ভারত-স্বাভাবিক অবস্থা বনাম সংখ্যালঘুর ভয় by কুলদীপ নায়ার
ভারতের সুপ্রিম কোর্ট গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অপকীর্তিগুলো প্রকাশ করতে জোর প্রচেষ্টা চালানোর সময় অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন ও শীর্ষ শিল্পপতিরা কেন মোদির বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, তা আমি বুঝে উঠতে পারছি না। মোদির বিরুদ্ধে ২০০২ সালে তাঁর রাজ্যে দুই হাজারের বেশি মুসলমান হত্যা এবং এর পরিকল্পনা করার অভিযোগ আছে।
সম্প্রতি মিথ্যা এনকাউন্টারে সাহাবুদ্দিন ও তাঁর স্ত্রী হত্যাবিষয়ক মামলা পুনরুজ্জীবিত করার নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট। রাষ্ট্রযন্ত্র কর্তৃক দাঙ্গার সঙ্গে সম্পর্কিত মামলাগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে বন্ধ করে দেওয়া নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট এতটাই আতঙ্কিত যে এটি একটি বিশেষ তদন্ত দল (এসআইটি) গঠন করেছে। এই দল মোদির পক্ষের চক্রান্তকারীদের চাপা দেওয়া জাতিগত শুদ্ধির মামলাগুলো গভীরভাবে পরীক্ষা করবে।
মোদি জানেন, দাঙ্গার সঙ্গে তাঁর রাজ্যের সম্পৃক্ততা সর্বজনবিদিত। তাহলে কেন তিনি এসআইটির সঙ্গে সহযোগিতা করেন না, যে তথ্য চাওয়া হয়েছে তা দিয়ে দেন না? সেই হত্যাযজ্ঞের পরপর মোদির দেওয়া বক্তৃতার একটি অনুলিপি পেতে এসআইটিকে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ কামনা করতে হয়েছে। বক্তৃতাটি তদন্তের জন্য প্রাসঙ্গিক নয়, মোদির আইনজীবীর এই দাবিও অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন সৃষ্টির উদ্দেশ্যে করা। বক্তৃতাটির বিষয়বস্তু দরকারি, কারণ কংগ্রেসদলীয় সাবেক সাংসদ আহসান জাফরির স্ত্রী জাকিয়া জাফরি অভিযোগ করেছেন, তাঁর স্বামীকে গুলবার্গ সোসাইটিতে উচ্ছৃঙ্খল জনতা হত্যা করে। তাঁর অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদ, পুলিশ ও আমলাতন্ত্র ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নাগরিকদের অধিকার রক্ষার সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন না করে এই রাজ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা চলতে দিয়েছেন।
