প্রতিবেশীরা বন্দর ব্যবহার করলে আমরা লাভবান হব by মোহাম্মদ রহমতউল্লাহ
বাংলাদেশ-ভারত বিশেষজ্ঞ মতামত আঞ্জলিক যোগাযোগ-বাংলাদেশ-ভারত প্রতিবেশী দেশ। সহযোগিতার মাধ্যমে দুটি দেশই এগিয়ে যাবে—এটাই প্রত্যাশিত। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের যে ফলাফল প্রাথমিকভাবে আমরা দেখলাম, এতে দুটি দেশই অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে বলে আমি মনে করি।
যে অগ্রগতি হয়েছে তাতে বাংলাদেশ উপকৃত হবে বলে আমি আশা করি। আমাদের দুই বন্দর চট্টগ্রাম ও মংলা যদি ভারতসহ এই অঞ্চলের দেশগুলো ব্যবহার করে, তবে আমরা নিশ্চিতভাবেই উপকৃত হব। বিশেষ করে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে। আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে যাদের সমুদ্রবন্দর নেই, তারা আমাদের সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করবে—এই বিষয়টিকে আমি সহজভাবেই দেখি। এক দেশের সমুদ্রবন্দর আরেক দেশ ব্যবহার করবে এটা স্বাভাবিক একটা রীতি। আমাদের আগেও অনেক দেশ তাদের সমুদ্রবন্দর পাশের দেশকে ব্যবহার করতে দিয়েছে। এর ফলে সেই দেশগুলো অর্থনৈতিকভাবে অনেক এগিয়ে গেছে। আমাদের সমুদ্রবন্দর যখন প্রতিবেশী দেশগুলো ব্যবহার করবে, তখন আমরা বন্দর ব্যবহার বাবদ তাদের কাছ থেকে কিছু টাকা পাব। এর ফলে আমাদের দেশের কিছু বাড়তি আয় হবে। আমি মনে করি, বন্দর ব্যবহারের এই সুবিধা আমাদের আগেই দেওয়া উচিত ছিল।
এখানে আমাদের মনে রাখতে হবে, প্রতিবেশী দেশগুলোকে শুধু বন্দর ব্যবহার করতে দিলে হবে না, বন্দরগুলো যাতে অন্য দেশ ব্যবহার করতে পারে, সে অনুযায়ী তা উন্নত হতে হবে। এখানে তিনটি বিষয়ের দিকে সবচেয়ে বেশি নজর দেওয়া প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। ক. অবকাঠামো উন্নয়ন, খ. ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং গ. জনবল উন্নয়ন। ভারতের সঙ্গে সমঝোতা অনুযায়ী আমাদের দুটি সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করার কথা বলা হয়েছে। দুটি সমুদ্রবন্দরেই আসা-যাওয়ার রাস্তা অর্থাত্ রেল ও সড়কের উন্নয়ন করতে হবে। চট্টগ্রাম থেকে আমাদের দুটি প্রধান রেলপথ আছে। একটি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা, আরেকটি চট্টগ্রাম থেকে সিলেট। এই দুটি রেলপথ সবচেয়ে বেশি ব্যবহূত হয়ে থাকে। যদি আমাদের চট্টগ্রাম বন্দর ভারতকে ব্যবহার করার সুযোগ দেওয়া হয়, তবে আখাউড়া থেকে চট্টগ্রাম রেলপথের ওপর অনেক বেশি চাপ পড়বে। এ জন্য আমাদের রেলের এই অংশে আরেকটি লেন তৈরি করতে হবে। এই অবকাঠামোগত উন্নয়নের কাজে হাত দিতে হবে এখনই।
কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-সিলেট-আগরতলা পর্যন্ত রাস্তার উন্নতি করতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে এর অবকাঠামোর উন্নতি করতে হবে। অবকাঠামোর উন্নতি না করা পর্যন্ত আমাদের ট্রেন ব্যবহার করতে হবে মালামাল আনা-নেওয়ার জন্য। এ ছাড়া আরেকটি ব্যবস্থা করতে পারে দুই দেশের সরকার মিলে। দুই দেশেই যৌথ মালিকানায় কোম্পানি করতে হবে। এই মালিকানার বেশি অংশ থাকবে বাংলাদেশের, কিছু অংশ ভারত, নেপাল ও ভুটানকে দিতে হবে। এর ফলে বাংলাদেশ অনেক লাভবান হবে।
