সংঘাত ও শান্তি-ইরান ও লাতিন আমেরিকা by রামজি বারুদ
যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বকে তার নিজস্ব ব্যাপার বলে মনে করে। আমেরিকা নিজে এবং তার মিত্ররা, বিশেষত ইসরায়েল অন্যের ভূ-রাজনৈতিক ব্যাপারে হস্তক্ষেপের ব্যাপারে পারদর্শী। কিন্তু ইরানকে তার ঘরোয়া বিষয়ের জন্যও কোণঠাসা ও শাস্তিপ্রাপ্ত হতে হচ্ছে।
সে কারণে লাতিন আমেরিকার দিকে ইরানের এগিয়ে যাওয়াকে আমেরিকা যে সন্দেহ ও ক্রোধের চোখে দেখবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
কিন্তু ইরান আমেরিকার ভূ-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ঢুকে পড়ছে না, কিংবা টাকা দিচ্ছে না কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে। অথবা আমেরিকার মতো লাতিন আমেরিকায় মাদকবিরোধী যুদ্ধের নামে নাশকতা চালাচ্ছে না। আমেরিকার মতো ইরানের হাতে লাতিন আমেরিকানদের রক্ত লেগে নেই। সেনাশাসক ও খুনিদের প্রশিক্ষিত করার জন্য আমেরিকার মতো ইরানের কোনো ‘স্কুল অব আমেরিকা’ নেই।
লাতিন আমেরিকার সঙ্গে ইরানের ঘনিষ্ঠতার শুরু ২০০৫ সালে। তখন থেকে ওই মহাদেশের কয়েকটি দেশে ইরানের দূতাবাস খোলা হতে থাকে। পাশাপাশি কয়েকটি দেশে গুরুত্বপূর্ণ কিছু যৌথ প্রকল্পের তহবিল জোগানোর মাধ্যমে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে।
তাহলে আমেরিকা কেন এত অস্থির হয়ে উঠেছে?
এভিয়েশন উইক পত্রিকায় পল ম্যাকল্যারি আমাদের কিছু ইঙ্গিত দিয়েছেন। তাঁর দৃষ্টিতে, ‘ইরানের পদক্ষেপ লাতিন আমেরিকায় ইসরায়েলের সঙ্গে প্রতিযোগিতার সৃষ্টি করেছে। উভয় দেশের প্রেসিডেন্টই সেখানে এখন মিত্র তৈরির চেষ্টায় আছেন। অনেকের কাছে তেহরান থেকে ভেনেজুয়েলার রাজধানী কারাকাসে ইরান এয়ারের সাপ্তাহিক বিমানযাত্রা উদ্বেগের বিষয়ে পরিণত হয়েছে।’
তিনি ফ্রিদা ঘিটিসের লেখার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘এই বিমানের যাওয়া-আসা গোপন রাখা হয়েছে, সেসবে মালামাল যায়, নাকি যাত্রী যায়, তা-ও অস্পষ্ট। একটি ইসরায়েলি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভেনেজুয়েলা ও বলিভিয়া ইরানে ইউরেনিয়াম সরবরাহ করছে।’
এখান থেকে দুটি প্রশ্ন ওঠে। প্রথমত, কারাকাস বা তেহরানের কাছে কি ওইসব বিমানে কী পরিবহন করা হয়, সে সম্পর্কে জানাতে বলা হয়েছে? ইরানকে কি আমেরিকা-ইসরায়েল এবং তাদের মিত্রদেশগুলোকে কি এসব তথ্য দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে?
