বিশেষ সাক্ষাত্কার-করের ক্ষেত্রে সমতা আনা জরুরি by আহসান এইচ মনসুর
আহসান এইচ মনসুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে অনার্স, কানাডার ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স এবং ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন ওন্টেরিও থেকে পিইএচডি ডিগ্রি (১৯৮২) লাভ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।
দীর্ঘ কর্মজীবনে আহসান মনসুর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে, বাংলাদেশ সরকারের রাজস্ব-নীতিতে উপদেষ্টা হিসেবে (১৯৮৯-৯১) এবং গাল্ফ কো-অপারেশন কাউন্সিলে কাজ করেছেন। বর্তমানে তিনি ঢাকায় পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক। তাঁর অনেক আন্তর্জাতিক প্রকাশনা রয়েছে।
সাক্ষাত্কার নিয়েছেন আসজাদুল কিবরিয়া
প্রথম আলো অর্থমন্ত্রী ২০১০-১১ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট দিয়েছেন। কোন প্রেক্ষাপটে তিনি এই বাজেটটি দিয়েছেন বলে আপনি মনে করেন?
আহসান এইচ মনসুর গত বছরের জুন মাসে অর্থমন্ত্রী যখন চলতি ২০০৯-১০ অর্থবছরের জন্য বাজেট দেন, তখন তিনি সম্প্রসারণমুখী নীতি অনুসরণ করেছিলেন, প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর দিকে মনোযোগী হয়েছিলেন। রাজনৈতিক বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের তাগিদ থেকে উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রাও নির্ধারণ করতে হয়েছিল তাঁকে। অর্থবছর যখন শেষ হচ্ছে, তখন আমরা দেখছি সামষ্টিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে অর্জন হতাশাজনক নয়। রাজস্ব আদায় বেশ ভালো হয়েছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়ন লক্ষ্যমাত্রার থেকে দূরে থাকলেও আগের বারের তুলনায় বাস্তবায়নের হার অনেক ভালো বলতে হবে। বিশেষ করে লক্ষ্যমাত্রা যখন অনেক উঁচু। বাস্তবায়নের গুণগত দিকটি অবশ্য এখানে বাদ রাখছি। কারণ, গুণগত মূল্যায়নের মাপকাঠি অস্পষ্ট। তার মানে এই নয় যে সরকারকে আমরা গুণগত মানের দিকে নজর দিতে বলব না। ভবিষ্যতে গুণগত মূল্যায়নের দিকেও বিশেষ জোর দিতে হবে। মোট দেশজ উত্পাদনের প্রবৃদ্ধি ২০০৯-১০ অর্থবছরে ৬ শতাংশ হবে বলে অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় উল্লেখ করেছেন। সেটি হয়তো হবে না। তবে তাঁর উচিত ছিল, পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রাথমিক হিসাবটি উল্লেখ করা, যেখানে প্রবৃদ্ধির হার সাড়ে ৫ শতাংশ বলা হয়েছে। অর্থনীতির এই বাস্তবতার ওপর দাঁড়িয়ে তাঁকে আগামী অর্থবছরের জন্য বাজেট করতে হয়েছে।
প্রথম আলো তাহলে নতুন বাজেটকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করতে চান?
আহসান মনসুর এটি আগের বাজেটের উল্লেখযোগ্য সম্প্রসারণ বলতে পারি। এবং অবশ্যই উচ্চাভিলাষী। যেহেতু ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার অধীনে এটা প্রথম বাজেট এবং এই পরিকল্পনার লক্ষ্যমাত্রাও যেহেতু যথেষ্ট উচ্চাভিলাষী, তাই বাজেটকেও উচ্চাভিলাষী হতে হয়েছে। আর উচ্চাভিলাষী হওয়া সব সময় ক্ষতিকর নয় যদি সম্পদের সদ্ব্যবহার করা যায়। এখানে মনে রাখতে হবে, পরিকল্পনার শেষ বছরে গিয়ে সরকার ৮ শতাংশ হারে জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে চায়। তাই আগামী বছরের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৭০ শতাংশ। এ জন্য কিন্তু প্রচুর বিনিয়োগ দরকার। অথচ আমাদের মোট দেশজ বিনিয়োগের হার জিডিপির ২৪ শতাংশে আটকে আছে কয়েক বছর ধরে। বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য ব্যাপক কর্মযজ্ঞও প্রয়োজন। সেদিক থেকেও উচ্চাভিলাষী বাজেট করতে হয়েছে।
প্রথম আলো বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতের বড় ভূমিকা আছে। কিন্তু জ্বালানিসংকটে বেসরকারি বিনিয়োগে এক ধরনের স্থবিরতা চলে এসেছে। বাজেটে এই সংকট মোকাবিলায় যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তার সুফল কতটা পাওয়া যেতে পারে?
