প্রতিক্রিয়া-শিকড়ের সন্ধানে by শহিদুল ইসলাম
ছাত্র-শিক্ষক যদি ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থে সে দায়িত্ব থেকে সরে আসে, তাহলে আজকের অবস্থার সৃষ্টি হয়। তবে সব সংকটের মূলে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার দুর্বার আকাঙ্ক্ষা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকট সমাধানে সরকারকে সেখান থেকে সরে আসতে হবে এক. স্নেহভাজন সুস্মিতা চক্রবর্তী একটা ভুল করে ফেলেছেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান অচলাবস্থা নিরসনে তিনি রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন (সমকাল ৩.৫.২০১২)। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান সংকটের সমাধান একটাই_ তাহলো, রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপমুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা। সুস্মিতা নিজেও তার লেখায় সে কথা উল্লেখ করেছেন। দৃঢ়তার সঙ্গে তিনি লিখেছেন যে, এর পেছনে নিশ্চয়ই দেশের ওপর মহলের ক্ষমতা-রাজনীতির সায় রয়েছে। ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশেরও উল্লেখ করেছেন সুস্মিতা। ১৯৭৩ সালের সেই গণতান্ত্রিক অধ্যাদেশ আজ পদদলিত। যখন যে সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকে তখন তাদের অন্যতম উদ্দেশ্য থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার। সে জন্য কেবল স্বৈরাচারী সামরিক শাসকই নন, গণতান্ত্রিক নির্বাচিত সরকারও একইভাবে ১৯৭৩ সালের আইন লঙ্ঘন করে সরাসরি উপাচার্য নিয়োগ দেন এবং তার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চান। সুস্মিতা নিজেই বলেছেন, 'সেই দলীয় উপাচার্য নানা ধরনের রাষ্ট্রীয় কৃপাপুষ্ট হয়ে ... যাবতীয় নেতিবাচক সীমা লঙ্ঘন করার চরম ঔদ্ধত্য দেখিয়ে চলেন।' তাহলে তিনি রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ চান কেন? যে শর্ষের মধ্যে ভূত থাকে, সে শর্ষে দিয়ে কি ভূত তাড়ানো যায়? যায় না। আজ বাংলাদেশের সবক'টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকটের মূলে রয়েছে স্বায়ত্তশাসনহীনতা। এ সমস্যার সমাধান হতে পারে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনের পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও সরকারি হস্তক্ষেপ নিম্নতম পর্যায়ে নামিয়ে আনা।
দুই. আমার ওপরের বক্তব্যে শিক্ষক ও ছাত্রসমাজের দায়িত্বের কথাটি ঢাকা পড়ে যায়। মনে হতে পারে, স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা ও সরকারি হস্তক্ষেপ বন্ধ হলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। ১৯৭৩ সালের আইন ছাত্র ও শিক্ষকের ওপরও গুরুদায়িত্ব অর্পণ করেছে। তাহলো ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থের ঊধর্ে্ব থেকে নিরবচ্ছিন্ন জ্ঞানচর্চার ধারাকে অব্যাহত রাখা। ছাত্র-শিক্ষক যদি ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থে সে দায়িত্ব থেকে সরে আসে, তাহলে আজকের অবস্থার সৃষ্টি হয়। তবে সব সংকটের মূলে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার দুর্বার আকাঙ্ক্ষা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকট সমাধানে সরকারকে সেখান থেকে সরে আসতে হবে।
শহিদুল ইসলাম :শিক্ষাবিদ
দুই. আমার ওপরের বক্তব্যে শিক্ষক ও ছাত্রসমাজের দায়িত্বের কথাটি ঢাকা পড়ে যায়। মনে হতে পারে, স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা ও সরকারি হস্তক্ষেপ বন্ধ হলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। ১৯৭৩ সালের আইন ছাত্র ও শিক্ষকের ওপরও গুরুদায়িত্ব অর্পণ করেছে। তাহলো ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থের ঊধর্ে্ব থেকে নিরবচ্ছিন্ন জ্ঞানচর্চার ধারাকে অব্যাহত রাখা। ছাত্র-শিক্ষক যদি ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থে সে দায়িত্ব থেকে সরে আসে, তাহলে আজকের অবস্থার সৃষ্টি হয়। তবে সব সংকটের মূলে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার দুর্বার আকাঙ্ক্ষা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকট সমাধানে সরকারকে সেখান থেকে সরে আসতে হবে।
শহিদুল ইসলাম :শিক্ষাবিদ
No comments