হিলারির সফর-যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্র্যাটেজিক স্বার্থ এবং বাংলাদেশের অনুকূল অবস্থান by সাদিক আহমেদ

যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের সম্পর্ক যত উন্নতই হোক না কেন বাংলাদেশের আমদানি বাণিজ্যে চীন ও ভারতই প্রধান অংশীদার থাকবে। আর রফতানির জন্য এ দুটি দেশের ওপর নয় বরং যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশের ওপরই থাকবে প্রধান নির্ভরতা।


একদল বাংলাদেশের আমদানির স্ট্র্যাটেজিক উৎস, আরেক দল রফতানির। বিশ্বায়নের যুগে এ পক্ষগুলোর কাউকে বৈরী না করেই আমরা জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করে যেতে পারি



হিলারি ক্লিনটন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বিশ্বের প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের একজন হিসেবে তিনি গণ্য হয়ে থাকেন। তিনি বাংলাদেশ সফর করবেন, এটা নিয়ে আলোচনা ছিল বেশ কিছুদিন ধরেই। অবশেষে ৫ মে তিনি আসছেন। একই সময়ে তিনি বিশ্বের জনবহুল ও গুরুত্বপূর্ণ দুই অর্থনৈতিক শক্তি চীন এবং ভারতও সফর করবেন। ঢাকায় তিনি দু'দিন মিলিয়ে ২৪ ঘণ্টারও কম সময় অবস্থান করবেন। কিন্তু এভাবে ঘণ্টা-সেকেন্ড মেপে তার সফরের তাৎপর্য মূল্যায়ন করতে যাওয়া ভুল হবে।
সম্ভবত পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে এ অঞ্চলে এটাই হবে তার শেষ সফর। আগামী নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। বড় ধরনের কোনো বিপর্যয় না ঘটলে বারাক ওবামার পুনর্নির্বাচন অনেকটাই নিশ্চিত। কিন্তু হিলারি জানিয়ে দিয়েছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেবেন না। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে নীতিগত ধারাবাহিকতা থাকে এবং তিনি না থাকলেও ঢাকা সফরকালে যেসব সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে কিংবা ছক তৈরি হবে, তার ধারাবাহিকতা থাকবে।
হিলারি ক্লিনটনের এ সফরের অন্যতম প্রধান কারণ যে ভূমণ্ডলীয় ও আঞ্চলিক কৌশলগত, তা নিয়ে বিতর্কের অবকাশ কম। চীন দ্রুত বিশ্ব অর্থনীতিতে এক নম্বর অবস্থান নিতে চলেছে, সে হিসাব যুক্তরাষ্ট্রের অবশ্যই বিবেচনায় রয়েছে। একই সঙ্গে আমাদের এ অঞ্চলে তাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব ক্রমাগত বাড়ছে। কেবল একটি বিষয় এখানে উল্লেখ করতে চাই_ ভারতকে পেছনে ফেলে চীন এখন বাংলাদেশের প্রধান আমদানি অংশীদার। আমাদের প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে চীনের প্রভাব অনেক দিন থেকেই। পাকিস্তান তাদের পুরনো বন্ধু। ভারত-চীন এবং পরস্পরের প্রধান বাণিজ্য অংশীদারে পরিণতি হয়েছে। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক সম্পর্ক বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের আমলেই এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রবণতা লক্ষ্য করা গিয়েছিল। নতুন প্রশাসন তার ধারাবাহিকতা বজায় রেখে চলেছে।
গত কয়েক বছরে ভারতও যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ কৌশলগত মিত্রে পরিণত হয়েছে। এক সময়ে আমাদের প্রতিবেশী এ দেশটি সোভিয়েত ইউনিয়নের (বর্তমানে রাশিয়াসহ সিআইএসভুক্ত কয়েকটি দেশ) সঙ্গে ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের পাশাপাশি বিপুল মাত্রায় সামরিক সম্পর্কও বজায় রাখত। এখনও রাশিয়ার সঙ্গে এ ধরনের সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু ভারত বুঝতে পারছে অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য বর্ধিত আন্তর্জাতিক সহায়তা দরকার এবং এ ক্ষেত্রে রাশিয়ার তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র অনেক বেশি কার্যকর হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারেও মনোযোগী হয়েছে। হিলারি ক্লিনটন মিয়ানমার সফর করে গেছেন। খনিজ-প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ এ দেশটিতে গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা অবশেষে সুফল দিতে শুরু করেছে বলেই ধারণা করা হয়।