নেপাল ও ভুটানের মংলা বন্দর ব্যবহারের বিষয়টি আগে থেকেই আলোচিত। নেপাল ও ভুটান যদি মংলা বন্দর ব্যবহার করে, তবে ভারতের ভূমি ব্যবহার করতে হবে। ভারতের ভূমি ব্যবহার করার জন্য নেপাল ও ভুটানের সরকারকে ভারতের কাছে আবেদন করতে হবে। আঞ্চলিক যোগাযোগ ও সহযোগিতার ব্যাপারে আমরা একমত হয়ে থাকলে ভারতকে এই আবেদনে সাড়া দিতে হবে। এর ফলে পশ্চিমবঙ্গও মংলা বন্দর ব্যবহার করতে পারবে। এখন আমরা মংলা বন্দরের মাত্র ২০-২৫ ভাগ সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করতে পারি। বাকি ৭৫-৮০ ভাগ ব্যবহার করা হয় না। ফলে এখন বন্দরের বাকি কর্মক্ষমতা কাজে লাগানো যাবে। মংলা বন্দর ব্যবহার করতে হলে আমাদের কী কী করতে হবে? এখানেও রেল ও সড়কপথের উন্নতি করতে হবে। ভারত থেকে রোহনপুর-বেনাপোল-খুলনা আসবে। এর ফলে আমাদের রেললাইনে অনেক বেশি চাপ পড়বে। তাই আমাদের এখন সড়ক ব্যবহার করতে হবে। এরপর রেললাইনকে দুই লাইনে উন্নীত করতে হবে। প্রকৃত অর্থে বন্দর ব্যবহারের জন্য আমাদের সড়ক ও রেল দুই ক্ষেত্রেই অবকাঠামোগত উন্নয়ন করতে হবে। এটা সরকারের একার পক্ষে উন্নতি করা সম্ভব নয়। এই উন্নয়নকাজগুলো বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিতে হবে। এই খাতে উন্নতির জন্য ভারত ১০০ কোটি ডলার ঋণ-সহায়তা দেওয়ার কথা বলেছে। এটাকে ভালোভাবে ব্যবহার করতে হবে। সরকারকে বিদেশি ও বেসরকারি খাতে কাজ করার জন্য পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।
আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বড় চিন্তা হলো আমাদের বন্দরের নিরাপত্তার বিষয়টি। এ ক্ষেত্রে এটা স্পষ্ট করা প্রয়োজন যে আমাদের বন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব আমাদের। কারও হাতে এই নিরাপত্তার দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। আমরা আমাদের নিরাপত্তার জন্য সবকিছু করতে পারব। আমি মনে করি নিরাপত্তার প্রশ্নে এক ভাগও ছাড় দেবে না বাংলাদেশ। মংলা বন্দর ভারতকে ব্যবহার করতে দেওয়ার ফলে এটি পশ্চিমবঙ্গ ব্যবহার করবে। আমরা আগেই নেপাল ও ভুটানকে বন্দর ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছি। ফলে এখন ভারতের ব্যবহার করার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
এখানে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক রয়েছে সেটা হচ্ছে, নেপাল আর ভুটান যদি আমাদের দেশ ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশের সঙ্গে বাণিজ্য করতে চায়, সে ক্ষেত্রে নতুন করে সমঝোতা করতে হবে। এ ধরনের কিছু এখনো অনুমোদিত হয়নি। ভারতকে এই অনুমোদন দিতে হবে। ভারত যদি এটা করতে না চায় তবে আঞ্চলিক যোগাযোগ ও সহযোগিতাকে আমরা যে পর্যায়ে নিয়ে যেতে ও সব দেশের উন্নয়নে কাজে লাগাতে চাই, তা পুরোপুরি অর্জন করা যাবে না। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি ভারতের কাছে তুলে ধরেছেন। এখানে ভারতের প্রতি আমাদের চাওয়া হচ্ছে, এই অংশ ভারতকে ব্যবহার করতে দিতে হবে।