অনুসন্ধানকাজ ঠেকাতে মোদি সব ধরনের চেষ্টা চালাচ্ছেন, দেখাতে চাইছেন কাজকর্ম ঠিকমতো চলছে। এসবের উদ্দেশ্য অনুধাবনযোগ্য। কিন্তু সমাজে যাঁদের স্বচ্ছ মানুষ হিসেবে সুনাম আছে, তাঁরা কেন তাঁর সঙ্গে জড়াবেন? অমিতাভ বচ্চন কেন মোদির সঙ্গে দেখা করতে আহমেদাবাদ গেলেন, তা আমি বুঝে উঠতে পারছি না। আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়, অমিতাভ তাঁর নতুন ছবি পা মুখ্যমন্ত্রীকে দেখাতে গেছেন। কিন্তু শুধু চোখে দেখা সত্যের বাইরেও নিশ্চয়ই অন্য সত্য আছে।
অমিতাভের সফর এমন এক ব্যক্তির বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়িয়েছে, যাঁর হাতে রক্ত লেগে আছে। উদারপন্থী এবং মানবাধিকারকর্মীরা মোদিকে পরিহার করে চলেন, কারণ তাঁর গায়ে সাম্প্রদায়িকতার পোশাক চড়ানো। অমিতাভ এতটা কাঁচা নন যে মোদির অপকীর্তিগুলো তাঁর অজানা। এসব অপরাধ শুধু ভারতে নয়, সারা দুনিয়ায় যে ব্যাপক হইচই ফেলে, তাও তাঁর অজানা নয়। অমিতাভের অসাম্প্রদায়িক চরিত্র সম্পর্কে সন্দেহের অবকাশ নেই। কিন্তু শুধু ছবির খাতিরেই তিনি যদি মোদির সঙ্গে সাক্ষাত্ করে থাকেন, তবে অমিতাভ তাঁর সুনাম নষ্ট করলেন এবং তাঁর এই ভাবমূর্তিই জীবনের বাকি সময় রয়ে যাবে। মোদির নেতৃত্বে গুজরাট রাষ্ট্রযন্ত্র যে হত্যা ঘটিয়েছে, তা অমিতাভ না দেখার ভান করার চেষ্টা করেছেন, অমিতাভের এটা উপলব্ধি করা উচিত।
রতন টাটা ও সুনীল ভারতীসহ শিল্পক্ষেত্রের নেতাদের সম্মিলিত সহায়তার রেশ কাটতে না কাটতেই এল অমিতাভের এই সফর। শিল্পনেতারা আহমেদাবাদে জড়ো হয়েছিলেন তাঁদের মতামত ঘোষণা করার বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে। তাঁরা মনে করেন, মোদির হওয়া উচিত ভারতের প্রধানমন্ত্রী। অর্থবৃদ্ধির মধ্যে সীমাবদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গির এসব শিল্পপতির ভারতের সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। ভারতে বহুত্ববাদ কোনো নীতির বিষয় নয়, এটা ভারতবাসীর বিশ্বাস। শক্তিশালী জাতি হিসেবে ভারতীয়রা নিজেদের তৈরি করতে পারবে না, যদি সংখ্যাগুরুরা যেমন মর্যাদা ও সুযোগ ভোগ করে, তেমন মর্যাদা ও সুযোগ দেশের সংখ্যালঘুদের জন্য নিশ্চিত করা না যায়। সেক্যুলারিজমের প্রতি শিল্পপতিদের আস্থা থাকা উচিত।
শিল্পপতিদের যুক্তি হলো, মোদির রাজ্য সবচেয়ে ভালোভাবে শাসিত। আমি জানি না, গুজরাট কেমন করে এই শ্রেণীতে জায়গা করে নিল। কারণ, মুসলমানেরা এখানে নিরাপদবোধ করে না। দাঙ্গার সময় যে হাজার হাজার মুসলমান লুণ্ঠনের শিকার হয়েছিল, ঘর থেকে উচ্ছেদ হয়েছিল, সরকার এখনো তাদের পুনর্বাসন করেনি। একটি রাজ্যে সংখ্যালঘুরা নিরাপত্তাবোধ না করলে এবং তাদের জন্য কোনো আইনশৃঙ্খলা না থাকলে সে রাজ্য কেমন করে ভালোভাবে শাসিত রাজ্য হিসেবে গণ্য হয়?
