ধর্ম-শিশুশ্রম প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলন by মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান
ইসলামের বিধান অনুযায়ী প্রতিটি শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য শিশুশ্রম নিষিদ্ধ। অথচ সমাজজীবনে এমন কোনো ক্ষেত্র নেই, যেখানে শিশুদের কাজ করতে দেখা যাবে না। চরম দারিদ্র্য ও আর্থসামাজিক অবস্থার সঙ্গে নৈতিক আদর্শের বৈশিষ্ট্য এর মুখ্য কারণ।
হতদরিদ্র পিতা-মাতা সংসারের ব্যয় নির্বাহে অসমর্থ হয়ে বা অনেক ক্ষেত্রে তাঁদের কর্মহীনতার কারণে মা-বাবার স্থলে শিশুরা অর্থ উপার্জনে অগ্রসর হয়। সরকার শিশু অধিকার রক্ষা ও শিশুশ্রম নিরসনে অঙ্গীকারবদ্ধ। বাংলাদেশ শিশু অধিকার সনদে স্বাক্ষরকারী প্রথম ২২টি দেশের অন্যতম। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে হঠাৎ শিশুশ্রম বন্ধ করা সম্ভব নয়। তাই যতটা সম্ভব শিশুর কর্মস্থল ঝুঁকিমুক্ত ও নিরাপদ করা প্রয়োজন। ইসলামের শ্রম-নীতিমালা অনুসারে কাউকে তার সামর্থ্যের বাইরে দায়িত্ব প্রদান করা সমীচীন নয়। সামর্থ্যের অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান কোনো কোনো সময় বড় ধরনের জুলুমের পর্যায়ে চলে যায়। এ মর্মে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ কারও ওপর এমন কোনো কষ্টদায়ক দায়িত্ব অর্পণ করেন না, যা তার সাধ্যাতীত।’ (সুরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৮৬)
অথচ দেশে এক কোটি শিশু কায়িক শ্রমে নিয়োজিত। কঠিন দারিদ্র্যের কারণে শিশুরা ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় নিয়োজিত রয়েছে। শিশুদের ওপর কোথাও কোথাও নির্যাতনও বাড়ছে। শিশুরা অস্বাস্থ্যকর ও প্রাণ-সংকটাপন্ন পরিবেশে কাজ করে। শিশুদের বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ শ্রম, যেমন—উটের জকি, অঙ্গহানি করে ভিক্ষাবৃত্তি, চুরি, ছিনতাই, মাদক ও অস্ত্র চোরাচালানসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে বাধ্য করা হয়। এ ধরনের প্রতিটি কাজ ইসলামে অবৈধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সামগ্রিকভাবে শিশুদের নিপীড়নমূলক এসব কাজ থেকে মুক্তি দিতে ধর্মীয় সচেতনতা ও সামাজিক আন্দোলনের পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারিভাবে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) কখনো কাউকে সামর্থ্যের বাইরে কোনো দায়িত্বের নির্দেশ প্রদান করেননি। যে শিশুদের প্রতি দয়া-স্নেহ করে না, সে মুসলমানদের মধ্যে গণ্য নয়। তাই নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘তাদের সামর্থ্যের অধিক কাজ করাতে চাইলে তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত প্রসারিত করো এবং তাদের ওপর শক্তির অধিক কাজ চাপিয়ে দিয়ো না।’ (বুখারি)
শিশুশ্রম প্রতিরোধ বিষয়ে এখন সব দেশে ও সব মহলে চিন্তাভাবনা চলছে। কারণ শিশুরাই সুশোভিত ও গৌরবময় আগামীর পথনির্দেশক। দরিদ্র দেশগুলোতে অনেক শিশু অধিকারবঞ্চিত থেকে যায়। শিশুশ্রমিক যেমন শহরে আছে, তেমনি গ্রামেও আছে। প্রায়ই তাদের অঙ্গহানির ঘটনা ঘটছে, এমনকি মৃত্যুমুখেও পতিত হচ্ছে। দেশে বিপুলসংখ্যক শিশু শ্রমে নিযুক্ত থাকায় একদিকে যেমন তারা সুন্দর ও নিরাপদ শৈশব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তেমনি দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে। আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, ‘ধন-সম্পদ ও সন্তানসন্ততি বা শিশুরা পার্থিব জীবনের শোভা।’ (সুরা আল-কাহ্ফ, আয়াত: ৪৬)