আহসান মনসুর বাজেটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বরাদ্দ বাড়ানোটা ঠিক আছে। একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ হলো, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম নির্ধারণের বিষয়টি। এখানে সরকার কতটুকু কী করতে পারবে তা দেখার বিষয়। সরকারি পরিকল্পনা মোতাবেক জ্বালানি ও বিদ্যুতে কয়েক বছর পরে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি গুণতে হবে, যা বিরাট অঙ্ক। স্বল্পমূল্যের জন্যই ভর্তুকি ও চাহিদা বাড়ছে বাড়ছে, যা কোনোভাবেই টেকসই নয়। আবার ভাড়াভিত্তিক (রেন্টাল) বিদ্যুৎ উত্পাদন কেন্দ্রে অনেক জোর দেওয়া হচ্ছে। অথচ এটা সাময়িক সমাধান। সরকারকে গত এক বছরে দীর্ঘমেয়াদি বিদ্যুৎ উত্পাদন প্রকল্পের দিকে আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত ছিল। এখন আর শুধু গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উত্পাদনে নির্ভর করার উপায় নেই। সঙ্গতকারণেই বিকল্প বিভিন্ন উেসর দিকেও মনোযোগ দিতে হচ্ছে। তবে কয়লানীতি দ্রুত চূড়ান্ত ও বাস্তবায়ন করা দরকার। এলএনজির জন্য যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেটাও প্রয়োজনীয়।
প্রথম আলো সরকার গত বছরই সরকারি-বেসরকারি অংশীদারির (পিপিপি) কার্যক্রম শুরু করতে চেয়েছিল। কিন্তু পারেনি। তার পরও এবার বাজেটে তিন হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এতে কি বেসরকারি খাত সাড়া দেবে?
আহসান মনসুর পিপিপি বাস্তবায়ন না হওয়ার জন্য আন্তমন্ত্রণালয়-দ্বন্দ্বই দায়ী। সরকারের একাধিক মন্ত্রণালয় ও সংস্থার মধ্যে টানাটানিতে শেষ পর্যন্ত পিপিপির নীতিমালাটি এখনো আলোর মুখ দেখেনি। তবে এটি এখন প্রায় চূড়ান্ত। পিপিপির কর্মকাঠামো ও নির্দেশনা যুক্তিসংগতভাবেই প্রণীত হয়েছে। এখন প্রয়োজন সঠিক বাস্তবায়ন। সরকারকেও আর ভুল করা চলবে না। সরকার ঠিকমতো অগ্রসর হলে বেসরকারি খাত সাড়া দেবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
প্রথম আলো বাজেটে কর প্রশাসন আধুনিকীকরণের পদক্ষেপের বিষয়গুলো কীভাবে দেখছেন?
আহসান মনসুর কর প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনাকে আধুনিকায়ন করার, কম্পিউটারভিত্তিক স্বয়ংক্রিয়করণের কোনো বিকল্প নেই। এবং পুরো কর প্রশাসনকে একটি অভিন্ন প্রশাসনে নিয়ে আসাটাও জরুরি। মূল্য সংযোজন করের (মূসক) জন্য একটি, আয়করের জন্য একটি, কাস্টমসের জন্য আরেকটি—এভাবে বিভাজন করে রাখলে কর আদায়ে যেমন গতি আনা কঠিন হয়, তেমনি নানা সমন্বয়হীনতা দেখা দেয়। তা ছাড় আয়কর, ভ্যাট বা আমদানি শুল্ক যা-ই দেওয়া হোক না কেন, আসলে তো শেষ বিচারে একই করদাতাকে বিভিন্ন কর দিতে হচ্ছে। তাহলে করদাতাকে কেন এত হয়রানি হতে হবে? আবার বাজেটে যে আয়করের স্তরে ও করমুক্ত সীমায় পরিবর্তন আনা হয়নি, সেটা ভালো হয়েছে। নীতিটা এ রকমই হওয়া উচিত যে করমুক্ত আয়সীমাসহ স্তরগুলো অপরিবর্তিত থাকবে আর প্রতিবছর যাঁরা ওই সীমা অতিক্রম করবেন, তাঁরা আয়করের আওতায় চলে আসবেন। তাহলেই করদাতার সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি করদাতাদের মধ্যেও সচেতনতা বাড়াতে হবে, যাতে তাঁরা জানতে পারেন যে তাঁদের অর্থ কোথায় কীভাবে ব্যয় হচ্ছে তা জানা-বোঝার জন্য।
প্রথম আলো কিন্তু নতুনভাবে করারোপ করার কিছু রাজনৈতিক ঝুঁকিও আছে।