আসলে মোদির প্রতি শিল্পপতিদের এই সমর্থনদান তাঁদের অকৃতজ্ঞতার প্রকাশ ঘটায়। কারণ তাঁদের বর্তমানের বাড়বাড়ন্তি সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের অর্থনৈতিক সংস্কারের কারণে। তাঁর বিশ্বায়নের নীতির সুবিধা তাঁরা পেয়েছেন, যদিও মনমোহন কাজের সুবিধার্থে সংবিধানের প্রস্তাবনায় উল্লিখিত ‘সমাজতান্ত্রিক’ শব্দটি ভুলে গেছেন। আমার ধারণা, শিল্পপতিদের জন্য এত ভালো সময় আর আসেনি। আহমেদাবাদে জড়ো হওয়া শিল্পপতিদের অপরিণামদর্শী কাজ শুধু তাঁদের ভাবমূর্তিতে কালিমা লেপন করেনি, মোদির হত্যা-লুণ্ঠনকেও ন্যায্যতা দিয়েছে।
গুজরাট দাঙ্গা তদন্তের দায়িত্বে থাকা নানাবতী কমিশনের ওপর যদি আস্থা রাখা যেত! হত্যাযজ্ঞের বিষয়ে কমিশন এখন পর্যন্ত যা বলেছে তাতে মোদির সম্পৃক্ততার মূল সমস্যাটি স্পর্শ করা হয়নি। বিচারপতি নানাবতী ১৯৮৪ সালের শিখ দাঙ্গা বিষয়ে তাঁর প্রতিবেদনেও অনেক দিক এড়িয়ে যেতে সচেষ্ট ছিলেন; দাঙ্গার উসকানিদাতাদের নাম জানাতে দ্বিধান্বিত ছিলেন। তবে নানাবতী স্বীকার করেছিলেন, শিখ দাঙ্গা পরিকল্পিত ছিল ও রাষ্ট্রযন্ত্রের সহায়তায় দাঙ্গাটি ঘটেছিল।
একমাত্র আশার স্থল সুপ্রিম কোর্ট। এটি বহু মামলা পুনরুজ্জীবিত করেছে। সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণগুলো দৃষ্টি খুলে দেয়। সাম্প্রতিক একটি মামলায় সুপ্রিম কোর্ট বলেছেন, ‘আমরা চোখ বন্ধ করে বসে থেকে রাজ্য পুলিশকে এ মামলা চালিয়ে যেতে দিতে পারি না।’ আরও বলেছেন, গুজরাট পুলিশের অনুসন্ধান ‘পক্ষপাতহীন’ ছিল না। কোনো সরকারের বিরুদ্ধে এটি অতি গুরুতর অভিযোগ। মনে হয়, মোদির আরও অনেক অপকীর্তির কথা গোপন রাখা যাবে না, বেরিয়ে আসবে। তাঁর রাজ্যে স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে, এ কথা প্রতিষ্ঠা করতে চান মোদি। এক অর্থে, স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজও করছে। কিন্তু স্বাভাবিকতার অর্থ তো এই নয় যে ১৫ শতাংশ সংখ্যালঘু আতঙ্কের মধ্যে থাকবে। এ জন্য ভারতের সরকার দায়ী। গুজরাট দাঙ্গায় মোদির সহযোগিতার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে একটি আঙুলও সরকার তোলেনি। বিজেপির সরকার কেন তা করেনি সেটা অনুধাবনযোগ্য, কিন্তু কংগ্রেস কেন করছে না, বোঝা যাচ্ছে না। ভোটের রাজনীতি ভারতের বহুত্ববাদী বৈশিষ্ট্য নষ্ট করেছে।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ: আহসান হাবীব
কুলদীপ নায়ার: ভারতীয় সাংবাদিক।
মোদি জানেন, দাঙ্গার সঙ্গে তাঁর রাজ্যের সম্পৃক্ততা সর্বজনবিদিত। তাহলে কেন তিনি এসআইটির সঙ্গে সহযোগিতা করেন না, যে তথ্য চাওয়া হয়েছে তা দিয়ে দেন না? সেই হত্যাযজ্ঞের পরপর মোদির দেওয়া বক্তৃতার একটি অনুলিপি পেতে এসআইটিকে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ কামনা করতে হয়েছে। বক্তৃতাটি তদন্তের জন্য প্রাসঙ্গিক নয়, মোদির আইনজীবীর এই দাবিও অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন সৃষ্টির উদ্দেশ্যে করা। বক্তৃতাটির বিষয়বস্তু দরকারি, কারণ কংগ্রেসদলীয় সাবেক সাংসদ আহসান জাফরির স্ত্রী জাকিয়া জাফরি অভিযোগ করেছেন, তাঁর স্বামীকে গুলবার্গ সোসাইটিতে উচ্ছৃঙ্খল জনতা হত্যা করে। তাঁর অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদ, পুলিশ ও আমলাতন্ত্র ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নাগরিকদের অধিকার রক্ষার সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন না করে এই রাজ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা চলতে দিয়েছেন।