দ্বিতীয় বিষয়টি ইসরায়েলের অধিকার-সংক্রান্ত। লাতিন আমেরিকায় ইরানের ‘সন্দেহজনক’ আচরণ নিয়ে কিছু মিডিয়ার এত আগ্রহী হয়ে ওঠার কারণ কী? লাতিন আমেরিকায় ইসরায়েলের আচরণ কেবল বিতর্কিতই নয়, অনেক রক্তাক্ত ঘটনার জন্য ইসরায়েল সেখানে নিন্দিতও। বিপরীতে ওই অঞ্চলে ইরানের উপস্থিতিকে সেখানকার বেশ কয়েকটি রাষ্ট্র স্বাগত জানিয়েছে। সেখানে ইসরায়েলের মতো ইরানের কোনো ‘ডেথ স্কোয়াড’ নেই। ইরানের কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কম্পিউটারে লাতিন আমেরিকার কোনো দেশের সাংবাদিক, ছাত্র, নেতৃত্ব, রাজনীতিবিদসহ অন্য অনেকের সম্পর্কে তথ্যের আর্কাইভ নেই, যাদের শিকার করা হবে, হত্যা করা হবে অথবা স্রেফ গায়েব করে দেওয়া হবে। ইসরায়েল সেখানকার অনেক সামরিক শাসনের বর্বরতার সঙ্গে যুক্ত। তাই ম্যাকল্যারি, ঘিটিসদের মতো বিশ্লেষকদের উচিত, কারও সম্পর্কে অভিযোগ উত্থাপনের আগে আরেকটু খোঁজখবর নেওয়া।
আমেরিকার পেছনের উঠোনে আয়াতুল্লাহর ছায়া খোঁজার পাশাপাশি ব্রাজিলকে নিয়েও অভিযোগ তোলা হচ্ছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা ডা সিলভা ২০০৯ সালের নভেম্বরে ইরানি প্রেসিডেন্ট আহমাদিনেজাদকে তাঁর দেশে স্বাগতম জানান। আর এই জানুয়ারিতে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল-এ পার্সেল নামের একজন লিখেছেন, ‘অতি সম্প্রতি ওবামা প্রশাসন বুঝতে পেরেছে, ব্রাজিল আর আমেরিকার স্বার্থগত মিল রয়েছে, লাতিন আমেরিকার বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়েও উভয়ের চিন্তা কাছাকাছি। সবকিছুর পরেও ব্রাজিল মুক্তবাজার অর্থনীতির পশ্চিমা মূল্যবোধসম্পন্ন বন্ধুত্বপূর্ণ গণতান্ত্রিক দেশ।’ ব্রাজিল তাদের চোখে ‘অনেকটা আমাদেরই মতো’।
কিন্তু ওই প্রতিবেদনে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, ব্রাজিল আসলে ‘আমাদের মতো নয়’। ঘটনা হলো ব্রাজিল নিজস্ব পথ নেওয়ার সাহস দেখিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা ল্যাটিন আমেরিকার বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে মার্কিন নির্দেশিত পথের বাইরে হাঁটছে। ইরানের সঙ্গে ব্রাজিলের দুই বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ চুক্তি হয়েছে, কিছু দিনের মধ্যেই এর পরিমাণ দাঁড়াবে ১০ বিলিয়ন ডলার। লুলার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি ইরানের পরমাণু ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের পক্ষে। যদিও ইরান পরমাণু বোমা বানাচ্ছে কি না, তা নিয়ে কোনো তথ্যপ্রমাণ নেই, তবুও পার্সেলের অভিযোগ থামে না, কারাকাস-তেহরান বিমান চলাচলের মাধ্যমে ইরানে ইউরেনিয়াম সরবরাহ করা হচ্ছে।
