ব্যক্তিগত দ্বেষ বা উসকানিমূলক বক্তব্য কাম্য নয়-বিরোধী দলের সংসদে যাওয়া

অনেক বাগিবতণ্ডা ও কালক্ষেপণের পর বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট জাতীয় সংসদে যোগদানের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাকে আমরা স্বাগত জানাই। জনগণ আশা করে, তারা পরবর্তী কার্যদিবসেই অধিবেশনে যোগ দিয়ে সংসদকে কার্যকর করতে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে।


নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দলই সংসদকে রাজনীতির কেন্দ্র করার গালভরা প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে উল্টো পথেই হাঁটছে। সরকারি ও বিরোধী দলের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া সংসদ কার্যকর হতে পারে না। দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র চালু থাকলেও আমাদের নেতা-নেত্রীদের মধ্যে গণতন্ত্র অনুশীলনের খুব অভাব রয়েছে।
গত তিনটি সংসদে বিরোধী দলের লাগাতার সংসদ বর্জন এবং সরকারি দলের অসহিষ্ণুতা সংসদীয় ব্যবস্থাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এক-এগারোর পর আশা করা গিয়েছিল, রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আসবে। কিন্তু বাস্তবে তার কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না, যদিও নবম জাতীয় সংসদের সূচনাটা ভালোই ছিল। উদ্বোধনী অধিবেশনে বিরোধী দলের উপস্থিতি জনমনে আশাও জাগিয়েছিল। তার পরই রথ উল্টো পথে চলতে থাকে। সামনের সারিতে বাড়তি আসন পাওয়ার মতো ঠুনকো দাবিতে বিরোধী দল সংসদ বর্জন অব্যাহত রাখে। তাদের দাবির পক্ষে হয়তো যুক্তি আছে। তাই বলে সংসদ বর্জন করতে হবে? সরকারি দল অন্যায়ভাবে প্রথম সারির আসন কেড়ে নিলে তার প্রতিবাদ জানানোর উপযুক্ত স্থানই হলো সংসদ। বিরোধী দলের চিফ হুইপ বলেছেন, দেশের বৃহত্তর স্বার্থে এবং জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনার উদ্দেশ্যে তাঁরা সংসদে যোগ দিচ্ছেন। তাঁদের এ মনোভাব কেবল কথায় নয়, কাজেও দেখতে চায় দেশবাসী। সরকারি দলেরও উচিত হবে না এমন কিছু করা, যাতে বিরোধী দল ফের সংসদ বর্জনের সুযোগ পায়।
স্পিকার ও সরকারি দলের নেতারা আশ্বস্ত করেছেন, বিরোধী দল নির্বিঘ্নে সংসদে কথা বলতে পারবে। সংসদে সরকারি দলের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। তা সত্ত্বেও বিরোধী দলকে উপেক্ষা করা ঠিক হবে না। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে আইন করলেই যে তার ফল ভালো হবে, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। উদাহরণ হিসেবে সংবিধানের চতুর্থ ও পঞ্চম সংশোধনীর কথা উল্লেখ করা যায়। দুটো সংশোধনীই সংসদে অনুমোদিত হয়েছিল বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায়। কালের নিরিখে তা টেকেনি। আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে এসব বিবেচনায় রাখতে হবে সরকারি দলকে।
অনেক সময় সংসদে ব্যক্তিগত দ্বেষ ও উসকানিমূলক বক্তব্য রাখা হয়, যা গণতান্ত্রিক রীতির পরিপন্থী। এ ব্যাপারে সরকারি ও বিরোধী দলকে আরও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। তাদের মনে রাখতে হবে, সংসদ গালমন্দ করার জায়গা নয়। জনগণের কষ্টার্জিত অর্থেই এ সংসদ পরিচালিত হয়, তাদের কাছে সাংসদদের দায়বদ্ধতার কথাটিও ভুলে গেলে চলবে না।
আমরা বিরোধী দলের সংসদে যোগদানের সিদ্ধান্তকে অভিনন্দন জানিয়েও যে কথাটি জোর দিয়ে বলতে চাই তা হলো, তাদের এ যোগদান যেন সাময়িক বা সদস্যপদ রক্ষার জন্য না হয়। মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা সংসদে থেকে অর্পিত দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হবে—এটাই প্রত্যাশিত।

No comments

Powered by Blogger.