স্মরণ-‘ধীরে বোলাও গাড়ি রে গাড়িয়াল’ by এম আর আলম
ধীরে বোলাও গাড়ি রে গাড়িয়াল
আস্তে বোলাও গাড়ি,
আর এক নজর দেখিয়া নেঁও মুঁই
আস্তে বোলাও গাড়ি,
আর এক নজর দেখিয়া নেঁও মুঁই
দয়াল বাপের বাড়িরে গাড়িয়াল
দয়াল বাপের বাড়ি...
কিশোরী বধূর এই করুণ আকুতি সেকাল থেকে একালেও উত্তরবঙ্গের ভাওয়াইয়া-পাগল মানুষের কাছে এক পরিচিত সুর। কিন্তু অনেকের জানা নেই এ সুর, এ বাণী কার? আবার যদিও বা কেউ কেউ জানেন এটি মহেশ চন্দ্র রায়ের গান, পুরো গানটি শুনলে দেখা যায় লেখকের মূল গানের কথার সঙ্গে গায়কের কথার কোথাও কোথাও অসংগতি। মহেশ রায়ের পরিবার-পরিজন এবং তাঁর গানের ভক্তদের কাছে জানা যায়, শিল্পীর জীবিত অবস্থায়ই তাঁর গান কেউ কেউ গেয়েছেন প্রচলিত লোকগীতি কিংবা অন্য কোনো গীতিকারের নামে। তবে আশার কথা মহেশ চন্দ্র রায় শেষ পর্যন্ত প্রমাণ করেছিলেন এটি তাঁর লেখা গান। রাজশাহী ও রংপুর বেতারসহ অনেক অনুষ্ঠানে তিনি গেয়েছেন বহুবার। লেখার শুরুতেই এ তথ্য দেওয়ার পেছনের কথা হলো, শিল্পীর অনেক গানই আজও গাওয়া হয় প্রচলিত লোকগীতি হিসেবে। আশার কথা যে এখন আর এ বিষয়ে অস্পষ্টতা নেই। ভাওয়াইয়া গবেষক জেসমিন বুলি মহেশ রায়ের মূল পাণ্ডুলিপি সংগ্রহ করেছেন এবং সেখান থেকে তারই সম্পাদনায় বাংলা একাডেমী ‘মহেশ চন্দ্র রায়ের গান’ শিরোনামে ১৭০টি গানের সংকলন প্রকাশ করেছে। তবে কথিত আছে যে মহেশচন্দ্র রায়ের লিখিত গানের সংখ্যা এক হাজারের মতো। কিন্তু গবেষকের তথ্য অনুযায়ী সংগ্রহ করা গেছে মাত্র ২০০ গান। এখনো লোকচক্ষুর অন্তরালে রয়ে গেছে অসংখ্য গান।
কী আছে এই মহেশ চন্দ্র রায়ের গানে ও সুরে? এর জবাব একটাই, মহেশ চন্দ্র রায় তাঁর কথা ও সুরে ধারণ করেছেন উত্তরবঙ্গের গানপাগল কর্মমুখর মানুষের জীবনের আনন্দ-বেদনার ইতিহাস; কানিছাত গারুনু আকাশি আকালী, টুলটুলিরে টুলটুলি দিনাও বেড়াইস চুলখুলি, কোঁড়ক কোঁড়ত কড়কা বাজে, ও তুই যাগে নানী থুইয়া আয় এলায়, দয়াল তুই আরিনে মোর নিদানে, বিয়াও বিয়াও করিস না মন—গানগুলো তাই উত্তরবঙ্গের গানপাগল মানুষের প্রাণের গান। এ গানগুলো রেডিও বেতারে প্রচার ও বিভিন্ন শিল্পীর কণ্ঠ ছাপিয়ে পৌঁছে গেছে সাধারণ মানুষের কাছে। আজকের আকাশ সংস্কৃতির যুগে একদিকে যখন সহজ হয়েছে শুদ্ধ কথা ও সুর রক্ষণ, অন্যদিকে শহুরে মেকি সংস্কৃতির দাপটে হারিয়ে যাচ্ছে এসব মাটির গান। এ অবস্থায় পরিবর্তন ঘটাতে পারে গবেষক, শিল্পীর সংগঠকের উত্স অনুসন্ধানী প্রয়াস। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে মহেশ চন্দ্র রায়ের অপ্রকাশিত গান সংগ্রহ, পূর্ণাঙ্গ জীবনী গ্রন্থ প্রকাশ এবং প্রচলিত গানগুলোর সুর সংরক্ষণের। এখন অপেক্ষার পালা কবে ফিরে পাবে উত্তরবঙ্গ তথা বাংলাদেশের ভাওয়াইয়া প্রেমিকেরা মহেশ চন্দ্র রায়ের সেই প্রাণমাতানো গান।