এ রকম অজস্র ভিত্তিহীন অভিযোগ, ভুয়া অনুমান ও বিদ্বেষপ্রসূত গালিগালাজ পশ্চিমা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়ে থাকে। এসব খবর দর্শক বা পাঠকের মনে ভয়ের জন্ম দেয়। তাদের লেখা পড়লে মনে হয়, লাতিন আমেরিকার জন্য বিশ্বে বোধ হয় কেয়ামত নেমে আসছে; যখন ধর্মোন্মাদ মুসলিম ও লাতিন আমেরিকানরা মিলে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লেগেছে। দি ইকোনমিস্ট অভিযোগ করেছে, লাতিন আমেরিকাকে অস্থিতিশীল করার জন্য ইরান টেলিভিশনের জন্য খবর ও তথ্যচিত্র বানাচ্ছে। তিনি আরও মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা বলেছেন, ‘ইসরায়েল এখন যেখানে আছে, সেখানে থাকার অধিকার রয়েছে’। কিন্তু লুলা এই ভাষায় বলেননি। কিন্তু এর মাধ্যমে মনে করিয়ে দেওয়া হচ্ছে, ইরানের প্রেসিডেন্ট আহমাদিনেজাদ বলেছিলেন, ইসরায়েল ইতিহাস থেকে মুছে যাবে। কিন্তু সেটাকে পশ্চিমা গণমাধ্যমে বিকৃত করে বলা হয় যে তিনি বলেছেন, ‘মানচিত্র থেকে মুছে যাবে’।
কিন্তু কেন এ রকম সময়ে ইকোনমিস্ট, ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস এ রকম ঝাঁঝালো প্রতিবেদন ছাপছে? খেয়াল করার বিষয়, ইকোনমিস্ট-এর যে সংখ্যায় এসব ছাপা হয়েছে, অনলাইন সংস্করণে সেই লেখার পাশাপাশি আরেকটি লম্বা কলামে পাঠককে মনে করিয়ে দিচ্ছে ইকোনমিস্ট বিতর্ক জানুয়ারি ১১-১৮। এ সপ্তাহের বিতর্কের বিষয় হলো, ‘এ মুহূর্তেই কি ইরানকে আক্রমণ করা দরকার?’ এটা দেখানো হয়েছে একটি ছবির সঙ্গে, যেখানে দেখা যাচ্ছে, যুদ্ধবিমানের রাডার দিয়ে ইরানের মানচিত্রে নিশানা করা হচ্ছে। এ ছবির সঙ্গে এই কথা ‘এ মুহূর্তেই কি ইরানকে আক্রমণ করা দরকার?’!!! পরিষ্কারভাবেই এখানে পাঠককে উসকানো হচ্ছে।
এ রকম ভিত্তিহীন প্রতিবেদন আর পক্ষপাতপূর্ণ আলোচনার পর বেশির ভাগ পাঠকের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে, অনুমান করা যায়। ঠিক এভাবেই ইরাক যুদ্ধের আগে জনমতকে কৃত্রিমভাবে খেপিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
প্যালেস্টাইন ক্রনিকল থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত
রামজি বারুদ: প্যালেস্টাইন ক্রনিকলের সম্পাদক, আন্তর্জাতিক কলাম লেখক ও গ্রন্থকার।
কিন্তু ইরান আমেরিকার ভূ-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ঢুকে পড়ছে না, কিংবা টাকা দিচ্ছে না কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে। অথবা আমেরিকার মতো লাতিন আমেরিকায় মাদকবিরোধী যুদ্ধের নামে নাশকতা চালাচ্ছে না। আমেরিকার মতো ইরানের হাতে লাতিন আমেরিকানদের রক্ত লেগে নেই। সেনাশাসক ও খুনিদের প্রশিক্ষিত করার জন্য আমেরিকার মতো ইরানের কোনো ‘স্কুল অব আমেরিকা’ নেই।
লাতিন আমেরিকার সঙ্গে ইরানের ঘনিষ্ঠতার শুরু ২০০৫ সালে। তখন থেকে ওই মহাদেশের কয়েকটি দেশে ইরানের দূতাবাস খোলা হতে থাকে। পাশাপাশি কয়েকটি দেশে গুরুত্বপূর্ণ কিছু যৌথ প্রকল্পের তহবিল জোগানোর মাধ্যমে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে।
তাহলে আমেরিকা কেন এত অস্থির হয়ে উঠেছে?