আহসান মনসুর ঝুঁকি থাকবেই। তবে সরকারকে তা জাতির বৃহত্তর স্বার্থে এই লক্ষ্যে এগোতে হবে। যেমন, এবারের বাজেটে শেয়ারবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মূলধনি মুনাফার ওপর ১০ শতাংশ হারে করারোপ করা হয়েছে। এটা একটা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। তবে এখানেই থেমে থাকলে চলবে না। ব্যক্তি বিনিয়োগকারীর মূলধনি মুনাফার ওপরও করারোপ করা প্রয়োজন। আশ্চর্যের বিষয় হলো, আমাদের দেশে মূলধনি মুনাফার ওপর কর নেই। এটা চলতে পারে না। শেয়ারবাজারের মতো জমির মূলধনি মুনাফার ওপরও এই করারোপ জরুরি। অর্থমন্ত্রী যে অভিজাত এলাকায় ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে উেস উচ্চহারে করারোপ করেছেন, আমি তাকে স্বাগত জানাই। তবে এই কর ফ্ল্যাট বিক্রেতাদের কাছ থেকে মূলধনি মুনাফা হিসেবে সংগ্রহ করা প্রয়োজন। ক্রেতার কাছ থেকে সংগ্রহ করা মোটেও যুক্তিসংগত হবে না। বস্তুত বাংলাদেশে এখন রিয়েল এস্টেট বা জমিজমার দাম দ্রুত ও অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। এর ফলে আয়বৈষম্যও বেড়ে যাচ্ছে।
প্রথম আলো বিষয়টি একটু ব্যাখ্যা করে বলুন।
আহসান মনসুর চড়া দামে জমি বিক্রি করে কিছু ব্যক্তি লাভবান হচ্ছেন। কিন্তু জমি ও ফ্ল্যাট সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। কয়জন চাকরিজীবী মানুষ তাঁর সারাজীবনের আয় দিয়ে এখন ছোট্ট একখণ্ড জমি বা ফ্ল্যাট কেনার ক্ষমতা রাখেন? বেশির ভাগই রাখেন না। সৎ উপার্জন দিয়ে জমি বা ফ্ল্যাট কেনা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে। গ্রামেও জমির দাম বাড়ছে। অথচ আয়বৈষম্য কমিয়ে আনতে হলে সম্পদের সুষম বণ্টন প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে জমি হলো সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। আর বেশির ভাগ মানুষেরই জমি নেই। তাঁরা হলেন গ্রামের গরিব মানুষ, শহরের মধ্য আয়ের মানুষ। তাঁরা যদি একখণ্ড জমির বা ফ্ল্যাটের মালিক হতে না পারেন, তাহলে তো সব সময়ই তাঁরা অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকবেন। আবার যাঁরা জমির ব্যবসায় পুঁজি খাটিয়ে ব্যবসা করছেন, তাঁরা মূলধনি মুনাফার ওপর কর দিচ্ছেন না। একইভাবে শেয়ারবাজারে মূলধন খাটিয়ে মুনাফা করলে তার ওপরও কর নেই। অথচ চাকরিজীবী মানুষ ১৫ শতাংশ বা ২০ শতাংশ হারে আয়কর দিচ্ছেন। যাঁরা ঘাম ঝরিয়ে উপার্জন করছেন, তাঁদের বেশি কর দিতে হচ্ছে। এটা চরম বৈষম্যমূলক। করের ক্ষেত্রে সমতা আনতে হবে। এর মানে এই নয় যে সবাইকে সমান কর দিতে হবে; বরং যাঁদের বেশি আয় বা সম্পদ আছে, তাঁদের বেশি হারে কর দেওয়া উচিত। তা না হলে বৈষম্য কমবে না। একই কারণে আমরা কিন্তু কিছু কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করায় আপত্তি করেছি। জমি ও শেয়ারের মূলধনি আয়ে এবং সম্পদের ওপর করারোপ করা না গেলে এখানে যে স্ফীতি ঘটছে, তা জাতির সঞ্চয়কে ওই দিকে ধাবিত করবে, যা একসময় অর্থনীতির জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। মূল্যস্ফীতিকে আরও উসকে দিতে পারে। তাতেও ক্ষতি হবে সাধারণ মানুষের। অবাক করার মতো বিষয় হলো, এই যে জমির দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, তাতে কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। কোনো রাজনৈতিক এবং সমাজসচেতন শক্তি এর বিরুদ্ধে বলছে না। পণ্যের মূল্যস্ফীতি একটু বাড়লেই সবাই হইচই করে, অথচ সম্পদের মূল্যস্ফীতিতে আমরা নজর দিচ্ছি না।
প্রথম আলো অর্থমন্ত্রী তো আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতির হার সাড়ে ৬ শতাংশের মধ্যে ধরে রাখতে চান। এটা কতখানি সম্ভব হবে?
