চিত্র-বিচিত্র by আশীষ-উর-রহমান
সপ্তসাধক লোকসংগীত আবহমানকালের বাঙালির প্রাণের সম্পদ। মাটির স্পর্শলাগা দেহাতি মানুষের মুখে মুখে ফিরতে থাকা এসব গানের মধ্য দিয়েই তাঁরা প্রকাশ করেছেন তাঁদের হূদয়ের সব আবেগ অনুভূতি, নিগূঢ় ভাবনা, আশা-নিরাশা, ক্ষোভ-বঞ্চনার অভিব্যক্তি।
সে কারণে বাংলার লোকসংগীতে বাঙালির জীবনধারার একটি বিশেষ পরিচিতিও উদ্ভাসিত। সহজ কথা, নিত্যদিন চোখে দেখা, অতিপরিচিত বিষয়বস্তুকে উপমা করে লোকসাধকেরা তাদের ভাবনা এমন করে প্রকাশ করেছেন, যা শ্রেণীনির্বিশেষে সবার কাছেই সহজবোধ ও হূদয়গ্রাহী হয়ে ওঠে। সর্বোপরি এই গানের সুর ও আঙ্গিকের বৈচিত্র্য আমাদের সংগীতভাণ্ডারকে সমৃদ্ধিশালী করে তুলেছে।
দেশের সাত বিশিষ্ট লোকসাধকের গান নিয়ে শিল্পকলা একাডেমীর আয়োজনে চলছে লোকসংগীত উত্সব। এই সাধকেরা হলেন শাহ আবদুল করিম, রাধারমণ দত্ত, বিজয় সরকার, হাছন রাজা, জালাল খাঁ, কবিয়াল রমেশ শীল ও লালন শাহ। গত ২৫ জানুয়ারি থেকে উত্সব শুরু হয়েছে। প্রতিদিন বিকেল পাঁচটায় অনুষ্ঠান শুরু। প্রথম পর্বে সাধকদের জীবন ও গান নিয়ে আলোচনা, পরে গান ও লোকনৃত্য। আজ শনিবার ও আগামীকাল রোববারও চলবে লোকসংগীতের এই উত্সব।
আবার জমবে মেলা বটতলা
মাঝখানে আর একটি দিনের অপেক্ষা মাত্র। তারপর আবার জমবে মেলা বাংলা একাডেমীর বটতলায়। সেই চেনা দৃশ্য আসবে ফিরে নাগরিক জীবনে। বিকেল হলেই দলবেঁধে বইমেলায় যাত্রা। মেলামঞ্চের আলোচনা, গানের আসর, লেখক পাঠক প্রকাশকে দিলখোলা আড্ডা, বটতলায় নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন—এসব নিয়ে সন্ধ্যাটি কেটে যাবে আলাদা আমেজে। এবার ঢাকাতেও শীত একটু বেশি আর দীর্ঘস্থায়ী, তবে তা কোনো সমস্যা হবে না গ্রন্থানুরাগীদের জন্য। টিএসসির ফুটপাতের চায়ের দোকান সদাপ্রস্তুত থাকবে পেয়ালাভরা উষ্ণতা সরবরাহে। একাডেমী জানিয়েছে, এবার মেলায় স্টল থাকবে ৪২৩টি। একাডেমীর মাঠের বাইরে এবারও স্টল বসবে এক সারি দোয়েল চত্বর থেকে টিএসসি পর্যন্ত সড়কের ফুটপাত দিয়ে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার ফেব্রুয়ারির প্রথম দিনে বিকেলে মেলার দ্বারোদ্ঘাটন করবেন। আগের নিয়মেই শুক্র ও শনিবার সকাল নয়টা থেকে এবং অন্যান্য দিন বেলা তিনটা থেকে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত মেলা খোলা থাকবে।
যুদ্ধে জয়ী হওয়ার গৌরব অনেকেরই আছে। কিন্তু মাতৃভাষার জন্য আত্মদানের ঘটনা মানব ইতিহাসে নজিরবিহীন। ফেব্রুয়ারি আমাদের জীবনের সেই অনন্য কীর্তির গৌরবে এক মহিমামণ্ডিত মাস। সেই গৌরব এখন আমাদের সঙ্গে সারা বিশ্বের মানুষও ভাগ করে নিয়েছে—আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে। আর আমাদের কাছে ফেব্রুয়ারি প্রেরণার উত্স, সাহসের আধার, প্রতিরোধের শক্তি। তাকে পেয়েছি আমাদের চেতনার অনির্বাণ দীপশিখা রূপে। তার তিমিরবিনাশী আলোয় উদ্ভাসিত পথ ধরে বাঙালি এগিয়ে যাবে অনাদিকাল সম্মুখ পানে।
