রাষ্ট্রপক্ষের মত, গাড়ি পোড়ানোর মামলাটি স্বাভাবিক গতিতেই চলছে-একটি মামলায় অবিশ্বাস্য গতি by প্রশান্ত কর্মকার

ঘটনা ২৯ এপ্রিলের (২০১২)। সেদিনই দ্রুত বিচার আইনে মামলা। মাত্র ১১ দিনের মাথায় অভিযোগপত্র জমা। পরের ১১ দিনের মাথায় অভিযোগপত্র গ্রহণ। বিরোধী দলের ৪২ নেতার বিরুদ্ধে একটি মামলা এভাবে অবিশ্বাস্য দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে চলেছে। অভিযোগ, হরতালের দিন রাতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে গাড়ি পোড়ানো।


প্রধান বিরোধী দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামসহ ১৮ দলীয় জোটের শীর্ষস্থানীয় ৪২ জন নেতাকে আসামি করা হয়েছে। অন্য দুজন বাসের কর্মী, আরেকজন পথচারী। বাসচালককে সাক্ষী করা হয়েছে।
বিরোধী দল-সমর্থক আইনজীবীরা বলছেন, এ সরকারের আমলে দ্রুত বিচার আইনে মোট পাঁচটি মামলা করা হয়। সবগুলোই রাজনৈতিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে। কিন্তু সর্বশেষ গাড়ি পোড়ানোর মামলাটির ক্ষেত্রে অবিশ্বাস্য গতি লক্ষণীয়।
তবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের মত, দ্রুত বিচার আইনের আওতায় স্বাভাবিক গতিতে মামলাটি চলছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রবীণ আইনজীবী রফিক-উল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এ মামলা করা হয়েছে। সাধারণত এ ধরনের মামলায় জামিন দেওয়া হয়। কিন্তু এ মামলায় এখন পর্যন্ত জামিন হয়নি। আশা করা যায়, বুধবার জামিন হয়ে যাবে।’
এত দ্রুতগতির কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে পুলিশের অপরাধ তথ্য ও প্রসিকিউশন শাখার অতিরিক্ত কমিশনার আনিসুর রহমান বলেন, দ্রুত বিচার আইনে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পুলিশ তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০০২ সালের এপ্রিল থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত দ্রুত বিচার আইনে পাঁচ হাজার ৮৮১টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ হাজার ৭১৪টি মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। আর চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে ১৩৮টির। এখনো এক হাজার ৪২৪টি মামলা বিচারাধীন। দুই হাজার ৬৩৭টি মামলায় সাজা হয়েছে। আর এক হাজার ৬৫৩টিতে আসামিরা খালাস পেয়েছেন। তবে এসব মামলায় কোনো রাজনৈতিক দলের প্রথম সারির নেতাদের আসামি করা হয়নি বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন।
বিএনপির নিখোঁজ নেতা ইলিয়াস আলীকে উদ্ধারের দাবিতে গত ২৯ এপ্রিল হরতাল ডাকে বিএনপি। সেদিন রাতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অদূরে ফ্যালকন টাওয়ারের সামনে একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। এ ঘটনায় পুলিশ তেজগাঁও থানায় বিএনপিসহ ১৮ দলীয় নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে মামলা করেন। মির্জা ফখরুল ইসলামসহ ৩৩ জন নেতা ১৩ মে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। আদালত তা নাকচ করে তাঁদের কারাগারে পাঠিয়ে দেন। পরে ২১ মে আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন। আজ বুধবার মহানগর দায়রা জজ আদালতে আসামিদের জামিন আবেদনের শুনানি রয়েছে।
গাড়ি পোড়ানোর মামলা ছাড়াও গত এপ্রিলে বিএনপি ও জোটের নেতাদের বিরুদ্ধে রাজধানীর মিরপুর থানায় দুটি এবং যাত্রাবাড়ী ও বনানী থানায় একটি করে মামলা হয়। দ্রুত বিচার আইনে করা এসব মামলারও অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। তবে এ মামলাগুলো পরিচালনার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপক্ষের তেমন আগ্রহ নেই।
এপ্রিল মাসে দ্রুত বিচার আইন ছাড়াও বিভিন্ন আইনে বিএনপি জোটের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে আরও ১৭টি মামলা হয়েছে। এগুলোর অধিকাংশই তদন্তাধীন।
গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীর পল্টন ও রমনা থানা এলাকায় পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে রমনা ও পল্টন থানার পুলিশের কর্তব্যকাজে বাধার অভিযোগ এবং দ্রুত বিচার আইনে পাঁচটি মামলা করে পুলিশ। ঘটনার আট দিন পর ২৮ সেপ্টেম্বর দ্রুত বিচার আইনের ৪ ও ৫ ধারায় অভিযোগপত্র দাখিল করে রমনা মডেল থানার পুলিশ ও পল্টন থানার পুলিশ। কিন্তু মামলা দুটির কার্যক্রম হাইকোর্টের নির্দেশে স্থগিত রয়েছে।
দ্রুত বিচার আইনে একটি মামলার অভিযোগপত্র ১৫ দিনের মধ্যে জমা দিতে হয়। আর অভিযোগপত্র গ্রহণের ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে বিচারকাজ শেষ করতে হয়। তবে আসামি পলাতক থাকলে ৬০ কার্যদিবসে শেষ করতে হয়। ২০০২ সালে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে দ্রুত বিচার আইনটি করা হয়। আর আইন করার এক বছরের মধ্যে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে এ আইনে অন্তত পাঁচ শতাধিক মামলা করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.