আহসান মনসুর মূল্যস্ফীতি ব্যবস্থাপনাও আগামী দিনগুলোয় সরকারে জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে। অর্থমন্ত্রী যখন গত বছর বাজেট দেন, তখন দেশে নিম্নহারে মূল্যস্ফীতি ছিল। বিশেষত, গত এপ্রিল মাসে খাদ্যের মূল্যস্ফীতির হার ৪ শতাংশের নিচে নেমে এসেছিল। আর এ বছর মার্চ মাসে খাদ্যের মূল্যস্ফীতির হার ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। জাতীয় পর্যায়ের গড় মূল্যস্ফীতিও মার্চে প্রায় ৯ শতাংশ। আবার বাজেটে ঘাটতি অর্থায়নের জন্য ব্যাংক থেকে অধিক হারে ঋণ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি বেসরকারি খাতকেও উত্সাহিত করা হবে। সে ক্ষেত্রে তাদের জন্যও ঋণপ্রবাহ বাড়াতে হবে। ফলে মুদ্রা সরবরাহ বেড়ে মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ পড়বে। অন্যদিকে জমির দাম ও শেয়ারবাজার যেভাবে ফুলেফেঁপে উঠছে, তাও কৃত্রিমভাবে সম্পদ সৃষ্টির মাধ্যমে মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ বাড়াচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতি সতর্কভাবে পরিচালনার ওপর মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ নির্ভর করছে। তবে তারও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আর যতক্ষণ না জাতীয় সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানো হচ্ছে, ততক্ষণ মুদ্রানীতি থেকে পুরোপুরি সুফল পাওয়া কঠিন। বাজেটে তো অর্থমন্ত্রীর সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর বিষয়ে সুস্পষ্ট কিছু বলা উচিত ছিল।
প্রথম আলো কৃষি ও সামাজিক খাতে বরাদ্দের বিষয়টি কীভাবে দেখবেন?
আহসান মনসুর বরাদ্দ ঠিকই আছে। তবে কৃষিতে বেশি জরুরি কৃষকের উত্পাদিত পণ্যের সঠিক মূল্য পাওয়া। কৃষিকাজে ভর্তুকি যতই দেওয়া হোক, তা কিন্তু ভালো দাম পাওয়ার যে প্রণোদনা, তার সমকক্ষ নয় কখনোই।
প্রথম আলো বাজেট বাস্তবায়নে সমস্যা কাটিয়ে ওঠার উপায় কী?
আহসান মনসুর এ সমস্যা কাটাতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও প্রশাসনিক বাধা দূর করা দরকার। প্রশাসনের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। বাংলাদেশে প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে একটা বড় সমস্যা হলো, কেউ সহজে কোনো কিছু সংস্কার বা পরিবর্তন মেনে নিতে চায় না; বরং নতুন কিছু করতে বা পরিবর্তনে বাধা তৈরি করে। এ চর্চা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। শুধু সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা দিয়ে এগিয়ে যাওয়া কঠিন হবে। সরকারকেও প্রশাসনের রাজনৈতিকীকরণ থেকে সরে যেতে হবে।
প্রথম আলো বাজেট তো এখনো প্রস্তাব আকারে আছে। এটি চূড়ান্তভাবে অনুমোদনের আগে কী করা যেতে পারে?
