ভিন্নমত-শেয়ারবাজার : মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর এই দুর্দশা কেন? by আবু আহমেদ
রেগুলেটর এসইসিও চায় শেয়ারবাজার নিয়ে গবেষণা হোক। তবে রেগুলেটর গবেষণা বলতে যা বোঝাচ্ছে তা হলো, অ্যানালিসিস (Analysis) বা বিশ্লেষণ। বিশ্লেষণ করে শেয়ার কেনা তো উচিত, এটাই তো আমরা সারা জীবন বলে আসছি। কিন্তু সেই বিশ্লেষণ কারা করবে? বিনিয়োগকারীরা, না প্রতিষ্ঠানগুলো? এসইসি বলতে পারে, উভয়ে করবে।
কিন্তু ব্যক্তিদের সেই অ্যানালিসিস করার ক্ষমতা আছে কি? আর প্রতিষ্ঠানের গবেষণার ফল যে মারাত্মক ভুল সে তো আমরা মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর NAV এবং বাজারদর দেখলেই বুঝতে পারি। অ্যানালিসিসের জন্য কথিত দক্ষ লোকজন তো অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কম্পানিগুলোর থাকার কথা। তারাই তো প্রফেশনাল ম্যানেজমেন্টের মিউচ্যুয়াল ফান্ড বা MF বিক্রির নামে অতিসাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে শত শত কোটি টাকা নিয়েছে। এখন তাদের বিনিয়োগকারীরা তথা MF-এর ইউনিটধারীরা হাঁ-হুতাশ করছে, আর বলছে কোন আক্কেলে কথিত প্রফেশনালদের হাতে তাদের পুঁজিগুলোকে তুলে দিল। অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কম্পানিগুলো পুরোপুরি ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এদের MFগুলোতে বর্তমান বাজারমূল্যে সম্পদ আছে, যাকে NAV বলা হয় ৯০ টাকার বিপরীতে ছয়-সাত টাকা। এর অর্থ হলো, বিনিয়োগ করতে গিয়ে তারাও পুঁজির অধিকাংশ হারিয়েছে। কেউ বিশ্বাস করবে এক বছর আগে যেসব MF ফান্ড শুরু করা হয়েছে, সেগুলো বর্তমানে বাজারে পাঁচ-ছয় টাকায় পাওয়া যাচ্ছে? MFs ম্যানেজ করে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কম্পানি, তাদের ফান্ড ম্যানেজারসও বলে। ম্যানেজমেন্ট ফি বাবদ তারা মোটা অঙ্কের কমিশন পায়। যেসব ব্যর্থ ফান্ড ম্যানেজার জনগণের অর্থ নিয়ে শুধু হারিয়েছেই, তারা কেন ম্যানেজমেন্ট ফি নেবে? এসইসি বিষয়টি এবং MFs সম্পর্কে অর্থ বিষয়গুলো পুনঃ পরীক্ষা করে দেখা উচিত। এ ক্ষেত্রে এসইসি শুধু লাইসেন্স দিয়ে বসে থাকলে চলবে না। কোনো রকম জবাবদিহিতার মধ্যে না থাকলে ফান্ড ম্যানেজাররা অন্যের টাকা নিয়ে শেয়ারবাজারে 'খেলতে' গিয়ে শুধু অর্থই হারাবে। আজকে যদি MFগুলোকে অবসায়নের নির্দেশ দেওয়া হয়, তাহলে বিনিয়োগকারীরা ১০ টাকার বিনিয়োগের বিপরীতে কত টাকা পাবে? অথচ এসব MF গণ-অফার বা IPO থেকে কোটার ভিত্তিতে একটা প্লেসমেন্টও পাচ্ছে। তার পরও তাদের ম্যানেজকৃত MFগুলোর চলতি বাজারমূল্যে প্রতি ইউনিটের বিপরীতে সম্পদ বা (NAV PER Unit) কী করে পাঁচ-ছয় টাকা হয়? এর অর্থ হলো, ব্যর্থ ফান্ড ম্যানেজাররা জনগণের টাকা নিয়ে দায়িত্বহীনভাবে জুয়া খেলেছে।
অথচ ফান্ড ম্যানেজারদের একটা ভালো রিসার্চ বা গবেষণা সেল থাকার কথা। তারা যদি প্রকৃত গবেষণা করে শেয়ার কিনত, তাহলে ফান্ডগুলোর ইউনিটপ্রতি সম্পদমূল্য পাঁচ-ছয় টাকা হতেই পারে না। NAV পাঁচ-ছয় টাকা হওয়া মানে কোনো ফান্ড ম্যানেজার ১০০ কোটি টাকা জনগণ ও স্পন্সরদের কাছ থেকে নিলে তার বর্তমান মূল্য হলো ৫০-৬০ কোটি টাকা। বাকি অর্থ তারা কথিত বিনিয়োগ করতে গিয়ে হারিয়ে ফেলেছে। এভাবে টাকা হারালে ভবিষ্যতে MFগুলোর জন্য অন্ধকার অপেক্ষা করছে। ইতিমধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা MFs থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এসইসি অনেক সম্পদ ব্যবস্থাপনা কম্পানিকে লাইসেন্স দিয়েছে শেয়ারবাজার তথা আর্থিক বাজারে একটা বিশ্বস্ত MF ইন্ডাস্ট্রি গড়ে ওঠার জন্য। আজও অনেকে বলেন, MF হলো বাজার স্থিতিশীল রাখার অন্যতম হাতিয়ার। যুক্তি বটে! তবে এর অর্থ কি আজও ফান্ড ম্যানেজারগুলো কর্তৃত্ব অনবরত অর্থ হারানো?