এভিয়েশন উইক পত্রিকায় পল ম্যাকল্যারি আমাদের কিছু ইঙ্গিত দিয়েছেন। তাঁর দৃষ্টিতে, ‘ইরানের পদক্ষেপ লাতিন আমেরিকায় ইসরায়েলের সঙ্গে প্রতিযোগিতার সৃষ্টি করেছে। উভয় দেশের প্রেসিডেন্টই সেখানে এখন মিত্র তৈরির চেষ্টায় আছেন। অনেকের কাছে তেহরান থেকে ভেনেজুয়েলার রাজধানী কারাকাসে ইরান এয়ারের সাপ্তাহিক বিমানযাত্রা উদ্বেগের বিষয়ে পরিণত হয়েছে।’
তিনি ফ্রিদা ঘিটিসের লেখার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘এই বিমানের যাওয়া-আসা গোপন রাখা হয়েছে, সেসবে মালামাল যায়, নাকি যাত্রী যায়, তা-ও অস্পষ্ট। একটি ইসরায়েলি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভেনেজুয়েলা ও বলিভিয়া ইরানে ইউরেনিয়াম সরবরাহ করছে।’
এখান থেকে দুটি প্রশ্ন ওঠে। প্রথমত, কারাকাস বা তেহরানের কাছে কি ওইসব বিমানে কী পরিবহন করা হয়, সে সম্পর্কে জানাতে বলা হয়েছে? ইরানকে কি আমেরিকা-ইসরায়েল এবং তাদের মিত্রদেশগুলোকে কি এসব তথ্য দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে?
দ্বিতীয় বিষয়টি ইসরায়েলের অধিকার-সংক্রান্ত। লাতিন আমেরিকায় ইরানের ‘সন্দেহজনক’ আচরণ নিয়ে কিছু মিডিয়ার এত আগ্রহী হয়ে ওঠার কারণ কী? লাতিন আমেরিকায় ইসরায়েলের আচরণ কেবল বিতর্কিতই নয়, অনেক রক্তাক্ত ঘটনার জন্য ইসরায়েল সেখানে নিন্দিতও। বিপরীতে ওই অঞ্চলে ইরানের উপস্থিতিকে সেখানকার বেশ কয়েকটি রাষ্ট্র স্বাগত জানিয়েছে। সেখানে ইসরায়েলের মতো ইরানের কোনো ‘ডেথ স্কোয়াড’ নেই। ইরানের কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কম্পিউটারে লাতিন আমেরিকার কোনো দেশের সাংবাদিক, ছাত্র, নেতৃত্ব, রাজনীতিবিদসহ অন্য অনেকের সম্পর্কে তথ্যের আর্কাইভ নেই, যাদের শিকার করা হবে, হত্যা করা হবে অথবা স্রেফ গায়েব করে দেওয়া হবে। ইসরায়েল সেখানকার অনেক সামরিক শাসনের বর্বরতার সঙ্গে যুক্ত। তাই ম্যাকল্যারি, ঘিটিসদের মতো বিশ্লেষকদের উচিত, কারও সম্পর্কে অভিযোগ উত্থাপনের আগে আরেকটু খোঁজখবর নেওয়া।
আমেরিকার পেছনের উঠোনে আয়াতুল্লাহর ছায়া খোঁজার পাশাপাশি ব্রাজিলকে নিয়েও অভিযোগ তোলা হচ্ছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা ডা সিলভা ২০০৯ সালের নভেম্বরে ইরানি প্রেসিডেন্ট আহমাদিনেজাদকে তাঁর দেশে স্বাগতম জানান। আর এই জানুয়ারিতে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল-এ পার্সেল নামের একজন লিখেছেন, ‘অতি সম্প্রতি ওবামা প্রশাসন বুঝতে পেরেছে, ব্রাজিল আর আমেরিকার স্বার্থগত মিল রয়েছে, লাতিন আমেরিকার বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়েও উভয়ের চিন্তা কাছাকাছি। সবকিছুর পরেও ব্রাজিল মুক্তবাজার অর্থনীতির পশ্চিমা মূল্যবোধসম্পন্ন বন্ধুত্বপূর্ণ গণতান্ত্রিক দেশ।’ ব্রাজিল তাদের চোখে ‘অনেকটা আমাদেরই মতো’।