শান্তির সন্ধানে
ক্যানভাসে এক স্নিগ্ধতার বুনোট রচনা করেন শিল্পী কাজী গিয়াসউদ্দিন। পরিচ্ছন্ন, পরিপাটি। অনেক যত্ন, অনেক নিষ্ঠায় পরস্ফুিটিত। সেই স্নিগ্ধতা দর্শকের হূদয়ে এমন এক প্রশান্তি ছড়িয়ে দেয়, যা শুশ্রূষার মতো অনাবিল। দীর্ঘকাল জাপানপ্রবাসী এই আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান শিল্পীর সাম্প্রতিক কাজ নিয়ে বেঙ্গল গ্যালারিতে দুই সপ্তাহের প্রদর্শনী শুরু হলো গতকাল শুক্রবার থেকে। প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বরেণ্য শিল্পী মোহাম্মদ কিবরিয়া। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশস্থ চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স হারুমিত্সু হিদা এবং প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। শান্তির সন্ধানে নামের এই প্রদর্শনীতে শিল্পকর্মের সংখ্যা ৪৭। প্রধানত তেলরঙের কাজ, জলরঙেরও আছে কয়েকটি। প্রদর্শনী চলবে আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
স্মৃতি ও দিনলিপি
সব ধরনের সংগীতেই তাঁর পারদর্শিতা উচ্চ স্তরের। তবে লোকসংগীতকে তিনি বাংলার মাঠপ্রান্তর থেকে তুলে এনে পরিবেশন করে শহুরে শ্রোতাদের কাছে জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন। এ ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অসামান্য। তিনি কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী আব্বাসউদ্দীন। অসাধারণ কণ্ঠে তিনি মাতিয়ে রেখেছিলেন তাঁর সমকালের শ্রোতাদের। এখনো তাঁর গান শ্রোতাদের তন্ময় করে রাখে। জীবনের শেষ বছরটিতে তিনি নিয়মিত দিনপঞ্জি লিখতেন। এর আগেই লিখেছিলেন আত্মজীবনী আমার শিল্পী জীবনের কথা । আত্মজীবনীটি অবশ্য প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৬০ সালে। এই দিনপঞ্জি ও আত্মজীবনী একত্রে প্রকাশিত হলো দিনলিপি ও আমার শিল্পী জীবনের কথা নামে প্রথমা প্রকাশন থেকে।
বইয়ের প্রথম অংশে আছে ১৯৫৮-৫৯ বছরের দিনলিপি। সেখানে প্রাত্যহিক ঘটনার বিবরণের পাশে তাঁর শৈশবের নানা স্মৃতি, তাঁর নিজের জীবনের আত্মিক উন্মেষেরও বিভিন্ন পর্যায় সম্পর্কে আলোচনা রয়েছে। আর স্মৃতিকথায় তো শৈশব থেকে তাঁর গানের প্রেরণা, প্রথম গ্রামোফোনে গান শোনা, শিক্ষাজীবনের ঘটনা, কর্মজীবন, কলকাতায় প্রতিষ্ঠা পাওয়া, কাজী নজরুল ইসলামের সাহচর্য, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের সাহচর্য, পল্লিসংগীত, ইসলামি গান, সিনেমার গান, জনসভায় গান গাওয়া, বিয়ে, কর্মজীবন, বিদেশভ্রমণ, মুসলমানের নবজাগরণ, পাকিস্তান সৃষ্টি এসব নানা প্রসঙ্গ তুলে ধরেছেন। ফলে তাঁর জীবন-কথা কেবল জীবনস্মৃতির মধ্যেই সীমিত থাকেনি, একটি নির্দিষ্ট সময়ের সামাজিক ইতিহাসেরও উপাদান হয়ে উঠেছে। প্রচ্ছদ এঁকেছেন শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী।