দরিদ্র মুসলিম দেশগুলোতে শিশুশ্রম চালু হওয়ার প্রধান কারণ দুটি। পেটের তাগিদে তাদের কোথাও কাজ করতে হয় অথবা শ্রমের বিনিময়ে তারা পেটের ভাত জোগাড় করে। অন্যদিকে নারীদের মতো শিশুশ্রমিকদের তুলনামূলকভাবে অনেক কম মজুরি দিয়ে কাজ করানো যায়। এ জন্য নিয়োগকারীরা শিশুদের বিভিন্ন কাজে লাগায় এবং বেশি করে খাটায়। এসব কাজ কোমলমতি শিশুদের দেহ-মনের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। শিশুশ্রমিকেরা অস্থায়ী ভিত্তিতে কাজ করে, যার নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমাও নেই। তাদের বেশির ভাগই ১২-১৫ ঘণ্টা কাজ করে। বিশ্রাম বা বিনোদনেরও কোনো অবকাশ নেই। একেবারে বিশ্রামহীন ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে শিশুদের বাধ্য করা যাবে না। একসঙ্গে কয়েক ঘণ্টা কাজ করার পর অনুরূপ নিরবচ্ছিন্নভাবে কিছুক্ষণ তাকে অবসর তথা আরাম-আয়েশ ও বিশ্রামের সুযোগ দিতে হবে। প্রয়োজনীয় অবকাশ দিতে হবে—এটিও শিশুর মৌলিক মানবাধিকারের পর্যায়ে গণ্য। তাই মহানবী (সা.) সাবধানবাণী উচ্চারণ করেছেন, ‘লোকদের সহজাত দাও, কঠোরতার মধ্যে নিক্ষেপ করো না।’
ধর্মীয় শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও উপযুক্ত পরিবেশ না পেলে শিশুর যথার্থ বিকাশ সাধিত হয় না। নবী করিম (সা.) অবহেলিত শিশুদের অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, বাসস্থান, চিকিত্সা ও বিনোদনের যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা দিয়ে ধর্মে-কর্মে যথার্থ মানুষ হিসেবে গঠন করেছিলেন। তিনি শিশুদের প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতেন। যেকোনো শিশুকে তিনি নিজের সন্তানের মতো আদর করতেন। শিশুদের প্রতি কোমল ব্যবহার নিজে করেছেন এবং অন্যদের সদাচার করার নির্দেশ প্রদান করেছেন। অথচ আজকের আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে শিশুশ্রমিকেরা কতই না অবহেলিত! তাই শিশুদের শারীরিক নির্যাতন না করে তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষাদানের জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা শিশুদের স্নেহ করো, তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করো এবং সদাচরণ ও শিষ্টাচার শিক্ষা দাও।’ (তিরমিযী)
সমাজজীবনে বাস্তবতার নিরিখে শিশুশ্রম পুরোপুরি বন্ধ করা না গেলেও কম ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় তাদের নিয়োগ করা যেতে পারে। পাশাপাশি পড়াশোনার সুযোগও রাখতে হবে। দারিদ্র্যের কারণে শ্রম বিক্রি করতে যাওয়া শিশুদের জানাতে ও বোঝাতে হবে যে, তাদের দারিদ্র্য দূর করার মোক্ষম হাতিয়ার হলো শিক্ষা। স্কুলে গিয়ে লেখাপড়া করাটাই তাদের জন্য বেশি জরুরি। শিশুর মানসিক বিকাশের জন্য তাদের সঙ্গে কী ধরনের আচরণ করতে হবে, এ সম্পর্কে মহানবী (সা.) বাণী প্রদান করেছেন, ‘তোমাদের সন্তানদের উত্তমরূপে জ্ঞান দান করো, কেননা তারা তোমাদের পরবর্তী যুগের জন্য সৃষ্ট।’ (মুসলিম)