আহসান মনসুর বাজেট নিয়ে জাতীয় সংসদে সুস্থ বিতর্ক হওয়া উচিত। সংসদের বাইরেও যেসব আলোচনা-বিতর্ক হচ্ছে, সেগুলো বিবেচনায় নেওয়া উচিত। আলোচনা ও সমালোচনার ভিত্তিতে কিছু প্রয়োজনীয় সংশোধনী চূড়ান্ত বাজেটে সংযুক্ত করা যেতে পারে। তাহলে বাজেটের সঙ্গে সংসদ ও মানুষের সম্পৃক্ততা বাড়বে।
প্রথম আলো আপনাকে ধন্যবাদ।
আহসান মনসুর ধন্যবাদ।
সাক্ষাত্কার নিয়েছেন আসজাদুল কিবরিয়া
প্রথম আলো অর্থমন্ত্রী ২০১০-১১ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট দিয়েছেন। কোন প্রেক্ষাপটে তিনি এই বাজেটটি দিয়েছেন বলে আপনি মনে করেন?
আহসান এইচ মনসুর গত বছরের জুন মাসে অর্থমন্ত্রী যখন চলতি ২০০৯-১০ অর্থবছরের জন্য বাজেট দেন, তখন তিনি সম্প্রসারণমুখী নীতি অনুসরণ করেছিলেন, প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর দিকে মনোযোগী হয়েছিলেন। রাজনৈতিক বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের তাগিদ থেকে উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রাও নির্ধারণ করতে হয়েছিল তাঁকে। অর্থবছর যখন শেষ হচ্ছে, তখন আমরা দেখছি সামষ্টিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে অর্জন হতাশাজনক নয়। রাজস্ব আদায় বেশ ভালো হয়েছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়ন লক্ষ্যমাত্রার থেকে দূরে থাকলেও আগের বারের তুলনায় বাস্তবায়নের হার অনেক ভালো বলতে হবে। বিশেষ করে লক্ষ্যমাত্রা যখন অনেক উঁচু। বাস্তবায়নের গুণগত দিকটি অবশ্য এখানে বাদ রাখছি। কারণ, গুণগত মূল্যায়নের মাপকাঠি অস্পষ্ট। তার মানে এই নয় যে সরকারকে আমরা গুণগত মানের দিকে নজর দিতে বলব না। ভবিষ্যতে গুণগত মূল্যায়নের দিকেও বিশেষ জোর দিতে হবে। মোট দেশজ উত্পাদনের প্রবৃদ্ধি ২০০৯-১০ অর্থবছরে ৬ শতাংশ হবে বলে অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় উল্লেখ করেছেন। সেটি হয়তো হবে না। তবে তাঁর উচিত ছিল, পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রাথমিক হিসাবটি উল্লেখ করা, যেখানে প্রবৃদ্ধির হার সাড়ে ৫ শতাংশ বলা হয়েছে। অর্থনীতির এই বাস্তবতার ওপর দাঁড়িয়ে তাঁকে আগামী অর্থবছরের জন্য বাজেট করতে হয়েছে।
প্রথম আলো তাহলে নতুন বাজেটকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করতে চান?
আহসান মনসুর এটি আগের বাজেটের উল্লেখযোগ্য সম্প্রসারণ বলতে পারি। এবং অবশ্যই উচ্চাভিলাষী। যেহেতু ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার অধীনে এটা প্রথম বাজেট এবং এই পরিকল্পনার লক্ষ্যমাত্রাও যেহেতু যথেষ্ট উচ্চাভিলাষী, তাই বাজেটকেও উচ্চাভিলাষী হতে হয়েছে। আর উচ্চাভিলাষী হওয়া সব সময় ক্ষতিকর নয় যদি সম্পদের সদ্ব্যবহার করা যায়। এখানে মনে রাখতে হবে, পরিকল্পনার শেষ বছরে গিয়ে সরকার ৮ শতাংশ হারে জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে চায়। তাই আগামী বছরের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৭০ শতাংশ। এ জন্য কিন্তু প্রচুর বিনিয়োগ দরকার। অথচ আমাদের মোট দেশজ বিনিয়োগের হার জিডিপির ২৪ শতাংশে আটকে আছে কয়েক বছর ধরে। বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য ব্যাপক কর্মযজ্ঞও প্রয়োজন। সেদিক থেকেও উচ্চাভিলাষী বাজেট করতে হয়েছে।
প্রথম আলো বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতের বড় ভূমিকা আছে। কিন্তু জ্বালানিসংকটে বেসরকারি বিনিয়োগে এক ধরনের স্থবিরতা চলে এসেছে। বাজেটে এই সংকট মোকাবিলায় যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তার সুফল কতটা পাওয়া যেতে পারে?
