বিশেষ সাক্ষাত্কার-বড় দেশকে ছোট দেশের প্রতি উদার হতে হবে by সোমপাল শাস্ত্রী
হিমালয়ভিত্তিক নদীগুলোর ওপর এক আন্তর্জাতিক কর্মশালায় অংশ নিতে সম্প্রতি বাংলাদেশে এসেছিলেন ভারত ও নেপালের দুই সাবেক পানিসম্পদ মন্ত্রী। দুজনের দুটি সাক্ষাত্কার ছাপা হলো। সাক্ষাত্কার নিয়েছেন ইফতেখার মাহমুদ
ভারতের সাবেক কৃষি ও পানিসম্পদমন্ত্রী সোমপাল শাস্ত্রী (১৯৯৮-১৯৯৯) বর্তমানে ভারতের পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৪২ সালের ২০ জানুয়ারি জন্ম নেওয়া বর্ষীয়ান এই কংগ্রেস নেতা ভারতের কৃষিকে একটি লাভজনক খাত হিসেবে পরিণত করার পেছনে ভূমিকা রেখেছেন। বর্তমানে ভারতের কৃষি অর্থনীতি নিয়ে একটি বই লেখার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
প্রথম আলো ভারত ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে সম্প্রতি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে চুক্তি ও সমঝোতা হলো। বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?
সোমপাল শাস্ত্রী বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক অনেক দিন ধরেই টানাপোড়েনের মধ্যে ছিল। শেখ হাসিনা ও মনমোহন সিংহের সাম্প্রতিক বৈঠক ও চুক্তি হওয়া একটি ইতিবাচক অগ্রগতি। এটা দুই দেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতির ক্ষেত্রে একটি নতুন যুগের সূচনা করবে। এখন আর পেছনে যাওয়ার সুযোগ নেই। সামনের দিকে কীভাবে এগিয়ে যাওয়া যায় তা নিয়ে সবাইকে ভাবতে হবে। উদ্যোগ নিতে হবে। আরও গভীর ও সামগ্রিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য দুই দেশকে কাজ করতে হবে।
প্রথম আলো দুই দেশের মধ্যে আস্থার সম্পর্ক স্থাপনের সবগুলো শর্ত তাহলে পূরণ হয়েছে বলে মনে করেন।
সোমপাল শাস্ত্রী এত দিন আপনি ভারতের যেখানেই যাবেন বাংলাদেশ নিয়ে প্রশ্ন করলে একটি ছাড়া সব বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া পাবেন। সেই একটি বিষয় হচ্ছে, ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সন্ত্রাসী দলগুলোর বাংলাদেশে আশ্রয়-প্রশ্রয় পাওয়া। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ভারতীয় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। হাসিনা-মনমোহন সিং সন্ত্রাসীদের আশ্রয় না দেওয়ার ব্যাপারে একমত হয়েছেন। চুক্তি করেছেন। আমার মনে হয় এরপর দুই দেশের নীতি-নির্ধারক ও সাধারণ মানুষের মধ্যে আর কোনো অনাস্থা থাকার কথা নয়। অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন ও বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনাসহ অন্যান্য বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে মতৈক্য হওয়া এখন অনেক সহজ হবে।
প্রথম আলো কোন কোন বিষয় নিয়ে দুই দেশ একত্রে কাজ করতে পারে?
সোমপাল শাস্ত্রী দক্ষিণ এশিয়ার পানি সমস্যার সমাধান করতে হলে বাংলাদেশ ও ভারতের একসঙ্গে আলোচনা করা ছাড়া বিকল্প নেই। এ ছাড়া জলবিদ্যুেকন্দ্র নির্মাণ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, সেচ কৌশল, জলবায়ু পরিবর্তন ও দূষণ রোধে দুই দেশের একসঙ্গে কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে। এতে দুই দেশের সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে।
প্রথম আলো টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে বাংলাদেশে অনেক আলোচনা হচ্ছে। ভারতের রাজনৈতিক মহল ও নাগরিক সমাজ বিষয়টিকে কীভাবে দেখছে?