ফিরে দেখা: মহেশচন্দ্র রায়ের জন্ম ১৩২৫ সালের ১৯ মাঘ তপশিল শ্রেণীভুক্ত রাজবংশী ক্ষত্রিয় বংশে। তাঁর গ্রাম পুটিমারী (তত্কালীন রংপুর), বর্তমানে নীলফামারী জেলার কিশোরীগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। বাবা স্বর্গীয় বাবুরাম রায়, মাতা স্বর্গীয়া বিমলা রানী।
বাল্যজীবন ও শিক্ষা: জন্মের পাঁচ বছর পরেই মহেশ রায়ের মা মারা যান। পিতার আদরে লালিত-পালিত শিশু মহেশকে বাবা গ্রাম্য পাঠশালায় ভর্তি করান। তিন বছরের মাথায় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে কিশোরীগঞ্জ ইংরেজি স্কুলে ভর্তি হন। ১১-১২ বছর বয়সেই তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সমাপ্তি ঘটে।
সংগীত শিক্ষা: শিক্ষাজীবন শেষ করে যোগ দেন গ্রাম্য যাত্রা সংকীর্তন প্রভৃতির দলে। জনপ্রিয়ও হয়ে ওঠেন অল্প দিনেই। এ সময় বাবা ছেলের ভবিষ্যত্ উন্নতির জন্য নীলফামারীর প্রবীণ উকিল স্বর্গীয় সুরথ কুমার ঘোষের তত্ত্বাবধানে রেখে আসেন শহরে। এই শহরে ঘটনাক্রমে পরিচয় ঘটে ভারতবর্ষ অবতার পত্রিকার লেখক অধ্যাপক তারা প্রসন্ন মুখার্জি ও লেখক বলাই দেব শর্ম্মার সঙ্গে। তাঁদের নির্দেশেই পরবর্তীকালে তিনি সংগ্রহ করতে শুরু করেন প্রাচীন পুুঁথি। কণ্ঠে ধারণ করতে থাকেন এই গানের অনেকগুলোই।
পেশাগত ও দাম্পত্য জীবন: নীলফামারী শহরে তাঁর পালনকারী সুরথ কুমার ঘোষের মৃত্যুর পর মহেশচন্দ্র ছেড়ে দেন শহরবাস। এর মধ্যেই গান গাওয়ার সুবাদে তিনি শিক্ষকতার সুযোগ পান শহর থেকে দূরে জয়চণ্ডী পুটীহারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ১৩৪৪ থেকে ১৩৪৬ সন পর্যন্ত শিক্ষকতা করেন তিনি এ বিদ্যালয়ে। আর সে সময়ই সংগলসী ইউনিয়নের দীঘলডাঙ্গী গ্রামের গগনচন্দ্র রায়ের কন্যা বীণাপাণি রায়ের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন এবং স্থায়ীভাবে থেকে যান শ্বশুরালয়েই। কিন্তু বেশিদিন টেকেনি তাঁর স্থায়ী দাম্পত্য জীবন। স্ত্রী বীণাপাণি মৃত্যুবরণ করেন ১৩৪৯ সনে দুটি সন্তান রেখে। ১৩৫০ সনে তিনি বিয়ে করেন কামিনী বালা রায়কে। কয়েক বছর পর চারটি সন্তান রেখে দ্বিতীয় স্ত্রীরও বিয়োগ ঘটে। দীর্ঘদিন ধরে মাতৃহীন সন্তানদের প্রতিষ্ঠিত করার পর শেষ বয়সে সরলা বালা নামক একজন বিধবাকে স্ত্রীরূপে গ্রহণ করেছিলেন।