অনুসন্ধানকাজ ঠেকাতে মোদি সব ধরনের চেষ্টা চালাচ্ছেন, দেখাতে চাইছেন কাজকর্ম ঠিকমতো চলছে। এসবের উদ্দেশ্য অনুধাবনযোগ্য। কিন্তু সমাজে যাঁদের স্বচ্ছ মানুষ হিসেবে সুনাম আছে, তাঁরা কেন তাঁর সঙ্গে জড়াবেন? অমিতাভ বচ্চন কেন মোদির সঙ্গে দেখা করতে আহমেদাবাদ গেলেন, তা আমি বুঝে উঠতে পারছি না। আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়, অমিতাভ তাঁর নতুন ছবি পা মুখ্যমন্ত্রীকে দেখাতে গেছেন। কিন্তু শুধু চোখে দেখা সত্যের বাইরেও নিশ্চয়ই অন্য সত্য আছে।
অমিতাভের সফর এমন এক ব্যক্তির বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়িয়েছে, যাঁর হাতে রক্ত লেগে আছে। উদারপন্থী এবং মানবাধিকারকর্মীরা মোদিকে পরিহার করে চলেন, কারণ তাঁর গায়ে সাম্প্রদায়িকতার পোশাক চড়ানো। অমিতাভ এতটা কাঁচা নন যে মোদির অপকীর্তিগুলো তাঁর অজানা। এসব অপরাধ শুধু ভারতে নয়, সারা দুনিয়ায় যে ব্যাপক হইচই ফেলে, তাও তাঁর অজানা নয়। অমিতাভের অসাম্প্রদায়িক চরিত্র সম্পর্কে সন্দেহের অবকাশ নেই। কিন্তু শুধু ছবির খাতিরেই তিনি যদি মোদির সঙ্গে সাক্ষাত্ করে থাকেন, তবে অমিতাভ তাঁর সুনাম নষ্ট করলেন এবং তাঁর এই ভাবমূর্তিই জীবনের বাকি সময় রয়ে যাবে। মোদির নেতৃত্বে গুজরাট রাষ্ট্রযন্ত্র যে হত্যা ঘটিয়েছে, তা অমিতাভ না দেখার ভান করার চেষ্টা করেছেন, অমিতাভের এটা উপলব্ধি করা উচিত।
রতন টাটা ও সুনীল ভারতীসহ শিল্পক্ষেত্রের নেতাদের সম্মিলিত সহায়তার রেশ কাটতে না কাটতেই এল অমিতাভের এই সফর। শিল্পনেতারা আহমেদাবাদে জড়ো হয়েছিলেন তাঁদের মতামত ঘোষণা করার বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে। তাঁরা মনে করেন, মোদির হওয়া উচিত ভারতের প্রধানমন্ত্রী। অর্থবৃদ্ধির মধ্যে সীমাবদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গির এসব শিল্পপতির ভারতের সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। ভারতে বহুত্ববাদ কোনো নীতির বিষয় নয়, এটা ভারতবাসীর বিশ্বাস। শক্তিশালী জাতি হিসেবে ভারতীয়রা নিজেদের তৈরি করতে পারবে না, যদি সংখ্যাগুরুরা যেমন মর্যাদা ও সুযোগ ভোগ করে, তেমন মর্যাদা ও সুযোগ দেশের সংখ্যালঘুদের জন্য নিশ্চিত করা না যায়। সেক্যুলারিজমের প্রতি শিল্পপতিদের আস্থা থাকা উচিত।
শিল্পপতিদের যুক্তি হলো, মোদির রাজ্য সবচেয়ে ভালোভাবে শাসিত। আমি জানি না, গুজরাট কেমন করে এই শ্রেণীতে জায়গা করে নিল। কারণ, মুসলমানেরা এখানে নিরাপদবোধ করে না। দাঙ্গার সময় যে হাজার হাজার মুসলমান লুণ্ঠনের শিকার হয়েছিল, ঘর থেকে উচ্ছেদ হয়েছিল, সরকার এখনো তাদের পুনর্বাসন করেনি। একটি রাজ্যে সংখ্যালঘুরা নিরাপত্তাবোধ না করলে এবং তাদের জন্য কোনো আইনশৃঙ্খলা না থাকলে সে রাজ্য কেমন করে ভালোভাবে শাসিত রাজ্য হিসেবে গণ্য হয়?
