বুয়েট-জাবির অচলাবস্থা-দায় শিক্ষক রাজনীতির by শরিফুল ইসলাম

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে আমি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, শিক্ষামন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীকে জরুরি উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানাই, যাতে বুয়েট ও জাবিসহ দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যমান সমস্যার সমাধান হয়একবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা যেখানে উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার কথা, সেখানে আঁধারে ঘুরপাক খাচ্ছে।


উন্নয়নশীল দেশের বিভিন্ন সমস্যাকে ছাপিয়ে এখনও শিক্ষকদের রাজনীতি বড় হয়ে দেখা দিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। দেশের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অন্যতম বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে। প্রায় এক মাস ধরে বুয়েটে নিয়মিত ক্লাস হচ্ছে না। বছরের শুরু থেকেই থমথমে অবস্থায় জাবি।
শিক্ষকরা যেন পুরোদস্তুর রাজনীতি করার জন্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন বলে মনে হচ্ছে। বললে ভুল হবে, তারা শিক্ষকতা করেন, তারা চাকরি করেন (কতিপয় শিক্ষকের সম্পর্কে এ কথা প্রযোজ্য)। কোনো রাজনৈতিক দলের দেখানো পথে হাঁটেন তারা। নিজেদের স্বার্থে তারা যে মর্যাদাসীন পদটিতে আসীন সেটাও ভুলে যান।
জাবির উপাচার্য শরীফ এনামুল কবিরের ছত্রছায়ায় ছাত্রলীগের একাংশ তাণ্ডব চালাচ্ছে ক্যাম্পাসে। জুবায়ের হত্যার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিক পরিস্থিতি নেই। চলতি বছরের ৯ জানুুয়ারি ছাত্রলীগের কতিপয় মাস্তানের হাতে নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী জুবায়ের। এর পরপরই উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি, শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবিতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামে। কিন্তু টনক নড়ে না উপাচার্যের। গত সপ্তাহে উপাচার্যের বাসার সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে উপাচার্য অনুগত ছাত্রলীগ নেতারা।
বুয়েটের উপাচার্য এসএম নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে শিক্ষক নিয়োগে ও পরীক্ষা পদ্ধতিতে অনিয়মের অভিযোগ, ক্ষমতার অপব্যবহার ইত্যাদি গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন তারই সহকর্মীরা। শিক্ষার্থীরা ক্ল্লাস করার জন্য মানববন্ধন করেছে কিন্তু তবুও শিক্ষকরা দুর্নীতিবাজ (অভিযোগকারীদের মতে) উপাচার্যের অধীনে আর ক্লাস নেবেন না। অতীতে বুয়েটের গায়ে সেশনজটের তেমন বড় কলঙ্ক না লাগলেও এবার বুঝি লাগবে পদলোভী উপাচার্যের কারণে।
দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত উপাচার্যরা বুঝি সরকারি সবুজ সংকেত পেয়েছেন। তা না হলেও তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন হচ্ছে আর সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কোনো মাথাব্যথা নেই। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীরও মাথাব্যথা হচ্ছে বলে মনে হয় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে আমি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, শিক্ষামন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীকে জরুরি উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানাই, যাতে বুয়েট ও জাবিসহ দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যমান সমস্যার সমাধান হয়। শিক্ষকদের রাজনীতিমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত করা যায়।

শরিফুল ইসলাম :শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
 

No comments

Powered by Blogger.