ইসলাম-পরিপন্থী অভিশপ্ত শিশুশ্রম অকালে কত শিশুর জীবন বিনাশ করছে। যে হাতে বই-খাতা-কলম থাকার কথা, সে হাতে তারা হাতুড়ি উঠিয়ে নিচ্ছে, ইট ভাঙছে, শ্রমিক হয়ে কাজ করছে। গরিবের ঘরে জন্ম নেওয়া শিশুর দ্বারে শিক্ষার আলো পৌঁছেনি। কত অসহায় এতিম শিশুর বুকফাটা আর্তনাদে আকাশ-বাতাস কেঁপে উঠছে। কত শিশু দেশের বাইরে পাচার হচ্ছে, নির্যাতিত হয়ে বাঁচার অধিকার হারাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যে এভাবেই শিশু পাচার করে উটের জকি হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে। নিষ্পাপ শিশুকে জোর করে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করিয়ে জীবনে এক ভীতিকর পরিবেশে ঠেলে দেওয়া হয়। এসব মানবেতর জীবনযাপনকারী শিশুর জন্য মুসলিম বিশ্বকে ভালোবাসার হাত বাড়াতে হবে। আজকের প্রজন্মের শিশুরাই ভবিষ্যতের কর্ণধার। তাই নতুন প্রজন্মের হাতগুলোকে হাতিয়ার হিসেবে, তথা শিশুদের উপযুক্ত নাগরিকরূপে গড়ে তোলার দায়িত্ব গণমাধ্যমসহ সবাইকে নিতে হবে।
প্রকৃতপক্ষে মানবিক মূল্যবোধ, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়ন, দারিদ্র্য দূরীকরণ ও শিক্ষার সুযোগ বিস্তৃত করা ছাড়া শিশুশ্রম কোনোমতেই বন্ধ করা সম্ভব নয়। সমাজে শিশুদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে শিক্ষার পথ প্রশস্ত করে দিলে উন্নত জনবল মুসলিম-অধ্যুষিত দেশের শক্তি হিসেবে গণ্য হবে। প্রতিটি দেশের সরকার ও সমাজের ধর্মপ্রাণ বিত্তবান লোকদের এসব শিশুর জন্য মানবতার সেবার হাত বাড়িয়ে দেওয়া উচিত। শিশুদের জ্ঞানার্জনের সঙ্গে সঙ্গে চারিত্রিক গুণাবলিও অর্জন করতে হবে। শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ। প্রতিটি শিশুকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা সব অভিভাবকের দায়িত্ব।্রতাই শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবসে বিশ্বের প্রতিটি মানবশিশু অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিত্সা ও শিক্ষার সব মৌলিক মানবাধিকার পেয়ে নৈতিক মূল্যবোধ, আদর্শ ও মহত্গুণে বড় হোক—এটাই বাঞ্ছনীয়।
ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: সহকারী অধ্যাপক, ইসলামিক একাডেমী, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়।
dr.munimkhan@yahoo.com
অথচ দেশে এক কোটি শিশু কায়িক শ্রমে নিয়োজিত। কঠিন দারিদ্র্যের কারণে শিশুরা ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় নিয়োজিত রয়েছে। শিশুদের ওপর কোথাও কোথাও নির্যাতনও বাড়ছে। শিশুরা অস্বাস্থ্যকর ও প্রাণ-সংকটাপন্ন পরিবেশে কাজ করে। শিশুদের বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ শ্রম, যেমন—উটের জকি, অঙ্গহানি করে ভিক্ষাবৃত্তি, চুরি, ছিনতাই, মাদক ও অস্ত্র চোরাচালানসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে বাধ্য করা হয়। এ ধরনের প্রতিটি কাজ ইসলামে অবৈধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সামগ্রিকভাবে শিশুদের নিপীড়নমূলক এসব কাজ থেকে মুক্তি দিতে ধর্মীয় সচেতনতা ও সামাজিক আন্দোলনের পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারিভাবে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) কখনো কাউকে সামর্থ্যের বাইরে কোনো দায়িত্বের নির্দেশ প্রদান করেননি। যে শিশুদের প্রতি দয়া-স্নেহ করে না, সে মুসলমানদের মধ্যে গণ্য নয়। তাই নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘তাদের সামর্থ্যের অধিক কাজ করাতে চাইলে তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত প্রসারিত করো এবং তাদের ওপর শক্তির অধিক কাজ চাপিয়ে দিয়ো না।’ (বুখারি)