আবার অনেকে এও বলেন, আমাদের শেয়ারবাজারে MF-এর অংশগ্রহণ তুলনামূলকভাবে কম। কম বটে! তবে বেশি হলে তো দেখি আরো বিপদ হতো। ফান্ড ম্যানেজারদের ফি ও কমিশনের কমতি নেই, অথচ জনগণ তাদের হাতে অর্থ তুলে দিয়ে শুধু অর্থই হারাচ্ছে। এ অবস্থায় ২০১০-এর সেই রমরমা বাজার ছাড়া অতি স্বাভাবিক বা কিছুটা শিথিল বাজারে তারা যে ফান্ড ম্যানেজ করতে পুরো ব্যস্ত, বর্তমানে ফান্ডগুলোর অবস্থা তারই সাক্ষ্য দেয়। অন্য বিষয়টি হলো, বাজার কমেছে ২০১০-এর তুলনায় ৪০-৫০ শতাংশ। অথচ তারা অর্থ হারিয়েছে ৫০-৬০ শতাংশ। এর অর্থ কী? অর্থ হলো তাদের সাফল্য গড়ে অন্যদের নিচে। তারা বাজারকে নবধঃ বা পরাজিত করতে পারেনি, উল্টো তারাই বাজারের কাছে পরাজিত হয়েছে। এদের MF কিনতে গিয়ে রহমান সাহেবের মতো লোকেরা বারবার মার খেয়েছেন। একটা MF কিনলেন রহমান সাহেব ৯ টাকায়। ওটার NAV যখন ১২ টাকা ছিল। যেখানে সাধারণ ফর্মুলা হলো, NAV-এর ১০ শতাংশ কমে কিনলেই নিরাপদ থাকা যায়, সেখানে রহমান সাহেব মাত্র ১৫ দিনের মাথায় হতাশ হয়ে পড়লেন। কারণ তাঁর কেনা MF-এর NAV সেই দুই সপ্তাহে ১২ থেকে ১০ টাকায় এসে গেছে এবং ওটার বাজারমূল্য এসে গেছে সাত টাকায়। দুই সপ্তাহে রহমান সাহেব কথিত নিরাপদের MF কিনতে গিয়ে ২১ শতাংশ পুঁজি হারালেন! কেন রহমান সাহেব ঠকলেন? সেই ফান্ড ম্যানেজারের অদক্ষতার কারণে। অথচ ওই দুই সপ্তাহে শেয়ারবাজার পড়েছে ১০ শতাংশ। সে জন্যই বলছি, এসব স্যুট-টাই পরা ফান্ড ম্যানেজাররা বাজারকে পরাজিত করতে পারছে না। তারা পরাজিত হচ্ছে বাজারের কাছে। এরই নাম তাদের প্রফেশনালিজম, এরই নাম তাদের অ্যানালিসিস! এসইসির উচিত হবে তাদেরকে দেওয়া লাইসেন্স সম্পর্কে পুনর্বিবেচনা করা।
লেখক : অর্থনীতিবিদ ও অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
অথচ ফান্ড ম্যানেজারদের একটা ভালো রিসার্চ বা গবেষণা সেল থাকার কথা। তারা যদি প্রকৃত গবেষণা করে শেয়ার কিনত, তাহলে ফান্ডগুলোর ইউনিটপ্রতি সম্পদমূল্য পাঁচ-ছয় টাকা হতেই পারে না। NAV পাঁচ-ছয় টাকা হওয়া মানে কোনো ফান্ড ম্যানেজার ১০০ কোটি টাকা জনগণ ও স্পন্সরদের কাছ থেকে নিলে তার বর্তমান মূল্য হলো ৫০-৬০ কোটি টাকা। বাকি অর্থ তারা কথিত বিনিয়োগ করতে গিয়ে হারিয়ে ফেলেছে। এভাবে টাকা হারালে ভবিষ্যতে MFগুলোর জন্য অন্ধকার