ছাপাই ছবির কর্মশালা
ছাপচিত্রের দুই দিনের কর্মশালা শুরু হয়েছে কসমস আতেলিয়ে-৭১-এ। নতুন এই গ্যালারি ৬৯/১ নিউ সার্কুলার রোডের কসমস সেন্টারে। এখানে তরুণ প্রজন্মের ছাপচিত্রের শিল্পীদের জন্য তৈরি করা হয়েছে একটি স্টুডিও। এখানে তাঁরা নিয়মিতই ছাপচিত্রের কাজ করতে পারবেন। এ ছাড়া কসমস আতেলিয়ে-৭১ দেশের গ্রাফিক আর্টের চর্চা ও বিকাশে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন। তাঁরা পর্যায়ক্রমে এমন দেশ-বিদেশের শিল্পীদের নিয়ে কর্মশালা, প্রদর্শনী, মতবিনিময়সহ নানা ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।
গৌরবের দুই যুগ
স্লোগান ‘নতুন কবিতা নতুন সময়’। এবার দুই যুগ পূর্তি হচ্ছে জাতীয় কবিতা উত্সবের। দেশে তখন ভয়ানক স্বৈরশাসন চালাচ্ছেন দোর্দণ্ড প্রতাপশালী লে জে এইচ এম এরশাদ। তিনি গণতন্ত্রকেই কেবল তাঁর বুটের তলায় চেপে রাখেননি, জাতীয় দৈনিকগুলোকে প্রথম পাতায় একই কবিতা সরকারি প্রেসনোটের মতো ছাপতে বাধ্য করে কবিখ্যাতি করায়ত্ত করতে বদ্ধপরিকর। কবিতাকে তিনি দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলেন কবিতার বিরুদ্ধে। সে সময় রুখে দাঁড়িয়েছিলেন দেশের কবিরা। সামনে ছিলেন শুভ্রকেশ, অমলিন হাস্যমুখের সেই কবি যিনি লিখেছিলেন—‘তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা’। শামসুর রাহমান। আজ তিনি নেই। স্বৈরাচারীর তখতেতাউস ভেসে গেছে প্রবল আন্দোলনে। সময়ের অনিবার্য প্রয়োজনে গড়ে ওঠা কবিদের সেই সংগঠন জাতীয় কবিতা পরিষদ ২৪তম বারের মতো আয়োজন করছে জাতীয় কবিতা উত্সব।
বরাবরের মতোই ১ ফেব্রুয়ারি দুই দিনের উত্সব শুরু হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় পাঠাগার চত্বরে। সকাল ১০টায় সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক উত্সবের উদ্বোধন করবেন। আয়োজকেরা জানিয়েছেন, এবারের উত্সবে দেশের চার শ কবির সঙ্গে ভারত, যুক্তরাজ্য ও কুয়েতের আমন্ত্রিত কবিরা অংশ নেবেন।
ভারতের সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সমরেন্দ্র সেনগুপ্ত, প্রণব চট্টোপাধ্যায়, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, শ্যামল কান্তি দাস, বিথী চট্টোপাধ্যায়, অমৃত মাইতি, স্বাতী চট্টোপাধ্যায়, অনিল সরকার, রাতুল দেব বর্মণ, চন্দ্রকান্ত মড়ার সিংয়ের অংশ নেওয়ার কথা। উত্সবে কবিরা তো কবিতা পড়বেনই, উপরন্তু থাকবে বিশিষ্ট শিল্পীদের কণ্ঠে কবিতার গান, সেমিনার ও বিগত দিনের কার্যক্রমের ওপর ভিত্তি করে আলোকচিত্র প্রদর্শনী, প্রকাশিত হবে উত্সব স্মরণিকা, পুরস্কার দেওয়া হবে একজন প্রবীণ ও একজন নবীন কবিকে।
