অধিকার-নাগরিকরা ভালোবোধ করার নিশ্চয়তা চায় by আসিফ কবীর
জনপ্রতিনিধি ও নানা পর্যায়ের নেতৃত্বের ভ্রান্তিতে হেরে গেলে প্রতিপক্ষের হাতে নিরীহ কর্মী সমর্থকদের জীবন বিপন্ন হওয়ার শতভাগ ঝুঁুকি থাকবে। সেটাই ক্ষমতা থেকে দূরবর্তী সাধারণ মানুষের পরামর্শদানের, ভালো-মন্দ নিয়ে বক্তব্য প্রতিষ্ঠার কিংবা আবেগ-অনুভূতির মূল্যায়নের অনিবার্যতা তৈরি করেছে
সংসদীয় ব্যবস্থার সরকারের পীঠস্থান নির্বাচিত সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত সংসদ। চলতি নবম সংসদের তিন বছর পূর্তি হলো পঁচিশ জানুয়ারি। ইতিপূর্বে একটি সংসদের মেয়াদ শেষেই সরকারের মেয়াদ শেষ হতো। পনেরতম সংশোধনী অনুসারে চলতি সংসদের পাঁচ বছর মেয়াদের মধ্যে নির্বাচনের মাধ্যমে পরবর্তী সংসদের সদস্য নির্বাচন তথা গঠন হবে।
আমরা এখন বাজেট অধিবেশনের জন্য অপেক্ষমাণ। এরই মধ্যে শপথগ্রহণের দিন (৬ জানুয়ারি ২০০৯) থেকে ৬ মে সরকারের চলি্লশ মাস পূর্ণ হলো। এখন থেকে সরকারের মেয়াদ আছে আঠারো মাস। এক/এগারো-পরবর্তী সরকার মাত্র দু'বছরে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানসহ রাজনৈতিক-প্রশাসনিক ক্ষেত্রে আলোচিত অগণন পদক্ষেপ নিয়েছিল। বাস্তববোধ ও নৈয়ায়িক ঘাটতির দোষে তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে সফল হতে পারেনি, সে অন্য আলোচনা।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার নিজেরাই তিন মাস মেয়াদ কমিয়ে আগেভাগেই পরবর্তী সংসদের কার্যক্রম শুরুর সাংবিধানিক ব্যবস্থা নিয়েছে। নিয়মতান্ত্রিক কাজে সীমাবদ্ধ রাজনৈতিক সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। ভোটগ্রহণ হতে পারে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে। এ দুই বিষয় নিয়েই বিএনপি ও সমমনাদের আপত্তি আছে। তবে আওয়ামী লীগ ও তার জোটের শরিকদের এমন বোধ করার কারণ নেই যে, তাদের অধীনে নির্বাচনে তারাই জিতবে। ক্ষমতাসীন সরকার জনগণের আস্থা লাভে প্রথম হতে না পারলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়াও ইভিএমে রানার্সআপ হতে হবে। কারণ জনগণের ভোট একটি করে ও মন পরিবর্তনশীল। কোনো কারণে তাদের মনের নাগাল পাওয়া না গেলে, মন তুচ্ছ কারণে উঠে গেলে গত্যন্তর থাকবে না। বর্তমান ক্ষমতাসীনদের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা স্মরণ রাখছেন আগামীতে ক্ষমতায় নাও ফেরা হতে পারে। ২০০১ সালের মধ্যভাগ পর্যন্ত নির্বাচনী আলোচনায় মানুষ আওয়ামী লীগকে অবিকল্প মনে করত। এবার এই অনিশ্চয়তাবোধ জবাবদিহি বাড়াতে, নির্বাচনী কৌশল নির্ধারণ ও নির্বাচন ব্যবস্থাকে তাদের বিরুদ্ধে প্রভাবিত করা নিয়ে সতর্ক রাখবে। একটি রাজনৈতিক দল জনকল্যাণে অবদান রাখতে না পারলে জনসমর্থন হারায়। আরেক কারণে ভোটের রাজনীতিতে ভাটা পড়ে_ মন্ত্রী, এমপিদের কাছে কর্মী-সমর্থকরা প্রত্যাশিতভাবে মূল্যায়ন না পেলে। একজন রাজনীতিকের সমীপে মানুষের ঢল না নামলে তার মূল্য কী? নির্বাচন-পূর্ব ও উত্তর সময়ে এ ধারা এক রকমই রাখতে হয়। না হলে নির্ঘাত সমর্থন কমে।
আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের কাছে ২০০১ সালের নির্বাচনোত্তর সহিংসতার দুঃসহ স্মৃতির জন্য বিএনপির আবার ক্ষমতায় আসা দুঃস্বপ্নের মতো। পক্ষান্তরে বিএনপি-জামায়াতও রাষ্ট্রক্ষমতা লাভে মরিয়া। ভোটাররা সরকার সমর্থকদের আচরণে ব্যথিত-দুঃখিত থাকলে ভিন্নভাবে ভাববে। যুক্তির চেয়ে আবেগ আশ্রয়ী হয়েই আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলের ধারাবাহিকতায় ছেদ টানতে চাইবে। ক্ষমতাসীনদের মনে রাখতে হবে সম্মানবোধ সাধারণ মানুষের খুবই শানিত। কোনো ভোটার যেন তার জনপ্রতিনিধির বিষয়ে দুর্ব্যবহার, জনবিচ্ছিন্নতা বা উপেক্ষার অভিযোগ মনে পোষণ না করেন।