সব মিলিয়ে বলা যায়, যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলে ভারত, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক গড়ে তোলায় জোরেশোরেই উদ্যোগী হয়েছে এবং এর অন্যতম উদ্দেশ্য চীনের বর্ধিত প্রভাব মোকাবেলা। তবে এ ক্ষেত্রে সামরিক নয়, বরং অর্থনৈতিক বন্ধন দৃঢ় করায় তারা উৎসাহী।
বাংলাদেশে অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান আঞ্চলিক কৌশল রূপায়ণে এ অবস্থান সহায়ক। একই সঙ্গে তারা বিএনপির সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক বজায় রাখা প্রয়োজন মনে করে। কয়েকদিন আগে ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে যে বৈঠক করেছেন তাতে নিশ্চিতভাবেই হিলারি ক্লিনটনের সফর নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ভারত-বাংলাদেশ-মিয়ানমার প্রভৃতি দেশ পরস্পরের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলুক, এটাও যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাশা। এ জন্য পরস্পরের মধ্যে বাণিজ্য-অর্থনৈতিক সম্পর্ক যেমন বাড়াতে হবে, তেমনি গুরুত্ব রয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থার।
বাংলাদেশে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক চরমপন্থার বিপদ সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের স্পর্শকাতরতা আমাদের জানা আছে। তবে হিলারি ক্লিনটনের এ সফরের সময় বিষয়টি মুখ্য হয়ে উঠবে না বলেই আমার ধারণা। এ সফর যদি ৫-৬ বছর আগে হতো তখন নিশ্চয়ই প্রধান এজেন্ডায় থাকত। কিন্তু বাংলাদেশ নেতৃত্ব বিচক্ষণতার সঙ্গে এ সমস্যা মোকাবেলায় সক্ষম হয়েছে। আমাদের প্রধান দলগুলো ধর্মীয় চরমপন্থি শক্তির সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে চলুক, এটা যুক্তরাষ্ট্রের নীতিগত অবস্থান। বিএনপি নেতৃত্বকে তারা বিভিন্ন সময়ে এ বার্তা দিয়েছে তাতে সন্দেহ নেই। আমাদের নিজস্ব অভিজ্ঞতাও এ ক্ষেত্রে তিক্ত। ধর্মীয় বা অন্যান্য ধরনের চরমপন্থা যখনই মাথাচাড়া দিয়েছে, তাতে বিঘি্নত হয়েছে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও ব্যাহত হয়েছে। এর সবচেয়ে বড় নজির ১৯৭১ সাল। জেএমবি-হুজির মতো শক্তির উত্থানও আমাদের জন্য চরম উদ্বেগের কারণ হয়েছিল। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্র্যাটেজিক স্বার্থের কারণে যতটা না, তার চেয়ে ঢের বেশি নিজেদের প্রয়োজনেই এ সমস্যার প্রতি মনোযোগ দিতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের এ অঞ্চলে কৌশলগত স্বার্থ অর্জনে বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রধান দলগুলো পরস্পরের মুখোমুখি থাকলে সেটা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতার বিষয়ে তাদের চিন্তাভাবনা অবশ্যই রয়েছে এবং নানা পর্যায়ে এ বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হবে, সেটা ধরে নেওয়া যায়।
গুড গভর্ন্যান্সও হিলারি ক্লিনটনের আলোচনায় গুরুত্ব পাবে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো মানবসম্পদ খাতের অগ্রগতি সুশাসনের ওপর বহুলাংশে নির্ভরশীল। এ বিষয়েও বাংলাদেশের প্রধান দুটি দলকে তাদের তরফে কিছু বার্তা দেওয়া হতে পারে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহল বিশ্ব রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান উপলব্ধি করে। তারা আমাদের রফতানি বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান গন্তব্য। এখানে বিনিয়োগ করার মতো অর্থ ও প্রযুক্তিগত সম্পদ রয়েছে তাদের অনেক অনেক কোম্পানির হাতে। আরও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের মতো সংস্থায় তাদের বিপুল প্রভাব।
বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্র্যাটেজিক স্বার্থের বাইরেও অর্থনৈতিক স্বার্থ রয়েছে। এখানের তেল-গ্যাস খাতে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কোম্পানির আগ্রহ রয়েছে। বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগও সম্ভাবনাময় হতে পারে। কয়লাসম্পদ খাতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো কোম্পানি এগিয়ে আসার কথা শোনা যায় না। তবে আমাদের বিদ্যুৎ খাতের জন্য কয়লা উত্তোলন অপরিহার্য ও জরুরি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত মামলায় বিজয়ী হওয়ার প্রেক্ষাপটে বঙ্গোপসাগরে নতুন সম্ভাবনাও বিবেচনা পাবে। তবে হিলারি ক্লিনটন বঙ্গোপসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ কোনো কোম্পানির পক্ষ নিয়ে কথা বলবেন, এমনটি মনে হয় না। সাধারণভাবে দেখা যায়, ডেমোক্রেটিক পার্টি রিপাবলিকান পার্টির মতো সে দেশের বৃহৎ ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর স্বার্থ নিয়ে অন্য দেশের সঙ্গে বড় ধরনের ঝামেলায় জড়াতে চায় না। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে দুর্নীতিবিরোধী আইনও খুব কঠোর। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কোনো ব্যক্তি বিশেষ কোনো প্রতিষ্ঠানের পক্ষে তদবির করবেন, এটা ভাবা কঠিন। আমরা এটাও জানি যে, হিলারি ক্লিনটন ব্যক্তিগতভাবে নিজের উজ্জ্বল একটি ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন এবং নিজের দায়িত্ব পালনের শেষ বছরে সেটা বজায় রাখায় সচেষ্ট থাকবেন।
বাংলাদেশ তার তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য অবশ্যই শুল্কমুক্ত সুবিধার পক্ষে জোর সওয়াল করবে। এ ক্ষেত্রে কারখানায় কাজের পরিবেশ উন্নত করার মতো বেশ কিছু ইস্যু যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ী ও ট্রেড ইউনিয়নগুলোর দিক থেকে রয়েছে। তবে উন্নত দেশগুলোর মতো 'শ্রমের পরিবেশ' সৃষ্টি করা বাংলাদেশে বর্তমান মুহূর্তে সম্ভব নয়। এ জন্য সময় প্রয়োজন এবং সেটা যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের উপলব্ধিতে আনায় বাংলাদেশকেই বেশি তৎপর হতে হবে। এ ক্ষেত্রে কিন্তু আমাদের নিজেদের দিকেও তাকানো প্রয়োজন। শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষার দায়িত্ব মালিক এবং সরকার উভয় পক্ষের। কারখানায় 'দাস শ্রমিক' যুগের অবস্থা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এ বিষয়ে সরকারকে অবশ্যই বেসরকারি খাতের সঙ্গে কথা বলতে হবে। আন্তর্জাতিকভাবেও তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা সম্ভব এবং যুক্তরাষ্ট্র তাতে অংশীদার হতে পারে।
নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের পূর্বতন পদে পুনর্বহালের জন্য যুক্তরাষ্ট্র চাপ সৃষ্টি করবে বলে মনে হয় না। এ ধরনের ব্যক্তিগত এজেন্ডা তাদের পররাষ্ট্র দফতরের কাজে খুব গুরুত্ব পায় না। তবে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে সরকার স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রাখুক এবং তার গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি সব ধরনের সহায়তা প্রদান করতে থাকুক, তেমন প্রত্যাশা ব্যক্ত হতেই পারে।
কেউ কেউ প্রশ্ন তুলতেই পারেন যে, যুক্তরাষ্ট্র বা এ ধরনের প্রভাবশালী দেশ কিংবা বিশ্বব্যাংকের মতো সংস্থা কেন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যুগুলোতে হস্তক্ষেপ করবে কিংবা পরামর্শ দেবে। কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে, বিশ্বের দেশগুলো আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে পরস্পরের সঙ্গে অনেক বেশি সম্পর্কযুক্ত। যুক্তরাষ্ট্র সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তিতে বলীয়ান। অর্থনীতি, প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানে তাদের সামর্থ্য অনেক। আমরা যে বিদেশি বিনিয়োগ প্রত্যাশা করি তা জোগানোর সামর্থ্য তাদের অপরিসীম। তাদের সঙ্গে এসব বিষয়ে খোলামেলা আলোচনায় কোনো বাধা নেই। যদি দেখা যায় যে তাদের কোনো শর্ত কিংবা প্রস্তাব আমাদের জাতীয় স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর, অবশ্যই সেটা প্রত্যাখ্যান করতে হবে। তারা জ্বালানি কিংবা অন্য কোনো খাতে একতরফা সুবিধা চাইলে অবশ্যই সেটা প্রদানের প্রশ্ন আসে না। সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের মতো অবাস্তব দাবি তারা করবে বলেও মনে করার কারণ নেই। কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে যে, যুক্তরাষ্ট্র কিংবা অন্য কোনো সুপার পাওয়ারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নিজেদের জন্য সর্বোত্তম সুবিধা আদায়ে বাংলাদেশকে আরও মনোযোগী হতে হবে। এ জন্য প্রশাসনের দক্ষতা যেমন বাড়াতে হবে, তেমনি সরকারের বাইরেও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা সংস্থার সহায়তা নিতে হবে। ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতার অভাব দেশে হওয়ার কথা নয়। অনেকেই সরকারের পাশে দাঁড়াতে প্রস্তুত। তবে এ ক্ষেত্রে সরকারকে দলীয় আনুগত্য প্রত্যাশা করলে চলবে না, বরং যোগ্যতাকে প্রাধান্য দিতে হবে। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায় যে, সরকারের ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা দলিল প্রণয়নের দায়িত্ব পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট সফলতার সঙ্গেই পালন করেছে।
শুরুতে বলেছি যে, চীনের প্রভাব মোকাবেলায় বন্ধু বাড়ানোই হিলারি ক্লিনটনের সফরের প্রধান উদ্দেশ্য। এতে চীনের কী প্রতিক্রিয়া হবে, সে প্রশ্ন স্বাভাবিক। তবে আমার ধারণা, বেইজিংয়ের কমিউনিস্ট নেতৃত্ব এসব নিয়ে খুব মাথা ঘামাবে না। ভারতের সঙ্গে তাদের সীমান্ত নিয়ে বিরোধ রয়েছে। কিন্তু এখন সে দেশটি তাদের প্রধান বাণিজ্য অংশীদার। যুক্তরাষ্ট্রের তাদের রফতানি বাণিজ্য আকাশছোঁয়া। রাজনৈতিক-সামরিক টানাপড়েন কখনও এ প্রক্রিয়া ব্যাহত করেনি। বলা যায়, কোনোপক্ষই সেটা ঘটতে দেয়নি। চীন একটি নীতি অনুসরণ করে চলেছে_ অর্থনীতিতে কোনো শত্রু বা বন্ধু নেই। যেখানে সুযোগ আছে সেটা বুঝে নাও। আশির দশকে ভিয়েতনামের সঙ্গে সামরিক সংঘাতের পর চীন আর কোনো দেশের সঙ্গে প্রকাশ্য বিরোধে জড়ায়নি। তারা নিমগ্ন রয়েছে অর্থনীতি নিয়ে। আফ্রিকায় তারা খনিজসম্পদ আহরণ করছে। বিভিন্ন দেশের তেলখনির মালিকানা অর্জন করছে। সড়ক-সেতু-রেলপথ নির্মাণে বিনিয়োগ করছে। চীনের মতো ভারতও বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ককে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখবে বলে মনে হয় না। আমরা এটাও জানি যে, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের সম্পর্ক যত উন্নতই হোক না কেন বাংলাদেশের আমদানি বাণিজ্যে চীন ও ভারতই প্রধান অংশীদার থাকবে। আর রফতানির জন্য এ দুটি দেশের ওপর নয় বরং যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশের ওপরই থাকবে প্রধান নির্ভরতা। একদল বাংলাদেশের আমদানির স্ট্র্যাটেজিক উৎস, আরেক দল রফতানির। জ্বালানি তেল আমদানির জন্য আমাদের নির্ভরতা আরেক পক্ষের ওপর_ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ। বিশ্বায়নের যুগে এ পক্ষগুলোর কাউকে বৈরী না করেই আমরা জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করে যেতে পারি। সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়_ মুক্তিযুদ্ধের সূচনাপর্ব থেকেই বাংলাদেশের নেতৃত্ব এ নীতি অনুসরণের ওপর জোর দিয়ে চলেছে। এটা পরখের প্রকৃত পরীক্ষা মঞ্চে কিন্তু আমরা উঠতে চলেছি।

ড. সাদিক আহমেদ :ভাইস চেয়ারম্যান
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট

No comments

Powered by Blogger.