শিশুশ্রম প্রতিরোধ বিষয়ে এখন সব দেশে ও সব মহলে চিন্তাভাবনা চলছে। কারণ শিশুরাই সুশোভিত ও গৌরবময় আগামীর পথনির্দেশক। দরিদ্র দেশগুলোতে অনেক শিশু অধিকারবঞ্চিত থেকে যায়। শিশুশ্রমিক যেমন শহরে আছে, তেমনি গ্রামেও আছে। প্রায়ই তাদের অঙ্গহানির ঘটনা ঘটছে, এমনকি মৃত্যুমুখেও পতিত হচ্ছে। দেশে বিপুলসংখ্যক শিশু শ্রমে নিযুক্ত থাকায় একদিকে যেমন তারা সুন্দর ও নিরাপদ শৈশব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তেমনি দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে। আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, ‘ধন-সম্পদ ও সন্তানসন্ততি বা শিশুরা পার্থিব জীবনের শোভা।’ (সুরা আল-কাহ্ফ, আয়াত: ৪৬)
দরিদ্র মুসলিম দেশগুলোতে শিশুশ্রম চালু হওয়ার প্রধান কারণ দুটি। পেটের তাগিদে তাদের কোথাও কাজ করতে হয় অথবা শ্রমের বিনিময়ে তারা পেটের ভাত জোগাড় করে। অন্যদিকে নারীদের মতো শিশুশ্রমিকদের তুলনামূলকভাবে অনেক কম মজুরি দিয়ে কাজ করানো যায়। এ জন্য নিয়োগকারীরা শিশুদের বিভিন্ন কাজে লাগায় এবং বেশি করে খাটায়। এসব কাজ কোমলমতি শিশুদের দেহ-মনের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। শিশুশ্রমিকেরা অস্থায়ী ভিত্তিতে কাজ করে, যার নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমাও নেই। তাদের বেশির ভাগই ১২-১৫ ঘণ্টা কাজ করে। বিশ্রাম বা বিনোদনেরও কোনো অবকাশ নেই। একেবারে বিশ্রামহীন ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে শিশুদের বাধ্য করা যাবে না। একসঙ্গে কয়েক ঘণ্টা কাজ করার পর অনুরূপ নিরবচ্ছিন্নভাবে কিছুক্ষণ তাকে অবসর তথা আরাম-আয়েশ ও বিশ্রামের সুযোগ দিতে হবে। প্রয়োজনীয় অবকাশ দিতে হবে—এটিও শিশুর মৌলিক মানবাধিকারের পর্যায়ে গণ্য। তাই মহানবী (সা.) সাবধানবাণী উচ্চারণ করেছেন, ‘লোকদের সহজাত দাও, কঠোরতার মধ্যে নিক্ষেপ করো না।’
ধর্মীয় শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও উপযুক্ত পরিবেশ না পেলে শিশুর যথার্থ বিকাশ সাধিত হয় না। নবী করিম (সা.) অবহেলিত শিশুদের অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, বাসস্থান, চিকিত্সা ও বিনোদনের যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা দিয়ে ধর্মে-কর্মে যথার্থ মানুষ হিসেবে গঠন করেছিলেন। তিনি শিশুদের প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতেন। যেকোনো শিশুকে তিনি নিজের সন্তানের মতো আদর করতেন। শিশুদের প্রতি কোমল ব্যবহার নিজে করেছেন এবং অন্যদের সদাচার করার নির্দেশ প্রদান করেছেন। অথচ আজকের আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে শিশুশ্রমিকেরা কতই না অবহেলিত! তাই শিশুদের শারীরিক নির্যাতন না করে তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষাদানের জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা শিশুদের স্নেহ করো, তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করো এবং সদাচরণ ও শিষ্টাচার শিক্ষা দাও।’ (তিরমিযী)