জনপ্রতিনিধি ও নানা পর্যায়ের নেতৃত্বের ভ্রান্তিতে হেরে গেলে প্রতিপক্ষের হাতে নিরীহ কর্মী-সমর্থকদের জীবন বিপন্ন হওয়ার শতভাগ ঝুঁুকি থাকবে। সেটাই ক্ষমতা থেকে দূরবর্তী সাধারণ মানুষের পরামর্শদানের, ভালো-মন্দ নিয়ে বক্তব্য প্রতিষ্ঠার কিংবা আবেগ-অনুভূতির মূল্যায়নের অনিবার্যতা তৈরি করেছে।
বিএনপি তার সঙ্গী সতেরো দল নিয়ে পাঁচ দিন হরতাল করল। হরতালের শেষ দিনে (৩০ এপ্রিল) বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক উপ-রাষ্ট্রপতি ও মন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ গুলশানে বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বললেন, সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে। পরে একাধিক সভায় বক্তব্যে তিনি বলেছেন, নিখোঁজ ইলিয়াস আলী ও সংবিধান থেকে অপসৃত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফেরত দিন, সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। এ বক্তব্য থেকে সুস্পষ্ট হলো_ ১. জনস্বার্থ বা গণমানুষের কথা বিরোধী দলের কাছে প্রাধান্য পাচ্ছে না ২. সরকারকে বিব্রত করতে যে কোনো অজুহাতেই হরতাল ও সরকারবিরোধী কর্মসূচি বিএনপিকে দিতে হতো। এর আগে সমুদ্রজয়ের কৃতিত্বে ক্ষমতাসীন সরকারকে চিন্তাতীত উচ্চতায় পেঁৗছতে দেখে তাদের দেওয়া ধন্যবাদও প্রত্যাহার করে নেয়। সরকারকে সর্বাত্মক অসহযোগিতা এবং ক্রমে তা আরও বাড়িয়ে তোলাই আগামী দিনগুলোতে সরকার ও বিরোধী দলের সম্পর্কের রসায়ন হবে। এর মধ্য দিয়েই দুই বড় দলের নেতৃত্বাধীন জোট নির্বাচনগামী থাকবে। আশা করি এসব বৈপরীত্য সত্ত্বেও সরকার সামনের দিনগুলোয় জনস্বার্থকে সমুন্নত করতে কেবল একার মতো নিবেদিত থেকে নয়_ নাগরিকদের অপেক্ষাকৃত ভালোবোধ করানোর প্রতিবার্তার মাধ্যমে নিজেদের প্রমাণের সুযোগটি হাতছাড়া করবে না।
আসিফ কবীর : সাংবাদিক
আমরা এখন বাজেট অধিবেশনের জন্য অপেক্ষমাণ। এরই মধ্যে শপথগ্রহণের দিন (৬ জানুয়ারি ২০০৯) থেকে ৬ মে সরকারের চলি্লশ মাস পূর্ণ হলো। এখন থেকে সরকারের মেয়াদ আছে আঠারো মাস। এক/এগারো-পরবর্তী সরকার মাত্র দু'বছরে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানসহ রাজনৈতিক-প্রশাসনিক ক্ষেত্রে আলোচিত অগণন পদক্ষেপ নিয়েছিল। বাস্তববোধ ও নৈয়ায়িক ঘাটতির দোষে তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে সফল হতে পারেনি, সে অন্য আলোচনা।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার নিজেরাই তিন মাস মেয়াদ কমিয়ে আগেভাগেই পরবর্তী সংসদের কার্যক্রম শুরুর সাংবিধানিক ব্যবস্থা নিয়েছে। নিয়মতান্ত্রিক কাজে সীমাবদ্ধ রাজনৈতিক সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। ভোটগ্রহণ হতে পারে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে। এ দুই বিষয় নিয়েই বিএনপি ও সমমনাদের আপত্তি আছে। তবে আওয়ামী লীগ ও তার জোটের শরিকদের এমন বোধ করার কারণ নেই যে, তাদের অধীনে নির্বাচনে তারাই জিতবে। ক্ষমতাসীন সরকার জনগণের আস্থা লাভে প্রথম হতে না পারলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়াও ইভিএমে রানার্সআপ হতে হবে। কারণ জনগণের ভোট একটি করে ও মন পরিবর্তনশীল। কোনো