কিন্তু ওই প্রতিবেদনে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, ব্রাজিল আসলে ‘আমাদের মতো নয়’। ঘটনা হলো ব্রাজিল নিজস্ব পথ নেওয়ার সাহস দেখিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা ল্যাটিন আমেরিকার বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে মার্কিন নির্দেশিত পথের বাইরে হাঁটছে। ইরানের সঙ্গে ব্রাজিলের দুই বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ চুক্তি হয়েছে, কিছু দিনের মধ্যেই এর পরিমাণ দাঁড়াবে ১০ বিলিয়ন ডলার। লুলার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি ইরানের পরমাণু ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের পক্ষে। যদিও ইরান পরমাণু বোমা বানাচ্ছে কি না, তা নিয়ে কোনো তথ্যপ্রমাণ নেই, তবুও পার্সেলের অভিযোগ থামে না, কারাকাস-তেহরান বিমান চলাচলের মাধ্যমে ইরানে ইউরেনিয়াম সরবরাহ করা হচ্ছে।
এ রকম অজস্র ভিত্তিহীন অভিযোগ, ভুয়া অনুমান ও বিদ্বেষপ্রসূত গালিগালাজ পশ্চিমা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়ে থাকে। এসব খবর দর্শক বা পাঠকের মনে ভয়ের জন্ম দেয়। তাদের লেখা পড়লে মনে হয়, লাতিন আমেরিকার জন্য বিশ্বে বোধ হয় কেয়ামত নেমে আসছে; যখন ধর্মোন্মাদ মুসলিম ও লাতিন আমেরিকানরা মিলে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লেগেছে। দি ইকোনমিস্ট অভিযোগ করেছে, লাতিন আমেরিকাকে অস্থিতিশীল করার জন্য ইরান টেলিভিশনের জন্য খবর ও তথ্যচিত্র বানাচ্ছে। তিনি আরও মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা বলেছেন, ‘ইসরায়েল এখন যেখানে আছে, সেখানে থাকার অধিকার রয়েছে’। কিন্তু লুলা এই ভাষায় বলেননি। কিন্তু এর মাধ্যমে মনে করিয়ে দেওয়া হচ্ছে, ইরানের প্রেসিডেন্ট আহমাদিনেজাদ বলেছিলেন, ইসরায়েল ইতিহাস থেকে মুছে যাবে। কিন্তু সেটাকে পশ্চিমা গণমাধ্যমে বিকৃত করে বলা হয় যে তিনি বলেছেন, ‘মানচিত্র থেকে মুছে যাবে’।
কিন্তু কেন এ রকম সময়ে ইকোনমিস্ট, ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস এ রকম ঝাঁঝালো প্রতিবেদন ছাপছে? খেয়াল করার বিষয়, ইকোনমিস্ট-এর যে সংখ্যায় এসব ছাপা হয়েছে, অনলাইন সংস্করণে সেই লেখার পাশাপাশি আরেকটি লম্বা কলামে পাঠককে মনে করিয়ে দিচ্ছে ইকোনমিস্ট বিতর্ক জানুয়ারি ১১-১৮। এ সপ্তাহের বিতর্কের বিষয় হলো, ‘এ মুহূর্তেই কি ইরানকে আক্রমণ করা দরকার?’ এটা দেখানো হয়েছে একটি ছবির সঙ্গে, যেখানে দেখা যাচ্ছে, যুদ্ধবিমানের রাডার দিয়ে ইরানের মানচিত্রে নিশানা করা হচ্ছে। এ ছবির সঙ্গে এই কথা ‘এ মুহূর্তেই কি ইরানকে আক্রমণ করা দরকার?’!!! পরিষ্কারভাবেই এখানে পাঠককে উসকানো হচ্ছে।
এ রকম ভিত্তিহীন প্রতিবেদন আর পক্ষপাতপূর্ণ আলোচনার পর বেশির ভাগ পাঠকের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে, অনুমান করা যায়। ঠিক এভাবেই ইরাক যুদ্ধের আগে জনমতকে কৃত্রিমভাবে খেপিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
প্যালেস্টাইন ক্রনিকল থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত
রামজি বারুদ: প্যালেস্টাইন ক্রনিকলের সম্পাদক, আন্তর্জাতিক কলাম লেখক ও গ্রন্থকার।
No comments