প্রত্যেক নাগরিকের হাতে পরিচয়পত্র পৌঁছাক-জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন

গত বুধবার সংসদে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন বিল-২০১০ পাসের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের নিবন্ধন ও একটি আনুষ্ঠানিক দলিল লাভের প্রক্রিয়া স্থায়িত্ব পেল। জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধনের ভিত্তি হবে ভোটার তালিকা: প্রাপ্তবয়স্ক যেসব নারী ও পুরুষ ভোটার তালিকাভুক্ত, তাঁরাই বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে জাতীয় পরিচয়পত্র পাবেন।


নাগরিকেরা এ পরিচয়পত্র ১৮টি ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারবেন; নির্বাচনের সময় ভোটকেন্দ্রে কোনো ব্যক্তির ভোটার পরিচয় নিশ্চিত করার ক্ষেত্রেও এ পরিচয়পত্র একটি বাড়তি দলিল হিসেবে কাজ করবে।
বাংলাদেশে সব নাগরিকের পাসপোর্ট নেই। শুধু বিদেশভ্রমণের প্রয়োজনে সামর্থ্যবান ব্যক্তিদেরই পাসপোর্ট থাকে। জাতীয় পরিচয়পত্র সরকারিভাবে স্বীকৃত একটি দলিল হিসেবে প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের হাতে থাকবে—এটা যেমন নাগরিকদের জন্য এক বিরাট সুবিধা, তেমনি সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের কাজেও এটা সহায়ক হবে। বিশেষত নাগরিক সেবাপ্রদানকারী সংস্থাগুলোর সেবা পাওয়া ও দেওয়ার ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহূত হবে; অনেক ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই হচ্ছে। অবশ্য এখনো কিছু প্রতিষ্ঠান জাতীয় পরিচয়পত্র গ্রহণ না করে পাসপোর্ট দেখতে চায়। এটা নিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের মধ্যে আস্থার অভাব বা বিভ্রান্তি থেকে থাকতে পারে। এখন জাতীয় পরিচয়পত্র আইন পাস হওয়ার পর আশা করা যায়, এ বিষয়ে আস্থা বাড়বে।
জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনা, পরিচয়পত্র তৈরি, বিতরণ ও রক্ষণাবেক্ষণের সব দায়িত্ব পালন করবে নির্বাচন কমিশন। এটি একটি ভালো সিদ্ধান্ত; যেহেতু ভোটার তালিকার ভিত্তিতেই জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হবে। এবং নির্বাচন কমিশন সরকার-বহির্ভূত একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান; জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি ও বিতরণের ক্ষেত্রে পক্ষপাত বা অনিয়মের কোনো কারণ তাদের তরফে থাকার কথা নয়। প্রক্রিয়াটিকে সঠিক ও স্বচ্ছ করার লক্ষ্যে আইনে যথাযথ সুরক্ষার ব্যবস্থা আছে: মিথ্যা তথ্য দেওয়া, জাল ও একাধিক জাতীয় পরিচয়পত্র বহন করার অপরাধে সর্বোচ্চ সাত বছর কারাদণ্ড এবং অনধিক এক লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান করা হয়েছে। এটা শুধু নাগরিকদের জন্য নয়, নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্যও প্রযোজ্য হবে।
ভোটার তালিকা নিয়মিত হালনাগাদ করার ওপর অনেকাংশে নির্ভর করবে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন কার্যক্রমের সুষ্ঠুতা। আমরা আশা করি, নির্বাচন কমিশন একটি চলমান প্রক্রিয়া হিসেবে এ কাজ দক্ষতার সঙ্গে চালিয়ে যাবে। বেসরকারি পর্যায়ে জাতীয় পরিচয়পত্রের স্বীকৃতি ও আস্থা বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশনাও প্রচার করা যেতে পারে। এই দলিলের সেবামূলক ভূমিকাই শুধু গুরুত্বপূর্ণ নয়; নাগরিকদের আচরণে দায়িত্বশীলতা, জবাবদিহিতা, অপরাধপ্রবণতা হ্রাস ও দমনের ক্ষেত্রেও এটি সহায়ক হবে। প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের হাতে যেন জাতীয় পরিচয়পত্র পৌঁছে, সে লক্ষ্যে তত্পর হওয়া প্রয়োজন।

No comments

Powered by Blogger.