সমাজজীবনে বাস্তবতার নিরিখে শিশুশ্রম পুরোপুরি বন্ধ করা না গেলেও কম ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় তাদের নিয়োগ করা যেতে পারে। পাশাপাশি পড়াশোনার সুযোগও রাখতে হবে। দারিদ্র্যের কারণে শ্রম বিক্রি করতে যাওয়া শিশুদের জানাতে ও বোঝাতে হবে যে, তাদের দারিদ্র্য দূর করার মোক্ষম হাতিয়ার হলো শিক্ষা। স্কুলে গিয়ে লেখাপড়া করাটাই তাদের জন্য বেশি জরুরি। শিশুর মানসিক বিকাশের জন্য তাদের সঙ্গে কী ধরনের আচরণ করতে হবে, এ সম্পর্কে মহানবী (সা.) বাণী প্রদান করেছেন, ‘তোমাদের সন্তানদের উত্তমরূপে জ্ঞান দান করো, কেননা তারা তোমাদের পরবর্তী যুগের জন্য সৃষ্ট।’ (মুসলিম)
ইসলাম-পরিপন্থী অভিশপ্ত শিশুশ্রম অকালে কত শিশুর জীবন বিনাশ করছে। যে হাতে বই-খাতা-কলম থাকার কথা, সে হাতে তারা হাতুড়ি উঠিয়ে নিচ্ছে, ইট ভাঙছে, শ্রমিক হয়ে কাজ করছে। গরিবের ঘরে জন্ম নেওয়া শিশুর দ্বারে শিক্ষার আলো পৌঁছেনি। কত অসহায় এতিম শিশুর বুকফাটা আর্তনাদে আকাশ-বাতাস কেঁপে উঠছে। কত শিশু দেশের বাইরে পাচার হচ্ছে, নির্যাতিত হয়ে বাঁচার অধিকার হারাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যে এভাবেই শিশু পাচার করে উটের জকি হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে। নিষ্পাপ শিশুকে জোর করে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করিয়ে জীবনে এক ভীতিকর পরিবেশে ঠেলে দেওয়া হয়। এসব মানবেতর জীবনযাপনকারী শিশুর জন্য মুসলিম বিশ্বকে ভালোবাসার হাত বাড়াতে হবে। আজকের প্রজন্মের শিশুরাই ভবিষ্যতের কর্ণধার। তাই নতুন প্রজন্মের হাতগুলোকে হাতিয়ার হিসেবে, তথা শিশুদের উপযুক্ত নাগরিকরূপে গড়ে তোলার দায়িত্ব গণমাধ্যমসহ সবাইকে নিতে হবে।
প্রকৃতপক্ষে মানবিক মূল্যবোধ, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়ন, দারিদ্র্য দূরীকরণ ও শিক্ষার সুযোগ বিস্তৃত করা ছাড়া শিশুশ্রম কোনোমতেই বন্ধ করা সম্ভব নয়। সমাজে শিশুদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে শিক্ষার পথ প্রশস্ত করে দিলে উন্নত জনবল মুসলিম-অধ্যুষিত দেশের শক্তি হিসেবে গণ্য হবে। প্রতিটি দেশের সরকার ও সমাজের ধর্মপ্রাণ বিত্তবান লোকদের এসব শিশুর জন্য মানবতার সেবার হাত বাড়িয়ে দেওয়া উচিত। শিশুদের জ্ঞানার্জনের সঙ্গে সঙ্গে চারিত্রিক গুণাবলিও অর্জন করতে হবে। শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ। প্রতিটি শিশুকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা সব অভিভাবকের দায়িত্ব।্রতাই শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবসে বিশ্বের প্রতিটি মানবশিশু অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিত্সা ও শিক্ষার সব মৌলিক মানবাধিকার পেয়ে নৈতিক মূল্যবোধ, আদর্শ ও মহত্গুণে বড় হোক—এটাই বাঞ্ছনীয়।
ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: সহকারী অধ্যাপক, ইসলামিক একাডেমী, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়।
dr.munimkhan@yahoo.com
No comments