এ সপ্তাহের বিজ্ঞানী-মেঘনাথসাহা

দোকানদার বাবার ছেলে হিসেবে সবাই ভেবেছিল ছেলেটিও দোকানি হবে। কাজে সাহায্য করার জন্য বাবার ইচ্ছে ছিল ছেলে যেন দোকানে সময় দেয়। কিন্তু ছেলেটি পরবর্তী সময়ে হয়ে ওঠে বিশ শতকের বিখ্যাত ভারতীয় জ্যোতিঃপদার্থবিদ। ১৮৯৩ সালে জন্ম নেওয়া এই বিজ্ঞানীর নাম মেঘনাদ সাহা।


ঢাকা থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বংশাই নদীর তীরে শেওরাতলী গ্রামে দারিদ্র্যপীড়িত এক পরিবারে জন্ম নেন তিনি। গ্রামটির বর্তমান অবস্থান গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থানায়। পার্শ্ববর্তী গ্রামের স্বাস্থ্যকর্মী অনন্ত কুমার দাশের সহযোগিতায় মেঘনাদ সাহা পড়াশোনা করার সুযোগ লাভ করেন। ১৯০৫ সালে মেঘনাদ সাহা বিনা বেতনে বৃত্তিসহকারে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি লাভের সুযোগ পান। কিন্তু ব্রিটিশ গভর্নর স্যার ফুলারের ঢাকা আগমনের বিরুদ্ধে মিছিল করার প্রতিবাদে তাঁর বৃত্তি বন্ধ করে দেয় স্কুল কর্তৃপক্ষ। পরবর্তী সময়ে তিনি কিশোরীলাল জুবিলী স্কুলে ভর্তি হন এবং ১৯০৯ সালে এন্ট্রান্স পরীক্ষা (এখনকার এসএসসি) পাস করেন। তিনি সেবারের পরীক্ষায় সমগ্র বাংলার মধ্যে প্রথম হন এবং গণিত, ইংরেজি, সংস্কৃত ও বাংলা বিষয়ে সর্বোচ্চ নম্বর পান। ১৯১১ সালে তিনি তৎকালীন ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ (এখন ঢাকা কলেজ) থেকে আইএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। তিনি আইএসসি পরীক্ষায় সমগ্র ভারতে তৃতীয় স্থান অধিকার করেন। একই বছরে তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে ফলিত গণিতে সম্মান শ্রেণীতে ভর্তি হন। কলেজে মেঘনাদের সহপাঠীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন সত্যেন্দ্রনাথ বসু, এন আর সেন, জে এন মুখার্জি প্রমুখ। সম্মান শ্রেণীতে মেঘনাদ সাহা দ্বিতীয় স্থান লাভ করলেও স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় তিনি প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অর্জন করেন। এরপর স্যার আশুতোষ মুখার্জির কলেজ অব সায়েন্সে গণিত বিভাগে প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে ১৯১৮ সালে তিনি ডক্টর অব সায়েন্স ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯২০ সালে মেঘনাদ সাহা তাঁর বিখ্যাত তাপীয় আয়নায়নের সমীকরণ প্রকাশ করেন। ১৯২৫ সালে তিনি ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসে পদার্থবিজ্ঞান শাখার সভাপতি মনোনীত হন। ১৯৩১ সালে তিনি তাঁর বিখ্যাত বই এ টেক্সট বুক অন হিট প্রকাশ করেন। সহকারী শ্রীবাস্তবের সঙ্গে তিনি বইটি প্রকাশ করেন। বইটিতে ভূমিকা লেখেন আরেক বিখ্যাত ভারতীয় বিজ্ঞানী সিভি রমন। ১৯২৭ সালে মেঘনাদ সাহা রয়েল সোসাইটি অব লন্ডনের ফেলো নির্বাচিত হন। পরবর্তী সময়ে তিনি বিভিন্ন বৃত্তি লাভের মাধ্যমে ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণাগারে ভ্রমণের সুযোগ লাভ করেন। ১৯৩৫ সালে মেঘনাদ সাহা নেচার সাময়িকী এবং আমেরিকার সায়েন্স সাময়িকীর আদলে বিজ্ঞানকে সাধারণ মানুষের কাছে সহজবোধ্য করে তোলার জন্য ইন্ডিয়ান সায়েন্স নিউজ অ্যাসোসিয়েশন গড়ে তোলেন এবং সেখান থেকে নিয়মিত সায়েন্স অ্যান্ড কালচার জার্নাল প্রকাশের ব্যবস্থা করেন। ভারতবর্ষে বিজ্ঞানচর্চার সঙ্গে বিশ্বের পরিচয় ঘটিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে এবং ভারতের বিজ্ঞান গবেষণাকে বিশ্বমানে উন্নীত করার ব্যাপারে মেঘনাদ সাহার অবদান অনস্বীকার্য। তিনি তাঁর প্রচেষ্টায় গড়ে তুলেছিলেন ভারতীয় ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার ফিজিক্স, ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্স, ইন্ডিয়ান ফিজিক্যাল সোসাইটি। ১৯৫৬ সালে বিখ্যাত এই জ্যোতিঃপদার্থবিদ মৃত্যুবরণ করেন।
জাহিদ হোসাইন

No comments

Powered by Blogger.