উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ্যবই-নকল ও গাইড বই প্রতিরোধ করুন
পহেলা জুলাই থেকে ক্লাস শুরু হবে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের। দেশের কলেজগুলোতে নতুন শিক্ষার্থীদের বরণের প্রস্তুতি চলছে, শিক্ষার্থীরাও নতুন জীবনের স্বপ্নে বিভোর হয়ে অপেক্ষায় আছে ক্লাস শুরুর জন্য। কিন্তু ক্লাস শুরুর আগেই হোঁচট খেতে হচ্ছে তাদের।
কেননা ক্লাস শুরুর প্রস্তুতিমূলক বই এখনও বাজারে আনেনি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। বিস্ময়কর হলেও সত্য, পাঠ্যপুস্তক বাজারে আনার প্রস্তুতিও নেই তাদের। উচ্চ মাধ্যমিকের বিপুলসংখ্যক বই ছাপানোর দায়িত্ব তাদের ওপর নেই। অধিকাংশ বই ছাপানোর দায়িত্ব বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। দেশের প্রকাশকরা সেসব বই ছাপছেন। উচ্চ মাধ্যমিকের বই প্রকাশ বেসরকারি খাতের আয়ের বড় একটি উৎস। এনসিটিবির দায়িত্ব শুধু বাংলা ও ইংরেজি পাঠ্যবই ও ব্যাকরণ বই ছাপানো। কিন্তু সে দায়িত্বটুকু পালন করতে তারা অনীহ। বলতে গেলে, নিশ্চিন্তেই সময় কাটাচ্ছেন এনসিটিবির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। অভিযোগ আছে, তাদের এই উদ্যোগ ও উদ্যমহীন অবস্থানের পেছনে আছে গূঢ় রহস্য। প্রকাশকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থযোগই নাকি তাদের নিষ্ক্রিয় করে রেখেছে। অবশ্য এ বিষয়ে এনসিটিবির দায়িত্বশীলদের মত ভিন্ন। তারা মনে করেন, এনসিটিবির বই শিক্ষার্থীরা কেনে না। আলাদা করে এসব বইয়ের দিকে শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করার উপায় নেই। অজুহাতগুলো ঠুনকো সন্দেহ নেই। এনসিটিবি যদি ক্লাস শুরুর মাসখানেক আগে বই ছাপার প্রক্রিয়াই শুরু না করে তবে বাজারে নকল বই আসবেই; আর শিক্ষার্থীরাও বাধ্য হয়ে সে বই কিনবে। তার চেয়েও বড় কথা, বাজারের নকল পাঠ্যবই প্রতিরোধের দায়িত্বও এনসিটিবির। শুধু নকল বই নয়, গাইড বইসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর প্রকাশনা ঠেকানোর দায়িত্বও তাদের। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ভাষা শিক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এ কাজটি সুচারুরূপে সম্পন্ন করতে হলে, বইগুলোকে হতে হবে নির্ভুল ও নিখুঁত। এগুলোতে কোনো ভুল বানান, বাক্য ও তথ্য থাকলে শিক্ষার্থীরা বিভ্রান্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এনসিটিবি তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন না করে বাজারের অসৎ ব্যবসায়ীদের হাতে নিজেদের সমর্পণ করলে এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে। এনসিটিবির উচিত যথাসময়ে তাদের দায়িত্ব পালন করে নির্দিষ্ট বইগুলো বাজারে আনা। পাশাপাশি, বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া প্রকাশনাগুলোর মান নিয়ন্ত্রণের জন্যও উদ্যোগ আসা দরকার। যার যখন ইচ্ছা তেমনভাবে পাঠ্যবই প্রস্তুত করতে দেওয়া যায় না। এনসিটিবির উচিত অন্য বইগুলোর খবর রাখা। তবে নিজেদের দায়িত্ব পালন থেকেই যখন তারা বিরত তখন বাইরের প্রকাশনার খবর তারা রাখবে কী করে? এ ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচিত একটি বিশেষ টাস্কফোর্সের মাধ্যমে বইগুলোর মান নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা। এটি না করলে, আমাদের শিক্ষার্থীরা সর্বসাম্প্রতিক তথ্য থেকে বঞ্চিত হবে। ভুল তথ্যে বিভ্রান্ত হবে। ভাষা, বাক্য গঠন ও বানানে সমস্যা থাকলে এই বিভ্রান্তি আরও বাড়বে। আর গাইড বইগুলো তাদের পাঠস্পৃহাকে সীমাবদ্ধ করে ফেলবে। বুনিয়াদি শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফলে এ বিষয়ে এনসিটিবির গাফিলতিকে আমলে নিতে হবে। তাদের দায়িত্ব পালনে শিথিলতার প্রতিবিধান করতে না পারলে পাঠ্যবই নিয়ে তেলেসমাতি বন্ধ করার উপায় থাকবে না।
No comments