আহসান মনসুর বাজেটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বরাদ্দ বাড়ানোটা ঠিক আছে। একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ হলো, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম নির্ধারণের বিষয়টি। এখানে সরকার কতটুকু কী করতে পারবে তা দেখার বিষয়। সরকারি পরিকল্পনা মোতাবেক জ্বালানি ও বিদ্যুতে কয়েক বছর পরে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি গুণতে হবে, যা বিরাট অঙ্ক। স্বল্পমূল্যের জন্যই ভর্তুকি ও চাহিদা বাড়ছে বাড়ছে, যা কোনোভাবেই টেকসই নয়। আবার ভাড়াভিত্তিক (রেন্টাল) বিদ্যুৎ উত্পাদন কেন্দ্রে অনেক জোর দেওয়া হচ্ছে। অথচ এটা সাময়িক সমাধান। সরকারকে গত এক বছরে দীর্ঘমেয়াদি বিদ্যুৎ উত্পাদন প্রকল্পের দিকে আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত ছিল। এখন আর শুধু গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উত্পাদনে নির্ভর করার উপায় নেই। সঙ্গতকারণেই বিকল্প বিভিন্ন উেসর দিকেও মনোযোগ দিতে হচ্ছে। তবে কয়লানীতি দ্রুত চূড়ান্ত ও বাস্তবায়ন করা দরকার। এলএনজির জন্য যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেটাও প্রয়োজনীয়।
প্রথম আলো সরকার গত বছরই সরকারি-বেসরকারি অংশীদারির (পিপিপি) কার্যক্রম শুরু করতে চেয়েছিল। কিন্তু পারেনি। তার পরও এবার বাজেটে তিন হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এতে কি বেসরকারি খাত সাড়া দেবে?
আহসান মনসুর পিপিপি বাস্তবায়ন না হওয়ার জন্য আন্তমন্ত্রণালয়-দ্বন্দ্বই দায়ী। সরকারের একাধিক মন্ত্রণালয় ও সংস্থার মধ্যে টানাটানিতে শেষ পর্যন্ত পিপিপির নীতিমালাটি এখনো আলোর মুখ দেখেনি। তবে এটি এখন প্রায় চূড়ান্ত। পিপিপির কর্মকাঠামো ও নির্দেশনা যুক্তিসংগতভাবেই প্রণীত হয়েছে। এখন প্রয়োজন সঠিক বাস্তবায়ন। সরকারকেও আর ভুল করা চলবে না। সরকার ঠিকমতো অগ্রসর হলে বেসরকারি খাত সাড়া দেবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
প্রথম আলো বাজেটে কর প্রশাসন আধুনিকীকরণের পদক্ষেপের বিষয়গুলো কীভাবে দেখছেন?
আহসান মনসুর কর প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনাকে আধুনিকায়ন করার, কম্পিউটারভিত্তিক স্বয়ংক্রিয়করণের কোনো বিকল্প নেই। এবং পুরো কর প্রশাসনকে একটি অভিন্ন প্রশাসনে নিয়ে আসাটাও জরুরি। মূল্য সংযোজন করের (মূসক) জন্য একটি, আয়করের জন্য একটি, কাস্টমসের জন্য আরেকটি—এভাবে বিভাজন করে রাখলে কর আদায়ে যেমন গতি আনা কঠিন হয়, তেমনি নানা সমন্বয়হীনতা দেখা দেয়। তা ছাড় আয়কর, ভ্যাট বা আমদানি শুল্ক যা-ই দেওয়া হোক না কেন, আসলে তো শেষ বিচারে একই করদাতাকে বিভিন্ন কর দিতে হচ্ছে। তাহলে করদাতাকে কেন এত হয়রানি হতে হবে? আবার বাজেটে যে আয়করের স্তরে ও করমুক্ত সীমায় পরিবর্তন আনা হয়নি, সেটা ভালো হয়েছে। নীতিটা এ রকমই হওয়া উচিত যে করমুক্ত আয়সীমাসহ স্তরগুলো অপরিবর্তিত থাকবে আর প্রতিবছর যাঁরা ওই সীমা অতিক্রম করবেন, তাঁরা আয়করের আওতায় চলে আসবেন। তাহলেই করদাতার সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি করদাতাদের মধ্যেও সচেতনতা বাড়াতে হবে, যাতে তাঁরা জানতে পারেন যে তাঁদের অর্থ কোথায় কীভাবে ব্যয় হচ্ছে তা জানা-বোঝার জন্য।
প্রথম আলো কিন্তু নতুনভাবে করারোপ করার কিছু রাজনৈতিক ঝুঁকিও আছে।