মৌসুমি অতিথিটি চলে যাচ্ছে। অন্তত ঢাকা শহর ছেড়ে। সে হলো শীত। মোটা মোটা জামাকাপড়, কাঁথা-কম্বলের আবার এক বছর মেয়াদি বাক্সবন্দী হওয়ার সময় হয়ে এল। পুলক জাগানো দখিনা দমকা হাওয়ার ঝাপটা লাগতে শুরু করেছে গায়ে। চোখেও ঘোর ঘনাবে। গাছের শাখায় নতুন কুড়ির উন্মেষ। আমের ডাল তো আগেই ভরে উঠেছে মুকুলে মুকুলে। কোকিলও ডেকে উঠবে যেকোনো সময়। প্রকৃতি জানিয়ে দিচ্ছে বসন্ত জাগ্রত দ্বারে।
আশীষ-উর-রহমান: সাংবাদিক।
দেশের সাত বিশিষ্ট লোকসাধকের গান নিয়ে শিল্পকলা একাডেমীর আয়োজনে চলছে লোকসংগীত উত্সব। এই সাধকেরা হলেন শাহ আবদুল করিম, রাধারমণ দত্ত, বিজয় সরকার, হাছন রাজা, জালাল খাঁ, কবিয়াল রমেশ শীল ও লালন শাহ। গত ২৫ জানুয়ারি থেকে উত্সব শুরু হয়েছে। প্রতিদিন বিকেল পাঁচটায় অনুষ্ঠান শুরু। প্রথম পর্বে সাধকদের জীবন ও গান নিয়ে আলোচনা, পরে গান ও লোকনৃত্য। আজ শনিবার ও আগামীকাল রোববারও চলবে লোকসংগীতের এই উত্সব।
আবার জমবে মেলা বটতলা
মাঝখানে আর একটি দিনের অপেক্ষা মাত্র। তারপর আবার জমবে মেলা বাংলা একাডেমীর বটতলায়। সেই চেনা দৃশ্য আসবে ফিরে নাগরিক জীবনে। বিকেল হলেই দলবেঁধে বইমেলায় যাত্রা। মেলামঞ্চের আলোচনা, গানের আসর, লেখক পাঠক প্রকাশকে দিলখোলা আড্ডা, বটতলায় নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন—এসব নিয়ে সন্ধ্যাটি কেটে যাবে আলাদা আমেজে। এবার ঢাকাতেও শীত একটু বেশি আর দীর্ঘস্থায়ী, তবে তা কোনো সমস্যা হবে না গ্রন্থানুরাগীদের জন্য। টিএসসির ফুটপাতের চায়ের দোকান সদাপ্রস্তুত থাকবে পেয়ালাভরা উষ্ণতা সরবরাহে। একাডেমী জানিয়েছে, এবার মেলায় স্টল থাকবে ৪২৩টি। একাডেমীর মাঠের বাইরে এবারও স্টল বসবে এক সারি দোয়েল চত্বর থেকে টিএসসি পর্যন্ত সড়কের ফুটপাত দিয়ে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার ফেব্রুয়ারির প্রথম দিনে বিকেলে মেলার দ্বারোদ্ঘাটন করবেন। আগের নিয়মেই শুক্র ও শনিবার সকাল নয়টা থেকে এবং অন্যান্য দিন বেলা তিনটা থেকে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত মেলা খোলা থাকবে।
যুদ্ধে জয়ী হওয়ার গৌরব অনেকেরই আছে। কিন্তু মাতৃভাষার জন্য আত্মদানের ঘটনা মানব ইতিহাসে নজিরবিহীন। ফেব্রুয়ারি আমাদের জীবনের সেই অনন্য কীর্তির গৌরবে এক মহিমামণ্ডিত মাস। সেই গৌরব এখন আমাদের সঙ্গে সারা বিশ্বের মানুষও ভাগ করে নিয়েছে—আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে। আর আমাদের কাছে ফেব্রুয়ারি প্রেরণার উত্স, সাহসের আধার, প্রতিরোধের শক্তি। তাকে পেয়েছি আমাদের চেতনার অনির্বাণ দীপশিখা রূপে। তার তিমিরবিনাশী আলোয় উদ্ভাসিত পথ ধরে বাঙালি এগিয়ে যাবে অনাদিকাল সম্মুখ পানে।
শান্তির সন্ধানে