কর্মজীবন ও সাহিত্য সাধনা: মহেশচন্দ্র রায় তাঁর দীর্ঘ জীবনে যে গানগুলো সৃষ্টি করেছেন, ধারণ করেছেন, সেগুলোর যথাযথ সংরক্ষণের চেষ্টাও চালিয়েছেন নিরন্তর। তাঁর লেখা ও সুর করা গানগুলো গেয়েছেন বাংলাদেশের ভাওয়াইয়া গানের প্রধান শিল্পী মুস্তাফা জামান আব্বাসী, শরিফা রানী, নাদিরা বেগম, রথীন্দ্রনাথ রায়সহ আরও অনেকে। দীর্ঘ লেখক-জীবনে সান্নিধ্যে এসেছেন অনেক গুণী ব্যক্তির। তত্কালীন প্রাক্তন কৃষিমন্ত্রী খয়রাত হোসেন, অধ্যাপক ইউসুফ আলী (প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী), বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক এমাজ উদ্দীন আহমদ, মশিউর রহমান যাদুমিয়া (প্রাক্তন সিনিয়র মন্ত্রী), কবি বন্দে আলী মিয়াসহ অনেক স্বনামধন্য ব্যক্তিত্বের; কিন্তু তার পরও মহেশ রায় কেন থাকলেন এত অবহেলিত। মৃত্যুর কয়েক বছরের মধ্যেই কীভাবে নিশ্চিহ্ন হতে চলেছিল তাঁর সৃষ্টিসম্ভার?
উল্লেখ্য যে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন তিনি অবস্থান করছিলেন ভারতের বন্ধুনগর শরণার্থী শিবিরে। সেখানে বসেই রচনা করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধে যোদ্ধাদের অনুপ্রেরণার জন্য কিছু মুক্তির গান। সেগুলো প্রকাশিত হয়েছিল ভারতের রক্তলাল পত্রিকায় মুক্তিযুদ্ধের সময়ই।
আজ ২৯ জানুয়ারি মহেশচন্দ্র রায়ের ১৭তম মৃত্যুদিবস। এ দিবসে মহেশচন্দ্র রায় আবার ফিরবেন তাঁর সৃষ্টির মধ্য দিয়ে এমন প্রত্যাশা।
দয়াল বাপের বাড়ি...
কিশোরী বধূর এই করুণ আকুতি সেকাল থেকে একালেও উত্তরবঙ্গের ভাওয়াইয়া-পাগল মানুষের কাছে এক পরিচিত সুর। কিন্তু অনেকের জানা নেই এ সুর, এ বাণী কার? আবার যদিও বা কেউ কেউ জানেন এটি মহেশ চন্দ্র রায়ের গান, পুরো গানটি শুনলে দেখা যায় লেখকের মূল গানের কথার সঙ্গে গায়কের কথার কোথাও কোথাও অসংগতি। মহেশ রায়ের পরিবার-পরিজন এবং তাঁর গানের ভক্তদের কাছে জানা যায়, শিল্পীর জীবিত অবস্থায়ই তাঁর গান কেউ কেউ গেয়েছেন প্রচলিত লোকগীতি কিংবা অন্য কোনো গীতিকারের নামে। তবে আশার কথা মহেশ চন্দ্র রায় শেষ পর্যন্ত প্রমাণ করেছিলেন এটি তাঁর লেখা গান। রাজশাহী ও রংপুর বেতারসহ অনেক অনুষ্ঠানে তিনি গেয়েছেন বহুবার। লেখার শুরুতেই এ তথ্য দেওয়ার পেছনের কথা হলো, শিল্পীর অনেক গানই আজও গাওয়া হয় প্রচলিত লোকগীতি হিসেবে। আশার কথা যে এখন আর এ বিষয়ে অস্পষ্টতা নেই। ভাওয়াইয়া গবেষক জেসমিন বুলি মহেশ রায়ের মূল পাণ্ডুলিপি সংগ্রহ করেছেন এবং সেখান থেকে তারই সম্পাদনায় বাংলা একাডেমী ‘মহেশ চন্দ্র রায়ের গান’ শিরোনামে ১৭০টি গানের সংকলন প্রকাশ করেছে। তবে কথিত আছে যে মহেশচন্দ্র রায়ের লিখিত গানের সংখ্যা এক হাজারের মতো। কিন্তু গবেষকের তথ্য অনুযায়ী সংগ্রহ করা গেছে মাত্র ২০০ গান। এখনো লোকচক্ষুর অন্তরালে রয়ে গেছে অসংখ্য গান।
