চারদিক-চার্চ অব দ্য রিজারেকশন by স্বপন কুমার দাস
পুরান ঢাকার আরমানিটোলা ঢাকার খুবই পরিচিত জায়গা। একসময় এ স্থানে বিপুলসংখ্যক আর্মেনীয়র বসবাস ছিল। আর্মেনীয়দের বসবাসের কারণেই ওই এলাকার নামকরণ হয় আরমানিটোলা বা আর্মেনিয়ান স্ট্রিট। এই আরমানিটোলায় রয়েছে ঢাকার আর্মেনীয়দের কীর্তিধারক দুই শতাধিক বছরের প্রাচীন একটি গির্জা—যার নাম ‘চার্চ অব দ্য রিজারেকশন’।
ষোড়শ শতকে পারস্যের সাফাতি শাসকেরা মধ্য এশিয়ায় তাদের আবাসভূমি আর্মেনিয়া জয় করে নিলে আর্মেনীয়রা বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় বহু আর্মেনীয় ভাগ্যান্বেষণে ভারতবর্ষে আসে। মোগল সম্রাট আকবর তখন ভারতবর্ষ শাসন করছিলেন। সম্রাট আকবরের অনুমতি সাপেক্ষে আর্মেনীয়রা ভারতে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা, বসতি স্থাপন ও গির্জা নির্মাণ করে।
সম্রাট আকবর পূর্ববঙ্গের অন্যতম ভূঁইয়া ঈশা খাঁকে পরাজিত করে সোনারগাঁ দখলে ব্যর্থ হয়ে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে ঢাকায় রাজধানী করার সিদ্ধান্ত নেন। সম্রাট জাহাঙ্গীর ঢাকায় ১৬০৮ সালে বাংলার রাজধানীর পত্তন করেন। বাংলার প্রথম সুবাদার নিযুক্ত হয়ে ইসলাম খাঁ ১৬১০ সালে ঢাকায় পদার্পণ করেন। তখন থেকে ঢাকা ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয় এবং নগর হিসেবে গড়ে ওঠে। এ সময় বিশ্বের বিভিন্ন জাতির লোকেরা ঢাকায় আসা শুরু করে। পর্তুগিজ, আর্মেনীয়, ডাচ্, ব্রিটিশ, ফরাসি, গ্রিক, চীনা, শিখসহ বহু জাতি ও সম্প্রদায় ঢাকায় এসে বসতি গড়ে তোলে এবং ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করে। ঢাকা এ সময় সত্যিকারের একটি কসমোপলিটন নগরে পরিণত হয়।
এর আগে আর্মেনীয়রা পশ্চিমবঙ্গের পাটনা, মুর্শিদাবাদ, হুগলি, কাশিমবাজার ও কলকাতায় বসতি গড়ে তোলে। এ সময় তারা ঢাকায় এসে ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করে। অল্পদিনের মধ্যেই তারা ব্যবসায় প্রভূত উন্নতি করে। আর্মেনীয়রা মসলিন শাড়ি, পাট, মসলা ইত্যাদি এ দেশ থেকে ইউরোপ ও মধ্য এশিয়ায় রপ্তানি করত। বিদেশ থেকে তারা পাথর ও রাসায়নিক সামগ্রী আমদানি করত। আর্মেনীয়দের বৈশিষ্ট্য হলো, তারা যে দেশেই থাকে, একই এলাকায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে বসবাস করতে ভালোবাসে এবং নিজস্ব স্থাপত্যরীতিতে ঘরবাড়ি ও গির্জা গড়ে তোলে। ঢাকায় আর্মেনীয়দের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে তারা আরমানিটোলায় বসতি স্থাপন ও গির্জা নির্মাণ করে।