সোমপাল শাস্ত্রী ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য দিয়েছেন। বলেছেন, বাংলাদেশে ক্ষতি হয় এমন কোনো কিছু ভারত করবে না। বাংলাদেশের আপত্তির বিপরীতে ভারত কোনো উদ্যোগ নেবে না। আলোচনার পরবর্তী ধাপ এখন বিশেষজ্ঞদের হাতে। তাঁরা এই প্রকল্পের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবেন। দুই দেশ তাদের তথ্য-উপাত্ত নিয়ে হাজির হবে। রাজনীতিবিদদের কাজ শেষ, এখন বিশেষজ্ঞ ও আমলাদের আলোচনার পালা।
প্রথম আলো অভিন্ন নদী সমস্যার সমাধান দ্বিপক্ষীয়ভাবে সম্ভব কি না, যেখানে ভারত বড় ও প্রভাবশালী দেশ?
সোমপাল শাস্ত্রী বড় দেশ ও বৃহত্ স্থাপনা এই দুটি বিষয় অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত, একথা হয়তো ঠিক। এ ক্ষেত্রে বড় দেশকে অবশ্যই ছোট দেশগুলোর প্রতি উদার হতে হবে। সবগুলো দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে আরও বেশি উদার হতে হবে। আলোচনা ও উদ্যোগ নিলে যে সমস্যার সমাধান করা যায় সিন্ধু নদীর পানিবণ্টন নিয়ে সিন্ধু চুক্তি তার একটি ধ্রুপদী উদাহরণ। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে হওয়া এই চুক্তি বেশ সফলভাবেই বাস্তবায়ন হয়েছে ও হচ্ছে।
প্রথম আলো ভারত-পাকিস্তান রাজনৈতিকভাবে এমন বৈরী হওয়া সত্ত্বেও পানি চুক্তির বাস্তবায়নে এতটা সফল হলো কীভাবে?
সোমপাল শাস্ত্রী সিন্ধু চুক্তির ব্যাপারে একটি কমিশন গঠন করা হয়েছিল। সরকারি প্রতিনিধির বাইরেও এই কমিশনে বিজ্ঞানী, বিশেষজ্ঞ, নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা ছিলেন। তাঁরা দুই দেশের পক্ষ থেকেই চুক্তির বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণ করেছেন। এখন ভারত ও পাকিস্তানের সাধারণ মানুষই এই চুক্তির সুফল পাচ্ছে।
প্রথম আলো বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের এ পর্যন্ত যতটি চুক্তি হয়েছে তা পূর্ণাঙ্গভাবে সফল হয়নি। এ ক্ষেত্রে বাধাগুলো কী? আরও কী ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন?
সোমপাল শাস্ত্রী সিন্ধু চুক্তির ক্ষেত্রে যেভাবে ভারত ও পাকিস্তান এগিয়েছে তিস্তা ও গঙ্গার পানি চুক্তির ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ ও ভারত একইভাবে এগোতে পারে। ভারতের অবস্থান বাংলাদেশের উজানে। বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান সমস্যা উজান থেকে নেমে আসা বন্যার পানি। ফলে উজান থেকে কবে বাংলাদেশের দিকে পানি আসছে তা ৭২ ঘণ্টা আগে জানতে পারলে তা বাংলাদেশের জন্য ভালো। ফলে এ ক্ষেত্রে দুই দেশে তথ্য বিনিময়ের সম্পর্ক জোরদার করতে পারে।
প্রথম আলো নদীর পানি সুষম বণ্টন নিয়ে দুই দেশের বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতভিন্নতা আছে। কীভাবে তা দূর করা যায়?