কী আছে এই মহেশ চন্দ্র রায়ের গানে ও সুরে? এর জবাব একটাই, মহেশ চন্দ্র রায় তাঁর কথা ও সুরে ধারণ করেছেন উত্তরবঙ্গের গানপাগল কর্মমুখর মানুষের জীবনের আনন্দ-বেদনার ইতিহাস; কানিছাত গারুনু আকাশি আকালী, টুলটুলিরে টুলটুলি দিনাও বেড়াইস চুলখুলি, কোঁড়ক কোঁড়ত কড়কা বাজে, ও তুই যাগে নানী থুইয়া আয় এলায়, দয়াল তুই আরিনে মোর নিদানে, বিয়াও বিয়াও করিস না মন—গানগুলো তাই উত্তরবঙ্গের গানপাগল মানুষের প্রাণের গান। এ গানগুলো রেডিও বেতারে প্রচার ও বিভিন্ন শিল্পীর কণ্ঠ ছাপিয়ে পৌঁছে গেছে সাধারণ মানুষের কাছে। আজকের আকাশ সংস্কৃতির যুগে একদিকে যখন সহজ হয়েছে শুদ্ধ কথা ও সুর রক্ষণ, অন্যদিকে শহুরে মেকি সংস্কৃতির দাপটে হারিয়ে যাচ্ছে এসব মাটির গান। এ অবস্থায় পরিবর্তন ঘটাতে পারে গবেষক, শিল্পীর সংগঠকের উত্স অনুসন্ধানী প্রয়াস। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে মহেশ চন্দ্র রায়ের অপ্রকাশিত গান সংগ্রহ, পূর্ণাঙ্গ জীবনী গ্রন্থ প্রকাশ এবং প্রচলিত গানগুলোর সুর সংরক্ষণের। এখন অপেক্ষার পালা কবে ফিরে পাবে উত্তরবঙ্গ তথা বাংলাদেশের ভাওয়াইয়া প্রেমিকেরা মহেশ চন্দ্র রায়ের সেই প্রাণমাতানো গান।
ফিরে দেখা: মহেশচন্দ্র রায়ের জন্ম ১৩২৫ সালের ১৯ মাঘ তপশিল শ্রেণীভুক্ত রাজবংশী ক্ষত্রিয় বংশে। তাঁর গ্রাম পুটিমারী (তত্কালীন রংপুর), বর্তমানে নীলফামারী জেলার কিশোরীগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। বাবা স্বর্গীয় বাবুরাম রায়, মাতা স্বর্গীয়া বিমলা রানী।
বাল্যজীবন ও শিক্ষা: জন্মের পাঁচ বছর পরেই মহেশ রায়ের মা মারা যান। পিতার আদরে লালিত-পালিত শিশু মহেশকে বাবা গ্রাম্য পাঠশালায় ভর্তি করান। তিন বছরের মাথায় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে কিশোরীগঞ্জ ইংরেজি স্কুলে ভর্তি হন। ১১-১২ বছর বয়সেই তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সমাপ্তি ঘটে।
সংগীত শিক্ষা: শিক্ষাজীবন শেষ করে যোগ দেন গ্রাম্য যাত্রা সংকীর্তন প্রভৃতির দলে। জনপ্রিয়ও হয়ে ওঠেন অল্প দিনেই। এ সময় বাবা ছেলের ভবিষ্যত্ উন্নতির জন্য নীলফামারীর প্রবীণ উকিল স্বর্গীয় সুরথ কুমার ঘোষের তত্ত্বাবধানে রেখে আসেন শহরে। এই শহরে ঘটনাক্রমে পরিচয় ঘটে ভারতবর্ষ অবতার পত্রিকার লেখক অধ্যাপক তারা প্রসন্ন মুখার্জি ও লেখক বলাই দেব শর্ম্মার সঙ্গে। তাঁদের নির্দেশেই পরবর্তীকালে তিনি সংগ্রহ করতে শুরু করেন প্রাচীন পুুঁথি। কণ্ঠে ধারণ করতে থাকেন এই গানের অনেকগুলোই।