আসলে মোদির প্রতি শিল্পপতিদের এই সমর্থনদান তাঁদের অকৃতজ্ঞতার প্রকাশ ঘটায়। কারণ তাঁদের বর্তমানের বাড়বাড়ন্তি সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের অর্থনৈতিক সংস্কারের কারণে। তাঁর বিশ্বায়নের নীতির সুবিধা তাঁরা পেয়েছেন, যদিও মনমোহন কাজের সুবিধার্থে সংবিধানের প্রস্তাবনায় উল্লিখিত ‘সমাজতান্ত্রিক’ শব্দটি ভুলে গেছেন। আমার ধারণা, শিল্পপতিদের জন্য এত ভালো সময় আর আসেনি। আহমেদাবাদে জড়ো হওয়া শিল্পপতিদের অপরিণামদর্শী কাজ শুধু তাঁদের ভাবমূর্তিতে কালিমা লেপন করেনি, মোদির হত্যা-লুণ্ঠনকেও ন্যায্যতা দিয়েছে।
গুজরাট দাঙ্গা তদন্তের দায়িত্বে থাকা নানাবতী কমিশনের ওপর যদি আস্থা রাখা যেত! হত্যাযজ্ঞের বিষয়ে কমিশন এখন পর্যন্ত যা বলেছে তাতে মোদির সম্পৃক্ততার মূল সমস্যাটি স্পর্শ করা হয়নি। বিচারপতি নানাবতী ১৯৮৪ সালের শিখ দাঙ্গা বিষয়ে তাঁর প্রতিবেদনেও অনেক দিক এড়িয়ে যেতে সচেষ্ট ছিলেন; দাঙ্গার উসকানিদাতাদের নাম জানাতে দ্বিধান্বিত ছিলেন। তবে নানাবতী স্বীকার করেছিলেন, শিখ দাঙ্গা পরিকল্পিত ছিল ও রাষ্ট্রযন্ত্রের সহায়তায় দাঙ্গাটি ঘটেছিল।
একমাত্র আশার স্থল সুপ্রিম কোর্ট। এটি বহু মামলা পুনরুজ্জীবিত করেছে। সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণগুলো দৃষ্টি খুলে দেয়। সাম্প্রতিক একটি মামলায় সুপ্রিম কোর্ট বলেছেন, ‘আমরা চোখ বন্ধ করে বসে থেকে রাজ্য পুলিশকে এ মামলা চালিয়ে যেতে দিতে পারি না।’ আরও বলেছেন, গুজরাট পুলিশের অনুসন্ধান ‘পক্ষপাতহীন’ ছিল না। কোনো সরকারের বিরুদ্ধে এটি অতি গুরুতর অভিযোগ। মনে হয়, মোদির আরও অনেক অপকীর্তির কথা গোপন রাখা যাবে না, বেরিয়ে আসবে। তাঁর রাজ্যে স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে, এ কথা প্রতিষ্ঠা করতে চান মোদি। এক অর্থে, স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজও করছে। কিন্তু স্বাভাবিকতার অর্থ তো এই নয় যে ১৫ শতাংশ সংখ্যালঘু আতঙ্কের মধ্যে থাকবে। এ জন্য ভারতের সরকার দায়ী। গুজরাট দাঙ্গায় মোদির সহযোগিতার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে একটি আঙুলও সরকার তোলেনি। বিজেপির সরকার কেন তা করেনি সেটা অনুধাবনযোগ্য, কিন্তু কংগ্রেস কেন করছে না, বোঝা যাচ্ছে না। ভোটের রাজনীতি ভারতের বহুত্ববাদী বৈশিষ্ট্য নষ্ট করেছে।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ: আহসান হাবীব
কুলদীপ নায়ার: ভারতীয় সাংবাদিক।
No comments