চারদিক-জানালার ওপারের দূর পাহাড়ে... by শান্তা তাওহিদা
বদ্ধ ঘরটার জানালার পাশে বসে অমলের ইচ্ছে হয়, লেজের ওপর ভর করে যেখানে বসে কাঠবিড়ালিটা কুটুস কুটুস করে খাচ্ছে। ভারি ইচ্ছে করে জানালার কাছে বসে সেই যে দূর পাহাড়টা দেখা যায়, ওই পাহাড়টা পার হয়ে যেতে। অমল মনে মনে ভাবে, ‘... পৃথিবীটা তো কথা কইতে পারে না তাই অমনি করে নীল আকাশে হাত তুলে ডাকে...।’
কিন্তু সে ডাকে অমল ছুটে যেতে পারে না। তার যে বাইরে যাওয়া বারণ। কবিরাজ মশাই পই পই করে বারণ করেছেন ঘর থেকে বের হতে। কী এক অসুখ করেছে তার।
...রবি ঠাকুরের ডাকঘর-এর ছোট্ট অমলকে এভাবে গালে হাত দিয়ে বসে থাকতে দেখলাম কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তনের মঞ্চে। দেখে ভারি মায়া হচ্ছিল আমার। আমিও ফিরে গিয়েছিলাম আমার প্রিয় শৈশবে।
আনন্দ নিকেতন ইউরোপিয়ান স্কুলের বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে স্কুলে শিশুরা মঞ্চস্থ করছিল বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ডাকঘর অমলরূপী ছোট্ট অদ্রি ততক্ষণে গালে হাত দিয়ে জানালার পাশেই ঘুমিয়ে পড়েছে। তার স্বপ্ন হয়ে এল স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণীর শিশুরা ‘গ্রাম ছাড়া ওই রাঙা মাটির পথ’ গান নিয়ে। অমলের স্বপ্নে লাল টুকটুকে শাড়ি পরে কোমরে বিছা নাচিয়ে একতারা হাতে নেচে গেল তৃতীয় শ্রেণীর শিশুরা।
...দই— দই— ভালো দই! দইওয়ালার ডাকে ঘুম ভাঙল অমলের। দইওয়ালার কাঁধে এক বাঁশের লাঠি। লাঠির আগায় পুটুলি বাঁধা। তার এক হাতে একটা ঘটি। পুরোনো এক জোড়া নাগরা জুতো পরে সে এই মাঠের পথ দিয়ে ওই পাহাড়ের দিকেই যাচ্ছিল। অমলের ডাক শুনে এগিয়ে গেল তার দিকে। এই দইওয়ালা হচ্ছে ছোট্ট রিমঝিম। চেনাই যাচ্ছিল না তাকে। একেবারে খাঁটি দইওয়ালা।
যা-ই হোক, দইওয়ালার কি আর বসে থাকার জো আছে? কত কাজ! কথা শেষ করে ধরল আপন পথ। আবারও একলা অমল। ভাবছে সে মনে মনে পাখি হতে পারলে হতো বেশ... বন্দী হয়ে থাকতে হতো না বদ্ধ ঘরে। তার ভাবনার ভেতর ‘হারে রে রে রে আমায় ছেড়ে দেরে’ গান নিয়ে আসল তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর শিশুরা।
দর্শক সারিতে বসে থাকা অভিভাবকদের মধ্যে খুঁজে পাওয়া গেল প্রজ্ঞা লাবণীকে। এগিয়ে গেলাম তাঁর দিকে... কেমন লাগছে?