ক্যানভাসে এক স্নিগ্ধতার বুনোট রচনা করেন শিল্পী কাজী গিয়াসউদ্দিন। পরিচ্ছন্ন, পরিপাটি। অনেক যত্ন, অনেক নিষ্ঠায় পরস্ফুিটিত। সেই স্নিগ্ধতা দর্শকের হূদয়ে এমন এক প্রশান্তি ছড়িয়ে দেয়, যা শুশ্রূষার মতো অনাবিল। দীর্ঘকাল জাপানপ্রবাসী এই আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান শিল্পীর সাম্প্রতিক কাজ নিয়ে বেঙ্গল গ্যালারিতে দুই সপ্তাহের প্রদর্শনী শুরু হলো গতকাল শুক্রবার থেকে। প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বরেণ্য শিল্পী মোহাম্মদ কিবরিয়া। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশস্থ চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স হারুমিত্সু হিদা এবং প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। শান্তির সন্ধানে নামের এই প্রদর্শনীতে শিল্পকর্মের সংখ্যা ৪৭। প্রধানত তেলরঙের কাজ, জলরঙেরও আছে কয়েকটি। প্রদর্শনী চলবে আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
স্মৃতি ও দিনলিপি
সব ধরনের সংগীতেই তাঁর পারদর্শিতা উচ্চ স্তরের। তবে লোকসংগীতকে তিনি বাংলার মাঠপ্রান্তর থেকে তুলে এনে পরিবেশন করে শহুরে শ্রোতাদের কাছে জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন। এ ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অসামান্য। তিনি কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী আব্বাসউদ্দীন। অসাধারণ কণ্ঠে তিনি মাতিয়ে রেখেছিলেন তাঁর সমকালের শ্রোতাদের। এখনো তাঁর গান শ্রোতাদের তন্ময় করে রাখে। জীবনের শেষ বছরটিতে তিনি নিয়মিত দিনপঞ্জি লিখতেন। এর আগেই লিখেছিলেন আত্মজীবনী আমার শিল্পী জীবনের কথা । আত্মজীবনীটি অবশ্য প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৬০ সালে। এই দিনপঞ্জি ও আত্মজীবনী একত্রে প্রকাশিত হলো দিনলিপি ও আমার শিল্পী জীবনের কথা নামে প্রথমা প্রকাশন থেকে।
বইয়ের প্রথম অংশে আছে ১৯৫৮-৫৯ বছরের দিনলিপি। সেখানে প্রাত্যহিক ঘটনার বিবরণের পাশে তাঁর শৈশবের নানা স্মৃতি, তাঁর নিজের জীবনের আত্মিক উন্মেষেরও বিভিন্ন পর্যায় সম্পর্কে আলোচনা রয়েছে। আর স্মৃতিকথায় তো শৈশব থেকে তাঁর গানের প্রেরণা, প্রথম গ্রামোফোনে গান শোনা, শিক্ষাজীবনের ঘটনা, কর্মজীবন, কলকাতায় প্রতিষ্ঠা পাওয়া, কাজী নজরুল ইসলামের সাহচর্য, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের সাহচর্য, পল্লিসংগীত, ইসলামি গান, সিনেমার গান, জনসভায় গান গাওয়া, বিয়ে, কর্মজীবন, বিদেশভ্রমণ, মুসলমানের নবজাগরণ, পাকিস্তান সৃষ্টি এসব নানা প্রসঙ্গ তুলে ধরেছেন। ফলে তাঁর জীবন-কথা কেবল জীবনস্মৃতির মধ্যেই সীমিত থাকেনি, একটি নির্দিষ্ট সময়ের সামাজিক ইতিহাসেরও উপাদান হয়ে উঠেছে। প্রচ্ছদ এঁকেছেন শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী।
ছাপাই ছবির কর্মশালা