আহসান মনসুর ঝুঁকি থাকবেই। তবে সরকারকে তা জাতির বৃহত্তর স্বার্থে এই লক্ষ্যে এগোতে হবে। যেমন, এবারের বাজেটে শেয়ারবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মূলধনি মুনাফার ওপর ১০ শতাংশ হারে করারোপ করা হয়েছে। এটা একটা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। তবে এখানেই থেমে থাকলে চলবে না। ব্যক্তি বিনিয়োগকারীর মূলধনি মুনাফার ওপরও করারোপ করা প্রয়োজন। আশ্চর্যের বিষয় হলো, আমাদের দেশে মূলধনি মুনাফার ওপর কর নেই। এটা চলতে পারে না। শেয়ারবাজারের মতো জমির মূলধনি মুনাফার ওপরও এই করারোপ জরুরি। অর্থমন্ত্রী যে অভিজাত এলাকায় ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে উেস উচ্চহারে করারোপ করেছেন, আমি তাকে স্বাগত জানাই। তবে এই কর ফ্ল্যাট বিক্রেতাদের কাছ থেকে মূলধনি মুনাফা হিসেবে সংগ্রহ করা প্রয়োজন। ক্রেতার কাছ থেকে সংগ্রহ করা মোটেও যুক্তিসংগত হবে না। বস্তুত বাংলাদেশে এখন রিয়েল এস্টেট বা জমিজমার দাম দ্রুত ও অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। এর ফলে আয়বৈষম্যও বেড়ে যাচ্ছে।
প্রথম আলো বিষয়টি একটু ব্যাখ্যা করে বলুন।
আহসান মনসুর চড়া দামে জমি বিক্রি করে কিছু ব্যক্তি লাভবান হচ্ছেন। কিন্তু জমি ও ফ্ল্যাট সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। কয়জন চাকরিজীবী মানুষ তাঁর সারাজীবনের আয় দিয়ে এখন ছোট্ট একখণ্ড জমি বা ফ্ল্যাট কেনার ক্ষমতা রাখেন? বেশির ভাগই রাখেন না। সৎ উপার্জন দিয়ে জমি বা ফ্ল্যাট কেনা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে। গ্রামেও জমির দাম বাড়ছে। অথচ আয়বৈষম্য কমিয়ে আনতে হলে সম্পদের সুষম বণ্টন প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে জমি হলো সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। আর বেশির ভাগ মানুষেরই জমি নেই। তাঁরা হলেন গ্রামের গরিব মানুষ, শহরের মধ্য আয়ের মানুষ। তাঁরা যদি একখণ্ড জমির বা ফ্ল্যাটের মালিক হতে না পারেন, তাহলে তো সব সময়ই তাঁরা অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকবেন। আবার যাঁরা জমির ব্যবসায় পুঁজি খাটিয়ে ব্যবসা করছেন, তাঁরা মূলধনি মুনাফার ওপর কর দিচ্ছেন না। একইভাবে শেয়ারবাজারে মূলধন খাটিয়ে মুনাফা করলে তার ওপরও কর নেই। অথচ চাকরিজীবী মানুষ ১৫ শতাংশ বা ২০ শতাংশ হারে আয়কর দিচ্ছেন। যাঁরা ঘাম ঝরিয়ে উপার্জন করছেন, তাঁদের বেশি কর দিতে হচ্ছে। এটা চরম বৈষম্যমূলক। করের ক্ষেত্রে সমতা আনতে হবে। এর মানে এই নয় যে সবাইকে সমান কর দিতে হবে; বরং যাঁদের বেশি আয় বা সম্পদ আছে, তাঁদের বেশি হারে কর দেওয়া উচিত। তা না হলে বৈষম্য কমবে না। একই কারণে আমরা কিন্তু কিছু কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করায় আপত্তি করেছি। জমি ও শেয়ারের মূলধনি আয়ে এবং সম্পদের ওপর করারোপ করা না গেলে এখানে যে স্ফীতি ঘটছে, তা জাতির সঞ্চয়কে ওই দিকে ধাবিত করবে, যা একসময় অর্থনীতির জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। মূল্যস্ফীতিকে আরও উসকে দিতে পারে। তাতেও ক্ষতি হবে সাধারণ মানুষের। অবাক করার মতো বিষয় হলো, এই যে জমির দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, তাতে কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। কোনো রাজনৈতিক এবং সমাজসচেতন শক্তি এর বিরুদ্ধে বলছে না। পণ্যের মূল্যস্ফীতি একটু বাড়লেই সবাই হইচই করে, অথচ সম্পদের মূল্যস্ফীতিতে আমরা নজর দিচ্ছি না।
প্রথম আলো অর্থমন্ত্রী তো আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতির হার সাড়ে ৬ শতাংশের মধ্যে ধরে রাখতে চান। এটা কতখানি সম্ভব হবে?