‘বেশ ভালো লাগছে। রবীন্দ্রনাথের লেখা তো সর্বকালেই সেরা। ছোট সোনামণিরা যে এত সুন্দর অভিনয় করছে, এত চমত্কার বাংলা বলছে, তা প্রশংসা না করে থাকার কোনো উপায়ই নেই।’ ‘আরে আরে... এ যে তেপান্তর...’ প্রহরী বেশে কালো গোঁফের আড়ালে তেপান্তরকে দেখে তার মা প্রজ্ঞা লাবণী নিজেই অবাক। বল্লম উঁচিয়ে রাস্তায় পায়চারী করে বেড়াচ্ছিল প্রহরী। তাকে দেখে ডেকে উঠল অমল। তার কাছেই শুনল রাজার ডাকঘরের কথা, শুনল বুকে গোল গোল সোনার তকমা পরা ডাক হরকরার গল্প। পথ দিয়ে যাচ্ছিল মোড়ল মশাই। না দুষ্ট মোড়লের সঙ্গে ভাব জমাতে পারল না অমল। মালিনী মেয়ে সুধা যাচ্ছিল লম্বা বেনুনি দুলিয়ে ফুল তুলতে। অমলের সঙ্গে কথা বলার সময় হয়নি তার। সবার কত কাজ, অমল বসে বসে ভাবে। তার একবার দইওয়ালা হওয়ার সাধ জাগে, আবার ইচ্ছে হয় প্রহরী হওয়ার... না না, রাজার ডাকহরকরা হতে পারলে বেশি ভালো হতো... ভাবতে ভাবতে অমলের দিন পেরোয়। অমল রাজার চিঠির অপেক্ষায় থাকে...।
‘আমরা বাঙালি, আমাদের শেকড় এই বাংলা ভাষা। তাই আমাদের নিজের সংস্কৃতি, নিজের ভাষা সবার আগে। ভাষা আন্দোলনে যাঁরা আত্মত্যাগ করেছেন, তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আমাদের ছোট সোনামণিদের দিয়ে আজকের এ আয়োজন। ইংরেজি আন্তর্জাতিক ভাষা, তাই এটি আয়ত্ত করার অবশ্যই প্রয়োজন আছে কিন্তু সেটা বাংলাকে উপেক্ষা করে নয় বরং বাংলাকে পাশে রেখে।’ নাটক শেষে বলছিলেন আনন্দ নিকেতন ইউরোপিয়ান স্কুলের প্রিন্সিপাল মাহমুদ হাসান। মঞ্চে তখন স্কুলের শিশুরা সমবেত স্বরে গাইছিল ‘হে আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে...।’
৫ ফেব্রুয়ারি আনন্দ নিকেতন ইউরোপিয়ান স্কুলের শিশুরা অমল চরিত্রের ভেতর দিয়ে জানালার বাইরের দৃশ্যমান জগত থেকে অদৃশ্যমান জগতের কল্পনায় ছিল ব্যস্ত। যেখানে প্রকৃতি আর পাহাড় তাদের ডাকে হাতছানি দিয়ে দিগন্তে মিলিয়ে যেতে।
...রবি ঠাকুরের ডাকঘর-এর ছোট্ট অমলকে এভাবে গালে হাত দিয়ে বসে থাকতে দেখলাম কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তনের মঞ্চে। দেখে ভারি মায়া হচ্ছিল আমার। আমিও ফিরে গিয়েছিলাম আমার প্রিয় শৈশবে।
আনন্দ নিকেতন ইউরোপিয়ান স্কুলের বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে স্কুলে শিশুরা মঞ্চস্থ করছিল বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ডাকঘর অমলরূপী ছোট্ট অদ্রি ততক্ষণে গালে হাত দিয়ে জানালার পাশেই ঘুমিয়ে পড়েছে। তার স্বপ্ন হয়ে এল স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণীর শিশুরা ‘গ্রাম ছাড়া ওই রাঙা মাটির পথ’ গান নিয়ে। অমলের স্বপ্নে লাল টুকটুকে শাড়ি পরে কোমরে বিছা নাচিয়ে একতারা হাতে নেচে গেল তৃতীয় শ্রেণীর শিশুরা।
...দই— দই— ভালো দই! দইওয়ালার ডাকে ঘুম ভাঙল অমলের। দইওয়ালার কাঁধে এক বাঁশের লাঠি। লাঠির আগায় পুটুলি বাঁধা। তার এক হাতে একটা ঘটি। পুরোনো এক জোড়া নাগরা জুতো পরে সে এই মাঠের পথ দিয়ে ওই পাহাড়ের দিকেই যাচ্ছিল। অমলের ডাক শুনে এগিয়ে গেল তার দিকে। এই দইওয়ালা হচ্ছে ছোট্ট রিমঝিম। চেনাই যাচ্ছিল না তাকে। একেবারে খাঁটি দইওয়ালা।
যা-ই হোক, দইওয়ালার কি আর বসে থাকার জো আছে? কত কাজ! কথা শেষ করে ধরল আপন পথ। আবারও একলা অমল। ভাবছে সে মনে মনে পাখি হতে পারলে হতো বেশ... বন্দী হয়ে থাকতে হতো না বদ্ধ ঘরে। তার ভাবনার ভেতর ‘হারে রে রে রে আমায় ছেড়ে দেরে’ গান নিয়ে আসল তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর শিশুরা।
দর্শক সারিতে বসে থাকা অভিভাবকদের মধ্যে খুঁজে পাওয়া গেল প্রজ্ঞা লাবণীকে। এগিয়ে গেলাম তাঁর দিকে... কেমন লাগছে?