প্রথম দিকে আরমানিটোলায় একটি ক্ষুদ্র গির্জায় স্থানীয় আর্মেনীয়রা প্রার্থনা করত এবং তাদের কারও মৃত্যু হলে তেজগাঁও রোমান ক্যাথলিক গির্জার পাশে মরদেহ সমাহিত করত। ১৭৮১ সালে একজন বিত্তবান আর্মেনীয় নিকোলাস পোগজ বেশ কয়েক বিঘা জমি পত্তন নিয়ে ওই ক্ষুদ্র গির্জার স্থলে একটি বিশাল গির্জা নির্মাণ করেন। তিনি গির্জাটির নামকরণ করেন চার্চ অব দ্য রিজারেকশন। ঢাকার ঐতিহ্যবাহী পোগোজ স্কুলের প্রতিষ্ঠাতাও ওই নিকোলাস পোগোজ। গির্জাটি নির্মিত হওয়ায় ঢাকার আর্মেনীয়দের উপাসনা ও কবরস্থানের সমস্যার সমাধান হয়।
ঢাকায় আর্মেনীয়দের এই গির্জাটি স্থাপত্য হিসেবেও অনন্য। চারদিকে উঁচু প্রাচীরবেষ্টিত গির্জাটির প্রবেশপথ বিশাল ও জমকালো। গির্জাটির অবস্থানও বিচিত্র। এর পেছনের দিকটি পূর্ব দিকে এবং সামনের দিকটি পশ্চিম দিকে অবস্থিত। মূল গির্জাটি গ্রিক স্থাপত্যরীতি অনুসরণে নির্মিত। এর মিনারটি চার স্তরবিশিষ্ট এবং বৈশিষ্ট্যময়। গির্জার শীর্ষে ক্রস চিহ্ন রয়েছে। গির্জার ভেতর উপাসনাকারীদের বসার চমত্কার ব্যবস্থা আছে এবং একসঙ্গে শতাধিক নর-নারী বসে প্রার্থনা করতে পারে। গির্জার সঙ্গে একটি দৃষ্টিনন্দন এপিটাফ আছে। গির্জার আশপাশে আছে অসংখ্য কবর। গির্জার পশ্চিম প্রান্তে ওয়ার্ডেন এবং কাস্টোডিয়ানের বাসগৃহ রয়েছে। বর্তমান ওয়ার্ডেন মার্টিন এখানে বাস করেন। তিনিই বর্তমানে ঢাকায় বসবাসরত একমাত্র আর্মেনীয়।
ভারতবর্ষে ইংরেজ শাসনের গোড়ার দিকে ঢাকায় আর্মেনীয়দের প্রভাব-প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পেলেও বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে তা দিন দিন কমতে থাকে। এবং ধীরে ধীরে তারা একটি প্রভাবহীন সম্প্রদায়ে পরিণত হয়। এই গির্জাটি ঢাকায় আর্মেনীয়দের একসময়ের সরব উপস্থিতির সাক্ষ্য বহন করছে। স্থাপত্যিক সৌন্দর্যেও গির্জাটি অনন্য। তাই দেশ-বিদেশের অসংখ্য পর্যটক প্রতিদিন নান্দনিক এই গির্জাটি দেখতে আসে।
সম্রাট আকবর পূর্ববঙ্গের অন্যতম ভূঁইয়া ঈশা খাঁকে পরাজিত করে সোনারগাঁ দখলে ব্যর্থ হয়ে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে ঢাকায় রাজধানী করার সিদ্ধান্ত নেন। সম্রাট জাহাঙ্গীর ঢাকায় ১৬০৮ সালে বাংলার রাজধানীর পত্তন করেন। বাংলার প্রথম সুবাদার নিযুক্ত হয়ে ইসলাম খাঁ ১৬১০ সালে ঢাকায় পদার্পণ করেন। তখন থেকে ঢাকা ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয় এবং নগর হিসেবে গড়ে ওঠে। এ সময় বিশ্বের বিভিন্ন জাতির লোকেরা ঢাকায় আসা শুরু করে। পর্তুগিজ, আর্মেনীয়, ডাচ্, ব্রিটিশ, ফরাসি, গ্রিক, চীনা, শিখসহ বহু জাতি ও সম্প্রদায় ঢাকায় এসে বসতি গড়ে তোলে এবং ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করে। ঢাকা এ সময় সত্যিকারের একটি কসমোপলিটন নগরে পরিণত হয়।