বন্দর ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশ সরকার কী কী পদক্ষেপ নেবে তা জনগণকে ভালোভাবে জানাতে হবে। আমাদের বন্দর ব্যবহার করতে হলে আমাদের কাছে বন্দর দিয়ে আসা-যাওয়া করা পণ্যের তালিকা দিতে হবে। ভারতে উলফাসহ বিচ্ছিন্নতাবাদী বিভিন্ন গোষ্ঠীর তত্পরতার বিষয়টি তুলে ধরে অনেকে নিরাপত্তা নিয়ে নানা আশঙ্কা করে থাকেন। সে ক্ষেত্রে এটা নিশ্চিত করতে হবে যে আমরা যেমন আমাদের ভূখণ্ড অন্য কোনো দেশের বিচ্ছিন্নতাবাদী দল বা গোষ্ঠীকে ব্যবহার করতে দেব না, তেমনি উলফা বা বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্যও আমাদের দেশ ব্যবহার করা যাবে না। এটা নিশ্চিত করা গেলে নিরাপত্তা নিয়ে আমাদের শঙ্কার কোনো কারণ আছে বলে আমি মনে করি না।
মংলা বন্দর পশ্চিমবঙ্গের কাছাকাছি হওয়ায় তারা সেটা ব্যবহার করতে চাইবে। এখন পণ্য নেওয়ার জন্য আমাদের ট্রাক ব্যবহার করতে হবে। এ জন্য সড়কপথের উন্নয়নের কথা আগেই উল্লেখ করেছি। কিন্তু যেটার ওপর গুরুত্ব দিতে চাই তা হলো, এ জন্য সময় নষ্ট করা যাবে না। এখনই কাজে লেগে পড়তে হবে। সব কাজ আমাদের নিজেদের পক্ষে সম্ভব না হলে এ ক্ষেত্রে বিদেশিদের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। আবার আমরা নিজেরাও এই ক্ষেত্রে উন্নতি করতে পারি। আমরা যদি এই কাজগুলো বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দিই, তবে বিদেশিরা ২০-২৫ বছর সড়কগুলো তাদের নিয়ন্ত্রণে রেখে খরচের টাকা উঠিয়ে আমাদের কাছে ছেড়ে দেবে। তখন আমরা এসব খাত থেকে প্রতিবছর অনেক টাকা আয় করতে পারব। এই কাজের জন্য আমাদের সবাইকে নিয়ে কাজ করতে হবে।
এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে এসব সড়ক যুক্ত করা হবে কি না, সেটাও এক বড় প্রশ্ন। এটা হওয়ার ফলে এমনিতেই এটা হয়ে যাবে। এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে এটির কোনো বিরোধ নেই। আমাদের সড়ক ও রেলপথ প্রতিবেশী রাষ্ট্র ব্যবহার করতে পারলে, আমরা তাদের সড়ক ও রেলপথ ব্যবহার করতে পারলে সব দেশই পারস্পরিকভাবে উপকৃত হবে।
মোহাম্মদ রহমতউল্লাহ: সাবেক পরিচালক (ট্রান্সপোর্ট), ইউএন এসকাপ।
এখানে আমাদের মনে রাখতে হবে, প্রতিবেশী দেশগুলোকে শুধু বন্দর ব্যবহার করতে দিলে হবে না, বন্দরগুলো যাতে অন্য দেশ ব্যবহার করতে পারে, সে অনুযায়ী তা উন্নত হতে হবে। এখানে তিনটি বিষয়ের দিকে সবচেয়ে বেশি নজর দেওয়া প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। ক. অবকাঠামো উন্নয়ন, খ. ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং গ. জনবল উন্নয়ন। ভারতের সঙ্গে সমঝোতা অনুযায়ী আমাদের দুটি সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করার কথা বলা হয়েছে। দুটি সমুদ্রবন্দরেই আসা-যাওয়ার রাস্তা অর্থাত্ রেল ও সড়কের উন্নয়ন করতে হবে। চট্টগ্রাম থেকে আমাদের দুটি প্রধান রেলপথ আছে। একটি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা, আরেকটি চট্টগ্রাম থেকে সিলেট। এই দুটি রেলপথ সবচেয়ে বেশি ব্যবহূত হয়ে থাকে। যদি আমাদের চট্টগ্রাম বন্দর ভারতকে ব্যবহার করার সুযোগ দেওয়া হয়, তবে আখাউড়া থেকে চট্টগ্রাম রেলপথের ওপর অনেক বেশি চাপ পড়বে। এ জন্য আমাদের রেলের এই অংশে আরেকটি লেন তৈরি করতে হবে। এই অবকাঠামোগত উন্নয়নের কাজে হাত দিতে হবে এখনই।
কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-সিলেট-আগরতলা পর্যন্ত রাস্তার উন্নতি করতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে এর অবকাঠামোর উন্নতি করতে হবে। অবকাঠামোর উন্নতি না করা পর্যন্ত আমাদের ট্রেন ব্যবহার করতে হবে মালামাল আনা-নেওয়ার জন্য। এ ছাড়া আরেকটি ব্যবস্থা করতে পারে দুই দেশের সরকার মিলে। দুই দেশেই যৌথ মালিকানায় কোম্পানি করতে হবে। এই মালিকানার বেশি অংশ থাকবে বাংলাদেশের, কিছু অংশ ভারত, নেপাল ও ভুটানকে দিতে হবে। এর ফলে বাংলাদেশ অনেক লাভবান হবে।
নেপাল ও ভুটানের মংলা বন্দর ব্যবহারের বিষয়টি আগে থেকেই আলোচিত। নেপাল ও ভুটান যদি মংলা বন্দর ব্যবহার করে, তবে ভারতের ভূমি ব্যবহার করতে হবে। ভারতের ভূমি ব্যবহার করার জন্য নেপাল ও ভুটানের সরকারকে ভারতের কাছে আবেদন করতে হবে। আঞ্চলিক যোগাযোগ ও সহযোগিতার ব্যাপারে আমরা একমত হয়ে থাকলে ভারতকে এই আবেদনে সাড়া দিতে হবে। এর ফলে পশ্চিমবঙ্গও মংলা বন্দর ব্যবহার করতে পারবে। এখন আমরা মংলা বন্দরের মাত্র ২০-২৫ ভাগ সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করতে পারি। বাকি ৭৫-৮০ ভাগ ব্যবহার করা হয় না। ফলে এখন বন্দরের বাকি কর্মক্ষমতা কাজে লাগানো যাবে। মংলা বন্দর ব্যবহার করতে হলে আমাদের কী কী করতে হবে? এখানেও রেল ও সড়কপথের উন্নতি করতে হবে। ভারত থেকে রোহনপুর-বেনাপোল-খুলনা আসবে। এর ফলে আমাদের রেললাইনে অনেক বেশি চাপ পড়বে। তাই আমাদের এখন সড়ক ব্যবহার করতে হবে। এরপর রেললাইনকে দুই লাইনে উন্নীত করতে হবে। প্রকৃত অর্থে বন্দর ব্যবহারের জন্য আমাদের সড়ক ও রেল দুই ক্ষেত্রেই অবকাঠামোগত উন্নয়ন করতে হবে। এটা সরকারের একার পক্ষে উন্নতি করা সম্ভব নয়। এই উন্নয়নকাজগুলো বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিতে হবে। এই খাতে উন্নতির জন্য ভারত ১০০ কোটি ডলার ঋণ-সহায়তা দেওয়ার কথা বলেছে। এটাকে ভালোভাবে ব্যবহার করতে হবে। সরকারকে বিদেশি ও বেসরকারি খাতে কাজ করার জন্য পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।
আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বড় চিন্তা হলো আমাদের বন্দরের নিরাপত্তার বিষয়টি। এ ক্ষেত্রে এটা স্পষ্ট করা প্রয়োজন যে আমাদের বন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব আমাদের। কারও হাতে এই নিরাপত্তার দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। আমরা আমাদের নিরাপত্তার জন্য সবকিছু করতে পারব। আমি মনে করি নিরাপত্তার প্রশ্নে এক ভাগও ছাড় দেবে না বাংলাদেশ। মংলা বন্দর ভারতকে ব্যবহার করতে দেওয়ার ফলে এটি পশ্চিমবঙ্গ ব্যবহার করবে। আমরা আগেই নেপাল ও ভুটানকে বন্দর ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছি। ফলে এখন ভারতের ব্যবহার করার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
