে সামনে আরও একটি সেনাবাহিনী বা তৎসংশ্লিষ্ট তত্ত্বাবধায়ক নামধারী সরকার ক্ষমতায় আসার পাঁয়তারা করতে পারে। সুতরাং এসব ইস্যুবিহীন হরতাল বাদ দিয়ে বিএনপিকে সুস্থ ধারার রাজনীতিতে ফিরে আসা উচিত। কেননা, হরতালে কেমন দুর্ভোগ বা কষ্ট পোহাতে হয় তা আমি আগেই ব্যক্তিগত একটি অভিজ্ঞতার মাধ্যমে উল্লেখ করেছি। মানুষ এখন হরতালের মতো ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড সমর্থন করে না।
হ জিন্দাবাজার, সিলেট
No comments