কারণে তাদের মনের নাগাল পাওয়া না গেলে, মন তুচ্ছ কারণে উঠে গেলে গত্যন্তর থাকবে না। বর্তমান ক্ষমতাসীনদের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা স্মরণ রাখছেন আগামীতে ক্ষমতায় নাও ফেরা হতে পারে। ২০০১ সালের মধ্যভাগ পর্যন্ত নির্বাচনী আলোচনায় মানুষ আওয়ামী লীগকে অবিকল্প মনে করত। এবার এই অনিশ্চয়তাবোধ জবাবদিহি বাড়াতে, নির্বাচনী কৌশল নির্ধারণ ও নির্বাচন ব্যবস্থাকে তাদের বিরুদ্ধে প্রভাবিত করা নিয়ে সতর্ক রাখবে। একটি রাজনৈতিক দল জনকল্যাণে অবদান রাখতে না পারলে জনসমর্থন হারায়। আরেক কারণে ভোটের রাজনীতিতে ভাটা পড়ে_ মন্ত্রী, এমপিদের কাছে কর্মী-সমর্থকরা প্রত্যাশিতভাবে মূল্যায়ন না পেলে। একজন রাজনীতিকের সমীপে মানুষের ঢল না নামলে তার মূল্য কী? নির্বাচন-পূর্ব ও উত্তর সময়ে এ ধারা এক রকমই রাখতে হয়। না হলে নির্ঘাত সমর্থন কমে।
আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের কাছে ২০০১ সালের নির্বাচনোত্তর সহিংসতার দুঃসহ স্মৃতির জন্য বিএনপির আবার ক্ষমতায় আসা দুঃস্বপ্নের মতো। পক্ষান্তরে বিএনপি-জামায়াতও রাষ্ট্রক্ষমতা লাভে মরিয়া। ভোটাররা সরকার সমর্থকদের আচরণে ব্যথিত-দুঃখিত থাকলে ভিন্নভাবে ভাববে। যুক্তির চেয়ে আবেগ আশ্রয়ী হয়েই আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলের ধারাবাহিকতায় ছেদ টানতে চাইবে। ক্ষমতাসীনদের মনে রাখতে হবে সম্মানবোধ সাধারণ মানুষের খুবই শানিত। কোনো ভোটার যেন তার জনপ্রতিনিধির বিষয়ে দুর্ব্যবহার, জনবিচ্ছিন্নতা বা উপেক্ষার অভিযোগ মনে পোষণ না করেন।
জনপ্রতিনিধি ও নানা পর্যায়ের নেতৃত্বের ভ্রান্তিতে হেরে গেলে প্রতিপক্ষের হাতে নিরীহ কর্মী-সমর্থকদের জীবন বিপন্ন হওয়ার শতভাগ ঝুঁুকি থাকবে। সেটাই ক্ষমতা থেকে দূরবর্তী সাধারণ মানুষের পরামর্শদানের, ভালো-মন্দ নিয়ে বক্তব্য প্রতিষ্ঠার কিংবা আবেগ-অনুভূতির মূল্যায়নের অনিবার্যতা তৈরি করেছে।
বিএনপি তার সঙ্গী সতেরো দল নিয়ে পাঁচ দিন হরতাল করল। হরতালের শেষ দিনে (৩০ এপ্রিল) বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক উপ-রাষ্ট্রপতি ও মন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ গুলশানে বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বললেন, সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে। পরে একাধিক সভায় বক্তব্যে তিনি বলেছেন, নিখোঁজ ইলিয়াস আলী ও সংবিধান থেকে অপসৃত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফেরত দিন, সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। এ বক্তব্য থেকে সুস্পষ্ট হলো_ ১. জনস্বার্থ বা গণমানুষের কথা বিরোধী দলের কাছে প্রাধান্য পাচ্ছে না ২. সরকারকে বিব্রত করতে যে কোনো অজুহাতেই হরতাল ও সরকারবিরোধী কর্মসূচি বিএনপিকে দিতে হতো। এর আগে সমুদ্রজয়ের কৃতিত্বে ক্ষমতাসীন সরকারকে চিন্তাতীত উচ্চতায় পেঁৗছতে দেখে তাদের দেওয়া ধন্যবাদও প্রত্যাহার করে নেয়। সরকারকে সর্বাত্মক অসহযোগিতা এবং ক্রমে তা আরও বাড়িয়ে তোলাই আগামী দিনগুলোতে সরকার ও বিরোধী দলের সম্পর্কের রসায়ন হবে। এর মধ্য দিয়েই দুই বড় দলের নেতৃত্বাধীন জোট নির্বাচনগামী থাকবে। আশা করি এসব বৈপরীত্য সত্ত্বেও সরকার সামনের দিনগুলোয় জনস্বার্থকে সমুন্নত করতে কেবল একার মতো নিবেদিত থেকে নয়_ নাগরিকদের অপেক্ষাকৃত ভালোবোধ করানোর প্রতিবার্তার মাধ্যমে নিজেদের প্রমাণের সুযোগটি হাতছাড়া করবে না।
আসিফ কবীর : সাংবাদিক
No comments