এখানে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক রয়েছে সেটা হচ্ছে, নেপাল আর ভুটান যদি আমাদের দেশ ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশের সঙ্গে বাণিজ্য করতে চায়, সে ক্ষেত্রে নতুন করে সমঝোতা করতে হবে। এ ধরনের কিছু এখনো অনুমোদিত হয়নি। ভারতকে এই অনুমোদন দিতে হবে। ভারত যদি এটা করতে না চায় তবে আঞ্চলিক যোগাযোগ ও সহযোগিতাকে আমরা যে পর্যায়ে নিয়ে যেতে ও সব দেশের উন্নয়নে কাজে লাগাতে চাই, তা পুরোপুরি অর্জন করা যাবে না। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি ভারতের কাছে তুলে ধরেছেন। এখানে ভারতের প্রতি আমাদের চাওয়া হচ্ছে, এই অংশ ভারতকে ব্যবহার করতে দিতে হবে।
বন্দর ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশ সরকার কী কী পদক্ষেপ নেবে তা জনগণকে ভালোভাবে জানাতে হবে। আমাদের বন্দর ব্যবহার করতে হলে আমাদের কাছে বন্দর দিয়ে আসা-যাওয়া করা পণ্যের তালিকা দিতে হবে। ভারতে উলফাসহ বিচ্ছিন্নতাবাদী বিভিন্ন গোষ্ঠীর তত্পরতার বিষয়টি তুলে ধরে অনেকে নিরাপত্তা নিয়ে নানা আশঙ্কা করে থাকেন। সে ক্ষেত্রে এটা নিশ্চিত করতে হবে যে আমরা যেমন আমাদের ভূখণ্ড অন্য কোনো দেশের বিচ্ছিন্নতাবাদী দল বা গোষ্ঠীকে ব্যবহার করতে দেব না, তেমনি উলফা বা বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্যও আমাদের দেশ ব্যবহার করা যাবে না। এটা নিশ্চিত করা গেলে নিরাপত্তা নিয়ে আমাদের শঙ্কার কোনো কারণ আছে বলে আমি মনে করি না।
মংলা বন্দর পশ্চিমবঙ্গের কাছাকাছি হওয়ায় তারা সেটা ব্যবহার করতে চাইবে। এখন পণ্য নেওয়ার জন্য আমাদের ট্রাক ব্যবহার করতে হবে। এ জন্য সড়কপথের উন্নয়নের কথা আগেই উল্লেখ করেছি। কিন্তু যেটার ওপর গুরুত্ব দিতে চাই তা হলো, এ জন্য সময় নষ্ট করা যাবে না। এখনই কাজে লেগে পড়তে হবে। সব কাজ আমাদের নিজেদের পক্ষে সম্ভব না হলে এ ক্ষেত্রে বিদেশিদের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। আবার আমরা নিজেরাও এই ক্ষেত্রে উন্নতি করতে পারি। আমরা যদি এই কাজগুলো বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দিই, তবে বিদেশিরা ২০-২৫ বছর সড়কগুলো তাদের নিয়ন্ত্রণে রেখে খরচের টাকা উঠিয়ে আমাদের কাছে ছেড়ে দেবে। তখন আমরা এসব খাত থেকে প্রতিবছর অনেক টাকা আয় করতে পারব। এই কাজের জন্য আমাদের সবাইকে নিয়ে কাজ করতে হবে।
এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে এসব সড়ক যুক্ত করা হবে কি না, সেটাও এক বড় প্রশ্ন। এটা হওয়ার ফলে এমনিতেই এটা হয়ে যাবে। এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে এটির কোনো বিরোধ নেই। আমাদের সড়ক ও রেলপথ প্রতিবেশী রাষ্ট্র ব্যবহার করতে পারলে, আমরা তাদের সড়ক ও রেলপথ ব্যবহার করতে পারলে সব দেশই পারস্পরিকভাবে উপকৃত হবে।
মোহাম্মদ রহমতউল্লাহ: সাবেক পরিচালক (ট্রান্সপোর্ট), ইউএন এসকাপ।
No comments