অপেক্ষা করছে। ইতিমধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা MFs থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এসইসি অনেক সম্পদ ব্যবস্থাপনা কম্পানিকে লাইসেন্স দিয়েছে শেয়ারবাজার তথা আর্থিক বাজারে একটা বিশ্বস্ত MF ইন্ডাস্ট্রি গড়ে ওঠার জন্য। আজও অনেকে বলেন, MF হলো বাজার স্থিতিশীল রাখার অন্যতম হাতিয়ার। যুক্তি বটে! তবে এর অর্থ কি আজও ফান্ড ম্যানেজারগুলো কর্তৃত্ব অনবরত অর্থ হারানো?
আবার অনেকে এও বলেন, আমাদের শেয়ারবাজারে MF-এর অংশগ্রহণ তুলনামূলকভাবে কম। কম বটে! তবে বেশি হলে তো দেখি আরো বিপদ হতো। ফান্ড ম্যানেজারদের ফি ও কমিশনের কমতি নেই, অথচ জনগণ তাদের হাতে অর্থ তুলে দিয়ে শুধু অর্থই হারাচ্ছে। এ অবস্থায় ২০১০-এর সেই রমরমা বাজার ছাড়া অতি স্বাভাবিক বা কিছুটা শিথিল বাজারে তারা যে ফান্ড ম্যানেজ করতে পুরো ব্যস্ত, বর্তমানে ফান্ডগুলোর অবস্থা তারই সাক্ষ্য দেয়। অন্য বিষয়টি হলো, বাজার কমেছে ২০১০-এর তুলনায় ৪০-৫০ শতাংশ। অথচ তারা অর্থ হারিয়েছে ৫০-৬০ শতাংশ। এর অর্থ কী? অর্থ হলো তাদের সাফল্য গড়ে অন্যদের নিচে। তারা বাজারকে নবধঃ বা পরাজিত করতে পারেনি, উল্টো তারাই বাজারের কাছে পরাজিত হয়েছে। এদের MF কিনতে গিয়ে রহমান সাহেবের মতো লোকেরা বারবার মার খেয়েছেন। একটা MF কিনলেন রহমান সাহেব ৯ টাকায়। ওটার NAV যখন ১২ টাকা ছিল। যেখানে সাধারণ ফর্মুলা হলো, NAV-এর ১০ শতাংশ কমে কিনলেই নিরাপদ থাকা যায়, সেখানে রহমান সাহেব মাত্র ১৫ দিনের মাথায় হতাশ হয়ে পড়লেন। কারণ তাঁর কেনা MF-এর NAV সেই দুই সপ্তাহে ১২ থেকে ১০ টাকায় এসে গেছে এবং ওটার বাজারমূল্য এসে গেছে সাত টাকায়। দুই সপ্তাহে রহমান সাহেব কথিত নিরাপদের MF কিনতে গিয়ে ২১ শতাংশ পুঁজি হারালেন! কেন রহমান সাহেব ঠকলেন? সেই ফান্ড ম্যানেজারের অদক্ষতার কারণে। অথচ ওই দুই সপ্তাহে শেয়ারবাজার পড়েছে ১০ শতাংশ। সে জন্যই বলছি, এসব স্যুট-টাই পরা ফান্ড ম্যানেজাররা বাজারকে পরাজিত করতে পারছে না। তারা পরাজিত হচ্ছে বাজারের কাছে। এরই নাম তাদের প্রফেশনালিজম, এরই নাম তাদের অ্যানালিসিস! এসইসির উচিত হবে তাদেরকে দেওয়া লাইসেন্স সম্পর্কে পুনর্বিবেচনা করা।
লেখক : অর্থনীতিবিদ ও অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
No comments