সোমপাল শাস্ত্রী ভারতের মনিপুর, আসামসহ বেশ কিছু এলাকায় এক হাজার মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হয়। আবার মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা ও উত্তর ভারতে বার্ষিক বৃষ্টিপাত ৬০ মিলিমিটারও হয় না। অবকাঠামোর অভাবে ভারত সরকার তার সব রাজ্যে সমান পানি নিশ্চিত করতে পারছে না। বন্যা নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো তৈরি করলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হবে, ভারত নদীর স্বাভাবিক গতি প্রভাবে বাধা সৃষ্টি করছে। কিন্তু যদি উজানে বাঁধ দিয়ে নদীর পানি নিয়ন্ত্রিতভাবে ব্যবহার করা যায় তাহলে বাংলাদেশ অতিরিক্ত বন্যার কবল থেকে রক্ষা পাবে। দুই দেশের বিশেষজ্ঞদের এই সামগ্রিক বিষয়কে বিবেচনা করে পানি সমস্যার সমাধানের কথা ভাবতে হবে।
প্রথম আলো নেপালের সাবেক পানিসম্পদমন্ত্রী এ ক্ষেত্রে একই নদীর অববাহিকায় দুটি স্থাপনার বিরুদ্ধে। তিনি একটি যৌথ অবকাঠামোর মাধ্যমে পানি ব্যবস্থাপনার কথা বলছেন।
সোমপাল শাস্ত্রী সমস্যাটি একটি বা দুটি বাঁধের প্রশ্নে নয়। একটি নদীর অববাহিকায় থাকা সবগুলো দেশ আলোচনার মাধ্যমে যতটি বাঁধ প্রয়োজন মনে করবে ততটিই নির্মাণ করা হবে। তবে আলোচনা ও চুক্তি সবগুলো দেশের সংসদে নিয়ে যেতে হবে। সর্বদলীয় রাজনৈতিক মতৈক্য সৃষ্টি করে তারপর অন্য দেশের সঙ্গে চুক্তি করতে হবে। যেমন ভারতে অন্য যে কোনো দেশের সঙ্গে আলোচনা বা চুক্তির আগে বিষয়টি সংসদে উপস্থাপন করা হয়। প্রকৃত তথ্য সব রাজনৈতিক দলের সামনে উপস্থাপন করা হয়। কোনো বিষয় নিয়ে লুকোছাপা করা হয় না।
প্রথম আলো কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর তো আলাদা আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি ও বিদেশনীতি থাকে। একটি দেশের সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে কতটা সার্বজনীন মতৈক্য তৈরি সম্ভব?
সোমপাল শাস্ত্রী ভারতে অনেক বছর ধরেই কোয়ালিশন সরকার ক্ষমতায় থাকছে। বর্তমানে কংগ্রেসের নেতৃত্বে ২০টি রাজনৈতিক দলের কোয়ালিশন ক্ষমতায় রয়েছে। সব দলেরই আলাদা রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও উদ্দেশ্য রয়েছে। কিন্তু তারা যখন জাতীয় স্বার্থ নিয়ে আলোচনা করে ও বিদেশের সঙ্গে কোনো আলোচনায় যায় তখন দ্রুত একমত হয়। সরকার পাল্টালেও বিদেশনীতি একই থাকে। কারণ প্রতিটি বিষয়ে রাজ্যসভা থেকে লোকসভা পর্যন্ত প্রতিটি স্থানে আলোচনা করে সামনের দিকে এগোনো হয়। নিজেদের মধ্যে বিভেদ রেখে অন্য দেশের সঙ্গে কোনো টেকসই চুক্তি সম্ভব নয়।
প্রথম আলো আপনাকে ধন্যবাদ।
সোমপাল শাস্ত্রী আপনাকেও ধন্যবাদ।
প্রথম আলো ভারত ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে সম্প্রতি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে চুক্তি ও সমঝোতা হলো। বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?
সোমপাল শাস্ত্রী বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক অনেক দিন ধরেই টানাপোড়েনের মধ্যে ছিল। শেখ হাসিনা ও মনমোহন সিংহের সাম্প্রতিক বৈঠক ও চুক্তি হওয়া একটি ইতিবাচক অগ্রগতি। এটা দুই দেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতির ক্ষেত্রে একটি নতুন যুগের সূচনা করবে। এখন আর পেছনে যাওয়ার সুযোগ নেই। সামনের দিকে কীভাবে এগিয়ে যাওয়া যায় তা নিয়ে সবাইকে ভাবতে হবে। উদ্যোগ নিতে হবে। আরও গভীর ও সামগ্রিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য দুই দেশকে কাজ করতে হবে।
প্রথম আলো দুই দেশের মধ্যে আস্থার সম্পর্ক স্থাপনের সবগুলো শর্ত তাহলে পূরণ হয়েছে বলে মনে করেন।
সোমপাল শাস্ত্রী এত দিন আপনি ভারতের যেখানেই যাবেন বাংলাদেশ নিয়ে প্রশ্ন করলে একটি ছাড়া সব বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া পাবেন। সেই একটি বিষয় হচ্ছে, ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সন্ত্রাসী দলগুলোর বাংলাদেশে আশ্রয়-প্রশ্রয় পাওয়া। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ভারতীয় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। হাসিনা-মনমোহন সিং সন্ত্রাসীদের আশ্রয় না দেওয়ার ব্যাপারে একমত হয়েছেন। চুক্তি করেছেন। আমার মনে হয় এরপর দুই দেশের নীতি-নির্ধারক ও সাধারণ মানুষের মধ্যে আর কোনো অনাস্থা থাকার কথা নয়। অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন ও বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনাসহ অন্যান্য বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে মতৈক্য হওয়া এখন অনেক সহজ হবে।
প্রথম আলো কোন কোন বিষয় নিয়ে দুই দেশ একত্রে কাজ করতে পারে?