ছাপচিত্রের দুই দিনের কর্মশালা শুরু হয়েছে কসমস আতেলিয়ে-৭১-এ। নতুন এই গ্যালারি ৬৯/১ নিউ সার্কুলার রোডের কসমস সেন্টারে। এখানে তরুণ প্রজন্মের ছাপচিত্রের শিল্পীদের জন্য তৈরি করা হয়েছে একটি স্টুডিও। এখানে তাঁরা নিয়মিতই ছাপচিত্রের কাজ করতে পারবেন। এ ছাড়া কসমস আতেলিয়ে-৭১ দেশের গ্রাফিক আর্টের চর্চা ও বিকাশে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন। তাঁরা পর্যায়ক্রমে এমন দেশ-বিদেশের শিল্পীদের নিয়ে কর্মশালা, প্রদর্শনী, মতবিনিময়সহ নানা ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।
গৌরবের দুই যুগ
স্লোগান ‘নতুন কবিতা নতুন সময়’। এবার দুই যুগ পূর্তি হচ্ছে জাতীয় কবিতা উত্সবের। দেশে তখন ভয়ানক স্বৈরশাসন চালাচ্ছেন দোর্দণ্ড প্রতাপশালী লে জে এইচ এম এরশাদ। তিনি গণতন্ত্রকেই কেবল তাঁর বুটের তলায় চেপে রাখেননি, জাতীয় দৈনিকগুলোকে প্রথম পাতায় একই কবিতা সরকারি প্রেসনোটের মতো ছাপতে বাধ্য করে কবিখ্যাতি করায়ত্ত করতে বদ্ধপরিকর। কবিতাকে তিনি দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলেন কবিতার বিরুদ্ধে। সে সময় রুখে দাঁড়িয়েছিলেন দেশের কবিরা। সামনে ছিলেন শুভ্রকেশ, অমলিন হাস্যমুখের সেই কবি যিনি লিখেছিলেন—‘তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা’। শামসুর রাহমান। আজ তিনি নেই। স্বৈরাচারীর তখতেতাউস ভেসে গেছে প্রবল আন্দোলনে। সময়ের অনিবার্য প্রয়োজনে গড়ে ওঠা কবিদের সেই সংগঠন জাতীয় কবিতা পরিষদ ২৪তম বারের মতো আয়োজন করছে জাতীয় কবিতা উত্সব।
বরাবরের মতোই ১ ফেব্রুয়ারি দুই দিনের উত্সব শুরু হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় পাঠাগার চত্বরে। সকাল ১০টায় সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক উত্সবের উদ্বোধন করবেন। আয়োজকেরা জানিয়েছেন, এবারের উত্সবে দেশের চার শ কবির সঙ্গে ভারত, যুক্তরাজ্য ও কুয়েতের আমন্ত্রিত কবিরা অংশ নেবেন।
ভারতের সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সমরেন্দ্র সেনগুপ্ত, প্রণব চট্টোপাধ্যায়, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, শ্যামল কান্তি দাস, বিথী চট্টোপাধ্যায়, অমৃত মাইতি, স্বাতী চট্টোপাধ্যায়, অনিল সরকার, রাতুল দেব বর্মণ, চন্দ্রকান্ত মড়ার সিংয়ের অংশ নেওয়ার কথা। উত্সবে কবিরা তো কবিতা পড়বেনই, উপরন্তু থাকবে বিশিষ্ট শিল্পীদের কণ্ঠে কবিতার গান, সেমিনার ও বিগত দিনের কার্যক্রমের ওপর ভিত্তি করে আলোকচিত্র প্রদর্শনী, প্রকাশিত হবে উত্সব স্মরণিকা, পুরস্কার দেওয়া হবে একজন প্রবীণ ও একজন নবীন কবিকে।
মৌসুমি অতিথিটি চলে যাচ্ছে। অন্তত ঢাকা শহর ছেড়ে। সে হলো শীত। মোটা মোটা জামাকাপড়, কাঁথা-কম্বলের আবার এক বছর মেয়াদি বাক্সবন্দী হওয়ার সময় হয়ে এল। পুলক জাগানো দখিনা দমকা হাওয়ার ঝাপটা লাগতে শুরু করেছে গায়ে। চোখেও ঘোর ঘনাবে। গাছের শাখায় নতুন কুড়ির উন্মেষ। আমের ডাল তো আগেই ভরে উঠেছে মুকুলে মুকুলে। কোকিলও ডেকে উঠবে যেকোনো সময়। প্রকৃতি জানিয়ে দিচ্ছে বসন্ত জাগ্রত দ্বারে।
আশীষ-উর-রহমান: সাংবাদিক।
No comments