‘বেশ ভালো লাগছে। রবীন্দ্রনাথের লেখা তো সর্বকালেই সেরা। ছোট সোনামণিরা যে এত সুন্দর অভিনয় করছে, এত চমত্কার বাংলা বলছে, তা প্রশংসা না করে থাকার কোনো উপায়ই নেই।’ ‘আরে আরে... এ যে তেপান্তর...’ প্রহরী বেশে কালো গোঁফের আড়ালে তেপান্তরকে দেখে তার মা প্রজ্ঞা লাবণী নিজেই অবাক। বল্লম উঁচিয়ে রাস্তায় পায়চারী করে বেড়াচ্ছিল প্রহরী। তাকে দেখে ডেকে উঠল অমল। তার কাছেই শুনল রাজার ডাকঘরের কথা, শুনল বুকে গোল গোল সোনার তকমা পরা ডাক হরকরার গল্প। পথ দিয়ে যাচ্ছিল মোড়ল মশাই। না দুষ্ট মোড়লের সঙ্গে ভাব জমাতে পারল না অমল। মালিনী মেয়ে সুধা যাচ্ছিল লম্বা বেনুনি দুলিয়ে ফুল তুলতে। অমলের সঙ্গে কথা বলার সময় হয়নি তার। সবার কত কাজ, অমল বসে বসে ভাবে। তার একবার দইওয়ালা হওয়ার সাধ জাগে, আবার ইচ্ছে হয় প্রহরী হওয়ার... না না, রাজার ডাকহরকরা হতে পারলে বেশি ভালো হতো... ভাবতে ভাবতে অমলের দিন পেরোয়। অমল রাজার চিঠির অপেক্ষায় থাকে...।
‘আমরা বাঙালি, আমাদের শেকড় এই বাংলা ভাষা। তাই আমাদের নিজের সংস্কৃতি, নিজের ভাষা সবার আগে। ভাষা আন্দোলনে যাঁরা আত্মত্যাগ করেছেন, তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আমাদের ছোট সোনামণিদের দিয়ে আজকের এ আয়োজন। ইংরেজি আন্তর্জাতিক ভাষা, তাই এটি আয়ত্ত করার অবশ্যই প্রয়োজন আছে কিন্তু সেটা বাংলাকে উপেক্ষা করে নয় বরং বাংলাকে পাশে রেখে।’ নাটক শেষে বলছিলেন আনন্দ নিকেতন ইউরোপিয়ান স্কুলের প্রিন্সিপাল মাহমুদ হাসান। মঞ্চে তখন স্কুলের শিশুরা সমবেত স্বরে গাইছিল ‘হে আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে...।’
৫ ফেব্রুয়ারি আনন্দ নিকেতন ইউরোপিয়ান স্কুলের শিশুরা অমল চরিত্রের ভেতর দিয়ে জানালার বাইরের দৃশ্যমান জগত থেকে অদৃশ্যমান জগতের কল্পনায় ছিল ব্যস্ত। যেখানে প্রকৃতি আর পাহাড় তাদের ডাকে হাতছানি দিয়ে দিগন্তে মিলিয়ে যেতে।
No comments