সোমপাল শাস্ত্রী দক্ষিণ এশিয়ার পানি সমস্যার সমাধান করতে হলে বাংলাদেশ ও ভারতের একসঙ্গে আলোচনা করা ছাড়া বিকল্প নেই। এ ছাড়া জলবিদ্যুেকন্দ্র নির্মাণ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, সেচ কৌশল, জলবায়ু পরিবর্তন ও দূষণ রোধে দুই দেশের একসঙ্গে কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে। এতে দুই দেশের সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে।
প্রথম আলো টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে বাংলাদেশে অনেক আলোচনা হচ্ছে। ভারতের রাজনৈতিক মহল ও নাগরিক সমাজ বিষয়টিকে কীভাবে দেখছে?
সোমপাল শাস্ত্রী ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য দিয়েছেন। বলেছেন, বাংলাদেশে ক্ষতি হয় এমন কোনো কিছু ভারত করবে না। বাংলাদেশের আপত্তির বিপরীতে ভারত কোনো উদ্যোগ নেবে না। আলোচনার পরবর্তী ধাপ এখন বিশেষজ্ঞদের হাতে। তাঁরা এই প্রকল্পের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবেন। দুই দেশ তাদের তথ্য-উপাত্ত নিয়ে হাজির হবে। রাজনীতিবিদদের কাজ শেষ, এখন বিশেষজ্ঞ ও আমলাদের আলোচনার পালা।
প্রথম আলো অভিন্ন নদী সমস্যার সমাধান দ্বিপক্ষীয়ভাবে সম্ভব কি না, যেখানে ভারত বড় ও প্রভাবশালী দেশ?
সোমপাল শাস্ত্রী বড় দেশ ও বৃহত্ স্থাপনা এই দুটি বিষয় অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত, একথা হয়তো ঠিক। এ ক্ষেত্রে বড় দেশকে অবশ্যই ছোট দেশগুলোর প্রতি উদার হতে হবে। সবগুলো দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে আরও বেশি উদার হতে হবে। আলোচনা ও উদ্যোগ নিলে যে সমস্যার সমাধান করা যায় সিন্ধু নদীর পানিবণ্টন নিয়ে সিন্ধু চুক্তি তার একটি ধ্রুপদী উদাহরণ। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে হওয়া এই চুক্তি বেশ সফলভাবেই বাস্তবায়ন হয়েছে ও হচ্ছে।
প্রথম আলো ভারত-পাকিস্তান রাজনৈতিকভাবে এমন বৈরী হওয়া সত্ত্বেও পানি চুক্তির বাস্তবায়নে এতটা সফল হলো কীভাবে?
সোমপাল শাস্ত্রী সিন্ধু চুক্তির ব্যাপারে একটি কমিশন গঠন করা হয়েছিল। সরকারি প্রতিনিধির বাইরেও এই কমিশনে বিজ্ঞানী, বিশেষজ্ঞ, নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা ছিলেন। তাঁরা দুই দেশের পক্ষ থেকেই চুক্তির বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণ করেছেন। এখন ভারত ও পাকিস্তানের সাধারণ মানুষই এই চুক্তির সুফল পাচ্ছে।
প্রথম আলো বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের এ পর্যন্ত যতটি চুক্তি হয়েছে তা পূর্ণাঙ্গভাবে সফল হয়নি। এ ক্ষেত্রে বাধাগুলো কী? আরও কী ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন?