আহসান মনসুর মূল্যস্ফীতি ব্যবস্থাপনাও আগামী দিনগুলোয় সরকারে জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে। অর্থমন্ত্রী যখন গত বছর বাজেট দেন, তখন দেশে নিম্নহারে মূল্যস্ফীতি ছিল। বিশেষত, গত এপ্রিল মাসে খাদ্যের মূল্যস্ফীতির হার ৪ শতাংশের নিচে নেমে এসেছিল। আর এ বছর মার্চ মাসে খাদ্যের মূল্যস্ফীতির হার ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। জাতীয় পর্যায়ের গড় মূল্যস্ফীতিও মার্চে প্রায় ৯ শতাংশ। আবার বাজেটে ঘাটতি অর্থায়নের জন্য ব্যাংক থেকে অধিক হারে ঋণ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি বেসরকারি খাতকেও উত্সাহিত করা হবে। সে ক্ষেত্রে তাদের জন্যও ঋণপ্রবাহ বাড়াতে হবে। ফলে মুদ্রা সরবরাহ বেড়ে মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ পড়বে। অন্যদিকে জমির দাম ও শেয়ারবাজার যেভাবে ফুলেফেঁপে উঠছে, তাও কৃত্রিমভাবে সম্পদ সৃষ্টির মাধ্যমে মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ বাড়াচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতি সতর্কভাবে পরিচালনার ওপর মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ নির্ভর করছে। তবে তারও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আর যতক্ষণ না জাতীয় সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানো হচ্ছে, ততক্ষণ মুদ্রানীতি থেকে পুরোপুরি সুফল পাওয়া কঠিন। বাজেটে তো অর্থমন্ত্রীর সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর বিষয়ে সুস্পষ্ট কিছু বলা উচিত ছিল।
প্রথম আলো কৃষি ও সামাজিক খাতে বরাদ্দের বিষয়টি কীভাবে দেখবেন?
আহসান মনসুর বরাদ্দ ঠিকই আছে। তবে কৃষিতে বেশি জরুরি কৃষকের উত্পাদিত পণ্যের সঠিক মূল্য পাওয়া। কৃষিকাজে ভর্তুকি যতই দেওয়া হোক, তা কিন্তু ভালো দাম পাওয়ার যে প্রণোদনা, তার সমকক্ষ নয় কখনোই।
প্রথম আলো বাজেট বাস্তবায়নে সমস্যা কাটিয়ে ওঠার উপায় কী?
আহসান মনসুর এ সমস্যা কাটাতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও প্রশাসনিক বাধা দূর করা দরকার। প্রশাসনের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। বাংলাদেশে প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে একটা বড় সমস্যা হলো, কেউ সহজে কোনো কিছু সংস্কার বা পরিবর্তন মেনে নিতে চায় না; বরং নতুন কিছু করতে বা পরিবর্তনে বাধা তৈরি করে। এ চর্চা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। শুধু সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা দিয়ে এগিয়ে যাওয়া কঠিন হবে। সরকারকেও প্রশাসনের রাজনৈতিকীকরণ থেকে সরে যেতে হবে।
প্রথম আলো বাজেট তো এখনো প্রস্তাব আকারে আছে। এটি চূড়ান্তভাবে অনুমোদনের আগে কী করা যেতে পারে?
আহসান মনসুর বাজেট নিয়ে জাতীয় সংসদে সুস্থ বিতর্ক হওয়া উচিত। সংসদের বাইরেও যেসব আলোচনা-বিতর্ক হচ্ছে, সেগুলো বিবেচনায় নেওয়া উচিত। আলোচনা ও সমালোচনার ভিত্তিতে কিছু প্রয়োজনীয় সংশোধনী চূড়ান্ত বাজেটে সংযুক্ত করা যেতে পারে। তাহলে বাজেটের সঙ্গে সংসদ ও মানুষের সম্পৃক্ততা বাড়বে।
প্রথম আলো আপনাকে ধন্যবাদ।
আহসান মনসুর ধন্যবাদ।
No comments