পেশাগত ও দাম্পত্য জীবন: নীলফামারী শহরে তাঁর পালনকারী সুরথ কুমার ঘোষের মৃত্যুর পর মহেশচন্দ্র ছেড়ে দেন শহরবাস। এর মধ্যেই গান গাওয়ার সুবাদে তিনি শিক্ষকতার সুযোগ পান শহর থেকে দূরে জয়চণ্ডী পুটীহারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ১৩৪৪ থেকে ১৩৪৬ সন পর্যন্ত শিক্ষকতা করেন তিনি এ বিদ্যালয়ে। আর সে সময়ই সংগলসী ইউনিয়নের দীঘলডাঙ্গী গ্রামের গগনচন্দ্র রায়ের কন্যা বীণাপাণি রায়ের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন এবং স্থায়ীভাবে থেকে যান শ্বশুরালয়েই। কিন্তু বেশিদিন টেকেনি তাঁর স্থায়ী দাম্পত্য জীবন। স্ত্রী বীণাপাণি মৃত্যুবরণ করেন ১৩৪৯ সনে দুটি সন্তান রেখে। ১৩৫০ সনে তিনি বিয়ে করেন কামিনী বালা রায়কে। কয়েক বছর পর চারটি সন্তান রেখে দ্বিতীয় স্ত্রীরও বিয়োগ ঘটে। দীর্ঘদিন ধরে মাতৃহীন সন্তানদের প্রতিষ্ঠিত করার পর শেষ বয়সে সরলা বালা নামক একজন বিধবাকে স্ত্রীরূপে গ্রহণ করেছিলেন।
কর্মজীবন ও সাহিত্য সাধনা: মহেশচন্দ্র রায় তাঁর দীর্ঘ জীবনে যে গানগুলো সৃষ্টি করেছেন, ধারণ করেছেন, সেগুলোর যথাযথ সংরক্ষণের চেষ্টাও চালিয়েছেন নিরন্তর। তাঁর লেখা ও সুর করা গানগুলো গেয়েছেন বাংলাদেশের ভাওয়াইয়া গানের প্রধান শিল্পী মুস্তাফা জামান আব্বাসী, শরিফা রানী, নাদিরা বেগম, রথীন্দ্রনাথ রায়সহ আরও অনেকে। দীর্ঘ লেখক-জীবনে সান্নিধ্যে এসেছেন অনেক গুণী ব্যক্তির। তত্কালীন প্রাক্তন কৃষিমন্ত্রী খয়রাত হোসেন, অধ্যাপক ইউসুফ আলী (প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী), বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক এমাজ উদ্দীন আহমদ, মশিউর রহমান যাদুমিয়া (প্রাক্তন সিনিয়র মন্ত্রী), কবি বন্দে আলী মিয়াসহ অনেক স্বনামধন্য ব্যক্তিত্বের; কিন্তু তার পরও মহেশ রায় কেন থাকলেন এত অবহেলিত। মৃত্যুর কয়েক বছরের মধ্যেই কীভাবে নিশ্চিহ্ন হতে চলেছিল তাঁর সৃষ্টিসম্ভার?
উল্লেখ্য যে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন তিনি অবস্থান করছিলেন ভারতের বন্ধুনগর শরণার্থী শিবিরে। সেখানে বসেই রচনা করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধে যোদ্ধাদের অনুপ্রেরণার জন্য কিছু মুক্তির গান। সেগুলো প্রকাশিত হয়েছিল ভারতের রক্তলাল পত্রিকায় মুক্তিযুদ্ধের সময়ই।
আজ ২৯ জানুয়ারি মহেশচন্দ্র রায়ের ১৭তম মৃত্যুদিবস। এ দিবসে মহেশচন্দ্র রায় আবার ফিরবেন তাঁর সৃষ্টির মধ্য দিয়ে এমন প্রত্যাশা।
No comments