সোমপাল শাস্ত্রী সিন্ধু চুক্তির ক্ষেত্রে যেভাবে ভারত ও পাকিস্তান এগিয়েছে তিস্তা ও গঙ্গার পানি চুক্তির ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ ও ভারত একইভাবে এগোতে পারে। ভারতের অবস্থান বাংলাদেশের উজানে। বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান সমস্যা উজান থেকে নেমে আসা বন্যার পানি। ফলে উজান থেকে কবে বাংলাদেশের দিকে পানি আসছে তা ৭২ ঘণ্টা আগে জানতে পারলে তা বাংলাদেশের জন্য ভালো। ফলে এ ক্ষেত্রে দুই দেশে তথ্য বিনিময়ের সম্পর্ক জোরদার করতে পারে।
প্রথম আলো নদীর পানি সুষম বণ্টন নিয়ে দুই দেশের বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতভিন্নতা আছে। কীভাবে তা দূর করা যায়?
সোমপাল শাস্ত্রী ভারতের মনিপুর, আসামসহ বেশ কিছু এলাকায় এক হাজার মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হয়। আবার মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা ও উত্তর ভারতে বার্ষিক বৃষ্টিপাত ৬০ মিলিমিটারও হয় না। অবকাঠামোর অভাবে ভারত সরকার তার সব রাজ্যে সমান পানি নিশ্চিত করতে পারছে না। বন্যা নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো তৈরি করলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হবে, ভারত নদীর স্বাভাবিক গতি প্রভাবে বাধা সৃষ্টি করছে। কিন্তু যদি উজানে বাঁধ দিয়ে নদীর পানি নিয়ন্ত্রিতভাবে ব্যবহার করা যায় তাহলে বাংলাদেশ অতিরিক্ত বন্যার কবল থেকে রক্ষা পাবে। দুই দেশের বিশেষজ্ঞদের এই সামগ্রিক বিষয়কে বিবেচনা করে পানি সমস্যার সমাধানের কথা ভাবতে হবে।
প্রথম আলো নেপালের সাবেক পানিসম্পদমন্ত্রী এ ক্ষেত্রে একই নদীর অববাহিকায় দুটি স্থাপনার বিরুদ্ধে। তিনি একটি যৌথ অবকাঠামোর মাধ্যমে পানি ব্যবস্থাপনার কথা বলছেন।
সোমপাল শাস্ত্রী সমস্যাটি একটি বা দুটি বাঁধের প্রশ্নে নয়। একটি নদীর অববাহিকায় থাকা সবগুলো দেশ আলোচনার মাধ্যমে যতটি বাঁধ প্রয়োজন মনে করবে ততটিই নির্মাণ করা হবে। তবে আলোচনা ও চুক্তি সবগুলো দেশের সংসদে নিয়ে যেতে হবে। সর্বদলীয় রাজনৈতিক মতৈক্য সৃষ্টি করে তারপর অন্য দেশের সঙ্গে চুক্তি করতে হবে। যেমন ভারতে অন্য যে কোনো দেশের সঙ্গে আলোচনা বা চুক্তির আগে বিষয়টি সংসদে উপস্থাপন করা হয়। প্রকৃত তথ্য সব রাজনৈতিক দলের সামনে উপস্থাপন করা হয়। কোনো বিষয় নিয়ে লুকোছাপা করা হয় না।
প্রথম আলো কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর তো আলাদা আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি ও বিদেশনীতি থাকে। একটি দেশের সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে কতটা সার্বজনীন মতৈক্য তৈরি সম্ভব?
সোমপাল শাস্ত্রী ভারতে অনেক বছর ধরেই কোয়ালিশন সরকার ক্ষমতায় থাকছে। বর্তমানে কংগ্রেসের নেতৃত্বে ২০টি রাজনৈতিক দলের কোয়ালিশন ক্ষমতায় রয়েছে। সব দলেরই আলাদা রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও উদ্দেশ্য রয়েছে। কিন্তু তারা যখন জাতীয় স্বার্থ নিয়ে আলোচনা করে ও বিদেশের সঙ্গে কোনো আলোচনায় যায় তখন দ্রুত একমত হয়। সরকার পাল্টালেও বিদেশনীতি একই থাকে। কারণ প্রতিটি বিষয়ে রাজ্যসভা থেকে লোকসভা পর্যন্ত প্রতিটি স্থানে আলোচনা করে সামনের দিকে এগোনো হয়। নিজেদের মধ্যে বিভেদ রেখে অন্য দেশের সঙ্গে কোনো টেকসই চুক্তি সম্ভব নয়।
প্রথম আলো আপনাকে ধন্যবাদ।
সোমপাল শাস্ত্রী আপনাকেও ধন্যবাদ।
No comments