এর আগে আর্মেনীয়রা পশ্চিমবঙ্গের পাটনা, মুর্শিদাবাদ, হুগলি, কাশিমবাজার ও কলকাতায় বসতি গড়ে তোলে। এ সময় তারা ঢাকায় এসে ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করে। অল্পদিনের মধ্যেই তারা ব্যবসায় প্রভূত উন্নতি করে। আর্মেনীয়রা মসলিন শাড়ি, পাট, মসলা ইত্যাদি এ দেশ থেকে ইউরোপ ও মধ্য এশিয়ায় রপ্তানি করত। বিদেশ থেকে তারা পাথর ও রাসায়নিক সামগ্রী আমদানি করত। আর্মেনীয়দের বৈশিষ্ট্য হলো, তারা যে দেশেই থাকে, একই এলাকায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে বসবাস করতে ভালোবাসে এবং নিজস্ব স্থাপত্যরীতিতে ঘরবাড়ি ও গির্জা গড়ে তোলে। ঢাকায় আর্মেনীয়দের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে তারা আরমানিটোলায় বসতি স্থাপন ও গির্জা নির্মাণ করে।
প্রথম দিকে আরমানিটোলায় একটি ক্ষুদ্র গির্জায় স্থানীয় আর্মেনীয়রা প্রার্থনা করত এবং তাদের কারও মৃত্যু হলে তেজগাঁও রোমান ক্যাথলিক গির্জার পাশে মরদেহ সমাহিত করত। ১৭৮১ সালে একজন বিত্তবান আর্মেনীয় নিকোলাস পোগজ বেশ কয়েক বিঘা জমি পত্তন নিয়ে ওই ক্ষুদ্র গির্জার স্থলে একটি বিশাল গির্জা নির্মাণ করেন। তিনি গির্জাটির নামকরণ করেন চার্চ অব দ্য রিজারেকশন। ঢাকার ঐতিহ্যবাহী পোগোজ স্কুলের প্রতিষ্ঠাতাও ওই নিকোলাস পোগোজ। গির্জাটি নির্মিত হওয়ায় ঢাকার আর্মেনীয়দের উপাসনা ও কবরস্থানের সমস্যার সমাধান হয়।
ঢাকায় আর্মেনীয়দের এই গির্জাটি স্থাপত্য হিসেবেও অনন্য। চারদিকে উঁচু প্রাচীরবেষ্টিত গির্জাটির প্রবেশপথ বিশাল ও জমকালো। গির্জাটির অবস্থানও বিচিত্র। এর পেছনের দিকটি পূর্ব দিকে এবং সামনের দিকটি পশ্চিম দিকে অবস্থিত। মূল গির্জাটি গ্রিক স্থাপত্যরীতি অনুসরণে নির্মিত। এর মিনারটি চার স্তরবিশিষ্ট এবং বৈশিষ্ট্যময়। গির্জার শীর্ষে ক্রস চিহ্ন রয়েছে। গির্জার ভেতর উপাসনাকারীদের বসার চমত্কার ব্যবস্থা আছে এবং একসঙ্গে শতাধিক নর-নারী বসে প্রার্থনা করতে পারে। গির্জার সঙ্গে একটি দৃষ্টিনন্দন এপিটাফ আছে। গির্জার আশপাশে আছে অসংখ্য কবর। গির্জার পশ্চিম প্রান্তে ওয়ার্ডেন এবং কাস্টোডিয়ানের বাসগৃহ রয়েছে। বর্তমান ওয়ার্ডেন মার্টিন এখানে বাস করেন। তিনিই বর্তমানে ঢাকায় বসবাসরত একমাত্র আর্মেনীয়।
ভারতবর্ষে ইংরেজ শাসনের গোড়ার দিকে ঢাকায় আর্মেনীয়দের প্রভাব-প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পেলেও বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে তা দিন দিন কমতে থাকে। এবং ধীরে ধীরে তারা একটি প্রভাবহীন সম্প্রদায়ে পরিণত হয়। এই গির্জাটি ঢাকায় আর্মেনীয়দের একসময়ের সরব উপস্থিতির সাক্ষ্য বহন করছে। স্থাপত্যিক সৌন্দর্যেও গির্জাটি অনন্য। তাই দেশ-বিদেশের অসংখ্য পর্যটক প্রতিদিন নান্দনিক এই গির্জাটি দেখতে আসে।
No comments